মঙ্গলবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

সরকারই এখন সন্ত্রাসের গডফাদার



সি রা জু র র হ মা ন

সেটা ১৯৯৬ সালের ঘটনা। শেখ হাসিনা অবশেষে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আগে থেকেই তিনি স্থির করে রেখেছিলেন—একবার যখন ক্ষমতা পেয়েছেন, সে ক্ষমতা আর কিছুতেই ছাড়া হবে না। তার বাবা আজীবন রাষ্ট্রপতি হওয়ার সাংবিধানিক ব্যবস্থা করার পরে বেশিদিন ক্ষমতা ভোগ করতে পারেননি, কিন্তু তিনি শুরু থেকে আটঘাট বেঁধে স্থায়ীভাবে গদি দখল করে রাখবেন।
শেখ হাসিনা নীলনকশার রাজনীতি ভালোবাসেন। এ ব্যাপারেও বেশকিছু পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। বিএনপির কথা এবং তাদের মুখে তার সরকার ও আওয়ামী লীগের কোনো সমালোচনা দেশের মানুষকে শুনতে দেয়া হবে না। হাসিনা বিগত শতাব্দীর মধ্যবর্তীকালীন কোনো কোনো স্বৈরশাসকের প্রাইভেট আর্মির (এবং তার বাবার রক্ষী বাহিনীর) অনুকরণে একটা সশস্ত্র ক্যাডার গঠন করেন। অস্ত্রবলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ভীতিপ্রদর্শন এবং ঘায়েল করার দায়িত্ব তাদের দেয়া হয়। তার পরিকল্পনার আরেকটা বড় দিক ছিল যে, তার সরকারের বিরোধীদের, বিশেষ করে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ কিংবা মিছিল করতে দেয়া হবে না।
সরকার ও আওয়ামী লীগ টেকনিক ছকেছিল যে বিএনপি কোনো সভা করার অনুমতি চাইলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ অনুমতি দেবে না। অনুমতি দেয়া হলেও আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের কোনো অঙ্গদল একই তারিখে একই সময়ে এবং একই স্থানে সভা কিংবা সমাবেশ করার ঘোষণা দেবে এবং ‘শান্তি বজায় রাখা’র নামে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন বিএনপির সভা নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে।
বিএনপিসহ কোনো বিরোধী দল মিছিল বের করলে হাসিনার ক্যাডাররা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, যাতে তাদের মিছিল করার সাধ মিটে যায়। সে বছরই মালিবাগে বিএনপির এক মিছিলে ক্যাডাররা আক্রমণ চালায়। ক্যাডারদের সর্দার ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং হাসিনার প্রথম ক্যাডারদের অন্যতম গডফাদার ড. এইচ বি ইকবাল। তারা মিছিলের ওপর গুলি চালায় এবং চার বিএনপি কর্মী মারা যায়। তখনকার সব পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে রিভলবারধারী ঘাতকদের আলোকচিত্র প্রকাশিত হয়। সেসব ছবিতে ঘাতকদের পরিষ্কার শনাক্ত করতে কারোই কোনো অসুবিধা হয়নি।
শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং বহু ধরনের দুষ্কৃতির সাত হাজারেরও বেশি মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। সেসবের মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি দুর্নীতির এবং মালিবাগে বিএনপির মিছিলের ওপর গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যার ব্যাপারে ড. এইচ বি ইকবাল ও অন্য ঘাতকদের বিরুদ্ধে মামলা।
লক্ষ্মীপুরের আবু তাহেরের ছেলেকে হত্যার অপরাধে প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছিল। তিনি সে জেলার বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে ছিনতাই করে নিয়ে যান। কয়েকদিন পরে তার টুকরো টুকরো লাশ বস্তাভর্তি অবস্থায় নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। নাটোরের গামা হত্যার দায়েও কয়েকজন প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দয়ার শরীর! তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করতে গিয়ে যারা প্রাণদণ্ড পেল তাদের জন্যে তার প্রাণ কাঁদে। অতএব রাষ্ট্রপতি (আসলে প্রধানমন্ত্রী, আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে) ফাঁসির আসামিদের ক্ষমা ও কারামুক্ত করে
দিলেন। তাও একজন-দুজন নয়, সর্বমোট একুশজন। যতদূর জানা যায়, মুক্তি পাওয়া এসব ব্যক্তি শাসকদলের হয়ে সন্ত্রাসে লিপ্ত আছে।
এমন ঘটনা শত শত হাজার হাজার ঘটছে প্রতিদিন। ছাত্রলীগ, যুবলীগের গুণ্ডা কিংবা মাস্তানরা দেশের কোথাও না কোথাও হত্যা ও ধর্ষণ করছে, নারী ও বালিকাদের উত্ত্যক্ত করছে, অন্যের সম্পত্তি (হিন্দুদের সম্পত্তিসহ) দখল করছে, ভর্তি বাণিজ্য ও টেন্ডার বাণিজ্য করছে, চাঁদাবাজি করছে, চাঁদা না দিলে হত্যা করছে, ছিনতাই করে পণ আদায় করছে। তাদের গায়ে হাত পড়ে না। তারা শেখ হাসিনার বরপুত্র। তাদের গায়ে হাত দেয় পুলিশের বাপের কী সাধ্য? অতএব তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পুলিশের নথিভুক্ত হয় না, উল্টো অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা হয়, নানাভাবে তাকে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়। দেশের মানুষ এখন আর পুলিশের কাছে অভিযোগ করে না। কোথাও কোথাও স্থানীয় লোক বিচার নিজেদের হাতে নেয়ার চেষ্টা করে, আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের গণধোলাই দেয়, অন্যেরা বিচারের ভার মহাবিচারক আল্লাহ তায়ালার ওপর ছেড়ে দেয়।
শেখ হাসিনা অবশ্যই বেছে বেছে তার সন্ত্রাসী অভিলাষ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করেন। আসলে প্রধানমন্ত্রী যাদের তার বাকশালী ও ‘অন্যান্য স্বার্থের’ জন্য প্রয়োজনীয় মনে করেন, মন্ত্রিপদে শুধু তারাই নিয়োগ পান। প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে অপদার্থ, অশিক্ষিত, খাণ্ডারণী, স্টুপিড ইত্যাদি নানা বর্ণনায় অভিহিত হতে শুনেছি। অন্ততপক্ষে কালেভদ্রে গ্রামে দেখা অশিক্ষিত ঝগড়াটে বুড়ির ইমেজই তিনি দিতেন। তার আমলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা কয়েক যুগ পিছিয়ে গেছে। কোনো দুষ্কৃতি ও অপরাধেরই তিনি সুরাহা করতে পারেননি। কুইক রেন্টাল বিদ্যুত্ কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশের ২০ হাজার কোটি টাকা লুটেরারা খেয়ে গেছে। জানা ছিল যে, এটিএন বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের সিনিয়র সংবাদদাতা মেহেরুন রুনি আর তার স্বামী অন্য একটি টেলিচ্যানেলের বার্তা সম্পাদক সাগর মোরশেদ অনুসন্ধান করে এ কেলেঙ্কারির বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহ করেছিলেন। গভীর রাতে নিজেদের শোবার ঘরে শিশুপুত্রের চোখের সামনে অত্যন্ত নৃশংসভাবে রুনি আর সাগর খুন হয়েছিলেন।
প্রয়োজন হলে ইস্তফা দিয়েও সাহারা খাতুন বলে দিতে পারতেন—খুনিরা ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা এতই শক্তিশালী যে তাদের গায়ে হাত দেয়ার সাধ্যি তার নেই। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি যা দেখিয়েছেন, সেটাকে সোজা কথায় ‘বাঁদর নাচ’ না বলে উপায় নেই। প্রথমে তিনি ‘আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে’ খুনিদের গ্রেফতার করার প্রতিশ্রুতি দিলেন সাংবাদিকদের এবং বাকি বিশ্বকে জানান দিয়ে। বলাই বাহুল্য ৪৮ ঘণ্টায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। বাজারে জোর গুজব শুরু হয়ে যায়, ঘাতকরা দুজন নাকি দুই শক্তিধর ব্যক্তির ছোট ভাই এবং হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের দেশের বাইরে ‘স্মাগল আউট’ করে দেয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গায়ের গন্ধ
সাহারা খাতুন তার অপ্রীতিকর কর্কশ স্বরে আরও অনেক বেহুদা কথা বললেন। মাসের পর মাস চলে গেল, কিন্তু কেউ গ্রেফতার হলো না। মঞ্চে উদয় হলো উচ্চ আদালত। তারা র্যাবকে রুনি ও সাগর হত্যার মামলার সুরাহার দায়িত্ব দিলেন। তাতে কেউ আশ্বস্ত বোধ করেছে বলে শুনিনি। এ ব্যাপারটায় আমার এখনও খটকা লাগে। খুনের ঘটনার সুরাহা করা পুলিশের দায়িত্ব, আর পুলিশ কাজ করে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তদারকিতে। হাইকোর্ট যদি পুলিশের বড়-কর্তাদের, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তলব করে কিছু তম্ভি করতেন, কিংবা দুটো সুপরামর্শ দিতেন তাহলে সেটা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হতো। কিন্তু র্যাবকে দায়িত্বদানের নির্দেশ? বাংলাদেশে কেউ র্যাবকে বিশ্বাস করে না, বিদেশিরা র্যাবের নামে ছি-ছি করে, থুথু ফেলে। বিচিত্র নয় যে র্যাব সে মামলার সুরাহা করতে পারেনি, সুরাহা তারা করবে না, কেননা সুরাহা করতে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা তাদের দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করলেন। হাসিনার পছন্দ বলিহারি বলতেই হয়। অনেক গন্ধ লেগে আছে এ মন্ত্রীর গায়ে। একাত্তরে স্বাধীনতার সমর্থক দেশপ্রেমিক আমলারা চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন, অনেকে কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধে শরিক হয়েছেন। কিন্তু মহীউদ্দীন খান আলমগীর? মোটেই না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানিদের সেবা করেছেন। তখন তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মদত দিয়েছিলেন কিনা কে জানে? অর্থাত্ ‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি’ তিনি নন। এই একই ব্যক্তি আবার বিপুল আসনের গরিষ্ঠতায় জয়ী খালেদা জিয়ার সাংবিধানিক সরকারকে উত্খাত করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন, জনতার মঞ্চ করেছিলেন এবং সরকারি কর্মচারীদের তাদের সাংবিধানিক কর্তব্য সরকারের নির্দেশ মেনে চলা থেকে বিরত থাকার জন্য প্ররোচনা দিয়েছিলেন। অর্থাত্ তিনি একজন রাষ্ট্রদ্রোহী। দুর্নীতির অভিযোগে বেশ কিছুকাল জেলে ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার বিবেচনায় এই লোকটি হচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তি। তার থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিচারবুদ্ধির ওপর কোনো আলোকপাত হয় কি? খালেদা জিয়ার কিছু দুর্বলতা আছে। ক্ষমতা ফিরে পেলে পরম শত্রুদের, এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহীদেরও তিনি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করেছেন। সেজন্যে পরে তাকে অনেক ভোগান্তি সইতে হয়, অনেক আক্ষেপ করতে হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর তার একটা দৃষ্টান্ত।
দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, ‘দুর্বলেরে রক্ষা করা আর দুর্জনেরে হানা’ সরকার, বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পবিত্র কর্তব্য। মন্ত্রী হওয়ার সময় সে কর্তব্য পালনের শপথ তিনি নিয়েছিলেন। সে কর্তব্যে কতটুকু সফল হয়েছেন তিনি এ যাবত্? বিচারের ভার জাতির ওপর। বিগত চার বছরে ছাত্রলীগ আর যুবলীগ দেশে যে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে, বাংলাদেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে সেটা উপলব্ধি করছে। চার বছর আগে তারা ভর্তি বাণিজ্য চালাতে গিয়ে ছাত্রশিবিরের এবং বিএনপির সমর্থক ছাত্রদের হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সেটা ছিল তাদের হাতেখড়ি। তার পর থেকে এমন কোনো দুষ্কৃতি নেই যা ছাত্রলীগ করেনি। মারপিট কিংবা খুন করার মতো যথেষ্ট ‘শত্রু’ এখন আর তারা পাচ্ছে না। তারা এখন ‘যুদ্ধ’ করছে নিজেদের দলের ভেতরেই। ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন-জখম হওয়ার খবর প্রায়ই পত্রিকায় পড়ি।
আইনশৃঙ্খলার প্রতি যাদের সামান্যতম শ্রদ্ধাও আছে তারা কি কখনও এই ছাত্রলীগকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োগ করবেন? অথচ সেটাই করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। প্রকাশ্যে তিনি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে পুলিশের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোর সভা-সমাবেশ ও মিছিল করে সমালোচনা ও প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার স্তব্ধ করে দেয়ার অনৈতিক ও অবৈধ নির্দেশ দিয়েছেন। এরা তাদের সন্ত্রাসী চরিত্র অনুযায়ী বিরোধীদের ওপর সন্ত্রাস চালাচ্ছে। স্বভাবতই পুলিশ তাদের বাধা দেয় না, সাহায্য না দিলেও নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে থাকে। অর্থাত্ পুলিশ এখন সন্ত্রাসের পরোক্ষ মদতদাতা। আর সরকার হচ্ছে সন্ত্রাসের গডফাদার। লোকে বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তারা আরও বলে চোরের সাতদিন হলেও গৃহস্থের অন্তত একদিন আসে। বিএনপি ও ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচিতে সেটাই হয়েছে।
ভোট ব্যাংকের বিশ্বাসে কঠোর আঘাত
দর্জি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিত্ দাস সকালে কাজে যাচ্ছিলেন। তার আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডার (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী) বিরোধী দলের কর্মী ও সমর্থকদের ধাওয়া করছিল। তারা শুধু ধরতে পেরেছিল বিশ্বজিেক, কেননা তিনি পালিয়ে যাওয়ার তাগিদ বোধ করেননি। ক্যাডাররা ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে আর লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তাকে খুন করে। পুলিশ কী করছিল? তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ‘তামাশা’ দেখছিল। এ ঘটনা সরকারের লেজে যেন আগুন লাগিয়ে দিল। হিন্দুরা শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগের ভোট-ব্যাংক। ছাত্রলীগ একজন হিন্দুকে খুন করেছে, সেটা সরকারের জন্য মোটেই ভালো কথা নয়।
অসত্য উক্তিতে বর্তমান সরকার চ্যাম্পিয়ন। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সৈয়দ আশরাফ ও মাহাবুবুল আলম হানিফ প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতারা তারস্বরে প্রতিবাদ শুরু করলেন : না, খুনিরা কোনোমতেই ছাত্রলীগের কেউ নয়। জামায়াত ও শিবিরসহ অন্য সবার ওপর দোষ চাপানোর কী করুণ অপচেষ্টা! কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের বুদ্ধিমত্তার ওপর অত বড় আঘাতের জন্য প্রস্তুত ছিল না। সব পত্রিকা আর টেলিভিশন চ্যানেলে খুনের ঘটনার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেসব ছবি থেকে অনেকেই অস্ত্র হাতে এবং আঘাতরত অবস্থায় খুনিদের শনাক্ত করতে পেরেছেন। শুধু কি তাই? এক্ষেত্রে সাক্ষী ছিল পুলিশ। তারা সরেজমিনে দাঁড়িয়ে থেকে হত্যার দৃশ্য দেখছিল। কিন্তু নিহত বিশ্বজিতের পরিবার, এমনকি হিন্দু সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরাও একবাক্যে ঘোষণা করলেন ছাত্রলীগই হচ্ছে প্রকৃত খুনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারের মুখে চুনকালি লেপা হয়ে গেল, কিন্তু সত্য কথন কিংবা অপরাধ স্বীকার এ সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন আটজন এবং ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে দাবি করছিলেন, তখন তাদের পুলিশ প্রতিবাদ করছিল; বলছিল, তখনও তারা কাউকে গ্রেফতার করেনি। এখন পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। তারাও উচিত দণ্ড পাবে কিনা কে জানে? আর দণ্ড পেলেই বা কী? সরকার তাদের ছেড়ে দিয়ে আবার বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে লেলিয়ে দেবে! সেটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগকে তারা বিএনপি ও ১৮ দলের জোটের প্রতিবাদ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট মনে করছে না। গোপনে কাশিমপুর জেল থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাসকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। শিগগিরই হয়তো সন্ত্রাসের কাজে লাগানো হবে তাকে। আর মনে রাখতে হবে যে, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২১ খুনিকে তারা এরই মধ্যেই ছেড়ে দিয়েছে।
সাংবাদিক দম্পতি রুনি ও সাগরের হত্যা নিয়েও চলেছে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা। তাদের হত্যার কোনো সুরাহা হয়নি। বস্তুত এ সরকারের আমলে নিহত ১৪ সাংবাদিকের কারও হত্যারই সুরাহা হয়নি। শেখ হাসিনার সরকার বিদেশিদের বোকা বানানোর ব্যর্থ চেষ্টায় জোরগলায় দাবি করে যে সংবাদ ও সংবাদ মিডিয়াকে তারা পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। লন্ডন টাইমসে এক লাখ পাউন্ডের বিজ্ঞাপন দিয়ে সেটা জাহির করার চেষ্টা করেছে তারা। কিন্তু বাংলাদেশের এবং বিদেশের মানুষ ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত দেখছে উল্টো রকম। আমার দেশ পত্রিকা এবং সে পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রোশ ও প্রতিহিংসার বিবরণ ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউবের কল্যাণে দুনিয়ার এপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। (লন্ডন, ১৭.১২.১২)
serajurrahman34@gmail.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads