শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

ব্যাপক অপহরণ ও হত্যা প্রসংগ


ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ এখন প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে উত্তাল। ত্বকীসহ কয়েকটি পরপর হত্যাকা-ের বিচার এবং হন্তারক ও অপহরকদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রাচ্যের ডা-ি বলে খ্যাত বাণিজ্যবন্দরটি এমনিতেই প্রায় টালমাটাল ছিল কিছুদিন যাবৎ। এরপর সেখানকার প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনের অপহরণ ও তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দেবার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ এখন ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে। বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চাইছে প্রশাসন। কিন্তু এভাবে ক্ষোভের দাবানল ঠেকানো সম্ভব হবে না বলে মনে হচ্ছে। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, দেশময় ছড়িয়ে পড়ছে অপহরণ, খুন ও গুমাতঙ্ক। ৭ বছরের শিশু অপহরণ করে তার কিডনি খুলে নিয়ে যাবার ঘটনায় সিরাজগঞ্জে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে শিশুরা। ঢাকার ফ্লাইওভার ও রাস্তায় পাওয়া যাচ্ছে মানুষের ক্ষত-বিক্ষত লাশ কিংবা শরীরের বিচ্ছিন্ন অংশ। এমনই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে জীবনযাপন করতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। তবে উত্তরের জনপদ নওগাঁয়ে ঘটেছে ব্যতিক্রম। সেখানে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ১১ জনের একটি অপহরক দল একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করতে গেলে স্থানীয় জনগণ তাদের ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে সম্প্রতি।
চৌধুরী আলমকে পাওয়া যায়নি। ইলিয়াস আলী এখনও নিখোঁজ। সম্প্রতি শামসুল ইসলাম নামের এক যুবদল নেতাকে ঢাকা থেকে অপহরণ করে অজ্ঞাতনামা একটি গোষ্ঠী। তার লাশ পাওয়া গেছে লক্ষ্মীপুরে। সাগর-রুনির হত্যাকারীদের এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। নারায়ণগঞ্জের সর্বশেষ অহরণ ও হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। উল্লেখ্য, চৌধুরী আলম কিংবা নিখোঁজ ইলিয়াস আলী সাহেবরা জাতীয়তাবাদী দলের হলেও নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা আওয়ামী ঘরানার। এমনকি এ অপহরণ ও হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তারাও একই ঘরানার বলে বহুলভাবে আলোচিত। কাজেই সমগ্রদেশকে নাড়িয়ে দেয়া এ নির্মম ও লোমহর্ষক অপহরণ-হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবেÑ এমনটি হয়তো প্রত্যাশাই থেকে যাবে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অপহরণ-হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এ নির্দেশের বাস্তবায়ন কতটুকু এবং কখন হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। অবশ্য গত ১লা মে’র শ্রমিকদলের সমাবেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া অপহরকদের ঘেরাও করে গণধোলাই দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে তো? বিনাভোটে নির্বাচিত ও জোর করে ক্ষমতা দখলকারী মন্ত্রীরা বলছেন, গুম-খুনের ঘটনা নাকি এখনও সীমা ছাড়িয়ে যায়নি। অপহরণ-হত্যার ঘটনা নাকি আগের তুলনায় অনেক কম। সত্যি সেলুকাস! ক্ষমতার চশমা চোখে লাগালে এমনই দেখা যায়।
ক্ষমতাসীনদের নির্দেশে সারাদেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নিরপরাধ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে বুলেটবিদ্ধ করা হচ্ছে। রাস্তায় ফেলে হত্যা করা হচ্ছে। জেলে পুরে নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। একটার পর একটা মিথ্যে মামলা চাপানো হচ্ছে তাদের ওপর। প্রকৃত অর্থে জোর করে ক্ষমতাদখলকারীরা গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করছে। এদের আক্রোশে কেউ কোথাও স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। এ দুঃশাসনের দাপটে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা দুরাশা বৈ কিছু নয় বলেই মনে হচ্ছে। তাই দুঃশাসন ও দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে জনগণক ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads