রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১২

বিজয়ের মাসে পরাধীনতার কালো আইন : ৫৪ ধারার অপপ্রয়োগ


এডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নি :
 বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এদেশের মানুষ জানমাল, ইজ্জত-আব্রু, সম্মান, মর্যাদা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ও সকল প্রকার অপশাসন, শোষণ এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। নারী, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ তথা সর্বস্তরের মানুষ তার অধিকার নিশ্চিন্তে দ্বিধাহীনভাবে ভোগ করতে পারবে এটাই ছিল প্রতিটি নাগরিকের প্রত্যাশা। স্বাধীনতার ৪১ বছর পর আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, মৌলিক মানবাধিকার আজ চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত। বিশেষ করে নারীর অধিকার নিয়ে কয়েক দশক যাবৎ যে আন্দোলন চলছে সেই নারীরা আজও নির্যাতিত, অবহেলিত, শোষিত, বঞ্চিত ও নিগৃহীত। নারীরা আজ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার। যে ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ আন্দোলন করেছে, জেল, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং অনেককে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়েছে সেই ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া কালো আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে।
বহু রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে নারীর সম্মান, মর্যাদা, ইজ্জত আজ ভূলুণ্ঠিত। যে দেশে আইনের অপপ্রয়োগ করে নারীকে অপমানিত, লাঞ্ছিত করা হয়, সে দেশের মর্যাদা বিশ্ব দরবারে কিভাবে সমুন্নত হবে?
বর্তমান সরকার ১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ প্রবর্তিত ৫৪ ধারা আইনটির অপপ্রয়োগ করেছেন ২০ জন পর্দানশীন মেধাবী ছাত্রীর উপর। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার মগবাজারস্থ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
সরকারের অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ৪৯৩, বড় মগবাজারস্থ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তল্লাশির নামে অফিস তছনছ ও ভাংচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ২০ জন পর্দানশীন মেধাবী ছাত্রীসহ মিসেস সানোয়ারা জাহানকে গ্রেফতার করে।
কোন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই তাদের গ্রেফতার করে রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কোন ধরনের অভিযোগ দাঁড় করাতে না পেরে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাও রয়েছে। অথচ তাকে অত্যন্ত অমানবিকভাবে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। যে কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির মানবাধিকারের প্রতি খেয়াল রাখা একটি স্বাভাবিক আইনী বাধ্যবাধকতা। অথচ একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতিরেকে শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে গ্রেফতার ও কারাগারে প্রেরণ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে প্রশ্ন উঠেছে।
২০ জন মেধাবী ছাত্রীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। কোন সভ্য সমাজে এটা হতে পারে না। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী সে দেশে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এহেন আচরণ গোটা নারী সমাজের জন্য অপমানজনক, দেশের জন্য কলঙ্কজনক। একটি স্বাধীন দেশে এ ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত।
যেভাবে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারের পর তাদের সাথে যে সব আচরণ করা হয় তা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৩নং ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে ঃ
০ গ্রেফতারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেফতারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাহার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।
০ গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেফতারের চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে (গ্রেফতারের স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাঁহাকে তদতিরিক্তকাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না।
সংবিধানের এ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের চবিবশ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি। তাদেরকে ২ দিন রমনা থানায় আটক রাখা হয়। একজন অন্তঃসত্তবা নারীকে ২ দিন থানায় আটকিয়ে রাখার এখতিয়ার পুলিশ কোথায় পেল? এরপর তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করে ২ দিন রিমান্ডে নেয়া হলো। ভাবতেও অবাক লাগে যে মাসটির সাথে নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার স্মৃতি জড়িত রয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়ার কারণে বিরোধীদলের কঠোর সমালোচনা করলেন সেই মাসে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর সাথে রাষ্ট্র যে ব্যবহার করলো সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হয়েও নীরব ভূমিকা পালন করলেন।
বর্তমান সরকার নিজেদেরকে গণতান্ত্রিক সরকার বলে দাবি করে। কিন্তু বাস্তবতা হল এ সরকার গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পেশাদারিত্বের পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে প্রশাসনসহ সর্বত্র নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। দেশের বিচার বিভাগ নামেমাত্র স্বাধীন। পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে বিচার বিভাগে কার্যক্রম হচ্ছে বলে মনে করার কোন সুযোগ নেই। পুলিশ বাহিনীতে পেশাদারিত্বের কোন বালাই নেই। কোন পেশাদার পুলিশ অবলা নারীর উপর এমন আচরণ করতে পারে না।
সরকার যদি গণতান্ত্রিকই হবে তবে ব্রিটিশ নিবর্তনমূলক আইনটির কোন অপপ্রয়োগ করছে? ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলন থামাতে ১৮৯৮ সালে ইংরেজরা সর্বপ্রথম নিবর্তনমূলক আইন তৈরি করে। তারা ওই আইনের ৫৪ ধারায় লাখ লাখ মানুষকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করে। উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন দমাতে তারা এ ধারাটি ব্যবহার করেছিল। পাকিস্তান আমলেও নিপীড়ন চালানোর হাতিয়ার ছিল ৫৪ ধারা। স্বাধীনতার পর এ ধারাটির বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার ছিলেন এমনকি তারাও নিজেরা ক্ষমতায় গিয়ে এ ধারাটি নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়েছেন। নিবর্তনমূলক এ আইনটি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে দমন পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বলা আছে, ‘যেকোনো পুলিশ কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ অথবা পরোয়ানা ছাড়াই, যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন। কোনো আমলযোগ্য অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তি অথবা এ ধরনের কাজে জড়িত বলে যার বিরুদ্ধে যুক্তিসঙ্গত অভিযোগ করা হয়েছে অথবা বিশ্বাসযোগ্য খবর পাওয়া গেছে বা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ রয়েছে। অপরাধী বলে ঘোষিত ব্যক্তি, চুরি যাওয়া জিনিস থাকতে পারে এমন কোনো ব্যক্তি, পুলিশ কর্মকর্তাকে কাজে বাধাদানকারী, প্রতিরক্ষা বাহিনী হতে পালানো ব্যক্তি, বিদেশে অপরাধ করে দেশে ফেরত ব্যক্তি, মুক্তিপ্রাপ্ত আসামি মুক্তির নিয়ম লঙ্ঘন করলে এবং অন্য কোনো পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে গ্রেফতারের অনুরোধকৃত ব্যক্তিদের এ আইনে গ্রেফতার করা যায়।'
ব্রিটিশদের প্রণীত ওই ফৌজদারি আইনের নিবর্তনমূলক ৫৪ ধারা স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এ ধারা ব্রিটিশদের প্রণীত ওই ফৌজদারি আইনের নিবর্তনমূলক ৫৪ ধারা স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এ ধারা বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত ৩১, ৩৩(ক), ৩৩(খ) ও ৩৫(৫) ধারার পরিপন্থী। ধারাগুলোতে নির্যাতন নিষিদ্ধ ও ব্যক্তি স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার কথা বলা হলেও ৫৪ ধারার অপপ্রয়োগের কারণে এ দেশে মানবাধিকার খর্ব হচ্ছে। সংবিধানের ৩১ ধারায় উল্লেখ রযেছে, ‘আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যেকোনো স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি না ঘটে।'
পুলিশ ২০ জন ছাত্রীকে গ্রেফতার করে তাদের জীবন, স্বাধীনতা, সুনাম ও ছাত্রী জীবনের কৃতিত্বপূর্ণ অগ্রযাত্রার ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। যারা মেডিকেল এবং বুয়েটের ছাত্রী তাদের সবচাইতে বড় সম্পত্তি হচ্ছে তাদের শিক্ষাগত জীবনের ক্যারিয়ার। এই ক্যারিয়ারের ক্ষতি করা হয়েছে গ্রেফতারের মাধ্যমে যা সংবিধানের ৩১ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৫৪ ধারা সংশোধনের বিষয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করতে নির্দেশ দেয়া হয়।এ জন্য বেঁধে দেয়া হয় ছয় মাসের সময়সীমা। ধারাটি সংশোধনের আগে এক্ষেত্রে কয়েকদফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে সরকারকে বলা হয়। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চেয়ে আপীল বিভাগে আবেদন করে বিগত চারদলীয় জোট সরকার। ২০০৩ সালের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জুর করলেও হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাগুলো স্থগিত করেনি।
হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ডিটেনশন (আটকাদেশ) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার ব্যক্তিকে এর কারণ জানাতে হবে। বাসা বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহক মারফত বিষয়টি জানাতে হবে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সাথে পরামর্শ করতে দিতে হবে। ওই ব্যক্তিকে আবার জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের অভ্যন্তরে কাচঘেরা বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। কিন্তু সরকার এই নির্দেশনার কোনটিই অনুসরণ করেনি। গ্রেফতারের পর তাদের রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার আত্মীয়-স্বজন দেখা করতে গেলে তাদেরকে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি। রিমান্ডের ব্যাপারে মহামান্য হাইকোর্টের যে নির্দেশনা তার কোন কিছুই অনুসরণ করেনি সরকার। পুলিশ ছাত্রী সংস্থার ২০ জন ছাত্রীকে গ্রেফতারের পর বলেছিল তারা রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত। গ্রেফতার অভিযানের সময় পুলিশ আলামত হিসেবে কুরআন শরীফ এবং সাহাবীদের জীবনী ও কয়েকটি কম্পিউটার জব্দ করে। একটি বৈধ সংগঠনের অফিসে কুরআন শরীফ রাখা, সাহাবীদের জীবনী রাখা কি কোন অপরাধ না রাষ্ট্রদোহিতা?
পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে গোটা জাতি জানতে পেরেছে তাদেরকে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইসলামী ছাত্রী সংস্থা কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। এটি একটি বৈধ সংগঠন। সুতরাং কোন বৈধ সংগঠনের কার্যালয় থেকে কাউকে গ্রেফতার করা সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সংবিধানে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে যে সব বিষয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে তা হলো ঃ
ক) চলাফেরা করার অধিকার
খ) মত প্রকাশের অধিকার
গ) সংগঠন বা দল করার অধিকার
ঘ) সভা-সমাবেশ করার অধিকার
এগুলো সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। পুলিশ এগুলোতে বাধা প্রদান করেই বরং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছে। পাশাপাশি সরকার নারী অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। নারীর সবচেয়ে বড় অধিকার তার ইজ্জত, আব্রু, সম্মান ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি। আমরা টিভিতে ও পত্রিকার ছবিতে দেখেছি গ্রেফতার করেছে পুরুষ পুলিশ। পরে নারী পুলিশ তাদেরকে গাড়িতে উঠিয়েছে। যা একজন নারীর প্রতি অবমাননা ছাড়া আর কিছু নয়। নারীদেরকে নারী পুলিশের মাধ্যমেই গ্রেফতার করতে হবে।
সাধারণত সুনির্দিষ্ট মামলায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেয়া হয়। কিন্তু এই ২০ জন ছাত্রীকে রিমান্ডে নেয়ার ক্ষেত্রেও সরকারের ভূমিকা আইনসম্মত হয়নি। সাধারণত ৫৪ ধারায় কাউকে রিমান্ডে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যদি মামলা হয় তাহলে কতগুলো শর্তের ভিত্তিতে রিমান্ড চাওয়া যায়। রিমান্ড চাইলেই রিমান্ড দেয়া যায় না। কতগুলো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে।
যেমন ঃ
 কোর্টের সামনে সুনির্দিষ্ট মামলা ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। যেসব ছাত্রীদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন মামলা ছিল না সুনির্দিষ্ট অভিযোগও ছিল না। সুতরাং তাদের রিমান্ডে নেয়ার যুক্তিসংগত কোন কারণও নেই।
 মহিলাদের রিমান্ডে নিলে মহিলা পুলিশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হতে হবে। এক্ষেত্রেও বিধি অনুসরণ করা হয়নি।
রিমান্ড চলাকালে মহামান্য হাইকোর্টের ২০১০ সালের নির্দেশিকা পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়নি। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী, সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। কোন সন্দেহভাজন ছাত্রী নয়। সরকারের এ ভূমিকার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে মানবতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে! সরকার শুধু অমানবিক আচরণই করেনি নারী অধিকার ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছে। দেশের সচেতন নাগরিক, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাসহ মুক্তিকামী মানুষকে এসব জুলুম অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। মানবাধিকার যেখানে লঙ্ঘিত হয় সেখানে দল, গ্রুপ বা রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচ্য বিষয় নয়। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষ হিসেবে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা। আজ নারীর সম্মান, মর্যাদা ও অধিকারের উপর যে আঘাত এসেছে সর্বোপরি মানবাধিকারের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে তার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। তাই বলতে চাই-
‘এসো সত্য সাহসের সাথে লড়ি
এসো মিথ্যা ভেঙ্গে ইতিহাস গড়ি
এসো নব তরঙ্গ তারুণ্য, এসো প্রদীপ্ত প্রভাত
এসো দলি কঠিন প্রস্তর, এসো আগ্নেয় প্রপাত।’’

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads