রবিবার, ১১ মে, ২০১৪
সত্য ইটচাপা দিয়ে ঢাকা যায় না
Posted on ৬:২২ PM by Abul Bashar Manik
বন্দরের গুদারাঘাটে সব সময় বাঁধা
থাকত দু’টি নৌকা। একটি বড়, আর একটি মাঝারি। এসব নৌকা ব্যবহার
করত প্রধানত র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নারায়ণগঞ্জের মানুষের কাছে এই নৌকাগুলো ছিল
মূর্তিমান আতঙ্ক। মাঝে মধ্যে রাতেরবেলা চোখবাঁধা লোককে এসব নৌকায় তোলা হতো। চার বছর
ধরে এই নৌকা দু’টি (কারো কারো মতে চারটি) গুদারাঘাটে ছিল। নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যা
ঘটনার পর নৌকাগুলো এখন উধাও। সেগুলো আর ওখানে নেই। হত্যার আলামত সরিয়ে ফেলা হয়েছে? যদিও গুদারাঘাটে পাশাপাশি বাঁধা আছে বিভিন্ন সংস্থার নৌকা। এখনো পুলিশেরও তিনটি
নৌকা আছে। নৌকা চলাচলের জন্য সেখানে ছিল ছোট একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর সদস্যরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সে নিয়ন্ত্রণকক্ষে অবস্থান করতেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে
সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আসার পর উধাও হয়ে গেছে র্যাবের নৌকা।
বন্ধ হয়ে গেছে নিয়ন্ত্রণকক্ষটিও।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর
ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ১১ ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে এখন দেশজুড়ে তোলপাড়।
প্রথম থেকেই আমরা বলেছি, নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ খুন হয়েছেন
সাতজন। তারপর হিসাব পাওয়া গেল নদীতেই খুন হয়েছেন আরো চারজন। দু’জন লাশ বহনকারী নৌকার মাঝি আর দু’জন জেলে, যারা লাশ ফেলে দেয়ার ঘটনাটি দেখতে পেয়েছিলেন। তাদের কথা কেউ বলছে না। এমনকি
নজরুল ও চন্দন ছাড়া আর কারো নাম উচ্চারণও হচ্ছে না। সেটিও কম রহস্য নয়। আসলে তাই বোধ
করি হয়, মানুষ খুন হয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্যানেল মেয়র যা, অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার যা, তাদের গাড়িচালক ও সহযোগীরাও তাই।
নৌকার মাঝি আর জেলেরাও একই ধরনের মানুষ। তাদের পরিবারেও একইভাবে উঠেছে হাহাকার আর কান্নার
রোল। তাদের স্ত্রী-সন্তানেরাও একইভাবে আহাজারি করছে। অথচ সেসব পরিবারের কাছে কেউ গিয়ে
হাজির হননি।
প্রখ্যাত সাংবাদিক, দৈনিক বাংলার সম্পাদক মরহুম আহমেদ হুমায়ূন আশির দশকে একটি বই লিখেছিলেন। এর
নাম ছিল ‘সিঙ্গেল কলাম ডাবল কলাম’। এই বইয়ে তিনি লিখেছিলেন একই
ধরনের মর্মবেদনার কথা। যখন গুরুত্বপূর্ণ কারো মৃত্যু ঘটেÑ হত্যা, স্বাভাবিক মৃত্যু কিংবা দুর্ঘটনা, আমরা তা গুরুত্বসহকারে, চাই কী ব্যানার হেডিংয়ে ছাপি। কিন্তু যদি কাঁঠালের
ট্রাক থেকে পড়ে কোনো শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় কোনো রিকশাচালক, তা আমাদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায় না। অথচ বাস্তবতা হলো গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যক্তির
মৃত্যু হয়েছে, তাতে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। শুধু পরিবার নয়, কখনো কখনো গোটা জাতিও শোকাভিভূত হয়ে পড়ে। এতে সে পরিবার পথে বসে যায় না। কিন্তু
কাঁঠালের ট্রাক থেকে পড়ে যে শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে, এতে বিপর্যয় হয় অনেক বেশি। হয়তো
তার আছে দুগ্ধপোষ্য শিশু, অসুস্থ বাবা-মা, এসব কিছুর দায় ওই শ্রমিকের স্কন্ধেই
ন্যস্ত ছিল। একটি দুর্ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই সব কিছু শেষ করে দিয়ে যায়। তার অর্থ আবার
এই নয় যে, আমরা বিত্তবান ও খ্যাতিমান কারো মৃত্যুকে স্বাগত জানাচ্ছি, তাকে হারানোর ক্ষতিকে ছোট করে দেখছি। আমরা শুধু এটুক্ ুবোঝাতে চাইছি যে, মৃত্যু সবার জন্য সমান করুণ, বেদনাতুর। সে কথাই আহমেদ হুমায়ূন
লিখেছিলেন। আর তাই তো এখন সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে দেখি, বার্তা সম্পাদক যখন খবর দেন, অমুক জায়গায় একটি সড়ক দুর্ঘটনা
হয়েছেÑ প্রথমেই জিজ্ঞেস করি, মারা গেছে ক’জন। যদি অখ্যাত দু-একজন হয়, তাহলে চিন্তাভাবনা ছাড়াই বলে
দিই, ব্যাক পেজ, সিঙ্গেল কলাম। আর গুরুত্বপূর্ণ কেউ হলে নিজেও তার
গুরুত্ব ভিন্নভাবেই দিই। এটি প্রত্যাশিত নয় কিংবা ন্যায়বিচারও নয়। অথচ আমরা এভাবেই
চলে আসছি। সেই প্রক্রিয়াতেই হারিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের অন্য সব নিহত ব্যক্তি। একে আমি
দোষ বলছি না। কিন্তু যে জেলে গভীর রাতে শীতলক্ষ্যায় মাছ ধরছিলেন, তার সামনে ছিল পরিবারের কল্যাণ। শিশুর মুখে অন্নেœর জোগান। বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসা। তাদেরও প্রাণ গেছে।
নারায়ণগঞ্জে এই ১১ হত্যাকাণ্ডের
প্রধান হোতা সিটি করপোরেশনের এক কমিশনার নূর হোসেন। নজরুল ও নূর হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব
গত ১৫ বছরের। এর আগেও নূর হোসেন নজরুল ইসলামকে কমপক্ষে পাঁচবার হত্যার ষড়যন্ত্র করেছেন।
এ যাত্রায়ও সে ষড়যন্ত্র চলছিল। নজরুল ইসলাম সেটা টেরও পেয়েছিলেন। আর তাই দু’মাস ধরে তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে বসবাস করছিলেন ঢাকায়। নূর হোসেন এবং আওয়ামী লীগের
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলে দীপু চৌধুরী
ঠিকাদারির ব্যবসায় করেন। তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড চার লেন করার ক্ষেত্রে সরবরাহকারী
হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে দীপু চৌধুরীর একটি সিএনজি স্টেশনও দেখাশোনার
দায়িত্ব পালন করেন নূর হোসেন। মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর জামাতা লে. কর্নেল তারেক
সাঈদ মোহাম্মদ, তার ট্র্যাক রেকর্ড ভয়ঙ্কর। তিনি যেখানেই চাকরি নিয়ে গেছেন, সেখানেই খুনের উৎসবে মেতে উঠেছেন। দীপু চৌধুরীর মাধ্যমেই নূর হোসেন র্যাবকে
দিয়ে নজরুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে জন্য র্যাব ১১-এর কমান্ডিং অফিসার লে.
কর্নেল তারেকের সাথে নূর হোসেনের একটি অলিখিত চুক্তি হয়েছিল। গত ৫ জানুয়ারির কথিত সংসদ
নির্বাচনের আগে র্যাব ১১-এর কমান্ডিং অফিসার হিসেবে তারেক সাঈদকে নারায়ণগঞ্জে বদলি
করা হয়। সে সিদ্ধান্তও বোধকরি নেয়া হয়েছিল, তিনি মন্ত্রীর জামাতা হিসেবে।
এর সবই টের পেয়েছিলেন নজরুল ইসলাম।
ফলে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ঢাকায়। মামলায় হাজিরা দিতে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ
যাওয়ার আগে তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে দেখা করে নিজের
জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ গেলে তার জীবনের নিরাপত্তা
বিঘিœত হতে পারে। একইভাবে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন শামীম ওসমানের
সাথে। বলেছিলেন, ‘ভাই, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, একটু দেইখেন’। নজরুল একা চলাফেরা করতেন না। সাথে থাকত তার সশস্ত্র
ক্যাডার বাহিনী। সেভাবেই তিনি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন। ঘটনার দিন আদালতে
যখন তিনি হাজিরা দিতে আসেন, তখন মাথায় পাগড়ি আর কাবুলি জোব্বা পরা এক ব্যক্তি
তাকে অনুসরণ করতে থাকে। এটা লক্ষ করে নজরুলের সহযোগীরা ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে। তার
কাছে পওয়া যায় একটি অস্ত্র। তাকে কোর্ট পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সেখানে সে নিজেকে
র্যাব সদস্য বলে দাবি করে। তার কাছে কোনো আইডি কার্ড ছিল না। কিন্তু সে তার মোবাইলে
নিজের র্যাবের পোশাক পরা ছবি পুলিশকে দেখায়। পুলিশ তার বিরুদ্ধে যখন ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়, তখন আদালত প্রাঙ্গণে থাকা পোশাক পরিহিত অন্য এক র্যাব সদস্য জোব্বাধারী তাদেরই
লোক বলে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। পরবর্তী ঘটনার প্রেক্ষাপটে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট যে, ততক্ষণে র্যাবের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল তারেক সাঈদ নজরুল ও তার সহযোগীদের
হত্যার পরিকল্পনা পাকাপাকি করে ফেলেছিলেন। সকাল থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় র্যাব সদস্যসহ
র্যাবের দু’টি গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তারা ওয়ার্ড কমিশনার নজরুল ইসলামের গাড়িটির
জন্য অপেক্ষা করছিল। আর জোব্বাধারীর উপস্থিতি তাকে ছাড়িয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রমাণিত হয়
যে, আদালত প্রাঙ্গণ থেকেই তাকে অনুসরণ করা হচ্ছিল। নজরুল ইসলাম ও তার
সহযোগীদের যখন র্যাব সদস্যরা টানাহেঁচড়া করে তাদের মাইক্রাবাসে তুলছিল, তখন রাস্তায় জ্যাম লেগে যায়। সড়ক দিয়ে আর কোনো গাড়ি পার হতে পারছিল না। ঘটনাক্রমে
নজরুলের গাড়ির পেছনেই ছিল অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের গাড়ি। জ্যামে সে গাড়িটিও আটকে যায়।
জানা যায়, দু’টি গাড়িই ছিল একই ব্র্যান্ডের ও একই সাদা রঙের।
অ্যাডভোকেট চন্দনের গাড়িচালক জ্যামে আটকে থেকে তার মোবাইলে নাকি ওই ঘটনার ছবি নিয়ে
ফেলেছিলেন। সেটাও দেখে ফেলে র্যাব সদস্যরা। ওই ড্রাইভারকে নামিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে
চন্দন গিয়ে বাধা দেন। তখন র্যাব সদস্যরা দু’জনকেই তুলে নিয়ে চলে যায়। গাড়ি
দু’টো নিয়ে যায় তাদের সদস্যরাই। একটি গাড়ি পাওয়া যায় গাজীপুরে দুমড়ানো
মোচড়ানো। অপরটি ‘নিকেতন’ এলাকায়। এটি ২৭ এপ্রিলের ঘটনা। তারপর থেকে এদের
আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। নজরুলের স্ত্রী ছুটে গেছেন শামীম ওসমানের কাছে, র্যাবের কাছে, স্বামীকে ফেরত পাওয়ার জন্য। সেখানে তারা র্যাবের
কাছে চরম দুর্ব্যবহারের শিকার হন। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা বসিয়ে রেখে তাদেরকে লাঞ্ছিত করা হয়।
নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যানও গিয়েছিলেন র্যাবের কাছে। বলেছিলেন, আমার জামাতাকে ফিরিয়ে দেন। ওরা যত টাকা দিয়েছে, তার দ্বিগুণ টাকা দেবো। সেখানেও তিনি চরম দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে ফিরে এসেছিলেন।
তারা শামীম ওসমানের কাছেও গিয়েছেন। শামীম বলেছেন, নূর হোসেন আমার লোক। সে এ কাজ
করতেই পারে না।
এরপরে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন
নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান। লে. কর্নেল তারেক সাঈদের অ্যাকাউন্টে নূর হোসেন ও
অন্যদের অ্যাকাউন্ট থেকে কত কোটি টাকা ট্রান্সফার হয়েছে যমুনা ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের
মাধ্যমে, সে অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাও আজ পাঁচ দিন।
সরকার ওই অ্যাকাউন্টের হিসাব প্রকাশ করেনি। অর্থাৎ লুকাতে চেয়েছে। আর ইতোমধ্যে যা করা
হয়েছে, লে. কর্নেল তারেক সাঈদসহ তিনজনকে সশস্ত্রবাহিনী থেকে অকালে অবসরে
পাঠিয়েছে। সবাই বলছেন, এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঘুষ লেনদেনের মাধ্যমে ওই সাতজনকে খুন করা হয়েছে।
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা এ বিষয়ে
দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মানুষগুলোকে
প্রায় একই সময়ে একই কায়দায় হত্যা করা হয়। অত্যন্ত সুদক্ষ হাতে প্রথমে তাদের মাথার পেছনে
স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করে অজ্ঞান করা হয়। এরপর শরীরের আরো কয়েক স্থানে আঘাত করা হয়।
তারপর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। এরপর
নাভির নিচে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফুটো করে দেয়া হয়, যাতে লাশ পচে পেটে গ্যাস জমে
লাশগুলো আর কখনো ভেসে উঠতে না পারে। এরপর প্রতিটি বস্তায় ১২টি করে ইট ঢুকিয়ে মুখ সেলাই
করে দু’পায়ে দু’টি বস্তা বেঁধে দেয়া হয়। বস্তার প্রতিটি ইটই ছিল
এমবিবি কোম্পানির। যুগান্তর দেখিয়েছে, বস্তাগুলো কিভাবে বাঁধা ছিল।
দক্ষ হাতের কাজ। তার পরের চিত্র লোমহর্ষক। সেই র্যাবের কার্যালয়, সেখান থেকে ৫০ গজ দূরে একটি কারখানা নির্মিত হচ্ছে। সেখানে স্তূপ করা আছে এমবিবির
পাঁচ হাজারের মতো ইট। ধারণা করা হচ্ছে, লাশ ডোবানোর জন্য ইটগুলো ওখান
থেকেই আনা হয়।
পরের ঘটনা আরো মর্মন্তুদ। লাশগুলো
তোলা হয় নৌকায়। দুইজন মাঝিকে নদীর প্রায় স্রোতশূন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর লাশগুলো
একে একে ফেলে দেয়া হয় শীতলক্ষ্যায়। লাশগুলো ফেলে দেয়ার পর মাঝি দু’জনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। যেন কোনো সাক্ষী না থাকে। এ দৃশ্য দেখে ফেলে
দু’জন জেলে। সাক্ষী নির্মূল করার জন্য তাদেরকেও হত্যা করা হলো।
মোট খুন ১১।
যে বস্তার ভেতরে ইটগুলো ঢোকানো
হয়েছিল, যুগান্তরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, সে বস্তাগুলোর মুখ অত্যন্ত সুচারুভাবে মোটা সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল। যে
রশি দিয়ে বস্তাগুলো বাঁধা হয়েছিল, সেগুলো সচরাচর বাজারে পাওয়া যায় না। পাট ও একধরনের
সিনথেটিক বস্তু দিয়ে এসব রশি তৈরি করা হয়, যা ব্যবহার করে পুলিশ ও র্যাব।
পুলিশ ও র্যাবকে যেসব বস্তায় খাবার সরবরাহ করা হয়, সেসব বস্তা ওই রশি দিয়ে বাঁধা
থাকে। র্যাব সদস্যরা সাধারণত বেডিং বাঁধার কাজে এসব রশি ব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া
সে প্রক্রিয়ায় ইটের বস্তা বাঁধতে পারেন একমাত্র প্যারাট্রুপার ও প্রশিক্ষিত সেনাসদস্যরাই।
ইটভর্তি বস্তায় ছাপার অক্ষরে লেখা রয়েছে, চারতারা মার্কা মসুরের
ডাল। নাটোরের বানেশ্বর এলাকার
‘বিসমিল্লাহ
ডাল মিল’ ওই ডাল সরবরাহ করে থাকে। সেখানে তাদের মোবাইল নম্বরও লেখা রয়েছে। সে নম্বরে
ফোন করে জবাব পাওয়া যায় যে, তাদের কাছ থেকে ডাল সংগ্রহ করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে
সাপ্লাই দেয়া হয়।
পরের ঘটনাগুলো দ্রুত ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জের
ডিসি এসপিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আলোচ্য তিন সেনাকর্মকর্তাকে অকালে অবসর দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭৯ জন সদস্যকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ দিকে
র্যাবের নৌকা দু’টি উধাও হয়ে গেছে। দাপুটে মন্ত্রী মায়া বলেছেন, তার ছেলে ও জামাতা ঘটনার জন্য কিছুতেই দায়ী নয়। অপর দিকে সরকারের বাচাল মন্ত্রীরা
মুখে কুলুপ এঁটে বসে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে তার মন্ত্রীরা এত দিন ধরে
যে বলছিলেন, হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি দায়ী, সে মুখে চুনকালি পড়েছে। নজরুলের
শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে অনড়। শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না, কিন্তু মানুষের মনে এই ধারণাই তো বদ্ধমূল হয়েছে যে, এ পর্যন্ত র্যাব পরিচয়ে যাদেরকে তুলে নেয়া হয়েছে (কিন্তু র্যাব তা অস্বীকার
করেছে), তাদের সবাইকে ওই বাহিনী খুন করেছে।
র্যাবের ঘাতকেরা আশা করেছিল, পেট ফুটো করে ইট বেঁধে লাশ ডুবিয়ে দিলে পৃথিবীর কেউ কোনো দিন জানতে পারবে না
যে, লাশগুলো কোথায় গেল। র্যাব যথারীতি কিছু জানি না বলে মুখ বুজে
চুপ করে থাকবে। কিন্তু সত্য ইটচাপা দিয়ে রাখা যায় না। তা মানুষের দৃষ্টির সামনে প্রকাশিত
হয়েই পড়ে। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটল।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন