সোমবার, ১২ মে, ২০১৪

সামাজিক ট্রমা আর কতদিন চলবে


নারায়ণগঞ্জের ৭ হত্যাকান্ডের পর সারা দেশে যে আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে অনেকেই ভেবেছিলেন অপরাধ জগতের লোকজন হয়তো কিছুদিন থমকে দাঁড়াবে। কিন্তু তেমনটি হয়নি। অপহরণ, হত্যা ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজধানীর রাজারবাগে ফিল্মী স্ট্রাইলে অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার সকাল ১০টার দিকে টেলিকম ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, খিলগাঁও এলাকার বিকাশের পরিবেশক ২০ লাখ টাকা নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে ব্র্যাক ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় জমা দিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাজারবাগ টেলিকম ভবনের বিপরীত দিকের রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে পড়েন তারা। সিগন্যালে থাকা অবস্থায়ই পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলযোগে আসা তিন যুবক ব্যবসায়ীর পাশে মোটরসাইকেল থামিয়ে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ব্যাগে থাকা ২০ লাখ টাকা ছিনিয়ে এজিবি কলোনির দিকে চলে যায়। এ সময় তাদের চিৎকার শুনে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ মামুন দুর্বৃত্তদের মোটরসাইকেল আটকানোর চেষ্টা করলে তারা এক রাউন্ড গুলী ছোঁড়ে। পরে মোটরসাইকেলে তাদের পিছু ধাওয়া করলে দুর্বৃত্তরা কমলাপুরের দিকে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে অন্য পুলিশ থাকলেও তারা ছিনতাইকারীদের ধরতে এগিয়ে আসেনি।
প্রকাশ্য দিবালোকে ফিল্মী স্টাইলে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে এভাবে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা থেকে সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, অপরাধ জগতের লোকেরা নিয়ন্ত্রিত হয়নি। তাদের অব্যাহত অপতৎপরতা ও বেপরোয়া মনোভাবের রহস্য কী? এভাবে অপরাধ তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার সাহস তারা কীভাবে পাচ্ছে? দেশের জনগণ এজন্য অভিযুক্ত করছে পুলিশ-র‌্যাব, প্রশাসন ও সরকারকে। এসব অভিযোগের গুরুত্বকে স্বীকার করেও বলতে হয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমাজ ও সামাজিক সংগঠনেরও দায়িত্ব রয়েছে। আর যারা অপরাধ করে তারা কোনো না কোনো পরিবারের সাথে যুক্ত আছে। পরিবারের সদস্যরা জানার পরেও যদি অপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের সংশোধন ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না চালায়, তাহলে সমাজকে অপরাধমুক্ত করা খুবই কঠিন ব্যাপার। এখানে প্রসঙ্গত আরো বলে রাখা প্রয়োজন যে, পরিবার ও সমাজে যখন নৈতিক অবস্থা এমন শিথিল পর্যায়ে উপনীত হয়, তখন প্রশাসন ও সরকারের দায়িত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের সরকার ও প্রশাসনের আচরণে বোঝা যায় না যে, তারা তাদের বাড়তি দায়িত্বের বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে তাদের বোধোদয় জনগণের কাম্য।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও দুর্বৃত্তদের দমনে সরকার ও প্রশাসন পারঙ্গমতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশে এখন, সামাজিক ট্রমা চলছে বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। একের পর এক অপহরণ, হত্যা ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় জনগণের মধ্যে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। পেশাদার অপরাধীদের মধ্যে এখন অনেকটা গা-ছাড়া ভাব। এর কারণ নানা ধরনের অপরাধে এখন তাদের সহযোগিতা করছেন খোদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক ধরনের সদস্য, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও বিত্তবান ব্যক্তিরা। মূলত লোভ ও সহজে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের মোহে তারা অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় পরিস্থিতির উন্নয়নে যত দ্রুত সম্ভব প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও নজরদারি বাড়ানো বর্তমান সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে তারা মনে করেন। সরকার এইসব দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads