র্যাবের একটি ইউনিট টাকার বিনিময়ে খুনের কাজ করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। র্যাব ও পুলিশ অনেক আগে থেকেই নানা অপকর্ম ও আইন ভঙ্গ করার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে আসছে। অবশেষে এই ঘটনাটি মানুষকে স্তম্ভিত করেছে, অবাক করেছে। খবরে প্রকাশ র্যাবের একটি ইউনিট অথবা ইউনিটের কতিপয় সদস্য ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জে সাতজন বিশিষ্ট লোককে হত্যা করেছে। ঘটনাটি এখনো তদন্ত পর্যায়ে থাকলেও র্যাবের সংশ্লিষ্ট ইউনিটের তিন জন সদস্যকে বরখাস্ত করেছে । র্যাবের বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াও হাইকোর্টের নির্দেশে নিরপেক্ষ তদন্তেরও ব্যবস্থা হয়েছে। সবাই আশা করছে ঘটনার গডফাদারসহ দায়ী সকলে দিনের আলোতে আসবে এবং উপযুক্ত শাস্তিও তাদের হবে।
র্যাবের এই ঘটনা ক্ষোভের চেয়ে বেদনার সৃষ্টি করেছে বেশি। আশার এক আলোকবর্তিকা হিসাবে চারদলীয় জোটের শাসনামলে র্যাবের জন্ম হয়েছিল। বিশেষ এলিট ফোর্স হিসাবে র্যাব গঠন করা হয়েছিল। পুলিশবাহিনী ও সেনাবাহিনী থেকে চৌকস, সৎ, সাহসী, কর্মঠ লোকবল নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়। বড় বড় সন্ত্রাসী ও অপরাধ কর্মের বিরুদ্ধে তাদের ব্যবহার করা ছিল উদ্দেশ্য। পুলিশের গতানুগতিকতা থেকে ভিন্নতর র্যাব বা র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন সমাজে অপরাধের বিস্তার থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য বিরাট ভূমিকা পালন করবে। একটা সময় পর্যন্ত র্যাব দেশের মানুষের আশা পূরণ করেছে। র্যাব মানুষের কাছে গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের ক্ষিপ্রতা, কর্মতৎপরতা, সাফল্য মানুষের গল্পের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই র্যাবের আজ এই পরিণতি কেন? কেন তারা গর্বের বদলে মানুষের কাছে অভিযুক্ত হচ্ছে গর্হিত কাজের জন্য? কেন তারা আশার বদলে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে? কেন আজ র্যাব ভেঙ্গে দেয়ার প্রশ্ন উঠছে? এই দুরবস্থার জন্য কি র্যাব দায়ী কিংবা র্যাব একাই কি দায়ী।
সবাই একমত হবেন যে দেশে আজ আইনের শাসন ভেঙ্গে পড়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ থেকে নিম্নতম পর্যায় পর্যন্ত ‘চেইন অব কমান্ড’ নেই বললেই চলে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মীরা যে যেমন পারে তেমন কাজ করছে। স্বীকার না করে উপায় নেই প্রশাসনের রাজনীতিকরণ বিশেষ করে র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা, প্রতিপক্ষ দমনে কাজে লাগানো, একজনের বদলে এক হাজার জনকে আসামী করা এবং গ্রেফতার বাণিজ্যকে অব্যাহতভাবে চলতে দেয়া ইত্যাদি অপরাজনীতি র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পেশাদারিত্বকে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। রাজনৈতিক ফ্রন্টে লুটপাট চলছে। সেই লুটপাটের দৃষ্টান্ত প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীতেও অনেকেই অনুসরণ করছে। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাবের কতিপয় সদস্য কর্তৃক তথাকথিত ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে সাতজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এটাই যে শেষ ঘটনা তা আমরা মনে করতে পারছি না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মহলে যদি লুটপাট বন্ধ না হয়, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকার ব্যবহার বন্ধ না করে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিকদের শায়েস্তা করার জন্যে যদি গ্রেফতার ও গ্রেফতার বাণিজ্য উৎসাহিত করা হয়, তাহলে আইনের শাসন ফিরে আসবে না এবং আমাদের আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীরও নীতি নিয়ম ও আইন মানার দায় থাকবে না। আইন মান্য করার দায় উপর থেকে আসে, নীচ থেকে নয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন