রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১২

পুলিশি গ্রেফতার, আতঙ্কিত জনগণ


নীতিগতভাবে রাষ্ট্রের জনগণের জানমাল রা ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত সরকারের। এ দায়িত্ব পালনের সময় জনস্বার্থের বদলে দলীয় এজেন্ডাকে প্রাধান্য দেয়া কাম্য নয়। এ ছাড়া বিরোধী দলের দাবি ও অধিকারের প্রতিও ল রাখা বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্রের অধীনে সবাই যেন ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আইনের নির্দলীয় প্রয়োগ সুশাসনের শর্ত। এসব গণতান্ত্রিক অধিকারের বিলুপ্তি ঘটলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সমাজে হিংসা-সঙ্ঘাত সৃষ্টি হয়। ফলে জনজীবনে শান্তিশৃঙ্খলার ব্যাপক তির আশঙ্কা দেখা দেয় এবং দেশ অতল গহ্বরে পতিত হয়।

দেশে কখনো কোনো সঙ্কট, সমস্যা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে তা বন্ধ করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সমঝোতা ও ঐকমত্যের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এহেন ঐকমত্য ও সদিচ্ছার বড়ই অভাব পরিলতি হচ্ছে। সরকার যে, আজ ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে তার দায় তো সরকারেরই। তারা একের পর এক সঙ্কীর্ণ, দলীয় ও হীন উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজ করায় নানা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে কার্যত জাতীয় জীবনকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে। সরকার তাদের জনপ্রিয়তার  পতন ঘটছে দেখে আজ দিশাহারা হয়ে গেছে। তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরিণাম তারা বুঝতে পারছে না। মতার রশি আঁকড়ে ধরতে রাষ্ট্রীয় শক্তি পুলিশ প্রশাসনকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। ফলে পুলিশ মামলা, হামলায় লিপ্ত হয়ে প্রতিবাদী ও সত্যান্বেষীদের স্তব্ধ করে রাখার চেষ্টা করছে।
বর্তমান সরকারের আমলে মানুষকে গুম করে ফেলার মতো অপরাধ অনেক ঘটছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীরাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফলাফল কিছুই হয়নি। নাগরিকদের রা করার কথা রাষ্ট্রের, কিন্তু রাষ্ট্রই আজ অভিযুক্ত। যে গুম হয়ে যাচ্ছে তাকে আর ফিরে পাওয়া যাচ্ছে না, কিংবা কিছু দিন পর তার লাশ আবিষ্কৃত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আরো কয়েকজন লাশ হয়েছেন। যেখানে নির্যাতিত মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নিরাপত্তা চায়, সেখানে এসব বাহিনীর নামে গুম, হত্যা চলছে। সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই আতঙ্কিত।
পুলিশ স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়েছে। যাকে ইচ্ছা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের পথ সুগম করা হচ্ছে। আগে পুলিশ এক-দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন করত আদালতের কাছে। এখন সাত দিনের নিচে তারা রিমান্ডের আবেদন জানাতে যেন ভুলে গেছে। আর আদালত রিমান্ড মঞ্জুরে কার্পণ্য করেন না।
রিমান্ডের আসল উদ্দেশ্য অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন। কিন্তু বর্তমানে রিমান্ডের অর্থ হচ্ছে, সব ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে অভিযুক্তের কাছ থেকে বলপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা। দেশের মানুষের কাছে এখন খুন ও গুমের মতো রিমান্ডও একটি ভয়ঙ্কর শব্দ।
রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করা কতটুকু ন্যায়সঙ্গত এবং এর আইনগত ভিত্তিই বা কতটুকু, তা সর্বোচ্চ আদালতের বিবেচ্য বিষয়। এ দিকে পুলিশ বা র‌্যাব হেফাজতে মৃত্যু উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রায়ই পত্রিকা ও টিভি রিপোর্টে দেখা যায়, পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, গণগ্রেফতার বাণিজ্য, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী, মাদক সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদার-অপরাধীদের সাথে সহাবস্থান, বিপদে পড়লে নিরীহ-নিরপরাধ লোকজন পুলিশের সাহায্য না পাওয়া ইত্যাদি অভিযোগ প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপ অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা আওয়ামী নেতাকর্মী, ক্যাডার নামধারী চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসীদের দমনে তেমন সক্রিয় নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে জনগণের সেবা প্রদানে বা জননিরাপত্তাদানে গুরুত্ব দেয়ার পরিবর্তে টাকার পেছনে বেশি ছুটছে অনেক পুলিশ। এর হাতিয়ার হিসেবে গণগ্রেফতারের পথ বেছে নিয়েছে। তারা দাগি আসামি ধরার চেয়ে সাধারণ মানুষকে ধরতে বেশি উৎসাহী। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে গভীর রজনীতে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে হানা দিয়ে সাধারণ মানুষকে আটক বা হয়রানি করছে বলে পত্রিকার রিপোর্টে জানা যায়। সন্ত্রাস দমনের নামে ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান এবং দাড়ি-টুপি পরা ব্যক্তিদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করে অন্যায়ভাবে ভুয়া মামলায় জড়িয়ে দিচ্ছে। এর দরুন সাধারণ রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী পর্যন্ত আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। এহেন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কারো জন্য কাম্য হতে পারে না। সময় এসেছে পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের। তাদের উচিত ভক না হয়ে জনগণের রকের দায়িত্ব নেয়া। নতুবা এ সাধের ‘সোনার বাংলা’ ছারখার হয়ে যাবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads