শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১২

দমন-পীড়নে শেষ রা হয় না


দমন-পীড়ন ও জেল-জুলুম-নির্যাতন নিঃসন্দেহে শাসকদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। সত্য ও ন্যায়ের কাছে পরাজিত হয়ে ও বিরোধী মত সহ্য করতে না পেরে এবং মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিতে শাসকেরা দমন-পীড়ন ও জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নেয়!  দমন-পীড়ন ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যে শেষ রা হয় না, এ সত্যটি শাসকেরা কোনো দিন বুঝতে চায় না, মতার মোহে এরা বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে এক অত্যাচারী ও স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হয়; শেষ পর্যন্ত জনতার শক্তির কাছে তাদের করুণ পরাজয় বরণ করতে হয়, ধিকৃত শাসক হিসেবে ইতিহাসে তাদের নাম লিপিবদ্ধ হয়।

নিকট অতীতে মইন-ফখরুদ্দীনের কুখ্যাত জরুরি সরকার রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের ওপর অহেতুক দমন-পীড়ন ও জেল-জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিপ্তি হয়েছে। মানুষ তাদেরকে এখন ধিক্কার দেয়। দমন-পীড়নের ফল যে শেষ পর্যন্ত ভালো হয় না, এর চেয়ে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত আর কিই-বা হতে পারে।
বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদেরও বোধহয় এ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে, কেননা তাদের জুলুম-নির্যাতন সব সীমা অতিক্রম করেছে। শীর্ষ রাজনীতিবিদদের পাইকারি হারে জেলে নেয়া হচ্ছে!
আশুলিয়ায় জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ১২০ জন মারা গেল, এ পর্যন্ত একজনও গ্রেফতার হলো না। রোবরার অবরোধের দিন প্রকাশ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও হাজার হাজার মানুষের সামনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ঘাতকেরা সহজ সরল, নিরীহ যুবক বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে মেরে ফেলল, খুনিদের বাঁচাতে চলছে নানা নাটক। অন্য দিকে সিটি করপোরেশনের গাড়ি পোড়ানো মামলায় তাৎণিক গ্রেফতার করা হলো মির্জা ফখরুল ইসলামের মতো বিরোধী দলের এক বড় মাপের নেতাকে। এই হলো দিন বদলের সরকারের দমন-পীড়নের নমুনা।
মতার মোহে শাসকেরা অন্ধ হয়ে গেছে। দমন-পীড়ন, জুলুম-নির্যাতন এবং গুম-অপহরণ-গুপ্তহত্যাকে এরা আবার মতায় যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। তা ছাড়া হামলা-মামলা,  জেল-জুলুম ও ভয়-ভীতি-আতঙ্ক সৃষ্টি করে, বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্বশূন্য করারও ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
এখন প্রশ্ন হলো, এসব করে কি অতীতে কোনো শাসকের শেষ রা হয়েছে? অত্যাচারী শাসকেরা কোনো দিন আবার মতায় যেতে পেরেছে? বিরোধী দলের কিছু নেতাকর্মীকে মামলা-হামলার মাধ্যমে জেলে আটক রাখলেই কি দলগুলো নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে? না, কোনোভাবেই না; এভাবে  রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্বশূন্য করা যায় না, তখন কর্মীরা নেতৃত্ব হাতে তুলে নেবে। সমর্থক নীরব ভোটারেরা সরব হয়ে কর্মীর দায়িত্ব পালন করবে।
বর্তমানে দমন-পীড়ন ও জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা এমন এক ভয়ানক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, সব বিবেকবান মানুষের মনই নাড়া দিচ্ছে!  খোদ মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নেতারা বলেছেন, ‘ঘরে থাকলে খুন আর বাইরে গেলে গুম!’ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমিও যেকোনো সময় গুম হয়ে যেতে পারি!  এমন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যেই বাংলাদেশ সফরে এলেন জাতিসঙ্ঘের অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ ও মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেক। তারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উদ্বেগ আছে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেও!
বাংলাদেশের মানুষকে অনেক অনেক স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হবে, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে ইত্যাদি। তবে কথা হলো, মানুষকে যে স্বপ্নই দেখানো হোক না কেন স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দমন-পীড়ন, গুম-গ্রেফতার ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাতে যেটুকু উন্নতি গত ৪০ বছরে বাংলাদেশের হয়েছে; তা ধরে রাখাই কঠিন হবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করলে ঘোর অন্ধকার ছাড়া কোনো স্বপ্ন চোখের সামনে দৃশ্যমান হয় না। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দিন দিন দূরত্ব বাড়ছে। হামলা-মামলা-গুম-গ্রেফতার ও জেল-জুলুমের শিকার হচ্ছেন শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, যারা নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবেন, সেই মানের রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে জামিনের অযোগ্য মামলা। দেশকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা তৈরির পরিবর্তে তাদেরকে ঘুরতে হচ্ছে আদালতের দুয়ারে দুয়ারে। কোনো কোনো দলের শীর্ষ রাজনীতিবিদ দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছেন জেলে। তারা জামিন পাচ্ছেন না। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির বাস্তব চিত্র। এখন প্রশ্ন হলো, এ টালমাটাল ও অপরিপক্ব রাজনীতি নিয়ে একটি দেশ কিভাবে সামনে অগ্রসর হবে? কিভাবে মধ্যম আয় বা ডিজিটাল দেশের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাবে?
অপরিপক্ব, অনৈক্য ও অসহিষ্ণু এবং বিভাজনের রাজনীতি চূড়ান্তভাবে দেশকে নিয়ে দাঁড় করাবে ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তেÑ এতে কোনো সন্দেহ নেই! কথিত আছে, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলকে নেতৃত্বশূন্য করারও চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।
বাংলাদেশ জাতিয়তাবদী দল (বিএনপি) বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল। দলটি বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক ভোটের অধিকারী। দেশব্যাপী দলটির রয়েছে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি। বাংলাদেশের ইতিহাসে দলটির নেতৃত্বে পাঁচবার সরকার গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের শুভ ও বড় বড় অর্জনের সাথে বিএনপির নাম জড়িয়ে আছে। হামলা-মামলা ও দমন-পীড়নের ফলে দলটি বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিকূল সময় পার করছে। দলটির প্রধানকে তার ৪০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে বলতে গেলে এক প্রকার জোর করেই উচ্ছেদ করা  হয়েছে। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, খালেদা জিয়াকে প্রতিনিয়ত সরকারের দেয়া মামলায় আদালতে গিয়ে হাজিরাও দিতে হচ্ছে!
এক কথায় দলটিকে সুকৌশলে নেতৃত্বশূন্য করার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে দলটির শীর্ষ নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। হামলা-মামলা, গুম-গ্রেফতার ও দমন-পীড়নের ধরন দেখলে তাদের কথার যৌক্তিকতা আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এমন অসহিষ্ণু, অনৈক্য ও বিভাজনের রাজনীতির ফল কোনোভাবেই ভালো হতে পারে না। এ অপরিপক্ব রাজনীতি একটি রাষ্ট্রকে সামনে এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে রাষ্ট্রকে অবধারিত পেছনের দিকে নিয়ে যাবে, আর বাস্তবে হচ্ছেও ঠিক তাই। সরকারের দমন-পীড়নের ফলে দেশ এক ভয়ঙ্কর সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে চলেছে।
এ অবস্থায় যেকোনো সময় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অজানা গন্তব্য ও মারাত্মক পরিণতির দিকে মোড় নিতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এমনকি দেশে গৃহযুদ্ধও বেধে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা। কাজেই সময় থাকতে পরস্পরে ভেদাভেদ ভুলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ত্রে তৈরি করার দিকে সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে। যাতে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের পথ এড়ানো সম্ভব হয়। যাতে সুস্থ রাজনীতির ধারা দেশে ফিরে আসে।
রাজনীতিতে অশুভ শক্তির উত্থানের পথ প্রশস্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়, রাজনীতিবিদেরা নিখোঁজ হবেন এবং অহেতুক ও অন্যায়ভাবে জেলে যাবেন এটিও মেনে নেয়া যায় না। কেননা খোদ রাজনীতিবিদদের জন্যই তা ভয়ঙ্কর, আগে-পরে রাজনীতিবিদেরাই এর শিকার হবেন। বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য এসব নিঃসন্দেহে অশনি সঙ্কেত! রাজনীতিতে যদি পরমতসহিষ্ণুতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই দেশে শান্তি বিরাজ করবে না। আর শান্তি বিরাজ না করলে একটি দেশ তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। দেশটি আলোর মুখ দেখার পরিবর্তে ঘোর অন্ধকারের দিকে ধাবিত হতে থাকবে। বাস্তবেও বাংলাদেশে আমরা তা-ই দেখছি। অনৈক্য ও বিভাজনের রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ, নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠছে না, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ দিন দিন সঙ্কুিচত হচ্ছে, সর্বোপরি জিডিপির সূচকও নিচের দিকে নামছে।
এ অবস্থায় একটি উন্নয়নশীল ও রফতানিমুখী দেশ চলতে পারে না। তাই আগে রাজনীতি ঠিক করতে হবে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। দম্ভ ও পরস্পরের প্রতি আঘাতপূর্ণ বাক্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। জেলে আটক রাজনীতিবিদদের মুক্তি দিতে হবে। দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত উসকে দেয় এ ধরনের বক্তৃতা-বিবৃতি  দেয়া বন্ধ করতে হবে। গণতন্ত্র মেনে রাজনীতি করলে রাজনীতি কোনোভাবেই সহিংসতার পথে ধাবিত হয় না। রাজনীতিতে পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নেয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে এবং বিজয়কে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সাথে এগিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো মানুষ যদি দুনিয়ার সব মতা পেয়ে যান আর আত্মাকে হারান, তাতে কোনো প্রশান্তি নেই।
বাংলাদেশ ছোট কোনো জনপদ নয়। জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের অষ্টম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী এখন বিশ্বের শক্তিধর দেশ। চীন, ভারত ও পাকিস্তানসহ আরো বড় বড় দেশ বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিপ। তৈরী পোশাক শিল্পে বিশ্বে চীনের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। জনশক্তি রফতানি ও ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ ভারত-পাকিস্তানের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। কাজেই বাংলাদেশের শত্র“ এখন চতুর্মুখী। এটি এ দেশের রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে, সঙ্কীর্ণ মনের রাজনীতি ত্যাগ করতে হবে। সত্তর দশকের বস্তাপচা রাজনীতি দিয়ে পরিবর্তিত ও উদীয়মান বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব নয়।
জাতিসঙ্ঘের অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফার্নান্দেজ ও মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেক সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও পপাতহীন জাতীয় নির্বাচনের ওপর অধিক জোর দিয়েছেন। তারা এ ব্যাপারে সরকার ও বিরোধী দলকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশকে ‘কাক্সিত গন্তব্যের’ দিকে নিয়ে যেতে হলে নির্দলীয়-নিরপে সরকারের অধীনে সামনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবাচনের কোনো বিকল্প নেই। সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশাও এটি। মানুষের এই পাল্স শাসকদের অবশ্য অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে। রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে  দ্রুত সংলাপ শুরু করতে হবে।
প্রতীয়মান হয়, শাসকদের আগামী দিনগুলো হবে অত্যন্ত কঠিন ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ। সঙ্কীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে এবং হিংসা-বিদ্বেষ ও অনৈক্য-বিভাজনের রাজনীতি দিয়ে এ কঠিন ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময় অতিক্রম করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি। শাসকদের উচিত দমন-পীড়ন, জেল-জুলুমের পথ পরিহার করে বিরোধী দলকে আস্থায় আনা এবং তাদের সহযোগিতা নেয়া। হিংসা-বিদ্বেষ-অনৈক্য ও বিভাজনের রাজনীতি কোনো কিছুরই সমাধান দিতে পারে না, এ থেকে কোনো পই লাভবান হয় না। এর ফলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তা থেকে লাভবান হয় বাইরের কোনো শক্তি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads