বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০১৪

মোদি নয় বিজয় হয়েছে ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের


এবারের ভারতীয় নির্বাচন নিয়ে যত গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনা, টকশো হয়েছে বা হচ্ছে এমনটি অতীতে দেখা যায়নি। এবার কংগ্রেসের পতন আর মোদির বিজয় নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও একটি বিভাজন যা পক্ষ-বিপক্ষ লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিগত দিনে যখন এলকে আদভানী ও অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বের বিজেপি নির্বাচনে বিজয়ী হয় তখন আমরা শুনতে পেয়েছি ভারতের নির্বাচন হচ্ছে কংগ্রেস আর বিজেপির মধ্যে। এবারের শুরুটা ভিন্ন। এবার শোনা যায় ভারতে নির্বাচনের প্রধান দু’পক্ষ হলো কংগ্রেস বনাম নরেন্দ্র মোদি। এটা অবশ্যই একটি মজার বিষয় কখনও কখনও কিছু ব্যক্তিত্ব আছেন যারা নিজের ইমেজেই সামনে চলে আসেন আর নতুন মাত্রা যোগ করে দেন দলের জন্য। ভারতের নির্বাচনে ইন্ধিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর জনগণ ভোট দিয়েছে রাজিব গান্ধীকে। এখানে কংগ্রেস বড় ছিলো না। আবার রাজিব গান্ধী নিহত হওয়ার পর দেশী-বিদেশী বিতর্ক থাকার পরও জনগণ ভোট দিয়েছে সোনিয়া গান্ধী ও তার দুই যোগ্য উত্তরসূরি রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে। এখানে কত পার্সেন্ট ভোট ব্যক্তি ইমেজের আর কত পার্সেন্ট কংগ্রেসের তা নির্ণয় করা কঠিন। অতএব বলা যায়, ব্যক্তির ইমেজ ও ব্যক্তির আচরণ নির্বাচনে দলের জন্য যেমন ইতিবাচক ফল বয়ে আনে তেমনি আনে নেতিবাচকও। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো খুললে টকশোতে ভারতের নির্বাচন নিয়ে যে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা দেখি তা দেখতে আর শুনতে ভালই লাগে। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় আলোচনায় কি যেন একটা বাদ পড়ে যাচ্ছে। তাতে কি? আমি তো আর সেখানে আলোচনায় অংশ নিতে পারছি না। আবার টেলিফোনে দর্শক! টেলিফোন করে কোনো টকশোতে আজ পর্যন্ত লাইন পাওয়া আমার ভাগ্যে জুটেনি। মনের আবেগ প্রকাশ করার বিকল্প পথ হিসেবে এ লেখা। আমাদের টকশোর আলোচকগণ কংগ্রেসের ভরাডুবির পেছনে যেসব কারণ তুলে ধরতে চান তার মধ্যে যে বিষয়টি মুখ খুলে আর বুক ফুলিয়ে বলা দরকার তা বলেন না। সেটা হলো এবারের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের কংগ্রেস সরকার যেভাবে অনধিকার চর্চা করেছে, প্রকাশ্যে নির্বাচন নিয়ে যেভাবে আওয়ামী লীগ এর দলীয় কর্মী হয়ে কাজ করেছে এমনটি ভারতের বিবেকবান ও বাংলাদেশ নিয়ে যারা চিন্তা করেন বাঙালি ও মুসলিম সম্প্রদায় এমন জনগণ এবার কংগ্রেসকে ভোট দেননি। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশের জনগণের মাঝে একটি বড় আশা ছিল তিস্তার পানি পাবো। সব জল্পনা আর কল্পনার ঘাড়ে কুঠারাঘাত করে মনমোহন মুচকি হেসে বললেন, তিস্তা চুক্তি মমতা চান না। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী চাওয়ার পরেও মুখ্যমন্ত্রী চান না বলে নাকি চুক্তি হয় না। রাজনীতি বুঝি না বিশ্লেষণ পারি না বলে এতটুকুও কি বুঝি না। মানুষকে বোকা ভাববার একটি বাতিক রাজনীতিবিদদের থাকতেই পারে। তাই বলে এতটা? মমতার এ আচরণ যদি কেন্দ্রীয় সরকারের শিখানোও হয়ে থাকে এর পরও মমতার প্রতি মমতা কমেছে বাংলাদেশের জনগণের। এ ন্যক্কারজনক আচরণ পছন্দ করতে পারেনি সীমান্তবর্তী জনগণ। অনেকেরই ধারণা মমতা যতটা অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন জোতিবসু হলে এমনটি করতেন না। টকশোর বুদ্ধিজীবীরা বলে থাকেন ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। যদি কংগ্রেস বিজয়ী হতো তবে এসব বুদ্ধিজীবীরাই বলতো এবারের ভারতের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে কট্টরপন্থী, ধর্মীয়পন্থী বা উগ্রপন্থী যেভাবেই মোদিকে উপস্থাপন করা হোক বড় কথা হচ্ছে ভারতের এবং বাংলাদেশের জনগণের একটি বড় অংশ এ জন্যই আনন্দিত যে কংগ্রেসের পতন হয়েছে। কারণ এ কংগ্রেস সরকার বাংলাদেশের একটি আপত্তিকর নির্বাচনে একটি দলের কর্মী হয়ে নির্লজ্জের মতো কাজ করেছে, আবার ভোটারবিহীন নির্বাচনকে যেখানে সারা দুনিয়া বলেছে গ্রহণযোগ্য নয় সেখানে ভারত বলেছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। সেই কংগ্রেসের পতন হয়েছে এটাই আপাত রক্তক্ষরণ হওয়া হৃদয় মাঝে কিছুটা হলেও সান্ত¡নার বিষয়। মোদি বিজয়ী হয়ে কি করবে আর না করবে তা পরে দেখা যাবে। অন্য দিকে একজন বুদ্ধিজীবীকে বলতে শুনা গেলো “বিজেপি একটি ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক দল। এবার মানুষ যতটা না বিজেপিকে ভোট দিয়েছে তার চেয়ে বেশি দিয়েছে মোদিকে। আর আমরা অতীতে বিজেপির সরকার গঠনও দেখেছি তারা মাত্র কয়দিন টিকেছে”। আরো একজন বুদ্ধিজীবী জনাব ফরাসউদ্দিন বললেন যদি নরেন্দ্রমোদি সরকার গঠন করে যদিও আমি সম্ভাবনা দেখিনা।” এই বুদ্ধিজীবীদের আগাম মন্তব্য এগুলো হলো গ্রাম্য ঐ মাতুব্বরের মতো পাস করলে কি হবে? চাকরি পাবে না। আর চাকরি পেলেও কি হবে? বেতন পাবে না। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কিছু বুদ্ধিজীবী বুঝে ফেলেছেন বিজেপি একটি ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট লালনকারী দল। এ দলের বিজয় হওয়া মানে ধর্মহীন রাজনীতি আর ধর্মকর্মের কথা শুনলে যেসব বুদ্ধিজীবী সৈয়দদের গায়ে জ্বালা হয় তাদের জন্য একটি অশনি সংকেত।
এজন্যই ব্যাখ্যা আর বিশ্লেষণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসে না। তাহলো কংগ্রেসের পতন হয়েছে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাক গলানোর জন্য। আর মোদির বিজয় হয়েছে ধর্মীয় অনুশীলনকারীদের পৃষ্ঠপোষকতাকারী দলের নেতা হওয়ার কারণেÑ এটাই চরম সত্য বলে অনেকের ধারণা। পরিশেষে বলা যায়, যেহেতু ভারত আমাদের প্রতিবেশী একটি বড়দেশ সংগত কারণেই তাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি সব বিষয়ে আমাদের একটা আগ্রহ থাকতেই পারে। আবার আমাদের বিষয়েও তাদের আগ্রহ ও পরামর্শও থাকতে পারে। তাই বলে তাদের হাইকমিশনার আর পররাষ্ট্র সচিব সরাসরি এরশাদ সাহেবের সাথে আলোচনা করে বলবেন আপনি নির্বাচনে আসুন না হয় জামায়াত ক্ষমতায় যাবে। এ বিষয়টি ভারতের জনগণ ও রাজনীতিতে অপরিপক্কতার পরিচয় বলে মনে করেছেন। এত বড় একটা দেশ ভারত তারা যে আজ বাংলাদেশের একটি তৃতীয় সারির দল জামায়াতের ভয়ে নিদ্রা হারাম করে ফেলেছে তা প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশের সাজানো আর পাতানো নির্বাচনে। নির্বাচনের কর্মী হিসেবে কাজ করতে এসে অনেকটা মনে হয়েছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফেল করলে আওয়ামী লীগের চেয়ে ভারতের ক্ষতিটাই বেশী হবে। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করলে ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্রমোদির বিজয় যুক্তিযুক্ত ও সময়োপযোগীও বটে।
খান মুহাম্মদ ইয়াকুব আলী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads