রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১২

সরকারের একগুঁয়েমি দেশকে বিপন্ন করবে


দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলে অভিমত দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি বলেছেন, যে নামেই অভিহিত হোক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। এটি গঠনের পদ্ধতি সম্পর্কে দুই নেত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে। তারা পারস্পরিক আলোচনায় অনিচ্ছুক হলে এ জন্য জনমত গঠন করতে হবে। গত শনিবার বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার জাতীয় সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। পত্রপত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে, ব্যারিস্টার হক অনুষ্ঠানে আরো বলেছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া সঙ্কট কাটবে না। আমরা চাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে জনগণের বেশির ভাগই তা মানবে না। রফিক-উল হক স্মরণ করিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট রায়ে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে আরো দু’বার। এ দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেছেন, প্রধান দলগুলো নিজেরা আলোচনা করে আগামী সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি স্থির করতে হবে।

দেশে চরম রাজনৈতিক সঙ্কট চলছে। এর কারণ বিরোধী দলের ওপর সরকারের ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন এবং সর্বসম্মত তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অধীনেই সংসদ নির্বাচনের পাঁয়তারা। সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মনমতো ব্যাখ্যা দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বিলুপ্ত করে দিয়েছে সংবিধান থেকে। অপর দিকে, দেশের বেশির ভাগ মানুষের দাবির প্রতিফলন ঘটিয়ে বিরোধী দল এই ব্যবস্থা পুনর্বহালের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে অব্যাহত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার এতে মোটেও সাড়া না দিয়ে দমন-নির্যাতনের পন্থায় বিরোধী দলের সংগ্রামকে থামিয়ে দেয়ার সর্বাত্মক প্রয়াস পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকতা আরো জোরালো হয়ে উঠছে। সরকার তাতে কর্ণপাত না করে দিন দিন হয়ে উঠছে আরো বেশি বেপরোয়া ও নিপীড়ক। ফলে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিদারুণ আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
দেখা যাচ্ছে, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি জানিয়েছেন, তা তার ব্যক্তিগত কিংবা নতুন কোনো দাবি নয়। বর্তমানে ক্ষমতাসীন, আওয়ামী লীগও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজনের দাবিতে দীর্ঘ দিনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির পর ১৯৯৬ থেকে সংসদ নির্বাচন হয়ে এসেছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের পরিচালনায়। ১৯৯৬ সালে এবং পরে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। জনগণ মনে করে, বাংলাদেশের তিক্ত বাস্তবতায় দলীয় ও ক্ষমতাসীন কোনো সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না। অথচ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নিজেদের অতীত ভুলে যাওয়ার ভান করে এবং জনমত ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এর উদ্দেশ্য, গণতন্ত্রের নামে ও সংবিধানের অপব্যবহার করে নিজেদের ক্ষমতাকে স্থায়ী করা। এটা নিঃসন্দেহে অগণতান্ত্রিক মানসিকতার প্রমাণ। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার ইস্যুতে যে অচলাবস্থা, তা কাটানোর দায়িত্ব প্রধানত সরকারের। ক্ষমতাসীন জোটের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ এবং এর নেত্রী এটা যত শিগগির উপলব্ধি করেন, ততই জাতির মঙ্গল।
আমরা আশা করব, ক্ষমতাসীন মহল আর অনমনীয়তার পরিচয় না দিয়ে জনগণের আকাক্সার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করবে। সে মোতাবেক, আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার গঠনের পন্থা নির্ধারণ করা হবে, যার অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads