শনিবার, ৩ মে, ২০১৪

সাত ব্যক্তি খুন হওয়ার পর সরকারের অভিযান : চারদিন আগে অভিযান হলো না কেন?


যেভাবে চারদিকে গুম এবং খুনের পাশবিকতার মহোৎসব শুরু হয়েছে তার ফলে মানুষের, বিশেষ করে দেশ ও দশ নিয়ে যারা চিন্তা করেন, তাদের সব চিন্তা ভাবনা এলো মেলো হয়ে এক জায়গায় এসে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আর সেটি হলো, তাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে। স্ত্রী, পুত্র, সন্তান সন্ততি নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। নিজের, পরিবারের এবং আতœীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের সাহয্যে নিজের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে, সেই সাথে আত্মীয় বন্ধুদের নিরাপত্তা বিধানেও যতটুকু সম্ভব অবদান রাখতে হবে। আগে ভেবেছিলাম, ভারতের নির্বাচন সম্পর্কে কিছু লিখবো। কারণ আগামী ১২ মে ভারতের নির্বাচন শেষ হবে এবং ১৬ মে একযোগে পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ বা লোকসভার ৫৪৩টি আসনের ফলাফল ঘোষিত হবে (৫৪৫টি আসনের মধ্যে ২টি আসনে ভারতের প্রেসিডেন্ট সাংবিধানিক ব্যবস্থায় ২ ব্যক্তিকে নির্বাচন করবেন এবং তারা লোকসভার সদস্য হবেন)। সেজন্য ওই বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু দেখে শুনে মনে হচ্ছে যে, হত্যা, খুন এবং গুম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, অথবা ক্ষমতাধর মহল ইচ্ছে করেই নিয়ন্ত্রণের লাগাম ছেড়ে দিয়েছে। কারণ নারায়ণগঞ্জের সেই ভয়াবহ ও বিভৎস সাত অপহরণ ও খুনের রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই শুক্রবার ব্যবসায়ী সাইফুলকে অপহরণ করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত অপরহরণকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ওই সাত খুনের কোনো কিনারা এখন পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি। শুক্রবারের অপর একটি খবরে প্রকাশ, ওই দিন এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি ছিলো সম্পূর্ণ নগ্ন। সেই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি অথবা পুলিশ তার পরিচয় জানতে পারেনি। একই দিন মিরপুরে এক ব্যক্তির  ছিন্নভিন্ন লাশ রাস্তায় পড়ে ছিলো। ওই লাশের ওপর দিয়ে অনেক গাড়ি ঘোড়া পার হওয়ার ফলে মৃত দেহ শতছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া মফস্বলের গুম ও খুনের খবর তো রয়েছেই। যারা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়েন অথবা টেলিভিশন সংবাদ দেখেন তারা এসব খবর মোটামুটি জানেন।
নারায়ণগঞ্জে যখন সাত খুনের লাশ শীতলক্ষ্যার কালো পানিতে ভেসে ওঠে তখন মেহেরপুরে ৩ ব্যক্তি নিখোঁজ হন। গত ১ মে দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, মেহেরপুরে ব্যবসায়ী, প্রতিবন্ধী ও শিশুসহ ৪ জন নিখোঁজ থাকলেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। কেউ তাদের অপহরণ করেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশসহ কোনো সূত্র। স্থানীয় সূত্র জানায়, ২২ এপ্রিল গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া থেকে অপহৃত হন রাঙ্গুনিয়ার সরববাটা গ্রামের ফিরোজ আহম্মেদের ছেলে তামাক ব্যবসায়ী তাইজুল ইসলাম। গত ৯ দিনেও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গাংনী থানার ওসি রিয়াজুল ইসলাম জানান, তাইজুল ইসলামকে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে তুলে নিয়ে গেছে ব্যবসায়িক পার্টনাররা। উপজেলার পশ্চিম মালসাদহ গ্রামের নাননুর রহমান (১৫) নামের এক কিশোর গত দু'মাস যাবৎ নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ নাননুর পিতা আলফাজ উদ্দীন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। নাননুর পিতা জানান, গাংনী বাজারের লিটন মটরসাইকেল মিস্ত্রির ঘরের কাজ করতো নাননু। ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে আসার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
এছাড়া গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আনিসুর রহমান নামের এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। সে মেহেরপুর সরকারি শিশু পরিবারে থেকে পড়ালেখা করতো। সে বগুড়া জেলার দুপচাচিয়া গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে। ২০০৮ সালের ৯ আগস্ট মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘোরাফেরা করার সময় স্থানীয় লোকজন তাকে শিশু পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। সেই থেকে আনিসুর সেখানেই থাকতো। নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় শিশু পরিবারের উপ তত্ত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এএসপি (সার্কেল) আব্দুল জলিল জানান, জিডির ওপর ভিত্তি করে কার্যক্রম চলছে। যাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না তাদের উদ্ধারের পর জানা যাবে তারা অপহরণ হয়েছেন নাকি সেচ্ছায় আত্মগোপন করেছেন।
দুই
বিগত তিন মাসের খতিয়ান নিলে আরো ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসবে। সেই চিত্র আমরা একটু পরে দেখবো। এর মধ্যে পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বিএনপি নেত্রী এবং ১৯ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া গত ১লা মে ১৯ দলীয় জোটের নেতা ও কর্মীদের মধ্যে রেড এ্যালার্ট জারি করেছেন। তিনি বিএনপিসহ ১৯ দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। নারায়গঞ্জের অপহরণ ও খুনের ঘটনায় আওয়ামী লীগকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে হাসিনা কেন অপহৃতদের উদ্ধারে ব্যবস্থা নিলেন না। ৭ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেল। এই হত্যার দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হাসিনা ও সরকারকে নিতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্ববান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, কাউকে ছেড়ে দেয়া যাবে না। সে পুলিশ হোক, র‌্যাব হোক, হোক আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী। সবাইকে ঘেরাও করে ফেলবেন। নির্দোষকে ছিনিয়ে আনবেন, আর দোষীকে আইনে সোপর্দ করবেন। তিনি ঘোষণা করেন গত বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে রেড এ্যালার্ট জারি করা হলো। তিনি অভিযোগ করেন, এসব খুন ও গুমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজনই জড়িত। আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে পুলিশ বিভাগের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। তারা পুলিশকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগাচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। ৪৮ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সময় থাকতে সাবধান হন। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠলে রেহাই পাবেন না।
বেগম জিয়া কর্তৃক রেড এ্যালার্ট জারির পরদিন শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল দশ দফা পরামর্শ প্রদান করেন। এইসব পরামর্শ হলো প্রতিটি এলাকায় লিফলেট, পোস্টার, সভা, মত বিনিময়সহ বিভিন্ন পন্থায় অপহরণ-গুম-হত্যা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন এবং এসব অপরাধের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন। চলাফেরায় সতর্ক থাকুন। একা চলাচল, নির্জন ও অনিরাপদ স্থানগুলো এড়িয়ে চলুন। নেতারা কর্মীদের, কর্মীরা নেতাদের এবং সবাই মিলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। যতদূর সম্ভব পারষ্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখুন। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থানীয় কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর ও যোগাযোগের ঠিকানা সংগ্রহে রাখুন। কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত তাদেরকে জানান। দলের নেতাকর্মীদেরও ফোনে বা এসএমএস’র মাধ্যমে জানান। বিএনপির সদর দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। প্রতিটি ঘটনার রিপোর্ট কেন্দ্রকে জানান।
পরামর্শে আরো বলা হয়, কোথাও অপহরণের উদ্যোগের সংবাদ পেলে যতো বেশিসংখ্যক লোক মিলে দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয়ে মিলিতভাবে প্রতিরোধের করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কাউকে আটক করে নিয়ে যাবার চেষ্টা হলে তাদের পরিচয় সম্পর্কে এবং আটক ব্যক্তিকে কোথায় নেয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। আটক ব্যক্তিকে যেখানে নেয়া হচ্ছে সেখানে সদলবলে গিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলা এবং কি অভিযোগে এবং কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে- তা জানার চেষ্টা করতে হবে। কবে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে- তা জানতে হবে। পারলে সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নেবেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিলে তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। পুলিশে খবর দিয়ে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে এবং  ভিকটিম পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের বিবরণ সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। গুম, অপহরণ, খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থানীয় ভিত্তিতে গ্রহণ ও পালন করতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনকে এ প্রতিবাদ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে।
তিন
কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছে বেগম জিয়ার রেড এ্যালার্ট জারি এবং বিএনপির তরফ থেকে দশ দফা পরামর্শ আওয়ামী লীগের গায়ে মরিচের ছিঁটা দিয়েছে। তারা এই রেড এ্যালার্ট এবং দশ দফার মধ্যে সন্ত্রাসকে উস্কে দেয়ার ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন। দেশের শিক্ষিত সচেতন ও বিবেকবান মানুষ বুঝতে পারে না যে, ভালো কথা বললেও আওয়ামী লীগের গায়ে জ্বালা ধরে কেন? বেগম জিয়া রেড এ্যালার্ট জারি করবেন না, তো কি করবেন? মির্জা ফখরুল দশ দফা দিক নির্দেশনা দেবেন না, তো কি করবেন? একের পর এক মানুষ গুম হতে থাকবে এবং খুন হতে থাকবে, অথচ সরকার থাকবে নির্বিকার। সেক্ষেত্রে নিজেদের জানমাল বাঁচানোর জন্য জনগণ নিজেরাই যদি ব্যবস্থা নেন তাহলে তার মধ্যে অন্যায় কি হবে?
বিগত কয়েক দিনে তিনটি ভয়াবহ অপহরণের ঘটনা ঘটে গেলো। সরকার কি সেই অপহরণ রুখতে পেরেছে? নাকি অপহরণের পর তাদেরকে উদ্ধার করতে পেরেছে? অবশ্য যদি বলা হয় যে, ‘হাকিম হইয়া হুকুম করো, ওঝা হইয়া ঝাড়ো’, তাহলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। এই ধরনের কথা বাজারে ব্যাপকভাবে চালু আছে। আমাদের হাতে ওইসব কথার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তাই আমরা ওই ধরনের গুজবকে সমর্থনও করছিনা আবার পত্র পাঠ নাকচও করছি না। জনগণের প্রশ্ন হলো, রেজওয়ানা হাসানের স্বামী এবি সিদ্দিকিকে অপহরণ করা হয়, তারপর ৩৭ ঘন্টা অতিবাহিত হয়। তার স্বামী এবি সিদ্দিকিকে উদ্ধারের জন্য সরকারের পুলিশ বা র‌্যাব বাহিনী কি কোনো অভিযান চালিয়েছে? বরং দেখা যায়, যারা তাকে অপহরণ করেছিলো তারা তাকে মিরপুরে ফেলে যায়। শুধু তাই নয়, এবি সিদ্দিকের হাতে ঘরে ফেরার জন্য সিএনজি ভাড়া বাবদ ৩০০ টাকাও ধরিয়ে দেয়া হয়। তাহলে এবি সিদ্দিকির উদ্ধারে সরকারের কৃতিত্ব কোথায়? নারায়গঞ্জের ব্যবসায়ী সাইফুলের অপহরণ ও মুক্তির ঘটনা আরো রহস্য ঘেরা। সাইফুল ফিরে এসেছেন। সেজন্য মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। কিন্তু তার অপহরণ যেমন রুখে দেয়া যায়নি, তেমনি তার মুক্তির জন্যও সরকারকে কোনো অভিযান পরিচালনা করতে হয়নি। অপহরণকারীরা তাকে অপহরণ করেছে নারায়ণগঞ্জে, আর ফেলে রেখে গেছে সাভারের বিসমিল্লাহ্ হোটেলের সামনে। তার আশেপাশের লোকজন র‌্যাবকে খবর দিলে তারা তাকে নিয়ে যায়। সুতরাং এখানেও সরকারের পক্ষে বাহাদুরি দেখাবার কোনো সুযোগ নেই।
শনিবার টিভিতে দেখা গেলো যে, প্যানেল মেয়র নজরুলের হত্যাকারী বলে অভিযুক্ত নারায়ণগঞ্জ পৌর কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেনের বাড়ি ঘেরাও করেছে তিন শত পুলিশ। কথায় বলে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। নূর হোসেনরা সাত ব্যক্তি উধাও হলেন, তিনদিন পর্যন্ত কিডন্যাপারদের কাছে আটক থাকলেন, তারপরেও সরকারের নট নড়ন চড়ন। যখন সাত ব্যক্তি খুন হলেন এবং তাদের লাশ শীতলক্ষ্যার কালো পানিতে ভেসে ওঠে, তখনি মনে হয় সরকারে চেতনার উদয় হয়। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। নূর হোসেনরা আর এই দুনিয়ায় ফিরে আসবেন না। প্রশ্ন হলো, পুলিশ যে তৎপরতা শনিবার দেখালো, সেই তৎপরতা কিডন্যাপ হওয়ার সাথে সাথে দেখানো হয়নি কেন?
অনেক কথা বলার আছে। অনেক তথ্য আমাদের হাতে মওজুদ আছে। সেগুলো একদিনে বলা সম্ভব নয়। শেষ করবো টকশোর জনপ্রিয় মুখ আসিফ নজরুলের কিছু অনুসন্ধানী প্রশ্ন দিয়ে। তার লেখা থেকে জানা গেলো যে, নূর হোসেনদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য পুলিশ বাহিনী নাকি ওপরের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিলো। সেই নির্দেশ পাওয়া গেলো এমন এক সময়ে যখন তাদেরকে মহা প্রস্থানের পথে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আসিফ নজরুল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত গুম ও অপহরণের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয় না। দুই, এ ধরনের নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর তিন দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে এবং এর মধ্যে অপহৃত ব্যক্তি পেট চেরা লাশে পরিণত হতে পারেন। তিন, প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত অপহরণ ও গুমের ঘটনায় কিছু কিছু ক্ষত্রে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। কিছু ক্ষত্রে দেন না। যেমন চৌধুরি আলম বা ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায় তিনি কি কাউকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন? তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর  যে প্রায় অর্ধশত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে এবি সিদ্দিকি বা এ রকম দু’একটি ঘটনা বাদে অন্য কোনো ক্ষেত্রে আমরা এমন নির্দেশের কথা শুনিনি। তিনি যদি অপ্রকাশ্যে দিয়ে থাকেন, তাহলে বলতে হবে, তাঁর নির্দেশ সত্ত্বেও বহু অপহরণ ও গুমের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এর মানে হচ্ছে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীরও নিয়ন্ত্রণে নেই।
অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে সরকার যদি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে, তাহলে সে দেশে গুম, খুন, হত্যা, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই এবং বন্ধুক দেখিয়ে চাঁদাবাজির মতো অপরাধ কোনো দিন দূর হবে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads