বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০১৩

খমতাসীনদের প্রয়োজন নিরাপদ প্রস্থানের কৌশল নির্ণয়


শেষ পর্যন্ত ঢাকায় একটা ‘তাহরির স্কোয়ার’ ঘটিয়েই ছাড়ল সরকারের চৌকস দুঃশাসনকৌশল। অম্লানবদনে দুষ্টের পালন আর শিষ্টের দমন করে মতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন এই সরকারের নেতাব্যক্তিরা। তবে প্রায় সাড়ে চার বছর মতায় থাকাকালের শুরুতে আর শেষে যে চারটি নিদারুণ ‘গণহত্যা’র রক্তে রঞ্জিত হয়েছে তাদের হাত, তার দাগ ুব্ধ দেশবাসীর নজর থেকে লুকোতে পারছেন না এরা। প্রথম গণহত্যাটি ছিল এই সরকারের মতারোহণের দ্বিতীয় মাসে পিলখানা বিদ্রোহের ‘রাজনৈতিক মীমাংসা’র অজুহাতে সেনাকর্মকর্তা হত্যা ও সেনামনোবল দমিত করার পরিকল্পিত নৃশংস ঘটনা। মতার শেষ বছরে এসে তৃতীয় মাসে ঘটেছে ‘জামায়াত-শিবিরকর্মীকে রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়া হবে না’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ঘোষণা ও নির্দেশ মোতাবেক এক সপ্তাহে পুলিশের গুলিতে ১৭০ জন নাগরিক হত্যা করে মানবাধিকার-বোধরহিত খুনি পুলিশরাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন আর বিরোধী শিবিরে কথায় কথায় সাজানো মামলা হামলার ত্রাস সৃষ্টি। তৃতীয় গণহত্যা ঘটল এ বছরের চতুর্থ মাসে। হরতালবিরোধী হেফাজতবিরোধী নারীশ্রমিক সমাবেশের রাজনৈতিক ল্েয সাভারে একটা বিপজ্জনক বহুতল ভবনে পাঁচটা গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের মিথ্যা নিরাপত্তার অভয় বকেয়া বেতন পরিশোধের লোভ আর অনুপস্থিত হলে বেতন কাটার হুমকি দিয়ে জড়ো করা হলো। ভবন ধসে পড়ে বিম রড আর চাক চাক ছাদ দেয়ালচাপা পড়ে আহত নিহত হলো কয়েক হাজার মানুষ। উদ্ধার কাজ চলেছে এ পর্যন্ত ১৫ দিন ধরে। মোটামুটি অত কিংবা অঙ্গচ্ছেদ করে জীবিত উদ্ধার হয়েছে দুই হাজার ৪৩৮ জন। গলিত লাশসহ নিহত উদ্ধার হয়েছে নয়শ’র বেশি। বাকি লাশ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে, মাত্র ৪০ শতাংশ ধ্বংসস্তূপ অপসারিত হয়েছে। দিল্লিতে বসে এ দেশের অর্থমন্ত্রী বিশ্বসংবাদমাধ্যমে দেয়া একটি সাাৎকারে মন্তব্য করেছেন, তিনি চিন্তিত নন; বাংলাদেশের গার্মেন্ট রফতানি এতে তিগ্রস্ত হবে না। এটা একটা দুর্ঘটনা মাত্র, গুরুতর কিছু নয়। আমলেও নিলেন না যে, ইতোমধ্যে পোশাক বাণিজ্যের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও বঞ্চনার প্রশ্নে তোলপাড় হচ্ছে। বিশ্বনেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ক্যাথলিক পোপসম্রাট বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের নব্য ক্রীতদাস বলে বর্ণনা করেছেন। ইউরোপ বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের হুমকি দিয়েছে; যুক্তরাষ্ট্রে বাতিল প্রক্রিয়ার শুনানি চলছে। এর আগে অর্থমন্ত্রী শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে নিঃস্ব ুদ্র বিনিয়োগকারীদের উল্টো ফটকাবাজ বলে উপহাস করেছিলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে চার হাজার কোটি টাকা তহবিল তছরূপের ঘটনাকে সামান্য বিষয় বলে উড়িয়ে দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, চার হাজার কোটি টাকার লোকসান একটা বড় কিছু নয়। সাভারের এত বড় ‘গণহত্যা’র নিবর্তনযোগ্য দুর্ঘটনাকে এভাবে

অর্থমন্ত্রী খাটো করে দেখানোর ফলে অনলাইনে এসেছে পাঠকদের টানা প্রতিবাদ ও ধিক্কার। কেউ কেউ তাকে বলেছেন, কেউ কেউ বলেছেন ‘নির্লজ্জ বিবেকবর্জিত, মানসিক রোগী’; একজন লিখেছেন, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর মাথায় একটা ভবন ফেলে দিয়ে দেখা যাক, তিনি সে ঘটনাকে গুরুতর মনে করেন কি না। প্রধানমন্ত্রীও সিএনএন বিশ্বসম্প্রচার মাধ্যমে একটি সাাৎকারে সাভারে এতগুলো শ্রমিকের প্রাণনাশের ঘটনাটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংবাদভাষ্যকার।
ওই তিনটি বহুসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনাপরম্পরায় সর্বশেষ ঢাকায় শাপলা চত্বরে ৬ মে রাতে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত অবস্থান ধর্মঘটীদের ওপর পরিকল্পিত সশস্ত্র আক্রমণে ব্যাপক প্রাণহরণের যে লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে, তাতে ‘তাহরির স্কোয়ারে’ পরিণত হয়েছে মতিঝিল। পুলিশি নিরাপত্তার ছত্রছায়ায় ‘শাহবাগ প্রজন্ম’কে দিয়ে মাসব্যাপী আয়েশী-জৌলুসী দিবারাত্রি জাগরণের ধাঁধায় মতাসীন নেতৃবৃন্দ একাত্তরের চেতনার আলখাল্লা পরিয়ে একটা ‘উগ্র ধর্মনিরপেতা’র ভাবাবেগ-বসন্ত জাগ্রত করতে বহুব্যয়ে দেশের গোটা প্রচারমাধ্যম কবজা করে বসেছিলেন। প্রতিক্রিয়ায় গোটা দেশে সুপ্ত ইসলামি চেতনার একটা গণজাগরণ ঘটেছে, তীব্র হয়ে উঠেছে লোকজ মূল্যবোধের সহিসালামতের তাগিদ। লোকমুখেই জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায় ‘বেখবর’-এর কাছে ‘ভাঙা কিল্লায় নিশান’ উড়িয়ে ‘নয়া জামানা’র দাওয়াত পৌঁছে গেছে। অভিজন সমাজ-উপেতি আমজনতার এই ‘মাদরাসা’ প্রজন্ম ও সহমর্মীরা শাহবাগী ‘ব্লগার’দের কুৎসা ও কচাদারের আক্রমণ থেকে ইসলামি সমাজনৈতিকতার হেফাজতের জন্য তাদের মুরব্বিদের ডাকে দুই মাস ধরে সদরে মফস্বলে শহরে উপশহরে গ্রামগঞ্জে আওয়াজ তুলেছে বাংলাদেশের নিজস্ব ইসলামি চেতনার, যা ১৮৩০ সালের বাঁশের কেল্লার চেতনা থেকে শুরু করে ১৯৪৬-৪৭ সালের ব্রিটিশ আর জমিদার খেদাওর চেতনা, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনা আর ১৯৭০-৭১ সালের মুক্তিসংগ্রামের চেতনায় বিস্তৃত, পরস্পর সম্পূরক। এক মাসের ব্যবধানে এরা দুই দফায় ঢাকায় হাজির হয়ে ৫০ লাধিক লোকের মহাসমাবেশ করেছে। প্রথমবার পুলিশি বাধা অতিক্রম করে সরকার আরোপিত রেল-বাস-লঞ্চ-স্পিডবোট-ফেরি পারাপারসহ সবরকম দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধের আদেশ সত্ত্বেও হেঁটে কিংবা কিছু পথ রিকশাভ্যান ও ট্রাকচালক বা নসিমন-করিমন চালকদের কাছে লিফট পেয়ে ঢাকায় জড়ো হয়েছিলেন এরা। দ্বিতীয়বার এরা ঢাকার চার পাশে ছ’টি প্রবেশপথে অবরোধ করে সারা দেশ থেকে রাজধানীর সড়কপথ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। তারপর সরকারের অনুমতিক্রমেই তাদের একাংশ শাপলা চত্বর ও তার সংলগ্ন সব রাস্তাজুড়ে জড়ো হয়েছিলেন তাদের আমির আল্লামা শফীর নির্দেশ শোনার জন্য। কিন্তু আল্লামা শফীকে শাপলা চত্বরে আসতে দেয়া হয়নি। হেফাজতে ইসলামির আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় লালবাগ মাদরাসায় অপো করেছেন মাদরাসার চার পাশে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য সদস্য ঘিরে রাখে। মতিঝিলে অবস্থান কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীদের চলে যাওয়ার হুকুম দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করেছিল। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের সমাবেশে না যাওয়ার জন্য তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে বা যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার করা হচ্ছেÑ এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। লালবাগে অবস্থানরত অবস্থায় তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মতিঝিলের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক হেফাজত নেতাকর্মীদের একাংশ শাপলা চত্বরে রাত যাপনের জন্য খোলা আকাশের নিচে শুয়ে পড়ে আর পাহারায় থাকে জেগে-থাকা কিছু কর্মী। তাদের হটাতে সরকারের পুলিশ কিভাবে মধ্যরাতে ক্র্যাকডাউনের অভিযান চালাল, সে সম্পর্কে সরেজমিন দেখা প্রতিবেদন (সূত্র মানবজমিন) : “শেষ রাতের রুদ্ধশ্বাস অপারেশন। যাকে মানুষ বলছে অপারেশন শাপলা চত্বর। প্রায় দশ হাজার র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির যৌথ অ্যাকশন। টার্গেট ৩০ হাজারের মতো হেফাজতে ইসলামের কর্মীকে হটানো। কয়েক প্রহরব্যাপী ১০ লাধিক লোকের সমাবেশ শেষে অবস্থানরতরা ছাড়া বাকিরা অন্যত্র রাতের আশ্রয় নিয়েছে। পুরো এলাকা ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল সন্ধ্যার পর থেকেই। এক ভুতুড়ে পরিবেশ। অন্ধকারে পাশের লোকটিও দেখা যায় না। গুলি আর সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে হতভম্ব হয়ে পড়েন হেফাজত কর্মীরা। মুহুর্মুহু ওই গুলির আওয়াজ উপো করেও প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন হেফাজতের কোনো কোনো কর্মী। নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবর বলে স্লোগান দেন এরা। সমাবেশস্থল ঘিরে তখনো প্রায় ৫০ হাজার লোক। শাপলা চত্বরের মূল অপারেশন ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে শেষ হলেও গোটা মতিঝিল, টিকাটুলি, যাত্রবাড়ী, পল্টন এলাকায় অপারেশন চলে ভোর ৬টা পর্যন্ত। শাপলা চত্বরের অপারেশন শুরুর সময় পুলিশের কয়েকটি দল থেকে ভাগ করে পুরানা পল্টন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বিএনপি অফিস এলাকায় রাখা হয় যাতে পেছন দিক থেকে কোনো আক্রমণ না হতে পারে। সাড়ে ৫টার দিকে দেখা যায়, কয়েক হাজার হেফাজতকর্মী হাত উঁচিয়ে পুরানা পল্টন মোড় দিয়ে চলে যাচ্ছেন উত্তরের দিকে। পুলিশ তাদের চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। মতিঝিল এলাকা থেকে যৌথবাহিনী কয়েক শ’ হেফাজতকর্মীকে গ্রেফতার করলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়। কিন্তু অভিযান শুরুর সময় হেফাজতের কর্মীদের অনেকেই ছিলেন সঙ্গে আনা জায়নামাজ, সংবাদপত্র, রুমাল ইত্যাদি বিছিয়ে ফুটপাথ সড়কের আইল্যান্ড দোকানপাটের সামনে বেঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে। এমন সময় শুরু হয় যৌথবাহিনীর সশস্ত্র অভিযান। হেফাজতকর্মী কেউ তখনো স্লোগান দিচ্ছেন। তাদের কারো হাতে সুন্নতি লাঠি। বাকিরা একেবারেই খালি হাতে। রাত তখন আড়াইটা। চার দিক থেকে হেফাজতের অবস্থান ঘিরে দাঁড়িয়ে অস্ত্রসজ্জিত ফোর্স। অপারেশন শুরুর আগে হ্যান্ডমাইকে আহ্বান জানানো হয় অবস্থান ছেড়ে দিতে। কিন্তু সেই আহ্বানের কোনো সাড়া মিলছিল না। কিছুণের মধ্যেই একসঙ্গে গর্জে ওঠে অসংখ্য আগ্নেয়াস্ত্র। সঙ্গে কাঁদানে গ্যাস, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট আর সাউন্ড গ্রেনেড। হেফাজতকর্মীরা কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন। কেউ কেউ ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে। স্লোগানও দিচ্ছিলেন। কিন্তু অল্পণেই নিরস্ত্র প্রতিরোধের শক্তি ফুরিয়ে যায় তাদের। মুহুর্মুহু গুলি আর টিয়ার শেলের আঘাতে সামনে থাকা অনেকে তখন রক্তাক্ত। কেউ কেউ লুটিয়ে পড়েছেন মাটিতে। এমন অবস্থায় যে যে দিকে পারেন শুরু করেন ছোটাছুটি। টিকাটুলির দিকে রাস্তাটি ছিল উন্মুক্ত। কৌশল হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ পথটি খোলা রেখেছিলেন যাতে হেফাজতের কর্মীরা এদিক দিয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু প্রথমে হেফাজতকর্মীরা না পালিয়ে ঢুকে পড়েন আশপাশের গলিতে। তবে যৌথবাহিনীর কড়া অ্যাকশনে ক্রমে টিকাটুলি হয়ে যাত্রাবাড়ীর রাস্তায় সরে যেতে বাধ্য হন বেঁচে থাকা হেফাজতকর্মীরা।
অন্য দিকে শাপলা চত্বরের বিশাল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যাতে বায়তুল মোকাররম পর্যন্ত বিস্তৃত না হতে পারে সে জন্য একটা সহিংস দমননীতির ষড়যন্ত্র পুলিশ কর্মকর্তা আর ছাত্রলীগ যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যে আগে থেকেই ছকে বাঁধা ছিল। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের উল্টো দিকে সিপিবি অফিস হেফাজতের সমাবেশে অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে, এ কারণেই মহানগর পুলিশ সেখানে ৫ মে হেফাজতের সমাবেশের জন্য অনুমতি না দিয়ে শাপলা চত্বরে অনুমতি দিয়েছে। ফলে সকাল থেকে বেলা গড়াতে না গড়াতেই যখন হেফাজতের মিছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দিয়ে কিংবা পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম পেরিয়ে সমাবেশের দিকে অগ্রসর হয়েছে, তখনই মারমুখী হয়ে উঠেছে পুলিশ আর সশস্ত্র ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীরা। দৈনিক বাংলা মোড় থেকে সমাবেশের উপচে-পড়া ভিড়কেও পুরানা পল্টনের দিকে জায়গা করে নিতে দেয়নি পুলিশ। হেফাজতের মিছিলকারী কারো হাতে ছিল সুন্নতি লাঠি। পুলিশের ছিল ব্যাটন, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল। আওয়ামী লীগ কর্মীদের হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র, যার সুস্পষ্ট ছবি ফটো সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। দিনভর অসম সংঘর্ষ ঘটেছে ওই এলাকা ঘিরে। সংখ্যাধিক্যের বলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলাকালে ১০ সহস্রাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিপে করে পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড নিপে হয়েছে দুই সহস্রাধিক। থেমে থেমে হেফাজতকর্মীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চার দিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেই প্রাণ বাঁচাতে লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে। অনেকে কর্মস্থলে আটকা পড়েন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
চর দখলের মতো হেফাজতকর্মীরা বারবার পুলিশকে ধাওয়া করে রাজপথ দখলে নেয়। স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে মিশে ককটেল, ইট-পাটকেল ও গুলতি দেয় কাচের মার্বেল নিপে করেছে পুলিশের দিকে। বিুব্ধ হেফাজতকর্মীরা পল্টনে ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার দেিণর কার্যালয়ে (ডিসি-ট্রাফিক) আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহুর্মুহু টিয়ার শেলের ঝাঁঝ থেকে রা পেতে পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও বিজয়নগর এলাকায় ফুটপাথে ও রাস্তায় আগুন জ্বালায় তারা। আগুন ধরিয়ে দেয় পল্টনে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ভবন, বাম রাজনৈতিক দলের কার্যালয় মুক্তি ভবন, র‌্যাংগস ভবনের নিচতলায় একটি ফাস্টফুডের দোকানে এবং জাতীয় মসজিদের উত্তর ও দণি গেটের ফুটপাথে। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের শটগান ও রাবার বুলেট থেকে রা পেতে হেফাজতকর্মীরা টিন দিয়ে ঢাল তৈরি করে পুলিশের দিকে এগিয়ে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রায় পুরো সময় আকাশে টহল দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেণ করেছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এবং বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সারা দিনই চলেছে ত্রিমুখী সংঘর্ষ। সেখানে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আশপাশে বিভিন্ন দোকানপাট, যানবাহন এবং ফুটপাথে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দেয়। পল্টনের কেএফসির নিচে আগুন লাগানো হয়। এই এলাকায় প্রায় অর্ধশত যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক পরিবহন শ্রমিক পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশের রাস্তায়। অজ্ঞাত অপর একজন নিহত হন পল্টন এলাকায়। ডান হাত, পিঠে ও মাথায় গুলি লাগে তার। প্রত্যদর্শীরা রাত ৮টার দিকে জানান, পল্টনে লাশ পড়ে আছে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করছে না। আর হেফাজতকারীদেরও লাশটি উদ্ধার করতে দিচ্ছে না। সন্ধ্যায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে খবর নিয়ে জানা গেছে সেখানে পুলিশ পাহারায় দু’টি লাশ আছে। সন্ধ্যার পর সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে মারা গেছেন মধ্য বয়সী একজন কোম্পানি ম্যানেজার। হাসপাতালে আহত ভর্তি হন দুই শতাধিক। সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিতে ফটোসাংবাদিকেরা শনাক্ত করেন হেফাজতকর্মী মনে করে এক ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে পেটাতে আর ইসলামি বইয়ের দোকানে অগ্নিসংযোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন নেতা। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে ওস্তাদ আওয়ামী লীগের প্রচারযন্ত্র উল্টো গলাবাজি করতে শুরু করেছিল, হেফাজতকর্মীরাই কুরআন শরিফে আগুন দিয়েছে, টুপি, তসবি, জায়নামাজের হকার স্টলগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। লোকে বিশ্বাস করেনি সে কথা। এভাবে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ও নাশকতাকর্ম ছিল মধ্যরাতের ক্র্যাকডাউনের আগের ঘটনা।
৬ মে ভোর রাতে শাপলা চত্বরে জিম্মি ঘুমন্ত বা ঘুমকাতর নিরস্ত্র হাজার হাজার মানুষের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পুলিশ যে ‘গণহত্যা’ চালাল, মতাসীন চৌদ্দ দলের নেতারা বলেছেন সেই অভিযানে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়নি, কেউ মারা যায়নি; সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দেই কাজ হয়েছে, ‘লেজ গুটিয়ে’ সরে গেছে হেফাজত নেতাকর্মীরা। একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাও বলেছেন, শাপলা অপারেশনে কেউ মারা যায়নি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট বলেছে, রাজধানীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থানরত হেফাজতকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে, রাতের অন্ধকারে শ’ শ’ লাশ গুম করা হয়েছে। সরকারের এই স্বৈরাচারী আচরণের ফলে দেশে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে। বিকেলে রাজধানীর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে ৬ মে বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে বলেন, ‘গত রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ অবস্থানরত হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা মুহুর্মুহু গুলি চালিয়ে সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আহত করেছে আরো কয়েক হাজার আলেম-ওলামাকে। এই গণহত্যা একাত্তরের ২৫ শে মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে এবং ভারতের পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যার চেয়েও ভয়াবহ। এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত চিত্র দেশবাসীর মতো গণমাধ্যমও জানতে পারেনি। বায়তুল মোকাররম এলাকায় ফুটপাথের দোকানগুলোতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়ে হেফাজতের কর্মীরা করেছে বলে অপপ্রচার চালিয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, দেবাশিষ নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী বায়তুল মোকাররমের কুরআন শরিফের দোকানে আগুন দিয়েছে। আজ সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে অন্তত ২৫ জনকে হত্যা করে এবং চার শতাধিক ছাত্রকে আহত করে। বাগেরহাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ১০ বিএনপি নেতাকর্মীকে হত্যা এবং শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। দুপুরে লালবাগ ও যাত্রাবাড়ী কওমি মাদরাসায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। বর্বরভাবে যখন মানুষ হত্যা করা হয়, তখন সাংবাদিকদেরও যেতে দেয়া হয়নি। আজ বিএনপির সমাবেশ ছিল। কিন্তু তাতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এই তাণ্ডবের খবর প্রচার করায় দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।”
লালবাগে অবরুদ্ধ হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীকে পুলিশ ৬ মে সন্ধ্যায় একটি বিশেষ বিমানে চট্টগ্রামে পাঠায় আর রাত ৮টার দিকে সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার করে।
আল্লামা আহমদ শফীকে অনেকটা জোরপূর্বক চট্টগ্রামে পাঠানোর আগে তাকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে দেয়া হয়নি। পুলিশ দুপুর ১২টা থেকে দফায় দফায় বৈঠক করে বেলা সোয়া ৩টার দিকে তাকে ঢাকার লালবাগ মাদরাসা থেকে বের করে নিয়ে যায়। এ সময় মাদরাসার ছাত্ররা তীব্র ােভে ফেটে পড়েন। আল্লামা শফীসহ পাঁচজনকে আটক করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেয়া হয়। বেলা সাড়ে ৩টায় বিমান ছাড়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রামের আবহাওয়া খারাপ থাকায় পাঁচদফা পিছিয়ে যায়। পরে রাত ৭টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী বেসরকারি রিজেন্ট এয়ারওয়েজের বিমান চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
আল্লামা শফীর নির্দেশে ৬ মে সারা দিন ৫ মের ঢাকা অবরোধে ও ঢাকার সমাবেশে গণহারে নিহত-আহতদের জন্য দেশব্যাপী দোয়া দিবস পালন করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ৬ মে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে প্রেরিত এক বিবৃতিতে হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেন, ‘রবিবার রাতে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যুগপৎ হামলায় শাপরা চত্বরে হেফাজতের তিন হাজার নেতাকর্মী শাহাদাতবরণ করেছেন। এ ছাড়াও ১০ হাজার আহত এবং আরো ১০ সহস্রাধিক নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি বলেন, দিনব্যাপী কর্মসূচি পালনের পর তৌহিদি জনতা ও আলেম-ওলামারা যখন খোলা আকাশের নিচে নিদ্রায় মগ্ন ছিলেন, ঠিক তখন ফ্যাসিবাদী সরকার ঘুমন্ত জনতার ওপর পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে নির্বিচারে গুলি, বোমা, গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিপে করতে শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রায় তিন হাজার তৌহিদি জনতা শাহাদতবরণ করেন এবং ১০ হাজারেরও অধিক আহত হন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শহীদদের লাশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ট্রাকে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার-পরিজন, শুভাকাক্সী ও শুভানুধ্যায়ীরা তাদের কোনো খোঁজ না পেয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।’
তথ্যমন্ত্রী দিগন্ত টেলিভিশন আর ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ করে অন্যান্য টেলিভিশন মাধ্যমগুলো আর সংবাদপত্র সরকারি প্রচারসর্বস্ব করে রাখতে উঠেপড়ে লেগেছেন (‘আমার দেশ’ পত্রিকা প্রকাশনা কৌশলে বন্ধ করে সংবাদপত্রগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণের লাগাম তিনি আগেই টেনে ধরেছেন)। কিন্তু বিশ্বসংবাদ ও সম্প্রচারমাধ্যমগুলো ইতিমধ্যে সরাসরি সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশ করতে শুরু করেছে। সরকারের সহিংস দমননীতি ও সর্বশেষ গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় ‘সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার বাইরে’ (আল জাজিরা)। ৬ মে সকাল থেকেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে হেফাজতের কর্মীদের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষে দুই পুলিশ ও এক বিজিবি সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ ফাঁড়ি আক্রান্ত হয়েছে। পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিবির সাথে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সংঘর্ষে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত রণেেত্র পরিণত হয়। প্রায় অর্ধশত গুলিবিদ্ধ এবং সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক আহত হয়েছেন।
বগুড়ায় বিনা কারণে একজন শিবিরকর্মীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছে পুলিশ। শাপলা চত্বরের গণহত্যার খবরে বাগেরহাটে সড়ক অবরোধ করেন হেফাজতকর্মীরা। অবরোধ করে রাখা কয়েকটি পয়েন্টে পুলিশের সাথে হেফাজতকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে দুই হেফাজতকর্মী নিহত হয়েছেন। দফায় দফায় সংঘর্ষে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলামসহ সাত পুলিশ সদস্য, একজন সাংবাদিক এবং ১২ জন হেফাজতকর্মী গুরুতর আহত হন। হাটহাজারীতে হেফাজত ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সার্জেন্টসহ ছয়জন নিহত ও অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ হয়েছে। হেফাজত-ছাত্রলীগ-পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগে ওই দিন সারা দিন ছিল হরতাল। ৭ মে খোদ চট্টগ্রাম স্টেশনে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি আগুনে দগ্ধ হয়েছে। ৭ মে রাজধানীতে নানা জায়গায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা চলতে থাকে। বেলা ৩টায় তেজগাঁও কলোনি বাজারে একটি স্টাফ বাসে আগুনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। পরপরই মহাখালী ব্র্যাক বিশ্বদ্যিালয়ের সামনে তিনটি গাড়ি ভাঙচুর এবং পরপর ৬টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। পল্টনে একটি মাইক্রো বাসে আগুন দেয়া হয়। ময়মনসিংহে ১৮ দলীয় জোটের হরতাল সমর্থকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হন। ৮ ও ৯ মে চলছে গণহত্যার প্রতিবাদে ১৮ দলীয় জোটের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। সপ্তাহান্তের দুই দিন ছুটির পর ১২ মে দেশব্যাপী হেফাজত ঘোষিত সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। এভাবেই শাপলা চত্বরের ইসলামি গণজাগরণ খুনি সরকারের গণহত্যার কোপ আর লাশগুমের চালাকির শিকার হয়ে দেশব্যাপী গণ-অভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়েছে, যেমন ঘটেছিল কায়রোর তাহরির স্কোয়ারে। তথ্যমন্ত্রী এবং সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একযোগে সাফাই গেয়েছেন, হেফাজত সরকার উৎখাতের চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল বলেই শাপলা চত্বরে অবস্থানরতদের বলপ্রয়োগে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সরকার সারা দেশে ৮ থানায় ২৭ ফৌজদারি মামলা ঠুকে লাধিক ব্যক্তিকে আসামি করেছে। কিন্তু দেশ অচল। সংশয়বাদীরা বলছেন, সহিংস দমন কৌশল পরিত্যাগ করে মতাসীনদের এখন নিরাপদ প্রস্থানের কৌশল নির্ণয়ের জন্য তাদেরই সুশীলসমাজের দোসরদের দ্বারস্থ হওয়ার সময় এসেছে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads