বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

নারী নির্যাতনের ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত




মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও রমনা থানা পুলিশ দুই ঘণ্টার মতো অভিযান চালিয়ে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যালয় বড় মগবাজারে ৪৯৩ নম্বর গ্রিনভ্যালি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার স্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মিসেস সানোয়ারা জাহান এবং ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ২০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এটা সোমবার সন্ধ্যার ঘটনা। তাদের গ্রেফতারের আগে পুলিশ বাহিনীর যেসব সদস্য দু’ঘণ্টা ধরে ওই অ্যাপার্টমেন্টে ‘অভিযান’ চালিয়েছিলেন তারা সবাই পুরুষ। গ্রেফতারকৃতদের থানায় নেয়ার জন্য গাড়িতে তোলার সময় অবশ্য কয়েকজন মহিলা পুলিশকে দেখা গেছে। আটক নারীদের একজন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গ্রেফতারকৃতদের সারারাত এবং পরদিন মঙ্গলবার পড়ন্ত দুপুর পর্যন্ত রমনা থানা হাজতে গাদাগাদি করে রাখার পর প্রিজনভ্যানে করে নেয়া হয় ঢাকার কোর্ট হাজতে। সেখানে ঘণ্টাখানেক আটক রাখার পর তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে সিএমএম কোর্ট ভবনের অষ্টম তলার মহানগর হাকিম তারেক মইনুল ইসলাম ভুঁইয়ার আদালতে নেয়া হয়। আটকদের মধ্যে অন্তত অন্তঃসত্ত্বা হাবিবা নাসরিন কান্তাকে লিফট ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। মহানগর হাকিম সরকারপক্ষ এবং আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন নাচক করেন এবং একজন বাদে বাকি সবাইকে অর্থাত্ ২০ জনকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়ার জন্য পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেন। কান্তাকে রিমান্ডে না নিয়ে আদালত দৃশ্যত তার প্রতি ‘দয়া’ দেখিয়েছে।
একটি ছাত্রী সংগঠনের কার্যালয়ে পুরুষ পুলিশ দিয়ে ২ ঘণ্টা ‘অভিযান’ চালিয়ে ওই সংগঠনের সদস্যদের, যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী, যেভাবে গ্রেফতার করা হলো এবং চাওয়া মাত্র তাদের রিমান্ড নেয়ার অনুমতি পাওয়া গেল, তা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নারী নির্যাতনের চরম পরাকাষ্ঠা হিসেবে জাতির ললাটে স্থায়ী কলঙ্ক চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারা ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এক নিপীড়নমূলক আইন। এ আইনের ফলে পুলিশ যে কাউকে সন্দেহের বশে গ্রেফতার করতে পারে। এ আইন বাতিল, নিদেনপক্ষে সংশোধন করার জন্য সচেতন জনগণের মধ্যে দলমত নির্বিশেষে মতৈক্য থাকলেও ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থ সেদিকে পা বাড়ায় না বলেই আইনটি এখনও টিকে আছে। কিন্তু কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া প্রকাশ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তত্পর একটা সংগঠনের নারী কর্মীদের শুধু সন্দেহের বশে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে রিমান্ড চাওয়া হবে আর সঙ্গে সঙ্গে তা মঞ্জুর হয়ে যাবে—এমন কাণ্ড চোখের সামনে ঘটতে দেখেও বিশ্বাস হতে চায় না। পুলিশ সূত্রের অভিযোগ, ছাত্রীরা তাদের সংগঠন কার্যালয়ে বসে রাষ্ট্রবিরোধী তত্পরতা চালাচ্ছিল। এটা একটা বায়বীয় অভিযোগ। রাষ্ট্রবিরোধী তত্পরতা চালানোকালে যদি তাদের হাতেনাতে ধরা হয় তবে ঢাল হিসেবে ৫৪ ধারা ব্যবহার করতে হলো কেন? পুলিশ অভিযানকালে আলামত হিসেবে বেশ কয়েকখানা কোরআন শরিফ, সাহাবাদের জীবনী এবং কয়েকটি কম্পিউটার জব্দ করেছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশের মেয়েরা যদি তাদের সংগঠন কার্যালয়ে কোরআন শরিফের কপি রাখে, সাহাবাদের জীবনীসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ রাখে, সেটা কি আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ? তারা পর্দানশিন বলেই কি সন্দেহভাজন জঙ্গি? একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে গ্রেফতার করতে পুলিশের বাধেনি। জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিতে হাকিম সাহেবের হাত কাঁপেনি। এখন তার অথবা অনাগত সন্তানের যদি কোনো ক্ষতি হয় তবে সে দায় কার ওপর বর্তাবে। নারী নির্যাতনের এই বিভীষিকাময় বাস্তবতায় আমরা আজ বাকরুদ্ধ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমরা পানাহ চাই।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads