নারায়ণগঞ্জে সাতজনের গুম, খুনের পর ফেনীতে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। যারা মারা
গেছেন তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে খুনোখুনিতে
যারা নিহত হচ্ছেন তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে নির্বাচিত। নজরুল ওয়ার্ড কমিশনার, একরাম উপজেলা চেয়ারম্যান, এর আগে নরসিংদীর উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমানও এভাবে
নিহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অশুভ প্রতিযোগিতার জের
ধরেই এরা নিহত হয়েছেন।
৫ জানুয়ারির
একতরফা নির্বাচনের আগে ও পরে সরকার সারা দেশে র্যাব ও পুলিশ দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে
তুলেছিল। শত শত বিরোধী দলের নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। বিরোধী দলকে দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অশুভচক্র গড়ে উঠেছিল। তারাই
পুলিশকে তালিকা তৈরি করে দিত। সেভাবেই গুম, খুনের ঘটনা ঘটত। কিন্তু নির্বাচনের
পর অনেক স্থানে এই চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। জবর দখলের সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন
ঘিরে অস্ত্রবাজির ওপর ভর করে নতুন নেতার উত্থান ঘটে। ফলে আগের সত্যিকারের রাজনৈতিক
নেতারা হয়ে পড়েন কোণঠাসা, দুর্বল কিংবা শঙ্কিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই নতুন আসা ক্ষমতাবানেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর সাথে অশুভ সম্পর্ক গড়ে তুলে অপর অংশকে নির্মূলের চেষ্টা চালায়। পুলিশ বা র্যাবের
কেউ কেউ অনেক ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে ভাড়াটিয়া বাহিনী। পরিস্থিতি বদলের পর বন্দুকের নল শুধু
তারা ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। যারা সরাসরি এসব করছেন না, তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন
করছেন। ফেনী ও নারায়ণগঞ্জের ঘটনা তার প্রমাণ।
নারায়ণগঞ্জে
সাতজন গুম ও খুনের ঘটনার আসল পরিকল্পনাকারী ও নায়ক যারা তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘটনার জন্য দায়ী করে যাচ্ছেন।
ওয়ার্ড কমিশানার নূর হোসেনের সাথে নজরুলের দ্বন্দ্ব নতুন করে শুরু হয়েছিল এমন নয়। এই
দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। নূর হোসেন যে শামীম ওসমানের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল, এ কথাও শামীম ওসমান কখনো অস্বীকার করেননি। নজরুলকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নূর হোসেন
র্যাবকে যদি ব্যবহার করে থাকেন তা শামীম ওসমানের অজনা থাকার কথা নয়। অথবা শামীম ওসমানের
মধ্যস্থতায় হয়তো র্যাব এ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। শামীম ওসমান নিজেই বলেছেন, ঘটনার সাথে সাথে তিনি র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। আবার তিনি
এ কথাও বলেছেন, ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন। এরপর নূর হোসেন
প্রকাশ্য ছিলেন। গুম হওয়া সাতজনের লাশ উদ্ধারের পর নূর হোসেন পালিয়ে যান। তিনি কিভাবে
পালাবেন, কোথায় গিয়ে উঠবেন কার সাথে যোগাযোগ করবেন সব নির্দেশনা দিয়েছেন
শামীম ওসমান। নূর হোসেনকে পালানোর সব পথ তৈরি করেছেন তিনি। একজন পলাতক অপরাধীর সাথে
এই টেলিফোন কথোপকথনের পরও কিন্তু শামীম ওসমানকে গ্রেফতার করা হয়নি। শামীম ওসমান বলেছেন, যে কথোপকথন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে তা তার নিজের। তিনি প্রশ্ন করেছেন টেলিফোন
কথোপকথন রেকর্ড করা হলো, কিন্তু নূর হোসেনকে কেন গ্রেফতার করা হলো না। যেসব
গোয়েন্দা সংস্থা এই কথোপকথন রেকর্ড করেছে, তারা এর জবাব দিতে পারবে। কিন্তু
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নূর হোসেনকে কেন গ্রেফতার করল নাÑ এ কথা বলে খুনের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে পালিয়ে যাওয়ার সাহায্য করার অপরাধ থেকে
তিনি মুক্ত হতে পারেন না। শামীম ওসমানের এসব বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে শামীম ওসমান ও নূর হোসেনের গভীর সম্পর্ক
ছিল। এখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য পরস্পরের ওপর দোষারোপের খেলা চলছে। নারায়ণগঞ্জের র্যাবের
যে কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি মন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন
চৌধুরীর মায়ার জামাই। এই খুনের ঘটনার সাথে মায়াপুত্র দীপু চৌধুরীর নামও এসেছিল। কিন্তু
এখন আর সে বিষয়টি আলোচিত হয় না। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার সাথে আমরা যে চিত্রটি পাচ্ছি র্যাবের
কমান্ডিং অফিসার মন্ত্রীর জামাই, নূর হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আর তাদের
পেছনে খুঁটি হচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
র্যাবে
কর্মরত সামরিক বাহিনীর এই সদস্যদের অপরাধের বিচার অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু ন্যায়বিচার
তখনই নিশ্চিত হবে, যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব সদস্যকে যেসব রাজনৈতিক নেতা
ব্যবহার করেছেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। একই সাথে র্যাবের যেসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
এসব হত্যায় অনুমোদন দিয়েছেন কিংবা জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা
নেয়া হবে।
শুধু নারায়ণগঞ্জ
নয়, একই অবস্থা আমরা দেখছি ফেনীতেও। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন
লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড খুব কমই ঘটেছে। একজন মানুষকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়া
হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে প্রকাশ্য দিবালোকে। শত শত মানুষের সামনে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ
ছিল নীরব দর্শক। নিহত একরাম চেয়ারম্যান এক সময় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর অনুগত ক্যাডার
ছিলেন। তিনিও নিজ দলের মধ্যে একাধিক খুনের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান
হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন, যা নিজাম হাজারীর জন্য ছিল চ্যালেঞ্জ।
স্বভাবতই পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়ার কাজটি নিজাম সম্পন্ন করেন। হত্যার পর দায় চাপানোর
চেষ্টা হয় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার ওপর, যিনি উপজেলা নির্বাচনে একরামের
সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর খোদ প্রধানমন্ত্রীও বিরোধী দলের
জড়িত থাকার আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ফেনীর মানুষের মুখে মুখে ছিল কারা একরামকে হত্যা
করেছে। ফলে বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেয়া সম্ভব হয়নি। যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা সবাই নিজাম
হাজারীর ক্যাডার। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় শামীম ওসমান যেমন ধারাছোঁয়ার বাইরে আছেন, তেমনি নিজাম হাজারী ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। এখন সংবাদপত্রে খবর আসছে এই হত্যাকাণ্ডের
আগে যে কমিউনিটি সেন্টারে মিটিং হয়েছিল, সে খবর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাও
জানত। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ, সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সাথে
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশ গড়ে উঠেছে। ফলে তারা ঘটনার পরিকল্পনা
জানার পরও চোখ বন্ধ করেছিল। একরামের মৃত্যু আর নিজাম হাজারীর সম্ভাব্য বিপর্যয়ের মধ্যে
উঁকি ঝুঁকি মারছেন ’৯৬-২০০১ এর গডফাদার জয়নাল হাজারী। তিনি এখন সুযোগের
অপেক্ষায় আছেন। হয়তো নতুন গডফাদারের জায়গায় পুরনো গডফাদার স্থলাভিষিক্ত হবেন।
প্রকৃতপক্ষে
দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে এমন ছোট বড় অনেক গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে। তারাই কার্যত প্রশাসন
পরিচালনা করছেন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর সৎ সদস্যরাও তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গণতন্ত্র
নয়, গডফাদারতন্ত্র আরো শক্তভাবে জেঁকে বসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর সাথে এই গাঁটছাড়া তৈরি হওয়ার কারণটি হচ্ছে পুলিশ ও র্যাবে, যারা এখন দায়িত্বশীল পদে কর্মরত তাদের দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বকে
গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। শুধু দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পদায়ন বা পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।
ফলে রাজনৈতিক নৈকট্যর কারণে দ্রুত তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্ক
তৈরি করেন। ফলে তারা রাষ্ট্রের বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন না করে স্থানীয় নেতা বা গডফাদারদের
স্বার্থরক্ষা করেন। ফলে র্যাব ও পুলিশে এখন পচন ধরছে।
মনে রাখতে
হবে দলীয় প্রশাসন সাজানোর ছকে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখনই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হয়ে পড়েছে
নিয়ন্ত্রণহীন। এবারই এমন ঘটনা ঘটছে এমন নয়। ১৯৯৬-২০০১ সালেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৯ সালের
মার্চ মাসে ঢাকায় গোয়েন্দা দফতরের অফিসের ছাদে পানির ট্যাংকে জালাল নামে এক পুলিশ সোর্সের
লাশ পাওয়া গিয়েছিল। এই ঘটনার জন্য চারজন পুলিশ সদস্যকে হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত
করা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে আগারগাঁওয়ে এক রিকশাচালককে গুলি করে হত্যার দায়ে
এক পুলিশ সার্জেন্টের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। দলবাজ পুলিশের এমন অপরাধ এখন র্যাবে
গড়িয়েছে।
দুই.
আমরা দেখছি
নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নিয়ে যতটা তোলপাড় হয়েছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে, এর চেয়েও নৃশংস ঘটনা ঘটলেও তা নিয়ে ঝড় ওঠেনি। সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা তখন
নীরবতা পালন করেছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে এতটা তোলপাড় হওয়ার কারণ নারায়ণগঞ্জে এর আগে পরিবেশ
আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী অপহরণ হয়েছিলেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে চন্দন সরকার
নামে একজন উকিল নিহত হয়েছেন। যিনি সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তাকে সুশীলসমাজের একজন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে সুশীলসমাজের
প্রতিনিধি রফিউর রাব্বির স্কুল ছাত্রকে খুন করা হয়েছিল। এই খুনের জন্য তিনি শামীম ওসমান
পরিবারকে দায়ী করেছেন।
এখন র্যাবের
যে কর্মকর্তাকে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুরে
একজন চিকিৎসককে হত্যা ও লাকসামে বিএনপির দু’জন নেতাকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে, তখন সুশীল সমাজ নীরবতা পালন করেছেন। এ ছাড়া শুধু সাতক্ষীরা জেলায় জানুয়ারি
থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আটজনকে পুলিশ হত্যা করেছে। প্রত্যেককে কাছে থেকে গুলি করে
হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালে নিহত হয়েছে ২১ জন। এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে সাতক্ষীরায় একজন
পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে
৮৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পুলিশের হাতে মারা গেছে
৪৯ জন, র্যাবের হাতে ১৫ জন, যৌথ বাহিনীর হাতে ২১ জন, র্যাব ও বিজিবির হাতে দু’জন, কোস্টগার্ডের হাতে তিনজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গত চার মাসে যারা
নিহত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী। এর মধ্যে জামায়াতে
ইসলামীর ১৪ জন, বিএনপির ১২ জন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাতজন, যুবদলের আটজন, ছাত্রদলের চারজন, স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন, যুবলীগের একজন, নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির একজন এবং কথিত সন্ত্রাসী
৪১ জন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ১১১ জন গুমের তথ্য
পেয়েছে। এর মধ্যে র্যাবের হাতে ৫১ জন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে
৩৬ জন, পুলিশের হাতে পাঁচজন, র্যাব ও পুলিশের হাতে দু’জন,শিল্প পুলিশের হাতে একজন এবং অন্যান্যভাবে ১৬ জন গুম হয়েছেন। গুম, খুনে র্যাবের পাশাপাশি পুলিশও পিছিয়ে নেই। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গুম হওয়া
মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু পুলিশের এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিয়ে খুব কমই
আলোচনা হয়।
এসব বিচারবহির্ভূত
হত্যার ব্যাপারে সুশীলসমাজ ও তথাকথিত মানবাধিকারজীবী সংগঠনগুলো কোনো শব্দ উচ্চারণ করেনি।
কারণ এসব সুশীলসমাজের নেতাদের মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন রকম। যে লোকগুলোকে
বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তারা যেহেতু ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসের
লোক সে কারণে তাদের হত্যার প্রতিবাদ বা নিন্দা করার প্রয়োজন বোধ করেনি আমাদের সুশীলসমাজ।
এমনকি কিছু কিছু গণমাধ্যমও এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নায্য এমন ধারণা দেয়ার চেষ্টা
করেছে। যারা অপহরণ, গুম, খুন হচ্ছেন তারা জামায়াত, হেফাজত বা বিএনপি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড জায়েজ এমন প্রচারণা
চালিয়েছেন। এখন হত্যা ও গুম যখন নিজেদের ওপর এসে পড়েছে, তখন তারা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। কিন্তু বোধোদয় হতে এতটা দেরি হয়ে গেছে এলাকাভিত্তিক
গডফাদাররা তাদের ভিত্তি অনেক মজবুত করে ফেলেছেন। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন
তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কারণ গণসমর্থনহীন এই সরকার টিকে আছে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই বলপ্রয়োগে সহায়ক শক্তি হিসেবে এই গডফাদাররা কাজ করছেন।
এই বলপ্রয়োগের রাজনীতি থেকে সুশীলসমাজও রক্ষা পাবে না যদি না বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড
ও গুম অপহরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হয়।
আলফাজ আনাম
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন