শনিবার, ২৪ মে, ২০১৪

“স্টিম রোলারের নিচে বাংলাদেশের গণতন্ত্র”


দুই হাজার চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারির পর বাংলাদেশে আব্রাহাম লিংকন প্রবর্তিত গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ওলট পালট হয়ে গেছে। এখন এদেশে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হচ্ছে- গভর্নমেন্ট অবদা আওয়ামী লীগ, ফরদা  আওয়ামী লীগ বাইদা আওয়ামী লীগ। এদেশের আরেকটি পপুলার শ্লোগানেও পরিবর্তন এসেছে তা হলো আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব। এর বিকল্প শ্লোগান চালু হল জোর যার মুল্লুক তার।
পঞ্চদশ সংশোধনীর বিরুদ্ধে দেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক সকলেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের উৎকণ্ঠা ও আশংকার কথা বারবার প্রকাশ করেছেন। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মহাজোট সরকারকে বারণ করেছিলেন- এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য ও জাতিকে সংঘাতের পথে যেন ঠেলে না দেয়া হয়। তারা চোখে কুলো কানে তুলো দিয়ে কলমের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বধ করলেন। ঘাত প্রতিঘাতের প্রলয়ংকরী ঝড় ঝঞ্ঝায় টাল মাটাল হয়ে গেল সারা বাংলাদেশ। রাজপথে রক্তের বন্যা, হাসপাতালে ক্ষত বিক্ষত জনতার আহাজারি, কারাগারে শত সহ¯্র বন্দীর হাহাকারে বাংলার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ বিজিবি র‌্যাব ইত্যাদি সশস্ত্র বাহিনী শহর থেকে বন্দরে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আঠার দলের নেতা কর্মীদের নির্মূলের জন্য। উত্তপ্ত পরিস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতায় জনজীবনে নেমে আসে স্থবিরতা। অস্থিরতা ও অচলাবস্থায় বাংলাদেশ ৪৯ হাজার ১৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির কবলে পতিত হল। আঠার দলীয় জোট গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিসহ বলবৎ রাখার স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে এক কদম পেছনে এসে বললেন- নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বললেন, সংবিধান থেকে আমি এক চুলও নড়ব না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বললেন, নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে। বেগম জিয়া আরো এক কদম পিছনে সরে এসে বললেন,- প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তাহলে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করব। বিরোধী দলের কোন কথাই শোনা হল না। প্রধানমন্ত্রী সিংহাসনে বসেই নির্বাচনের ডাক দিলেন। বেগম জিয়া ডাক দিলেন প্রহসনের নির্বাচন  বয়কটের। শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচন বানচালের সামগ্রিক তৎপরতা দমন করার জন্য পনর হাজার কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা বারুদ খরিদ করলেন। এমনি এক স্পর্শকাতর যুগসন্ধিক্ষণে বেগম খালেদা জিয়া আঠার দলের অবস্থান ও করণীয় পরিষ্কার করার জন্য ২ মে ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসির কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। মহাজোট সরকার উক্ত কর্মসূচি প্রতিহত করার  জন্য ৪ দিনব্যাপী গোটা বাংলাদেশকে অচল করে দিলেন। রাজধানী থেকে সারা দেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। যান বাহন থেকে হোটেল রেস্টুরেন্টে পর্যন্ত আইন শৃংখলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হল। যৌথ বাহিনী, ক্যাডার বাহিনী অস্ত্র আর লাঠিসোঠা নিয়ে শহরের মোড়ে মোড়ে পাহারা ও রাস্তায় রাস্তায় টহল দেয়া শুরু করল। বালি ভর্তি ট্রাক, জলকামান, প্রিজন ভ্যান-বাঁশের ব্যারিকেড আর শত শত র‌্যাব পুলিশ দিয়ে বেগম জিয়ার বাসভবন অবরুদ্ধ করা হল। বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সম্মুখে রাস্তার উভয় প্রান্তে কাঁটা তারের ডাবল বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করা হল যেন একটি কুকুর বেড়ালও প্রবেশ করতে না পারে। চাকরিজীবীদেরকে ১০/১২ কি. মি. পর্যন্ত পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য করা হল।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একটা মিছিল নয়া পল্টনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ মূল ফটকে তালা দিয়ে আটকে দেয়। কিছুক্ষণ পর যুব লীগের সশস্ত্র একটি মিছিল সেখানে আসা মাত্র পুলিশ ফটকের তালা খুলে দেয়। অমনি সব ক্যাডার হুমড়ি খেয়ে আইনজীবীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দু’জন মহিলা আইনজীবীকে প্রচ- মারধর থেকে সাংবাদিকরা উদ্ধার করায় তারা প্রাণে রক্ষা পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষকদের একটি মিছিল নয়া পল্টনের দিকে যাওয়ার পথে যুবলীগের এলোপাতাড়ি  লাঠি পেটায় তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। জাতীয় প্রেস ক্লাবে আঠার দলীয় সাংবাদিকদের একটি সমাবেশ চলাকালে সশস্ত্র ছাত্রলীগের একটি মিছিল ঢুকে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করে। এতে সমাবেশটি প- হয়ে যায় এবং আক্রমণে ১০/১২ জন সাংবাদিক আহত হন। বিকালে ইসলামী ছাত্রশিবির যাত্রাবাড়ি থেকে একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলে পুলিশ বৃষ্টির মত গুলী ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে ৪ জন গুলীবিদ্ধ ও ঘটনাস্থলে একজন প্রাণ হারান। যানবাহন তল্লাশির নামে কালক্ষেপণের ফলে হাসপাতালে নেয়ার পথে এক বৃদ্ধা হৃদরোগীর রাস্তার ওপর মৃত্যু ঘটে। এভাবে গণতন্ত্রের দাবিদার আওয়ামী সরকার জুলুমতন্ত্রের স্টিম রোলার দিয়ে মানবতাকে কিভাবে বিধ্বস্ত করতে পারে তার নিকৃষ্ট প্রমাণ আরেকবার উপস্থাপন করল।
যে সরকার জনদুর্ভোগের দোহাই দিয়ে বিরোধী দলের মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন সভা সমাবেশ ইত্যাদি করার অনুমতি দেয় না, কেউ সভা সমাবেশ করতে চাইলে দাঙ্গা পুলিশ ও ক্যাডার বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে বানচাল করে দেয় সেই সরকার বিনা নোটিশে ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থল পথ, জলপথ, রেলপথ বন্ধ করে হাজার হাজার যাত্রী, নারী পুরুষ, লাগেজ ব্যাগেজসহ শিশু ও রুগীদের পর্যন্ত কি জঘন্যতম দুর্বিপাকে নিক্ষেপ করেছিল তা ভুক্তভোগী ছাড়া কারো অনুধাবন করা সহজ নয়। গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় যোগ দিতে যে সব বিরোধী দলীয় নেতা কর্মী পুলিশ কিংবা লীগের হাতে পড়েছে তারা নিষ্ঠুর নির্যাতন ও লুটপাটের শিকার হয়ে কারাগারে ঠাঁই নিয়েছে। জনতার বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে বিজয়ী হয়ে মহাজোট নেতারা সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। সে বক্তব্য বাংলার মানুষকে মুগ্ধ করে ফেলেছে।
জনাব হাসান মাহমুদ বলেন, বি এনপির নেতা কর্মীরা বেগম জিয়ার আহ্বানে কোন সাড়া দেয় নাই। নাসিম সাহেব বলেন, সরকার কোন বাধা সৃষ্টি করে নাই। জনাব আশরাফুল ইসলাম বলেন, জনসমর্থন না থাকায় সমাবেশ হয়নি। বেগম জিয়া নিরাপত্তা চেয়েছেন বলেই পুলিশ র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে তার বাসভবনে। মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেব বলেন, বেগম জিয়ার নয়াপল্টনে যাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না।
মূলত ২৯ ডিসেম্বর ঘোষিত গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পর্কে দেশবাসীর সম্মুখে আঠার দলের পক্ষে দিক-নির্দেশনা উপস্থাপন করা। সেদিন সরকার নজিরবিহীন অবরোধ, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস চালিয়ে বিজয়ী হয়েছে আর গণতন্ত্র হয়েছে পরাজিত। এর ভয়ঙ্কর পরিণতি হিসেবে ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে মহাজোট সরকার শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে আর গণতন্ত্র অর্জন করেছে বিশাল বিজয়। শুধু বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে তা নয়; চৌদ্দ দলের ভোটারেরাও উপস্থিত হলে ভোটকেন্দ্রগুলো এমন বিরান ভূমিতে পরিণত হতো না। কিছু কিছু সংখ্যালঘু ভোটার ভোট দিয়ে চরম সংকটে পড়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদেরকে টানাটানি করেছে। যারা ভোট পায় নাই তারা ওদেরকে মারধর, বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়িছাড়া করেছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্রের মূলনীতি বৈশিষ্ট্য ও শর্তাবলী কোন কিছুই বিদ্যমান না থাকায় নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক মহল মনে করেছিল নতুন তফসিলের মাধ্যমে পুনরায় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাত ৯টার পর টিভি চ্যানেলগুলোতে শতকের স্থলে লাখের ওপরে নির্বাচনী ফলাফলের সম্প্রচার শুনে দেশবাসী হতবাক হয়ে যায়। গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল, ঘর জামাইয়ের শ্বশুর বাড়ি দখলের মত উনারা জোর করে জাতির ঘাড়ে বসে পড়বে একথা বুঝতে আর কারো বাকি রইল না। যারা মন্ত্রী, এমপি হয়ে গেলেন তারা কেউ নিজের ভোটটাও দিতে পারলেন না। বিক্ষুব্ধ জনতা ভোট কেন্দ্রে মল ঢেলে দিয়েছে। নির্বাচনী সামগ্রীর গাড়ি লুট করেছে, ভোট কেন্দ্রে আগুন দিয়েছে, ব্যালট বাক্স ভেঙ্গে ফেলেছে, পুলিশ, আনসার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরও দাবি করা হয়Ñ আমরা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমরা পাঁচ বছর ক্ষমতায় আছি, থাকব। জানি না সংবিধানের কত নম্বর ধারা বলে তারা এসব কথা বলেন।
মেহেরপুরে মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে নাসিম সাহেব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরে গেছে। কবর থেকে আর কোন দিন উঠবে না। এতে ইঙ্গিত বহন করে যে, বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলকারী এই অসাংবিধানিক সরকার মসনদ থেকে সরবে না। তারা যত লুটপাট, হামলা-মামলা, সন্ত্রাস, গুম, খুন, ক্রসফায়ার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, গ্রেফতার বাণিজ্য, জবরখল, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ, দমন-পীড়ন, ঘরোয়া সংঘাত ও উৎখাত-নির্মূলের স্ট্রীম রোলার চালাক না কেন প্রতিবাদ করলে সর্বশ্রেণীর লীগ ও সর্বধরনের বাহিনীর জোরে তা প্রতিহত করা হবে। পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার সোনার বাংলা গঠনের জন্য দেশবাসীকে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানাবেন। সিইসি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবেন। বেগম জিয়া নয়ন মেলে দেখবেন যে, ইসি কোন লেভেল প্লেইয়িং ফিল্ড তৈরি করছেন না। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না, দলীয় লোকের সাজানো চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের রদবদল করছেন না, নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ভিন্ন মতের বন্ধ মিডিয়াগুলো উন্মুক্ত করছেন না, দাগী, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসী ক্যাডারদের গ্রেফতার করছেন না, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং অবারিত করার জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছেন না, সকল দলের তালাবদ্ধ অফিসসমূহ খুলে দিচ্ছেন না, মিথ্যা মামলায় কারাবন্দী হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছেন না, সর্বদলীয় নেতাদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন করছেন না। শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনী ট্রেন চালু করে দিয়েছেন। সে ট্রেনে আরোহণের পরিবর্তে বর্জনের জন্য গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় ডাক দেয়া হবে। আবার শুরু হবে পুরাতন খেলা। এরশাদ সাহেব গণতন্ত্রের বেহাল দশায় অস্থির হয়ে জাপা প্রার্থীদের প্রতি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ডাক দিবেন। নির্বাচন কমিশনার আবেদনপত্রগুলো ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখে দিবেন। ডিবির লোকেরা এরশাদ সাহেবকে চিকিৎসার জন্য ধরে নিয়ে যাবেন হাসপাতালে। সরকার তার নামে নির্বাচনী পোস্টার ছাপিয়ে রংপুর ঢেকে ফেলবেন। জানুয়ারির কোন একদিন নানা বাহিনী রাস্তায় টহল দেবে। নির্বাচনী স্টাফরা ভোট কেন্দ্রে বসে বসে ঝিমাবেন। রাত ৯টার পর টিভি চ্যানেলগুলো মহাজোট সরকারের নিরংকুশ বিজয় বার্তা ঘোষণা করবে তারপর জাতীয় পার্টির মাথা থাকবে বিরোধী দলে লেজ থাকবে সরকারে। এভাবে এক অদ্ভুত ও বিচিত্র সরকার ক্ষমতা ও সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বে না। তারা রোজ কিয়ামত অবধি বাংলাদেশ শাসন করবে।
এখন রাজনৈতিক দলগুলোর করণীয় কি? তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল ছাড়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আর কোন নির্ভরযোগ্য পথ নেই। এ পদ্ধতি বহাল থাকলে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসত না। এ আশঙ্কায় ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। এ ব্যবস্থা যতদিন বলবৎ ছিল ততদিন ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সিঁড়ি বেয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আরোহণ করে সিঁড়িটা ভেঙ্গে ফেলে দিল। কোন ব্যক্তি বা শক্তি অন্যায়ভাবে আইনের সিঁড়িটা ব্যবহার করলে তার বিচার হতে পারে। নদীতে ফেরি দিয়ে যানবাহন, মালামাল ও যাত্রী পারাপার করা হয়। সেখানে ঘটনাচক্রে শিয়াল কুকুর উঠে মানুষকে দংশন করলে ফেরিটা কি ভেঙ্গে ফেলতে হবে? ইয়াজুদ্দিন, ফখরুদ্দিন মঈনউদ্দিনরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে বন্দুকের নল দিয়ে ৩ মাসের স্থলে ২ বছর স্বৈরতন্ত্র প্রলম্বিত করেছে। এদের বিরুদ্ধে সংবিধান লংঘন ও রাষ্ট্রদোহিতার দায়ে মামলা হওয়ার কথা। এদের সকল অপকর্মকে বৈধতা দেয়ার অঙ্গিকার অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়ার নামান্তর। সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আন্দোলন-সংগ্রামের অমূল্য সম্পদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি। ডাঃ মিলনের মত সম্ভাবনাময় যুবকেরা রক্ত দিয়েছে, নূর হোসেনরা বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ শ্লোগান লিখে তাজা খুনে রাজপথ রঞ্জিত করেছে। সেই শহীদের রক্তের সাথে আজ আমরা চরম বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ দিলাম।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির সুফল দেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার বাস্তবায়ন শুরু করেছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্পন্ন হল শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। গত বছর ১১ এপ্রিল পাকিস্তানে সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হত তাহলে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতেন। পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করা হাজার কোটি টাকার সম্পদ পুনরুদ্ধারের সুযোগ সৃষ্টি হত। যুদ্ধ করে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম জলাঞ্জলি দিতে হতো না। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধন, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতি ও নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে আরেকটি সংগ্রাম প্রয়োজন। সেই সংগ্রাম হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। জাতীয় মুক্তি এবং গণতন্ত্র সুরক্ষার এটাই একমাত্র স্থায়ী সমাধান। জাতি যত শীঘ্র বিষয়টা অনুধাবন করবে তত শীঘ্রই কল্যাণ আমাদের জীবন স্পর্শ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এম এস আনসারী 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads