স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত রোববার বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দেবেন না। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাবের কমান্ডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রয়োজনে র্যাবের সবাইকে প্রত্যাহার করা হবে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়টি তদন্তের ব্যাপার। তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সব হত্যাকা-ের প্রধান আসামী নূর হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুধু নূর হোসেন নয়, তার গডফাদারকেও খুঁজে বের করা হবে। প্রসঙ্গত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতদিন নূর হোসেনের বাড়ির ওপর পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল। এই নজরদারির মধ্যেই নূর হোসেন পালিয়ে গেছে। কড়া নজরদারির মধ্যেও নূর হোসেন কীভাবে পালিয়ে গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা যখন হয়েছে, তখন সে জানতে পেরেছে। কেউ যদি আত্মগোপন করতে চায়, তাহলে তো সে পালিয়ে যাবেই।
নারায়ণগঞ্জের ৭ হত্যাকা- প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে বক্তব্য রাখলেন, তাতে খুশি হওয়ার মতো তেমন কোনো উপাদান নেই। পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যেও নূর হোসেন কীভাবে পালিয়ে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, কেউ যদি আত্মগোপন করতে চায়, তাহলে তো পালিয়ে যাবেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কড়া নজরদারির মধ্যে সে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল কেমন করে? এখানে কি পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে না? এমনও হতে পারে যে, কোনো নির্দেশনার কারণে পুলিশ নূর হোসেনকে পালানোর সময় ধরেনি। সে যাই হোক, কড়া নজরদারির মধ্যে নূর হোসেন পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গ্রহণযোগ্য কোনো বক্তব্য দিতে সমর্থ হননি। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, র্যাবের কমান্ডিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সরকার খুশি নন। এ কথা তো সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে নিষ্ঠাবান হলে নারায়ণগঞ্জে ৭ হত্যাকা-ের মতো ঘটনা ঘটতে পারতো না। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে, নিজস্ব গতিতে কাজ করতে পারছে না, তাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানা ছিল না? ত্বকী হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনার যে বিবরণ পত্র-পত্রিকায় মুদ্রিত হয়েছে, তাতে বহু আগেই তো নারায়ণগঞ্জের নাজুক পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবগত থাকার কথা ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে কাক্সিক্ষত ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে নারায়ণগঞ্জে ঘটে গেল ৭ হত্যাকা-ের মতো নিষ্ঠুর ঘটনা। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর আরেকটি কথা বেশ কানে বেজেছে। তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দেবেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এখানে প্রধানমন্ত্রীকে টেনে আনা হলো কেন? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিংবা তার পুলিশ বাহিনী কী যথেষ্ট নয়? আমরা জানি, আমাদের পুলিশ বাহিনীর যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে। বিভিন্ন ঘটনায় তারা তাদের সামর্থ্য ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। এখানে মূল বিষয়টি হলো, অনুরাগ ও বিরাগের বাইরে রেখে পুলিশকে স্বাধীনভাবে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া। পুলিশকে যদি তাদের পেশাগত দায়িত্ব ও নীতিমালার বাইরে সরকারি দল কিংবা সরকারি দলের নেতাদের নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিতে হয়, তাহলে পুলিশ তাদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দেবে কেমন করে?
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। নারায়ণগঞ্জে একের পর এক অপহরণ ও খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন একপেশে এবং এ শহরের পুলিশ বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিবারের পক্ষপাতিত্ব করে আসছে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে কেমন করে? আমাদের ট্র্যাজেডি হলো, অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে দেশ শাসন না করার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে সরকার ও মন্ত্রীবাহাদুররা সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন না। এর মন্দ ফল শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীই নয়, ভোগ করছে সারা দেশের মানুষ। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর আমাদের সরকার ও প্রশাসনের কোনো বোধোদয় ঘটে কিনাÑ সেটাই এখন দেখার বিষয়।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন