বুধবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১২

দেশ হারাল একজন বরেণ্য আলেম


দেশবরেণ্য আলেম ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইন্তেকাল করেছেন। রাত ১১টায় অসুস্থতা অনুভব করলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি এ পৃথিবী ত্যাগ করেন। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে অজস্র ভক্ত-অনুরক্তের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন দল ও সংগঠন এবং মাদরাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানানো হয়। তার মৃত্যুতে জাতি একজন বড় মাপের মানুষকে হারাল। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে আমরা শোকাভিভূত।
মাওলানা ফজলুল হক আমিনী ইসলামি শিক্ষা আন্দোলনের একজন অগ্রপথিক। কওমি শিক্ষা আন্দোলন নিয়ে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। উল্লেখযোগ্য সময় তিনি ধর্মীয় নেতা হিসেবে সেবা করেছেন জাতির। সেই সময় তিনি আলেম-ওলামাদের আস্থা অর্জন করেন। আলেমদের সমর্থন অল্প সময়ের মধ্যে তাকে দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।  জাতির এক দুঃসময়ে তিনি রাজনীতিতে আসেন। তিনি চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ছিলেন। বর্তমান ১৮ দলীয় বিরোধী জোটেরও শীর্ষ নেতাদের একজন ছিলেন তিনি। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন  চরিত্রের সাথে রাজনৈতিক দৃঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে তার কর্মকাণ্ডে। নানা অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। শাসক শ্রেণীর রক্তচু উপেক্ষা করে দাঁড়িয়েছেন বারবার। সে জন্য বিগত চার বছর তিনি অনেকটা গৃহান্তরীণ ছিলেন। সার্বক্ষণিক তার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সরকারের এতটা দমনপীড়ন, তাকে এক মুহূর্তের জন্যও দুর্বল করতে পারেনি। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতারের পর শক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীর মুক্তি চেয়েছেন এক বক্তৃতায়। তিনি ছিলেন ইসলামের একজন নিরলস কর্মী। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। মঙ্গলবার অসুস্থ হওয়ার আগে সহকর্মীদের নিয়ে সভা করছিলেন।
ইসলামপন্থীদের একত্র করাতে কাজ করেছেন তিনি। নিজেদের মধ্যে মত-পথের পার্থক্য দূর করে সবাইকে এক প্লাটফর্মে আনার জন্য কাজ করেছেন। তিনি ইসলামি আইন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। লালবাগ ও বড়কাটরা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও মুফতি ছিলেন। তার মৃত্যুতে জাতি একজন বর্ণাঢ্য ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হারাল, হারাল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন এক ব্যক্তিত্বকে। ইসলামি শক্তি  হারাল তার সামনের কাতারের এক মুজাহিদকে। আমরা তার রূহের মাগফিরাত কামনা করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads