রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২

দেশ গড়তে ঐক্যের বিকল্প নেই


আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এ জন্য দেশের মানুষকে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। জীবন দিতে হয় লাখো মানুষকে। সম্ভ্রমহানি হয় অনেক মা-বোনের। আজকের এই দিনে দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, যারা তাদের সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে জানাচ্ছি অভিনন্দন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নপুরুষদের আকাক্সা ছিল অনেক। তারা স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশ হবে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক, মানবিক, সহনশীল, শান্তিময় ও সমৃদ্ধ একটি দেশ। সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা কতটুকু  এগোতে পেরেছি সেটি মূল্যায়নের সময় এখন আমাদের সামনে।
জাতি হিসেবে বাঙালিরা আবেগপ্রবণ, অন্যায়ের প্রতিরোধে আপসহীন। আবার দেশকে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে নিরলসও। গত চার দশকের অধিক সময়ে অর্থনীতি ও সামাজিক খাতে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে এটিই তাকে সম্ভব করে তুলেছে। এ সময়ে দেশের দারিদ্র্য-পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। শিা ও স্বাস্থ্যসেবার বিস্তার ঘটেছে। উৎপাদনের ভিত্তি বেশ কিছুটা জোরালো হয়েছে। খাদ্যে এসেছে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। জাতিসঙ্ঘের একাধিক মহাসচিব সামাজিক খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করে স্বল্পোন্নত আফ্রিকান দেশগুলোর প্রতি বাংলাদেশকে অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, রাজনীতি ও প্রশাসনের সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা বাংলাদেশে এখনো ভিত্তি পায়নি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কাক্সিত মাত্রায় শক্তি অর্জন করতে পারেনি। মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। দুর্নীতি ডালপালা বিস্তার করেছে। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার প্রাতিষ্ঠানিক যে ব্যবস্থা করে বিশ্বে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলাম সেটি মুছে দেয়া হয়েছে। সঙ্ঘাতমুখর রাজনীতি বারবার আমাদের সব অর্জনকে পেছনে টেনে ধরতে চাইছে। জনসাধারণের গণতান্ত্রিক চেতনা বেড়েছে, দৃঢ় হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দাবি। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিও হয়েছে আগের চেয়ে অনেক জোরালো। কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে বিকশিত হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। অর্থনীতির বিকাশের যতটা সম্ভাবনা ছিল সেভাবে যেন অগ্রগতি হচ্ছে না। আমাদের সব ত্যাগকে বারবার ব্যর্থ করে দিতে চাইছে অসুস্থ রাজনীতি ও দুর্নীতি। পদ্মা সেতু, হলমার্কসহ আরো নানা কেলেঙ্কারি রাষ্ট্রের ওপর স্তরের দুর্নীতির চিত্রকে দেশের মানুষের সামনে প্রকটভাবে তুলে ধরেছে। সামাজিক অবক্ষয়ও আমাদের অগ্রযাত্রায় বারবার কালো ছায়া বিস্তার করছে। এক সময় ছাত্ররাজনীতি যেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও অগ্রগতির উত্তরাধিকার ছিল এখন তা নিত্যদিনের সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজয় দিবস হলো এমন এক মহান দিন, যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা, স্বপ্ন ও অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করি। এ দিন নতুন করে শপথ নিতে পারি স্বাধীনতার স্বপ্নপুরুষদের আকাক্সা অনুযায়ী বাংলাদেশ গড়ার। সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে হতাশা কাটিয়ে জাতির মধ্যে আশা ও উদ্দীপনার সঞ্চার করতে হবে। মাদক ও অনৈতিকতার করাল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে। সঙ্ঘাত ও অসহিষ্ণুতার রাজনীতিকে বিদায় দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির মহাপ্রাচীর গড়ে তুলতে হবে। এভাবেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয় সেনাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। বাংলাদেশ হবে একটি সুখী-সমৃদ্ধ জনপদ।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads