বৃহস্পতিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১২

বাংলাদেশ তুমি কার?


বেশ কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা করে কূলকিনারা পাচ্ছি না। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া আমাদের এই দেশটি এখন অনেক ষড়যন্ত্রের শিকার। আমরা যদি এই ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে না পারি তাহলে দেশ স্বাধীন থাকলেও দেশের অভ্যন্তর ভাগ স্বাধীন থাকবে না। আমাদের দেশের ইলিশমাছ, জামদানি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, নকশিকাঁথাসহ ঐতিহ্যবাহী ৬৬টি পণ্য ইতোমধ্যে ভারত তাদের নিজের করে নিয়ে নিয়েছে! এখন আমরা ইচ্ছা করলেই আর এগুলোকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারব না। দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করতে পারলেও রফতানিতে পড়তে হবে মারাত্মক সমস্যায়।

এই তো সে দিন হয়ে গেল বন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা। মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে আমরা শ্রদ্ধা করিÑ সংবর্ধনা দেয়াও দোষের কিছু নয়, তাই বলে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অভুক্ত রেখে দেশের বাইরের বন্ধুদের অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এমনটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
ইতোমধ্যে আমরা ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে দিয়েছি কিন্তু বিস্ময়কর হলো, এর বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে আমরা কিছুই পাবো না! তারা আমাদের দেশের ভূমি ব্যবহার করবে, রাস্তাঘাট নষ্ট করবে; এর পরও তাদের কাছে কিছু চাওয়া যাবে নাÑ এটা নাকি সম্মানের ঘাটতি! যুদ্ধাপরাধীদের মা করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু একসময়ে বলেছিলেন, বাঙালি জানে কিভাবে মা করে দিতে হয়! এখন তার কন্যা বলছেনÑ কারো উপকার করে প্রতিদান চাওয়া আদবের খেলাপ!
ভারত নির্বিচারে আমাদের দেশের সীমান্তের ভাইবোনদের গুলি করে পাখির মতো হত্যা করছে অথচ এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের সরকার এর কোনো প্রতিকারের উদ্যোগ নেয়নি! সে দিন তো বিএসএফ-প্রধান বাংলাদেশে এসে বলে গেলেন, সীমান্তে যারা নিহত হয় সেটাকে হত্যা না বলে মৃত্যু বলতে হবে। কী আজব ব্যাপার, ফালানীকে নির্মমভাবে হত্যা করে যারা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখল সেটাকে নাকি হত্যা না বলে মৃত্যু বলতে হবে!
কিছু দিন আগে সীমান্তবর্তী এলাকায় চালু হলো বাজার। এখানে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকেরা উন্মুক্তভাবে কেনাবেচা করতে পারবে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা দেদার তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক ব্যবসায় ভারতের প্রধান বাজার হলো বাংলাদেশ। আমাদের দেশের যুবসমাজকে মাদকের কালো থাবা অক্টোপাশের মতো গ্রাস করে ফেলেছে। মাদকাসক্ত হয়ে আজ তারা দেশের প্রতি কর্তব্য ভুলে গেছে, এখন তাদেরকে দিয়ে যাচ্ছেতাই করে নিচ্ছে সুবিধাবাদী গোষ্ঠী।
বাংলাদেশের কোনো চ্যানেল ভারতে দেখতে দেয়া না হলেও ভারতের প্রায় সব চ্যানেলই বাংলাদেশে দেখানো হয়। তাদের দেখানো সেই অশ্লীলতা আজ আমাদের ভাইবোনদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। এই ভাইবোনেরা এখন আর বাংলাদেশের চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলো ভালোবাসে না, তাদের যত প্রীতি হিন্দির প্রতি। শুধু যুবসমাজের কথা বলছি কেন আমাদের কর্তা ব্যক্তিরাও তাদের প্রতি বেশ অনুগত। ভারতের শিল্পীরা যে দিন আমাদের দেশে এলেন সেদিন তো আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ও তাদের প্রেমে সিক্ত হয়ে, হিতাহিত-জ্ঞানশূন্য হয়ে মাটিতে বসেই সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন!
এখন কথা হলোÑ আমাদের দেশের ভাষা যদি না থাকে, সীমান্তের নিরাপত্তা যদি আমাদের হাতে না থাকে, দেশের সম্পদ যদি অন্যের হয়ে যায়, দেশের অভ্যন্তর যদি অন্য কেউ নির্দ্বিধায় ব্যবহার করে তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল্য থাকল কোথায়। তাই আপে করে বলতে হচ্ছেÑ বাংলাদেশ তুমি কার!

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads