স্বাধীন অস্তিত্বের প্রতি নিষ্ঠা যদি মানুষ হারিয়ে ফেলে তা হলে একটি দেশ টিকে থাকতে পারে না, বিশেষ করে সে দেশের সরকার যদি এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের ভূখ-গত অখ-তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে বিগত কিছুদিন ধরে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যার বিরুদ্ধে দেশপ্রেমের দাবীদার প্রতিটি মানুষের মধ্যে ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তা হয়নি বা হতে দেয়া হয়নি।
ভারতের প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের একজন শীর্ষ নেতা সম্প্রতি প্রকাশ্য জনসভায় একটি ঘোষণা দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে তারা যেন তাদের মোট ভূখ-ের এক তৃতীয়াংশ ভারতকে হস্তান্তর করে। তা না হলে ভারতের মোট মুসলিম জনসংখার এক তৃতীয়াংশকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ভারত বাধ্য হবে। এই তৃতীয়াংশ ভূখ- দাবীর অনুকূলে তিনি একটি ব্যাখ্যা দিয়ে ভূখ- হস্তান্তরের সুবিধার্থে বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর খুলনা বরাবর দু’টি সমান্তরাল রেখা টেনে তার মধ্যবর্তী অঞ্চল হস্তন্তরের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। অবশ্য তার এই রেখা নিয়ে গণমাধ্যমে কিছুটা বিভ্রান্তিও রয়েছে। কোন কোন গণমাধ্যম এই রেখাকে সমান্তরাল রেখার পরিবর্তে শুধু সরল রেখা বলেছেন। এর দুটি তাৎপর্য দাঁড়ায়। যদি সরল রেখা হয় তাহলে তা হবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বরাবর শেরপুর- নেত্রকোনা-, সুনামগঞ্জ বর্ডার থেকে বৃহত্তর খুলনার সাতক্ষীরার শেষ সীমান্ত পর্যন্ত। তার দাবী অনুযায়ী যদি এই রেখার উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বের জেলাগুলো ভারতকে দিতে হয় তা হলে তার অর্থ দাঁড়ায় যশোর, মাগুরা, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলাসমূহের অংশ বিশেষসহ উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, জামালপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ভারতকে দিয়ে দেয়া। এই এলাকাটি বাংলাদেশ ভূখ-ের এক তৃতীয়াংশের বেশি। আর যদি সমান্তরাল রেখা হয় তা হলে প্রথমোক্ত সরল রেখাটির পাশাপাশি হবিগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বর্ডার থেকে বঙ্গোপসাগর বরাবর বাগেরহাট বর্ডার পর্যন্ত। এক্ষেত্রে সমান্তরাল দুটি রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর সিলেট, বৃহত্তর ময়মনসিংহের বেশিরভাগ অঞ্চল, বৃহত্তর ঢাকা, বৃহত্তর ফরিদপুর, বৃহত্তর যশোর, বৃহত্তর বরিশাল এবং বৃহত্তর খুলনা নিয়ে সমগ্র অঞ্চল এবং বৃহত্তর কুমিল্লার অংশবিশেষ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দুই সমান্তরাল রেখার অন্তর্ভুক্ত সব জেলাগুলোকেই ভারতের কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং এই ভূখ-টি আমাদের মোট ভূখ-ের এক তৃতীয়াংশের মত হয়। বিজেপি নেতা শ্রীমান সুব্রামানিয়াম এই অঞ্চলটি দাবি করেছেন। একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের রাজধানীসহ এক তৃতীয়াংশ ভূখ- দাবি করা কোনও সাধারণ ঘটনা হতে পারে বলে আমি মনে করি না। আবার এই ভূখ-ের সাথে যদি দেশটির রাজধানীও জড়িত থাকে তা হলে তো কোনও কথাই নেই। আমি প্রবীণ বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়ামকে শ্রীমান বলেছি। শ্রীমান শব্দটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হিন্দু বালকদের বেলায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুব্রামানিয়াম বয়সে প্রবীণ হলেও রাজনীতিতে অপরিপক্ব এবং অর্বাচীন বলেই আমার মনে হয়। কেন না যিনি একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ভূখ-গত অস্তিত্ব ও সংহতি বলতে কি বুঝায় তা জানেন না এবং তাকে শ্রদ্ধা করেন না তিনি বয়সে যত প্রবীণই হোন না কেন তাকে অর্বাচীন ছাড়া কিছু বলা যায় না, তার বালখিল্যতা ক্ষমার অযোগ্য।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা এমন একটি দল দ্বারা শাসিত হচ্ছি যাদের জনসম্পৃক্ততা যেমন নেই তেমনি ঝঃধঃব পযধংঃরঃু সম্পর্কে ধারণাও নেই। জনগণের সমর্থন নয়, বহিঃশক্তির পৃষ্ঠপোষকতা ও সামরিক-বেসামরিক সমর্থন নিয়ে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকাকেই ব্যক্তিগত গোষ্ঠীগত ও দলীয় ভিশন, মিশন ও গোলে পরিণত করেছেন বলে মনে হয়। মিডিয়া ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের একদল ভাড় সব সময় তাদের সাথে থাকেন এবং দেশ ও গণবিরোধী সকল কাজে সহায়তা করেন। তারা স্বাধীনতার চেতনার নামে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেন। দেশপ্রেমিক দল ও তাদের অনুসারীদের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে কার্যত: দেশকে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত করে ফেলেছেন। যখন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর হামলা আসে তখন তারা হামলাকারীদের পক্ষাবলম্বন করেন। জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্য সত্য ও তথ্য বিকৃতির সকল কৌশল অবলম্বন করেন। সুব্রামানিয়াম বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ভূখ- দাবি করলেন এবং বললেন, যদি বাংলাদেশ সরকার এই ভূখ- হস্তান্তরে ব্যর্থ হন তাহলে ভারতে অনুপ্রবেশকারী মুসলমানদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। তার এই হুমকি সাধারণ কোনও মানুষের হুমকি নয়। তিনি ভারতের ভবিষ্যত সরকার গঠনে অগ্রগামী একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একজন এবং তিনি নির্বাচনী প্রচারণাকালে এই ঘোষণাটি দেয়ার অর্থই হচ্ছে এটি তার দলের নির্বাচনী মেনিফেস্টোর যে অংশ বিশেষ তা ভোটারদের জানিয়ে দেয়া। তার এই ঘোষণার পর বাংলাদেশে যখন কিছুটা প্রতিক্রিয়া শুরু হলো তখন বিষয়টির গুরুত্বকে খাটো করার জন্য প্রতিবেশী দেশ ও তাদের বশংবদ বাংলাদেশের জনবিচ্ছিন্ন সরকারের প্রতি অনুগত মিডিয়াগুলো সক্রিয় হয়ে উঠলো। তারা প্রচার করতে শুরু করলো যে, বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়ামের বক্তব্যটি একান্ত তার ব্যক্তিগত, ভারত সরকারের নীতির সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে কোনও বক্তব্য দেখা হয়নি। আবার আমাদের সরকারও ভারত সরকারের কাছ থেকে কোনও ব্যাখ্যা দাবি করেননি। অনেকে মনে করেছিলেন যে অন্তত: আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে এনে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানাবেন এবং সুব্রামানিয়ামের ঔদ্ধত্যের ব্যাখ্যা তলব করবেন। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে দেশপ্রেমিক মহলে হতাশা এবং বিস্ময় ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের কথা হচ্ছে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখ-তা সুরক্ষার শপথ নিয়ে সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছেন। প্রতিবেশি দেশের উদীয়মান সরকারি দলের (বিরোধী দল হলেও কথা নেই) একজন শীর্ষ নেতার হুমকি আমাদের সরকারের টনক নড়াতে পারলো না কেন? তাদের নির্লিপ্ততার কারণ কি? এবং বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার পেছনে রহস্য কি?
সুব্রামানিয়ামের বাংলাদেশ বিরোধী ঘোষণার পরপরই গুজরাটে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার প্রধান হোতা বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী ময়দানে নেমে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী নামে কথিত ভারতীয় মুসলমানদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন যে তারা যেন পোলটাপাল্টি নিয়ে প্রস্তুত থাকে। তিনিও তার দল ক্ষমতায় আসলে তাদের ভারত থেকে বের করে দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর এই বিবৃতির পর আর কিছু বলার থাকে না বলে আমার ধারণা। বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা সুব্রামানিয়াম এবং প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদি যখন এক সুরে কথা বলেন, তখন এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবার কথা নয় যে, দল হিসেবে বিজেপি বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। বিজেপির চেয়ারম্যান একই কথা বলেছেন। যদি তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়ে সরকার গঠন করেন, তখন অবশ্যই এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, এই দৃষ্টিভঙ্গি শুধু বিজেপির নয়, সমগ্র হিন্দু ভারতেও দৃষ্টিভঙ্গি। বিজেপি ধর্মভিত্তিক তথা হিন্দুত্ববাদী একটি দল। ভারতের হিন্দুরা যদি বাংলাদেশের মুসলমানদের ব্যাপারে বিজেপির সাথে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তাহলে আমাদের সরকার কিভাবে তা মোকাবিলা করবেন বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার। ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়েছিল ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রধান কথা হচ্ছে, ভাষা বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু এবং মুসলমানরা স্বতন্ত্র দুটি জাতি। এই তত্ত্বটি হিন্দুরা সহজভাবেই শুধু গ্রহণ করেনি, যে বাংলার বিভক্তিকে তারা ১৯০৫ সালে সন্ত্রাস নৈরাজ্য দিয়ে বিরোধিতা করেছিল, ১৯৪৭ সালে সেই বাংলার বিভক্তিকেই বিনা বাধায় মেনে নিয়েছিল। এই সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলার হিন্দুদের অনেকেই জায়গা-জমি বিক্রি করে ভারতে চলে যান। একইভাবে পশ্চিম বাংলা ও বিহারসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলা ও উর্দু ভাষী লাখ লাখ মুসলমান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মাইগ্রেট করেন। তাদের অনেকেই আবার সম্পত্তি বিনিময় করেও পাকিস্তান ও হিন্দুস্তানে বসতি স্থাপন করেছেন। কোনো মুসলমান এই প্রক্রিয়ায় পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেননি। কিন্তু ভারতের দাবি অনুযায়ী, ’৪৭ সালের দেশ বিভক্তির পর তৎকালীন পূর্ব বাংলা থেকে অন্যূন দেড় কোটি হিন্দু ভারতে চলে গিয়েছেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এই সংখ্যা এখন বৃদ্ধি পেয়ে ৫ কোটি অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশকে তাদের নাতিপুতিসহ সবাইকে ফেরত নিতে হবে। তাদের বাসস্থান সংকুলানের জন্য বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভূখ- এখন তাদের দরকার। ভারত বাংলাদেশের জন্ম প্রক্রিয়ায় যেমনি ধাত্রীর ভূমিকা পালন করেছিল, তেমনি ১৯৪৭ সাল পরবর্তী সময়ে ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণকারী বাংলাভাষী হিন্দু তাদের সন্তান-সন্ততিদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্যও ভারতের কিছু কিছু রাজনৈতিক দল অনুরূপ ভূমিকা পালন করতে আগ্রহী। আবার কেউ কেউ বাংলাদেশের অস্তিত্ব মিটিয়ে ফেলতেও চান। তাদের যুক্তি হচ্ছে, যে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭১ সালে, তাকে অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ ভারতের সহায়তায় ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত এখন স্বাভাবিকভাবেই দাবি করতে পারে যে, বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের প্রয়োজন নেই। কেননা দেশ বিভক্তির মূল ভিত্তিই ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশ যদি এটি মানতে রাজি না হয়, তাহলে সিকিমের ন্যায় ভারতভুক্ত করে তাদের তা বুঝিয়ে দেয়া প্রয়োজন। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা, বাংলাদেশী ভূখ-ের জবরদখল, বলপ্রয়োগে ফসল কেটে নেয়া, পুশইন, এক-তৃতীয়াংশ ভূখ- দাবি, অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলমানদের পোঁটলা-পাঁটলিসহ বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি প্রভৃতি হচ্ছে তাদের ছলাকলার অংশ মাত্র। এত গরু খেয়েও তাদের এই কৌশলগুলো বোঝার মতো এক গরুর মাথা যদি আমাদের না হয়, তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যারা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের তাৎপর্য বোঝে না, জনকল্যাণ নয় জাতীয় সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য আধিপত্যবাদীদের পদলেহন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, দেশের জনগণ তাদের মোকাবিলা অবশ্যই করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
বাংলাদেশের মুসলমানদের ঈমানী জজবা এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও নির্যাতনের কাছে অবরুদ্ধ। তাদের ওপর দিয়ে এখন অত্যাচারের স্টিমরোলার চলছে। তারা নিজেদের রক্ষা করতে যেমন পারছেন না, তেমনি প্রতিবেশী দেশের নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষায়ও সক্রিয় কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছেন না। আর সরকার? ৯০ শতাংশ মুসলমানের একটি দেশ; তার সরকার ইসলামের কথা যারা বলেন, অনুসরণ ও অনুশীলন করেন, ব্যক্তি ও সমাজজীবনে ইসলামকে কায়েম করতে চান, তাদের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালান। আবার প্রতিবেশী দেশের জালেম সরকার ও জনগণের একাংশ যখন তাদের হত্যা করে বাড়িঘর সম্পত্তি জ্বালিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দেয়, তখন জমলুমের পক্ষ না নিয়ে জালিমের পক্ষাবলম্বন করে অত্যাচারের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এটা আশ্চর্য বৈকি!
আমি বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়ামের ভূখ- দাবি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম। ভূখ- তো প্রকৃতপক্ষে দাবি করার কথা আমাদের। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ভিত্তির ওপরই বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে। ঐ সময় পাকিস্তান না হলে ’৭১ সালে বাংলাদেশ হতো না। ১৯৪৭ সালে সকল বিবেচনা এবং অনুসৃত নীতিমালা অনুযায়ী, মুর্শিদাবাদ জেলা বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হবার কথা ছিল। ঐ জেলাটি ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু গঙ্গা নদীর প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ বাউন্ডারি কমিশনকে মধরহ ড়াবৎ করে ঐ জেলাটিকে ভারতভুক্ত করে নেয়। একইভাবে আসাম প্রদেশের সিলেট জেলায় অনুষ্ঠিত গণভোটের রায়কে উপেক্ষা করে কংগ্রেসের হিন্দু নেতাদের দ্বারা প্রভাতি হয়ে রেডক্লিফ রোয়েদাদে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে করিমগঞ্জ মহকুমার সদর থানার অর্ধেক, বদরপুর, পাথারকান্দি রাতাবাড়ি এই সাড়ে তিনটি থানা এবং কাছাড় জেলার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হাইলাকান্দি মহমুকাকে ভারতের ভাগে দিয়েছেন। এটা আমাদের ন্যায্য পাওনা ছিল। এই পাওনা থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।
ভারত তথা বিজেপির দাবি অনুযায়ী, পশ্চিমবাংলা, বিহার, ঊড়িষ্যা, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যের অধিবাসীদের একটি বিরাট অংশ অবৈধ বাংলাদেশী। ২০০৩ সালের ২৯ জুলাই আসাম ট্রিবিউনে প্রকাশিত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আসামের মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ অবৈধ বাংলাদেশী এবং এদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০ লাখ। জোট সরকারের আমলে প্রকাশিত এই রিপোর্টের প্রতিবাদ করা হয়েছিল। আসামের ২৪টি জেলার মধ্যে ১৬টি জেলায় মুসলমানরা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। ভারতের উদ্বেগের এটাই মূল কারণ। ঐতিহাসিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১৮৩২ থেকে ১৮৭২ সাল এবং ১৯০৫ থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত যখন পূর্ববাংলা ও আসাম একই প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তখন বহু বাঙালি পরিবার আসামের বিস্তীর্ণ জঙ্গল এলাকা আবাদ করে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। তারা বাংলাদেশী নন, ভারতীয়। ১৯৪৭ সালের পর যারা বাংলাদেশ থেকে গিয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদেরও বাংলাদেশী বলা যায় না। তারা হিন্দুস্তানকে হিন্দুদের আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করেই সে দেশের নাগরিক হিসেবে বসবাস করছেন। এই অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, বিজেপির দাবির কড়া প্রতিবাদ করা এবং আগ্রাসন রোধে সম্ভাব্য সকল কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন