মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

সরকারি সন্ত্রাসে আতঙ্কিত বাংলাদেশ



 ২০০৮ সালের ২৮শে ডিসেম্বর এক ‘ডিজিটাল নির্বাচনের মাধ্যমে মহাজোট সরকার এ দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্নের রাজভবনে সুবিশাল আসন জুড়ে সরকার গঠন করে। মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার কী ছিল, তা আলোচনা করে সময় ও কাগজ নষ্ট করবো না। কারণ দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অবলোকন করতে পারছে তাদের ইশতেহারের বাস্তব প্রতিফলন কতটুকু।
দিনমজুর, রিকশাচালক থেকে নিয়ে সচ্ছলতায় ভরপুর এমন মানুষ পর্যন্তও আজ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বিরামহীন মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মাথায় হাত রাখতে বসেছে। সবকিছু আজ সিন্ডিকেট সন্ত্রাসের হাতের মুঠোয়। বাজারে যেন আগুন লেগেছে। কী কিনবে? কিভাবে কিনবে? কীভাবে বাঁচবে? এ প্রশ্নই শুধু আজ সবার মুখে, এই হলো ‘দশ টাকা চাল, আর বিনামূল্যে সার দাতা সরকারের আমলের হাল'।
‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড' এটা সবার শুনা কথা। ক্লাস ফোর বা ফাইভে যখন পড়ি তখন থেকেই এই বাক্যের সাথে পরিচিত। যেখানে ‘জাতির মেরুদন্ড' মেরামত করা হয় তাকে বিদ্যালয়, কলেজ, ভার্সিটি তথা শিক্ষাঙ্গন বলে সবাই ডাকে। অর্থাৎ সেটা হলো ‘মানুষ গড়ার কারখানা'। জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে এখানে। যদি সেটা হয় ‘সন্ত্রাস আর অপরাধ মুক্ত'।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই ‘দেশের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলে থাকেন ‘অস্ত্র ছাড়, কলম ধর, শিক্ষাঙ্গন রক্ষা কর। কিন্তু তার আমলেই দেখা যায় ‘কলম ছেড়ে অস্ত্র নিয়ে নির্দ্বিধায় কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায় ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডাররা। জানি প্রমাণ বা রেফারেন্স ছাড়া জনগণ আমার কথা বিশ্বাস করবে না। কারণ প্রমাণ দিতে গেলে আমার কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু প্রমাণ অফুরন্ত।
এই তো, মাস পাঁচেক আগে শত বছরের ঐতিহ্যবাহি এম.সি কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন দিয়েছিল কারা? অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আর শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের কান্নায় ভারী হয়ে পড়েছিল কলেজপাড়া। প্রকৃত দোষীদের শীঘ্রই পাকড়াও করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথাও বলেন তারা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোন পাত্তাই নেই। এই হলো ‘বর্তমান মানুষ গড়ার কারখানার হাল'। যেখান থেকে লেখাপড়ার শব্দ শুনা যাওয়ার কথা ছিল, আজ সেখানে শুনা যাচ্ছে অস্ত্রের ঝনঝনানি শব্দ।
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল, আমরা এদেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। এদেশের মাটির নিচেও যদি সন্ত্রাস থাকে তাহলে আমরা তালাশ করে বের করবো। কিন্তু এখন উল্টো সন্ত্রাসের হেফাজতের জন্য তাকে মাটির নিচে ঢুকাচ্ছে, বাহ্ কী চমৎকার স্টাইলে দেশ পরিচালনা করছে।
তারা আরো বলেছিল ইসলাম তথা কুরআন-হাদিস বিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করবো না। কিন্তু  ক্ষমতায় আসার পর ধাপে ধাপে ‘ফতোয়া বিরোধী আইন, নারী উন্নয়ন নীতিমালায় কুরআন বিরোধী আইন প্রণয়ন, ইসলামী পর্দা বিধানের বিরুদ্ধে আইন করে ‘ইভটিজিং' বন্ধের হীনচেষ্টা করে যে সরকার, তাকে কী উপাধি দেবে দেশের জনগণ ভেবে পাচ্ছে না।'
সমান অধিকারের নামে মা-বোনদের ইজ্জত-আব্রু আর আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার নিয়ে তামাশা করে কোন সরকার তাও জানে আপামর জনগণ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ‘ইমাম সম্মেলনে' ডি.জি শামিম আফজাল কর্তৃক আলেম উলামাদের সামনে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ‘ব্যালে ড্যান্স' পরিবেশন হয় যে সরকারের আমলে, ইসলাম ও মুসলমান কতটুকু নিরাপদ সেটা সবাই জানে।
ইসলামী রাজনীতি বন্ধের নামে ‘ইসলাম বন্ধের হীন পাঁয়তারা। কারণ ইসলামী রাজনীতি বন্ধ করতে পারলেই ‘যেমন খুশি তেমন নাচো, কেউ থাকবে না কিছু বলার মতো।' ইসলামী রাজনীতি বন্ধ হলেই সুদ, ঘুষ, হত্যা, গুম, খুন, সন্ত্রাসী, রাহাজানি, মদ-জুয়া তথা সবধরনের ডিজিটাল অশ্লীলতার সাগরে হাবুডুবু খাওয়া যাবে। তাই এমন অপচেষ্টা তাদের। এটা ধর্ম সন্ত্রাস নয় তো কী?
যুদ্ধাপরাধীর বিচার হোক এটা এদেশের স্বাধীনতাকামী, শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রাণের দাবি। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর নামে দেশের নামকরা আলেম-উলামাকে হয়রানি করা, তাদের ওপর মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা, এদেশের ইসলামপ্রিয় মানুষ কখনো বরদাস্ত করবে না। প্রকৃত দোষী সাব্যস্ত করুণ। সঠিক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। দেখবেন দেশের জনগণ থাকবে আপনাদের পাশে। নতুবা তারা থাকবে আপনার বিপক্ষে অবস্থানে।
মোল্লা-মুন্সিরাই বেশি প্রতিবাদ করে আপনাদের এসব কর্মকান্ডের। তাই তাদের দমাতে লাঠিয়াল বাহিনী চারিদিকে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাষ্ট্রে বুঝি এখন আর মুসলমান পরিচয়ে বাঁচা যাবে না। মাথায় টুপি আর মুখে দাড়ি দেখলেই মনে করে ওরা জঙ্গি কিংবা জামায়াত-শিবিরকর্মী, তাইতো অহেতুক সন্দেহে ধরে নিয়ে কারাগারে পুরছে আর বেদম পিটুনি দিচ্ছে অনেক নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে।
চলছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদে মুখর সারাদেশ। আমজনতার মুখেও শুনা যাচ্ছে সরকার হটাও স্লোগান। ডিজিটাল বাংলাদেশ চাই না। নেমে পড়ুন গদি থেকে। ছাড়ুন গদি। নইলে টেনে-হেঁচড়ে নামাতে বাধ্য হবো। এমনটাই বলছে বিরোধী সহ ১৮ দলের নেতৃবৃন্দ।
নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে গত ০৯ ডিসেম্বর রোববার সারাদেশে পালিত হয় ১৮ দলের মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি। সিলেটসহ হাতে গোনা দুই চার স্থান ছাড়া বাকি প্রায় অবস্থানেই কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা দেশবাসীর নজরে পড়ে।
রাজধানী ঢাকার সূত্রাপুর থানার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নিরীহ পথচারী বিশ্বজিৎ নামের এক হিন্দু যুবককে সরকার দলের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তখন বিশ্বজিৎ চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে ‘আমি হিন্দু, আমি শিবির বা বিএনপি কোনটাই করি না। এমন আর্তনাদে কর্ণপাত করেনি সরকারি সন্ত্রাসীরা। সংবাদপত্র সূত্রে জানা যায়, সে পুরান ঢাকার ‘আমন্ত্রণ টেইলার্সে' সেলাইয়ের কাজ করতো।
দেশবাসীর আদালতে বলতে চাই কী অপরাধ ছিল বিশ্বজিতের। কেন হত্যা করা হলো তাকে। দিনদুপুরে প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে নির্ভয়ে নির্দ্বিধায় পেটাচ্ছে বেদম ছাত্র লীগের সোনার ছেলেরা।
১১ ডিসেম্বর জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ‘বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের ছবি ছাপা হয় পরিচয়সহ। এতে বলা হয় হত্যাকারীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রলীগ নেতা। দেশবাসী হত্যাকারীদের তথ্য জানলেও পুলিশ জানতে দেরী হলেও গ্রেফতার করেছে অনেককেই। তাই দেশবাসী জানতে চায় এদের বিচার কবে কার্যকর হবে।
চারদিকে সন্ত্রাস, দেশটা যেন তাদের বাপের ভিটা। নিরাপদ আশ্রয়স্থল কোথাও নেই। তাই ভেবে বুঝি সরকার দলের সন্ত্রাসীরা মেরে ‘কবর নামের' নিরাপদ আবাসনের বাসিন্দা বানাচ্ছে। সরকারি সন্ত্রাসে আতংকিত দেশের মানুষ।
ঘরে-বাইরে, স্কুলে-কলেজে, অফিস-আদালতে, মাঠে-ময়দানে, হাটে-বাজারে সর্বত্র এখন সরগরম হয়ে ওঠেছে সরকার বিরোধী আন্দোলন। মনে হচ্ছে দু' একের মধ্যেই সরকারের পতন ঘটে যাবে। নাকি আরো দেরি হবে কে জানে?
তাই সরকার মহোদয়কে পরামর্শ প্রেসক্রিপশন হিসেবে বলছি, যাই করুন না কেন ভেবে চিন্তে করুন। দেশের মঙ্গলের জন্য করুন। এতে যদি গদি ছাড়তে হয়, ছেড়েই দিন।
দেশপ্রেমিকের দৃষ্টান্ত কায়েমের সুযোগটা তাড়াতাড়ি কাজে লাগান। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতার চাবি আপনার হাতে আবারো আসতে পারে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads