বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

মাওলানা বাবুনগরীর মারাত্মক অসুস্থতার প্রশ্ন


হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর জীবন নিয়ে গভীর সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, নানা ধরনের জটিল ও মারাত্মক রোগে আক্রান্ত অবস্থায় গত বুধবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরও আগে সরকার তড়িঘড়ি করে তার জামিন মঞ্জুর করিয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, গত ৫ মে ঢাকা অবরোধ এবং ৬ মে গভীর রাতে কথিত গণহত্যার পরপর মাওলানা বাবুনগরীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তার নামে মামলাও দেয়া হয়েছিল ২৬টি। এসবের মধ্যে ছিল পুলিশ হত্যা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ভয়ংকর কিছু অভিযোগ, যেগুলো মাওলানা বাবুনগরীর মতো একজন প্রবীণ আলেমের পক্ষে কল্পনাও করা যায় না। অবিশ^াস্য এ মামলাগুলোতে দুই দফায় ১৩ দিন এবং তারও পর দুটি বিশেষ মামলায় তাকে ১৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, রিমান্ডে নেয়ার পর বৈদ্যুতিক শক দেয়াসহ অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে তার ওপর। তার বরাতে বিচিত্র ধরনের অনেক স্বীকারোক্তির কথাও প্রচার করেছে আওয়ামী মিডিয়া। অন্যদিকে নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মাওলানা বাবুনগরী। শোনা যায়, প্রচ- নির্যাতনে জ্ঞানও হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। হাসপাতালে নেয়ার পর তার সারা শরীরে অসংখ্য কালো দাগ দেখেছেন চিকিৎসকরা। পা’সহ শরীরের একাধিক স্থানে পচনও ধরেছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তার দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে, যার কারণে ডায়ালিসিস করতে হয়েছে। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে বলে সুফল পাওয়া যায়নি। এ অবস্থাতেই চিকিৎসকরা তার অস্ত্রোপচার করেছেন। কিন্তু সফল হননি। ফলে চিকিৎসকরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, মাওলানা বাবুনগরীর একটি পা কেটে ফেলতে হতে পারে। অর্থাৎ এই যাত্রা কোনোভাবে বেঁচে গেলেও তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হতে পারে। চিকিৎসকরা অবশ্য বৃহস্পতিবার পর্যন্তও তার সম্ভাবনা সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। সুতরাং ধরে নেয়া যায়, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা বাবুনগরীর জীবন এখনো শংকামুক্ত নয়। একই কারণে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সরকার মাওলানা বাবুনগরীর জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে। আমরাও দেশের উচ্চ পর্যায়ের একজন সম্মানিত আলেমের ওপর সরকারের চালানো নিষ্ঠুর নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একথা বলাও আমরা দায়িত্ব মনে করি যে, সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হলেও বাস্তবে হেফাজতে ইসলাম কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে জড়িত ছিল না। প্রথম থেকে মাওলানা বাবুনগরীসহ হেফাজতের নেতারা প্রতিটি ভাষণে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথাই বলে এসেছেন। ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার বিরুদ্ধেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা। কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন। বড় কথা, ঢাকা অবরোধের কোনো পর্যায়েও হেফাজতের কাউকে কোথাও ধ্বংসাত্মক বা বেআইনি কোনো কর্মকা- চালাতে দেখা যায়নি। হেফাজতের কর্মীদের পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর হামলা চালানোর আগে পর্যন্ত একদিকে হেফাজতের নেতারা ভাষণ দিয়েছেন অন্যদিকে সমবেত মুসলমানরা ভাষণ শুনেছেন, আল্লাহর কালাম উচ্চারণ করেছেন এবং দরুদ পড়েছেন। সমাবেশের দৃশ্য বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। কোনো পর্যায়েই সমাবেশের কাউকে কোনো রকম উস্কানিমূলক বা আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায়নি। সুতরাং এমন অভিযোগ মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যে, হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছিলেন বলেই সরকারকে কথিত একশনে যেতে হয়েছে। বাস্তবে বরং প্রথম থেকে উস্কানি এসেছিল ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। এই উস্কানি দিয়েছিল পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি। তাদের আগে-পরে আওয়ামী ক্যাডাররা তো ছিলই। হামলাও তারাই চালিয়েছে, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ থেকে ধ্বংসাত্মক প্রতিটি কর্মকা-েও তাদেরকেই বেশি তৎপর দেখা গেছে। পিস্তল হাতে রহস্যময় ও অচেনা অন্য অনেককেও দেখা গিয়েছিল। রাজধানীর সাধারণ মানুষও এসবের সাক্ষী হয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে নিজেদের অপকর্মের সব দোষ সরকার চাপিয়েছে নিরীহ হেফাজতীদের ওপর। সম্পূর্ণ বানোয়াট সে অভিযোগেই সরকার একদিকে রাতের বেলায় গণহত্যা চালিয়েছে অন্যদিকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করেছে মাওলানা বাবুনগরীকে। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে সরকার যে কাউকে গ্রেফতার করতেই পারে। কিন্তু হেফাজত নেতার ক্ষেত্রে রিমান্ডে নেয়ার এবং নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানোর মাধ্যমে সরকার আইনের অনেক বাইরে চলে গেছে। কারণ, রিমান্ড প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, তিনদিনের বেশি কাউকে রিমান্ডে নেয়া যাবে না এবং জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে অভিযুক্তের আইনজীবীর সামনে। তাছাড়া রিমান্ডে নেয়ার আগে ও পরে চিকিৎসক দিয়ে শরীর পরীক্ষা করাতে হবে এবং প্রয়োজনে ওষুধপত্র ও চিকিৎসা দিতে হবে। অন্যদিকে মাওলানা বাবুনগরীর ক্ষেত্রে সরকার উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রতি উপেক্ষা দেখিয়েছে। একজন প্রবীণ মানুষকেও প্রথমে ১৩ দিনের এবং পরে ১৮ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নি¤œ আদালত যে সরকারের ইচ্ছাই পূরণ করেছে তার প্রমাণ তো তড়িঘড়ি করে জামিন মঞ্জুর করার ঘটনাতেই প্রমাণিত হয়েছে। এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আমরা মনে করি, এভাবে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দমন-নির্যাতন চালানো বন্ধ করা দরকার। সরকারের উচিত সময় একেবারে পেরিয়ে যাওয়ার আগেই গণতন্ত্রসম্মত অবস্থানে ফিরে আসা এবং বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে সংযত হওয়া।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads