বুধবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১২

আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রহত্যার রাজনীতি


 হত্যাপাগল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : আওয়ামী লীগের রাজনীতির মূল এজেন্ডাটি কি- তা নিয়ে এখনও কি কারো সন্দেহ আছে? সেটি দেশের শান্তি-শৃক্মখলা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা জনকল্যাণ নয়। বরং সেটি যে কোনভাবে ক্ষমতায় থাকা এবং সে লক্ষ্যে রাজনৈতিক শত্রুদের নির্মূল। দেশে সন্ত্রাস বাড়ছে, বাড়ছে দ্রব্যমূল্য, বাড়ছে পানি-গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, বাড়ছে দুর্নীতি- কিন্তু তা নিয়ে সরকারের হুঁশ নেই। সরকারের নজর স্রেফ বিরোধীদের হত্যা, গুম ও নির্যাতন করায় এবং এভাবে গদীতে থাকায়। সে লক্ষ্যপূরণেই শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে অাঁস্তাকুড়ে ফেলেছে।
দেশে পুলিশ বাহিনী রয়েছে, র‌্যাবও আছে। কিন্তু তাদের দ্বারা রাজনৈতিক শত্রু-নির্মূলের এজেন্ডাটি ইচ্ছামত পালিত না হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের ময়দানে নামতে বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর প্রকাশ্য জনসভায় তাদের প্রতি জামায়াত-শিবির নির্মূলের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, নির্মূলের অর্থ কি? নির্মূলের অর্থ কাউকে আলিঙ্গন বা চুম্বন করা নয়। বরং সেটি নিরেট হত্যা। এটি বুঝতে কি বেশি বিদ্যাবুদ্ধি লাগে? এতদিন দেশে মশা-মাছি নির্মূলের অভিযান হতো। সে নির্মূলের অর্থ হতো কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে মশা-মাছির হত্যা বা বিনাশ। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীগণ আজ যখন নির্মূলের ঘোষণা দেন তখন দেশ থেকে মশা-মাছি নির্মূলের কথা বুঝান না। বুঝান রাজনৈতিক শত্রু নির্মূলের। মুজিব আমলে সে শত্রু বলতে বুঝানো হতো জাসদ ও চীনপন্থি কম্যুনিস্টদের। আর এখন ইসলামপন্থিরা।
কোন সভ্যদেশে কোন মন্ত্রী বা রাজনৈতিক দলের কোন নেতা প্রতিপক্ষ নির্মূলের এমন প্রকাশ্য ঘোষণা দিবে সেটি কি ভাবা যায়? এখানে অপরাধ তো হত্যায় উৎসাহ দেয়ার। এটি তো রাজনৈতিক সন্ত্রাস। কোন সভ্য দেশে এ অপরাধে কারো রাজনীতির অধিকার দূরে থাক, তাকে তো নিশ্চিত জেলে যেতে হয়। অথচ মহিউদ্দীন খান আলমগীর এখনও মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন নির্দেশে হত্যাপাগল খুনীরা যখন রাস্তায় নেমে কাউকে খুন করে- তখন সে খুনের দায়ভার তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। যে দেশে সুস্থ আইন-আদালত আছে সে দেশে যে খুন করে তাকেই শুধু জেলে নেয়া হয় না, সে খুনের পিছনে যে গডফাদারটি উৎসাহ জোগায় তাকেও ডান্ডাবেড়ি পড়ানো হয়। সম্প্রতি নিহত বিশ্বজিৎ দাশের বড় ভাই মানিক দাশ তিনি মোটা বিষয়টি সহজেই বুঝতে পেরেছেন। তাই ঢাকায় এক সমাবেশে তিনি তাঁর ভাইয়ের খুনের অপরাধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে রিমান্ডে নেয়ার দাবি তুলেছেন।
রাজনৈতিক শত্রু নির্মূলের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আজ থেকে তিরিশ বছর আগে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেছিল। হত্যা বা নির্মূলের যে রাজনীতিটি সাধারণতঃ বনে-জঙ্গলে লুকানো আন্ডার গ্রাউন্ড সন্ত্রাসীদের কাজ, আওয়ামী লীগ সে রাজনীতিকেই বাংলাদেশের প্রকাশ্য রাজপথে নামিয়ে আনে। ঢাকার রাজপথে সে সন্ত্রাসী রাজনীতির ভয়ংকর রূপটি দেশবাসী এবং সে সাথে বিশ্ববাসী দেখলো বিশ্বজিৎ দাশের নৃশংস হত্যার মধ্যদিয়ে। বিশ্বজিৎ অতীতের সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। সে একজন হিন্দু। খুনিরা যে ছাত্রলীগের সেটি জানতো বলেই সে নিজের হিন্দু পরিচয়টি বার বার পেশ করেছে। হিন্দুরা যে আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত ভোটব্যাংক সেটি বিশ্বজিৎ তাদের জানিয়ে দিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিল। নইলে সে মরণের মুহূর্তে তার মগজে সে যে হিন্দু সে পরিচয় দেয়ার খেয়াল আসবে কেন? কিন্তু তাতে তাঁর প্রাণ বাঁচেনি। হত্যাপাগল পশুরা কখনো কারো ধর্ম দেখে না, ছাত্রলীগের খুনিদের কাছে বিশ্বজিতের হিন্দুপরিচয়ও তাই গুরুত্ব পায়নি। খুনি তো অন্যকে খুনের আগে তার নিজের বিবেককে খুন করে। বিবেক বেঁচে থাকলে কেউ কি রাজপথের নিরীহ মানুষকে খুন করে? আর ছাত্রলীগ যে এমন খুনিদের দিয়ে পরিপূর্ণ সেটি কি প্রমাণের অপেক্ষা রাখে? বাংলাদেশের হিন্দুদের জমিজমা ও তাদের মন্দিরের ভূমি কোন মাওলানা-মৌলভীর হাতে জবরদখল হয়নি। হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় এক মন্দিরের বিশাল জমি আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে বেদখল হয়েছে এবং সে বিষয়ে পত্রিকায় রিপোর্টও এসেছে। আওয়ামী লীগ যে শুধু হিন্দুদের নয়, কোন মানুষেরই বন্ধু হতে পারে না, সেটি বাংলাদেশে বহু মানুষ এখনও বুঝতে না পারলেও বিশ্বজিৎ প্রাণ দিয়ে বুঝে গেছে।
আওয়ামী লীগের খুনের রাজনীতি : প্রশ্ন হলো- ছাত্রলীগে এত খুনি ও এত সন্ত্রাসী কি করে সৃষ্টি হলো? মশা-মাছি হঠাৎ বেড়ে ওঠে না, সে জন্য দূষিত পরিবেশ চাই। সন্ত্রাসের পরিচর্যাতেও তেমনি উপযোগী রাজনৈতিক সংস্কৃতি চাই। আওয়ামী লীগ সেটিই সৃষ্টি করেছে। চেঙ্গিস খাঁ ও হালাকু খাঁ দেশ জয় ও লুণ্ঠনের স্বার্থে তার গোত্রের হত্যাপাগল লোকদের নিয়ে ভয়ংকর এক সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিল। সে বাহিনীর লোকেরা বেড়ে উঠেছিল অতি রোগগ্রস্ত চেতনা নিয়ে। ভয়ংকর নিষ্ঠুরতাই ছিল তাদের চরিত্রের প্রধান রূপ। লাখো লাখো নিরপরাধ নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ মানুষকে সে বর্বরসৈনিকেরা আনন্দচিত্তে হত্যা করতে পারতো। হত্যার পর তাদের কর্তিত মাথা নিয়ে উৎসবও করতো। ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদরাসা ও লাইব্রেরিগুলোতে তারা আগুন দিত। বাগদাদ, সমরকন্দ, বোখারার ন্যায় মুসলিম সভ্যতার বিশাল বিশাল নগরগুলোকে তারা উৎসব ভরে ধ্বংস করেছে। এসব নগরীর লাখ লাখ নাগরিকদের তারা হত্যা করেছে। তবে চেতনার এ ভয়ংকর রোগে শুধু হালাকু-চেঙ্গিস ও তার সেনাবাহিনীর লোকেরাই আক্রান্ত হয়নি। কলেরা-যক্ষা-এইডস-য়ের সংক্রামক জীবাণু সমাজ থেকে নির্মূল হয় না, নানা জনপদে তা বার বার ফিরে আসে। তেমনি সংক্রামক রুগ্ন চেতনাও মারা যায় না। হালাকু-চেঙ্গিসের চেতনাও তাই বহু দেশে বহু হালাকু-চেঙ্গিস-হিটলারের জন্ম দিয়েছে। বর্তমান সরকারের যে সে সংক্রামক চেতনায় ভয়ানকভাবে আক্রান্ত সে প্রমাণ কি কম? তবে মুজিব ও হাসিনা তারা অনুসারিদের নিয়ে কোন ডাকাত দল গড়েননি, হালাকু চেঙ্গিসের ন্যায় কোন সেনাবাহিনীও গড়েননি। গড়েছেন রাজনৈতিক দল। সে দলটি হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। লক্ষ্য, প্রতিপক্ষ বিরোধী দলগুলোর নিরস্ত্র নেতা-কর্মীদের নির্মূল করা এবং দেশের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা করা। এক সময় তাদের সন্ত্রাস থেকে মওলানা ভাসানীর ন্যাপ যেমন রক্ষা পায়নি, রক্ষা পায়নি মুসলিম লীগও। রক্ষা পায়নি চীনপন্থি কম্যুনিস্টরা। তেমনি আজ  রক্ষা পাচ্ছে না জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
চেঙ্গিস খাঁ ও হালাকু খাঁ'দের বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের পিছনে কোন উন্নত আদর্শ ও ন্যায়নীতি ছিল না, ছিল হিংস্র পাশবিকতা। মুজিব ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিজয়ের পিছনেও কোন উন্নত আদর্শ ও ন্যায়-নীতি নাই। ১৯৭০ সালে ১৮ জানুয়ারিতে পল্টনে তাঁর দলীয় কর্মীরা জামায়াতের মিটিংয়ে হামলা করে তিনজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিল এবং আহত করেছিল শত শত নিরীহ মানুষ। এভাবে পন্ড করে দিয়েছিল জামায়াতের জনসভা। ঐ একই স্থানে ২৫ জানুয়ারিতে জনসভা ছিল জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরির নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগের। সেটিও হতে দেয়নি। সে ময়দানে নূরুল আমীন সাহেবের নেতৃত্বাধীন পিডিপির জনসভাও হতে দেয়নি। এই হলো আওয়ামী লীগের সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির নমুনা। দলটি ১৯৭০-এর নির্বাচনে একই রূপ সন্ত্রাস জারি রেখেছিল রাজধানীর বাইরেও। এভাবে কোন দলকেই তারা জনগণের কাছে যেতে দেয়নি।
যে কোন সভ্যদেশেই গণতন্ত্র হত্যা এক গুরুতর অপরাধ। প্রতিদেশে সে অপরাধে অপরাধীকে প্রাণদন্ড দেয়া হয়। বিলেতে গণতন্ত্র হত্যার অপরাধে দেশের রাজা প্রথম চার্লসকে সপ্তদশ শতাব্দীতে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। গণতন্ত্রের হত্যাকারি হুসনী মোবারককে আজ  জেলে রাখা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার দলকে। লিবিয়ার গাদ্দাফীকেও হত্যা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার দলকে। তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলীকে দেশ থেকে পলায়ন করে বাঁচতে হয়েছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী সে দলটি এখনও পুরোন শিকড় নিয়ে বেঁচে আছে এবং আজ আবার বাকশালী স্বৈরাচার ফিরিয়ে আনার সুযোগ পেয়েছে। ফল দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশে আজ শুধু গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাই বিপন্ন হয়নি, বিপন্ন হয়েছে জনগণের জানমালও। বিশ্বজিৎ খুন হয়েছে, ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে এবং বহু জামায়াত-শিবিরকর্মী নিহত ও নির্যাতিত হচ্ছে তো সে বিপন্নতা নিয়েই।
আদালত এখন মেঠো আদালত : আওয়ামী আক্রমণের শিকার দেশের বিচার-আদালতও। কারণ স্বাধীন বিচার বাঁচলে অপরাধী ও খুনিদের বাঁচাটি অসম্ভব হয়ে ওঠে। তাই ডাকাত পাড়ায় ন্যায়-বিচারের সালিশ বসে না। বরং চলে ডাকাত-বিরোধীদের নির্মূলের আয়োজন। তেমন একটি লক্ষ্যকে সামনে নিয়েই আওয়ামী লীগ দেশের আদালতকে মেঠো আদালতে পরিণত করেছে। মেঠো আদালতের সে মডেলটি তারা খাড়া করেছিল নববইয়ের দশকে। নববইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল না। কিন্তু ক্ষমতার বাইরে থাকলেও রাজনৈতিক শত্রু নিধনের এজেন্ডা থেকে তারা সরে দাঁড়ায়নি। সে এজেন্ডা নিয়েই তারা সেদিন মাঠে আদালত বসিয়েছিল। সেটি সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের মাঠে। এরূপ মেঠো আদালতে আসামির বিরুদ্ধে যেমন বহু উকিল থাকে, তেমনি উকিলের চেয়েও পক্ষপাতদুষ্ট বহু বিচারক থাকে। কিন্তু থাকে না আসামির পক্ষে কোন উকিল। থাকে না আদালতে আসামীর কথা বলার সুযোগ। তেমন একটি মেঠো আদালত নিয়েই আওয়ামী লীগের অহংকার। আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতের সামনে থেকে পুলিশের হাতে সাক্ষীও হাইজ্যাক হয়ে গেছে। আজ  অবধি তার কোন সন্ধান মেলেনি। এই হলো বিচারের নমুনা! কোন কিছুকে আন্তর্জাতিক করতে হলে নিজ দেশের বাইরে অন্যদেশের লোকদের সাথেও তার সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে হয়। ‘দি হেগ'-এ যে আন্তর্জাতিক আদালত রয়েছে তাতে নানা দেশের বিচারক যেমন আছে, তেমনি উকিলও আছে। কিন্তু বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সে সবের বালাই নাই। একজন বৃটিশ আইনবিদ এ আদালতে আসামি পক্ষের উকিল হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নামে মস্করা আর কাকে বলে!
ইসলামপন্থিরা যে আওয়ামী লীগের চিরকালের শত্রু সেটি আওয়ামী লীগ বুঝে। ফলে শত্রুনিধনের সে প্রক্রিয়াকেও তারা চালু রাখতে চায়। তাই অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বা মাওলানা নিজামীর মতো লোকদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েই তারা বিচারের কাজ শেষ করতে রাজি নয়। মানবাধিকার বিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে নিজেদের সকল রাজনৈতিক শত্রুদের নির্মূলের এ ধারাকে তারা অব্যাহত রাখতে চায়। তাদের যুক্তি, একাত্তরের রাজাকারদের অনেকের মৃত্যু হলেও নতুন রাজাকার জন্ম নিচ্ছে। এ নতুন রাজাকারদেরও তার বিচার চায়। তাদের খুনের কাজে আদালতের বিচারকদের তারা ব্যবহার করতে চায়। আওয়ামী লীগের নেতাগণ তাদের সে হিংস্র অভিপ্রায়ের কথা গোপনও রাখেনি। আরো ঘোষণা দিয়েছে, স্রেফ জামায়াত নেতাদের বিচার নিয়ে তারা খুশি নয়, জামায়াতের সমর্থন নিয়ে যারা ক্ষমতায় গিয়েছে তাদেরকেও তারা কাঠগড়ায় তুলবে। অর্থাৎ আদালতে তুলবে বিএনপির নেতাদেরও। তেমন একটি লক্ষ্য পূরণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নামের এ মেঠো আদালতকে তারা একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চায়।
কারা একাত্তরে অস্ত্র হাতে ময়দানে ছিল সেটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারা এখন আওয়ামী লীগ ও ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলে এবং কারা শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায় সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি চিত্রিত হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ রূপে। শাস্তিযোগ্য অপরাধ রূপে চিহ্নিত হচ্ছে ঘরে জিহাদ ও শরিয়তি বিধান বিষয়ক বই রাখাটিও। এ অপরাধে অপরাধীদের তালিকায় তারা দিন দিন নতুন নাম যোগ করতে থাকবে। এবং যাকে ইচ্ছা তাকে তারা কাঠগড়ায় তুলবে। আদালত এভাবে ব্যবহৃত নির্যাতনের হাতিয়ার রূপে। হিটলারের গ্যাস চেম্বারে গিয়ে ভস্ম হওয়ার জন্য কি ইহুদীদের অপরাধী হওয়ার প্রয়োজন পড়তো? বিশ্বজিৎকে নিহত হওয়ার জন্যও কি অপরাধী হতে হয়েছে? তেমনি আওয়ামী ক্যাডারদের আদালতে শাস্তি পাওয়ার জন্যও কি অপরাধী হওয়ার প্রয়োজন পড়বে? সরকার এমন আদালত থেকে শুধু একটি রায়ের জন্য পাগল, বিচারের জন্য নয়।
বাকশাল নেই। কিন্তু গণতন্ত্র হত্যার চেতনাটি মরেনি। তা দারুণভাবে বেঁচে আছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের মাঝে। বিরোধীদের নির্মূলের নীতিই ছিল বাকশাল রাজনীতি। সে নীতিটি যে আওয়ামী লীগে কতটা প্রকট, সেটি শুধু রাজপথে নিরীহ মানুষ হত্যাতেই প্রকাশ পাচ্ছে না। ফুটে উঠছে নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতেও। সারদা'র পুলিশ এ্যাকাডেমিতে প্রদত্ত এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘পুলিশ যেন ধৈর্যের সাথে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করে।’’ কিন্তু প্রশ্ন হলো, জামায়াত-শিবিরকে কেন প্রতিহত করা হবে? তারা কি বাংলাদেশের নাগরিক নয়? রাজনীতির অধিকার কি তাদের মৌলিক মানবাধিকার নয়? সে অধিকারে হাত দেয়া তো সন্ত্রাস। বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দলের রাজনীতির যতটা অধিকার আছে, জামায়াত-শিবির কর্মীরও সে পরিমাণ অধিকার আছে। তা থেকে এক বিন্দু কম নয়। এমন প্রতিহত করার রাজনীতি কি কারো মানবাধিকারের ওপর হামলা নয়? আর এমন হামলা কি শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ নয়? তাছাড়া রাজনীতিতে কোন দলকে প্রতিহত করার দায়িত্ব কেন পুলিশ নিবে? বরং পুলিশের দায়িত্ব হলো, যারা অন্যদের রাজনীতি প্রতিহত করার নামে তাদের মানবিক অধিকারে হাত দেয় তাদের গ্রেফতার করা ও কোর্টে চালান দেয়া।
যে কোন দেশেই বিভিন্ন দলের মাঝে রাজনৈতিক লড়াই থাকে। তবে সেটি হতে হবে রাজনৈতিক ভাবে। পুলিশ দিয়ে নয়। দলীয় লোকদের দিয়েও নয়। সরকার কি জানে না যে দেশ আজ ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে। চোরদের হাতে দেশের শেয়ার বাজার থেকে ২০-৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে। হলমার্ক গ্রুপ একাই চুরি করে নিয়েছে সোনালী ব্যাংকের বহু হাজার কোটি টাকা। দুর্নীতির কারণে পদ্মা ব্রিজের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। চোরদের দৌরাত্ম্য দেখে বিশ্বব্যাংক ঋণদান থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পথেঘাটে সন্ত্রাসীদের হাতে নিঃস্ব হচ্ছে, বহু হাজার মানুষ পথে-ঘাটে মারা যাচ্ছে, শত শত মহিলা ধর্ষিতাও হচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী এনিয়ে পুলিশকে সক্রিয় হতে নসিহত করেননি। কারণ একটাই। তা হলো, এসব খুনি, সন্ত্রাসী, চোরডাকাত এবং ধর্ষকগণ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক শত্রু নয়। তারা সরকারের ব্যর্থতার সমালোচকও নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করে তারা রাস্তাতে নামে না, হরতালও করে না। ফলে তাদের দমন করাটি সরকারের প্রায়োরিটি নয়। কিন্তু যারা তাঁর অপশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে রাস্তায় নামে, তিনি তাদের নির্মূল চান। এবং পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের প্রতিহত করতে।
বিশ্বজিৎ দাশের খুনই কি প্রথম খুন?
বিশ্বজিৎকে নির্মম হত্যার পর ডেইলী স্টার, সমকাল, কালের কণ্ঠ, মানবজমিন, প্রথম আলোর ন্যায় আওয়ামী লীগের সহানুভূতিশীল পত্রিকাগুলোও এরূপ নিষ্ঠুর হত্যার নিন্দা করেছে। তারাও বিচার দাবি করেছে। আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক কলামিস্টদের অনেকে নিন্দা করে কলামও লিখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি এটাই প্রথম খুন? এই প্রথম যেন তাদের বিবেক মৃত অবস্থা থেকে জেগে উঠলো। এটি কি এজন্য যে বিশ্বজিৎ দাশ একজন হিন্দু? বিশ্বজি-এর ন্যায় আরও মানুষ নিহত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু কোন একটি খুনেরই কি বিচার হয়েছে? মুজিব আমলে যেমন হয়নি, হাসিনার আমলেও হচ্ছে না। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জামায়াতের সমাবেশে হামলা করে ৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। হত্যার পর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাশের ওপর নাচানাচি করেছিল। সে হত্যা কি বিশ্বজিৎ হত্যার চেয়ে কম নৃশংস ছিল? মিছিল করা মানবিক অধিকার। সে অধিকার খুনের মধ্যদিয়ে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাই এ অপরাধ যেমন খুনের অপরাধ তেমনি মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ। কিন্তু আওয়ামী লীগের সে খুনিদের আজও  শাস্তি হয়নি। তা নিয়ে কোন মামলাও হয়নি। কিন্তু ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে সে নৃশংস হত্যা নিয়ে কি আজকের ন্যায় পত্রপত্রিকায় এত লেখালেখি হয়েছিল? ছাপা হয়েছিল কি কোন ছবি? হয়েছিল কি এত টিভি টক শো? এরশাদের শাসনামলে রাজশাহীর দুইজন শিবির কর্মীকে যেভাবে খুন করা হয়েছিল সেটি কি কম বীভৎসও নিষ্ঠুর? শিবির কর্মীদের মাথা ইটের উপর রেখে অন্য ইট দিয়ে জোরে জোরে গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে মাথার খুলি ভাঙ্গা হয়েছিল। আদালতে সে নৃশংস খুনের বিচারও হয়েছিল। খুনিদের শাস্তিও হয়েছিল। কিন্তু সে খুনিদের শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। সে গুরুতর অপরাধের শাস্তি এরশাদকে দিয়ে শেখ হাসিনা মাফ করিয়ে নিয়েছিলেন। কিভাবে মাফ করিয়েছিলেন সে বিবরণ দিয়েছেন এরশাদের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান তার স্মৃতিচারণমূলক বইতে। এরশাদ তখন তাঁর গদী বাঁচাতে মিত্র খুঁজছিল। মিত্র রূপে কাছে ভেড়াতে চাচ্ছিল শেখ হাসিনাকে। সে অছিলায় হাসিনাকে দাওয়াত করে প্রেসিডেন্টের অফিসে আনা হয়। আতাউর রহমান খান লিখেছেন, এরশাদের অফিসে ঢুকে শেখ হাসিনা বললেন রাজশাহীর শিবিরকর্মী হত্যার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের প্রথমে শাস্তি মাফের ওয়াদা দিতে হবে এবং সেটির পরই তিনি আলোচনায় বসবেন। এরশাদের কাছে তার গদীর স্বার্থটাই ছিল বড়। খুনিদের শাস্তি তার কাছে কোন বিবেচ্য বিষয়ই ছিল না। নিজেদের গদী বাঁচাতে এমন স্বৈরাচারিরা সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের সাজা মাফ করতে যেমন রাজী, তেমনি প্রস্তুত হাজার হাজার খুনিকে রাস্তায় নামাতেও। স্বৈরাচারি আইয়ুবও ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নিজের গদী বাঁচাতে শেখ মুজিবের উপর থেকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ন্যায় মামলাটিও তুলে নিয়েছিলেন।
প্রতি পেশার লোকেরাই নিজ পেশায় সফলতা নিয়ে উৎসব করে। খুনের পর তাই উৎসব করে খুনিরা। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, বিশ্বজিৎয়ের হত্যার পর এ খুনিরা তাই উৎসব করেছে। বিশ্বজিৎয়ের রক্তে হাত রাঙিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতার জন্মদিনে খুনিরা সে রাতে নাচানাচি করেছে। নববইয়ের দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতারা তেমনি এক উৎসব করেছিল। সেটি ছিল ধর্ষণে সেঞ্চুরির উৎসব। সে খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সমগ্র মানব ইতিহাসে এ ছিল এক বিরল পৈশাচিক উৎসব। জঘন্য অপরাধীরও এমন রুচি সচরাচর থাকে না। কিন্তু এমন অপরাধীদের ভিড় আওয়ামী লীগে।
ডাকাতের পল্লীতে অন্যায়কে অন্যায় এবং জুলুমকে জুলুম বলা যায় না। বরং সে সেখানে হয় নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা নিয়ে উৎসব। হিটলারের জামানায় গ্যাস চেম্বারে লাখ লাখ ইহুদীর মৃত্যুতেও জার্মানীতে তাই প্রতিবাদ হয়নি। প্রতিদেশে ফ্যাসিস্টরা একই ভাবে মানুষের বিবেককে হত্যা করে। বাঙালির বিবেকে আওয়ামী লীগ যে কতটা পচন ধরিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের কর্ম ও আচরণ হলো তারই প্রমাণ। আজও সে পচন নিয়ে বেঁচে আছে দলটির হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক।
খুনিরা কি শাস্তি পাবে?
বিশ্বজিৎয়ের হত্যার পর অনেকেই আজ বিচার চাচ্ছে। বিচার চাইলেই কি বিচার পাওয়া যায়? চেঙ্গিস খান কখনোই তার নৃশংস খুনি সৈনিকদের বিচার করেনি। হিটলারও করেনি। পদ্মা-ব্রিজ নিয়ে দুর্নীতির সাথে সাবেক যোগযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন জড়িত সে প্রমাণ নানা মহল থেকে হাজির করলেও তার বিচার হতে দেয়া হচ্ছে না। চাপের মুখে দুদক মামলা রুজু করলেও সেটি নামমাত্র। ভারতকে সে দেশের ভূমি, পদ্মার পানি বা দেশের মধ্যদিয়ে করিডোর দিতে রাজী। কিন্তু নিজদলের অপরাধীদের বাঁচাতে তাঁর নীতিতে কোন নড়চড় নেই। বাংলাদেশের আদালতে সাজা পেয়েছে এমন খুনিদের মধ্য থেকে ২৫ জনকে বিগত ৪০ বছরে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ক্ষমা করা হয়েছে। সে ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে ক্ষমা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ শাসনামলে। কারণ, সাজাপ্রাপ্তরা এসব খুনিরা হলো আওয়ামী লীগের বা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্কিত।
কলঙ্ক ঢাকার চেষ্টা : বাংলাদেশ ডাকাতপাড়া নয়, বর্বর দস্যু কবলিত হালাকু-চেঙ্গিসের দেশও নয়। দেশবাসী সবাই আওয়ামী লীগের ক্যাডারও নয়। এ দেশের বহু কোটি মানুষ মানবিক পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চায়। আওয়ামী লীগের ভয় বেড়েছে মানবতাসপন্ন এসব মানুষদের নিয়ে। বিশ্বজিৎ হত্যার পর আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি যে দেশে-বিদেশে ড্রেনে গিয়ে পড়েছে সেটি দলটির অনেকেই টের পেয়েছে। পত্র-পত্রিকায় খুনিদের হামলার রক্তাক্ত ছবি ছাপার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক বিষয়। রাজনৈতিক খুনের এরূপ সচিত্র বিবরণ আর কখনো এভাবে সামনে আসেনি। এমন বীভৎস বর্বরতার নিন্দা জানাতে বেশি মানবতা লাগে না। ফলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কান্ড দেখে আম-জনগণও ধিক্কার দিচ্ছে। মিডিয়ার এ সাহসী কর্ম শুধু খুনিদেরই নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আসল চেহারাও জনগণের সামনে জাহির করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের চরিত্রের উপর এখন আর কোন পর্দা নাই।
বিপদ বুঝে আওয়ামী লীগ এখন শুরু করেছে চুনকালি মাখা ভাবমূর্তির উপর হোয়াইট ওয়াশের চেষ্টা। শুরু করেছে নতুন প্রপাগান্ডা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ দাবি করেছেন, হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী নন। অথচ তারা উভয়ই অসত্য বলেছেন খুনিরা যে ছাত্রলীগের কর্মী তা নিয়ে প্রথম আলো ১৫/১২/১২ তারিখে একটি বিশাল অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছেপেছে। সেটির কিছু অংশ এরূপ : ‘‘বিশ্বজিৎ দাশ হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্তরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। কয়েকজনের পরিবার ও এলাকাবাসী এবং ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এইচএম কিবরিয়ার পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের সমর্থক। গতকাল গ্রামের বাড়িতে গেলে কিবরিয়ার বাবা প্রথম আলোকে বলেন, আগে কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করে কিবরিয়া। কিবরিয়ার বড় ভাই আসাদুজ্জামান শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। গ্রেফতারকৃত কাইয়ুম মিয়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী। রাজন তালুকদারের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিশ্বজিৎ বেশি আহত হন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা। রাজন পুরো এলাকায়ই ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। গতকাল গ্রামের লোকজন জানায়, রাজন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। এলাকায়ও দলের মিছিল-মিটিংয়ে সে অংশ নেয়। রাজনের বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘রাজন ছাত্রলীগের রাজনীতি করে। সে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়কের (সাবেক) কাছাকাছি থাকে।’’ একই কথা বলল গতকাল গ্রেফতার হওয়া সাইফুলের পরিবার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র সাইফুলের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চন্দনাবাড়ীর পূর্বপাড়ায়। সাইফুলের এলাকার সহপাঠীরা প্রথম আলোকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সাইফুল ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওনের গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছার নাছিরপুর গ্রামে। বাবা লুৎফর রহমান বলেন, ‘‘ঢাকায় যাওয়ার পরে ছাত্রলীগ করা শুরু করল।' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুনের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার খলিলপুর সরদারপাড়ায়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা বলেন, মামুনকে তাঁরা ঢাকার ছাত্রলীগের একজন বড় নেতা হিসেবেই জানেন। চাপাতি দিয়ে বিশ্বজিৎকে কুপিয়েছে রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল। তাঁর বাবা আনসার মিয়া বলেন, ‘ঢাকায় রাজনীতিতে জড়িয়ে সে উচ্ছৃক্মখল হয়ে পড়ে।' মীর মো. নূরে আলম ওরফে লিমন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের শুল্লিপাড়া গ্রামের মীর মো. নুরুল ইসলামের ছেলে। নুরুল ইসলাম বংশানুক্রমে আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে তিনি জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বজিৎ হত্যায় জড়িত যাঁদের নাম-ছবি গণমাধ্যমে এসেছে তাঁরা প্রত্যেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী।’’

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads