শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

ফেনী নারায়ণগঞ্জ নয় সরকারী সন্ত্রাসীরা সারা দেশেই এখন তৎপর


শেখ সাহেবের নৌকা এখন খুনী, ডাকাত, জঘন্য অপরাধী, সন্ত্রাসী ও ভাড়াটে গু-াদের প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়। এই নৌকার আরোহীদের মধ্যে সজ্জন খোঁজা দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। পর পারে থেকে তিনি বা তার আত্মা এই অবস্থা দেখে কতটুকু পরিতৃপ্ত হচ্ছেন বলা মুস্কিল। তবে তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে তার নৌকার মাঝি মাল্লা আর যাত্রীরা যেভাবে বিভক্ত হয়ে পরস্পর পরস্পরকে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছেন তাতে সহজে বলা চলে যে এই দলটি অচিরেই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষপ্ত হবে। কেউ কেউ বলা বলি করছেন যে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে লুট পাট, জুলুম নির্যাতন, হত্যা, গুম, বিরোধীদল নিধন, মিথ্যাচারের রাজত্ব কায়েম ও নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিবেশী দেশের কাছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন সত্তাকে যে বিকিয়ে দিয়েছে তার প্রাকৃতিক প্রতিশোধের দুএকটি নজির ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ সাম্প্রতিক প্রবাহকে দলটির ওপর আল্লাহর গযব বলেও অভিহিত করছেন। তাদের ধারণা নব্বই শতাংশ মুসলমানের এই দেশে জুলুম নির্যাতন, অত্যাচার অবিচার, জেনা ব্যভিচার ও দুর্নীতির যে পাহাড় আওয়ামী লীগ গড়ে তুলেছে, বিচারের নামে অবিচার করছে, সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই অবস্থায় বসে থাকতে পারেন না। তার প্রতিশোধ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আবার কিছু দুমুখ আছেন যারা মনে করেন, যারা অল্প বয়স্ক, বিশেষ করে বয়স ৫৫ এর নীচে তারা জাতির পিতার শাসন দেখেননি, সত্তুরের দশকের প্রথমার্ধের আওয়ামী লীগকে চেনেন না তাদের জন্য তার কন্যার শাসনের মাধ্যমে তার শাসন ও আওয়ামী লীগকে চেনার একটা বিরাট সুযোগ আল্লাহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘুরেছে। দেশ আগায়নি। ঘটনা যাই হোক আমার চিন্তা ভিন্ন, অনেকটা স্বার্থ দুষ্ট।
জন্মস্থান ফেনী হবার কারণে ফেনীর প্রতি  আমার একটা স্বাভাবিক টান রয়েছে। ফেনীবাসীদের কাছে এক সময় ফেনী গর্ব করার মতো একটি জনপদ ছিল। শিক্ষা, দীক্ষা, অবকাঠামো, মানুষের বৈষয়িক অবস্থা ও জীবনযাত্রা প্রণালী, আচার আচরণ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব দিক থেকেই এই জনপদের একটি সুনাম ছিল। শৈশব ও যৌবনে এই সুনাম আমাকে আন্দোলিত করতো। কর্মজীবনে প্রায় সর্বত্র ফেনীবাসী পেশাজীবীদের দ্বীপ্ত পদচারণা ও সাফল্য দেখে তৃপ্তি পেতাম। সিভিল সার্ভিস বলুন, সাংবাদিকতা বলুন আর ব্যবসা বাণিজ্য বলুন সর্বত্র তারা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি যখন সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করি তখন এই জগতে যারা শীর্ষ স্থানে ছিলেন তাদের বেশীর ভাগই ছিল ফেনীবাসী। দুর্ভাগ্য ফেনীর এবং তার সাথে স্বাধীন বাংলাদেশেরও। সত্তুরের দশক থেকে এই জনপদের অধঃপতন শুরু হয় এবং আওয়ামী লীগই এর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। অবস্থার এতই অবনতি ঘটেছিল যে নব্বই এর দশকের শেষ ধাপে এসে দুনিয়াব্যাপী ফেনী সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে কুখ্যাত হয়ে উঠে। আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারীর নেতৃত্বে এখানে গড ফাদারের একটি দানব শ্রেণী তৈরী হয় যাদের কাছে মানুষের জীবন, সম্পত্তি, ইজ্জত আব্রু জিম্মী হয়ে পড়ে। ২০০০ সালের কথা, তখন ফেনীর জেলা প্রশাসক ছিলেন দেবাশীস নাগ। জয়নাল হাজারীর অনুগত এবং আওয়ামী লীগের বশংবদ একজন কর্মকর্তা হিসেবে অনেকের কাছেই তিনি পরিচিত ছিলেন। আসলে তিনি ছিলেন সামর্থ্যহীন অসহায়  একজন কর্মকর্তা, একান্তে একদিন তার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তিনি একটা ঘটনা বলে অনেকটা কেঁদে দিয়েছিলেন। একজন অতিরিক্ত সচিব, দাগনভূঞা তার গ্রামের বাড়ী। তার ভাই গ্রামে থাকেন। অবিবাহিত কিশোরী ও যুবতি মেয়ে আছে। তাদের নিরাপত্তা নেই। এডিশনাল সেক্রেটারি সাব পদমর্যাদার কথা চিন্তা না করে ডিসি নাগ বাবুর কাছে তাদের নিরাপত্তা চাইতে তার দফতরে দেখা করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি নিরাপত্তা দিতে পারেননি। জয়নাল হাজারীর সন্ত্রাসী বাহিনী ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালীন আওয়ামী লীগের ঐ আমলে ফেনীবাসীকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয়নি। বহুজনপদ জ্বালিয়ে দিয়েছে। বহু মা বোনের ইজ্জত লুটেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দিয়েছে। তার আদেশ অমান্য করায় ফেনীর একমাত্র মেডিকেল কলেজ ধ্বংস করে দিয়েছে। নবনির্মিত কোর্ট বিল্ডিং উদ্বোধন হতে দেয়নি। এক সাংবাদিকের হাত পা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
২০০১ সালের সরকার পরিবর্তনের পর অবস্থার রাতারাতি পরিবর্তন ঘটেছে। ফেনীতে সুলায়মান চৌধুরীর ন্যায় একজন বাঘ জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ায় এবং চারদলীয় জোট সরকারের কঠোর পদক্ষেপে সন্ত্রাসীরা
দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। কেউ ধরা পড়ে জেলে গিয়েছিল, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। অনুপস্থিতিতে বিচার হয়ে তারা জেল-ফাঁসির সাজাও পেয়েছিল। কিন্তু মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের আঁতাতের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর শুধু এরা নন যারা দেশের সন্ত্রাসী তারাও ছাড়া পেয়ে যায়। তাদের শাস্তি মওকুফ হয়। ঋণের দায়ে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত জঘন্য অপরাধীরাও প্রেসিডেন্টের অনুকম্পায় মুক্তি পায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীসহ খুন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে যাদের যাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ছিল বিশেষ কমিটি করে তাদের মামলা প্রত্যাহার করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সারা দেশে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী-খুনীদের সংখ্যা ২০ হাজারের অধিক। তাদের সামাজিকভাবেও পুনর্বাসন করা হয়। জেল-জরিমানার দ-প্রাপ্ত ব্যক্তিরাও মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ফলে পুরাতন সন্ত্রাসীদের মধ্যে এই ধারণা-বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে যায় যে, দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই তাদের আশ্রয়স্থল, এই দল করলে অপরাধীদের যেমন শাস্তি হয় না তেমনি অর্থ বিত্তও মিলে। পুরাতনদের অনুপ্রেরণায় নতুন সন্ত্রাসীরাও একত্রিত হতে থাকে এবং নৌকায় এখন তারা এমনভাবে ঠাঁই নিয়েছে যে সেখানে আর তিল ধারণের স্থান নেই।

আমি ফেনীর সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। ফেনী তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে এবং সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছে। সারা বাংলাদেশের অবস্থা একই বলে আমার ধারণা। ফেনী, নারায়ণগঞ্জ অথবা নরসিংদী পত্রিকার হেড লাইন হয়েছে আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগ কোন্দল অথবা আধিপত্য বিস্তারের লড়াইতে নৃশংস হত্যাকা- ঘটেছে বলে। আকরাম, নজরুল, লোকমান, ইব্রাহিমসহ আওয়ামী লীগের, যুবলীগের নেতারা যেভাবে নৃশংসতার শিকার হয়েছেন সভ্য জগতে তার নজির নেই। নিজ দলের লোকদের প্রতি যারা এত হিং¯্র হতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাদের আচরণ কি আমরা কল্পনা করতে পারি? বিডিআর হত্যকা-ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা কত নৃশংসতার শিকার হয়েছেন তা আমরা ভুলে গেছি? ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে যারা সাপের মত পিটিয়ে রাস্তার ওপর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করেছে তারাইতো এখন ক্ষমতায়। তারাইতো নাটোরের উদীয়মান নেতা সানাউল্লাহকে রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। তাদের পরিবার এখনো ইনসাফ পাননি। এই ধরনের ঘটনাগুলো দিন দিন বাড়ছে এবং প্রত্যেকটি ঘটনাতে আওয়ামী লীগের গডফাদার সে ওই দলের সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের ওপর নির্যাতনতো অত্যাচারী ফেরাউনকে হার মানিয়েছে। দুঃখের বিষয় তাদের সাথে পুলিশ, র‌্যাব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়ছেন। এর কারণ একটা এবং সেটা হচ্ছে এদের প্রতি সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুকম্পা ও পৃষ্ঠপোষকতা। যত ঘটনা-দুর্ঘটনাই ঘটুক আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বলে ফেলেন এটা জামায়াত-শিবির অথবা বিএনপির কাজ। কোনও হত্যাকা-ের ব্যাপারে মন্তব্য করার আগে তিনি কখনো তদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করেন না। যদিও তদন্তে দেখা যায় যে তার দলীয় নেতা এবং বিশ্বস্তজনরাই এর সাথে জড়িত। লোকমান হত্যা, বিশ্বজিত হত্যা, নজরুল হত্যা, ব্লগার রাজিব হত্যা, ইব্রাহিম হত্যা, আকরাম হত্যাসহ সব হত্যাকা-ের খবর নিন, এর সত্যতা খুঁজে পাবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উপায় কি? উপায়ও একটি এবং তা হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া, ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার দায় স্বীকার করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পদত্যাগই এখন সময়ের দাবি। নৌকার তলা ফুটো হয়ে গেছে। অচীরেই তা ডুবে সকলের সলীল সমাধি ঘটাবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads