রবিবার, ২৬ মে, ২০১৩

কে দেবে এসবের জবাব?

একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা আব্বা বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি? আমি আর রেণু দুজনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, আমি তো তোমারও আব্বা। কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই, তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দী করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।
এই কথাগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বহুল আলোচিত বই অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে নেয়া। বইটি ছাপা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর অনেক পরে। প্রথম প্রকাশ ২০১২ সালে। বইটি প্রকাশ ও সম্পাদনার দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা ওপরের উদ্ধৃতাংশটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই উদ্ধৃতাংশটি এরা বইটির শেষ প্রচ্ছদে ছেপে দিয়েছেন। তাদের কাছে বইয়ের এই অংশটুকু গুরুত্ববহ মনে না হলে, তা প্রচ্ছদে ছাপাতেন না। নিশ্চিত অর্থেই উদ্ধৃতাংশটিতে লেখকের একটি মানবিক আবেদন রয়েছে বলেই মনে হয় এটি এতটা গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে। মানবিক আবেদনটি সুস্পষ্ট। তার বক্তব্যও স্পষ্ট। তার স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছেÑ মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়। আর সেই সূত্রে একজন রাজনীতিককে রাজনৈতিক কারণে বিনা বিচারে বন্দী করে তার আত্মীয়স্বজন ও ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রেখে জঘন্য অপরাধ করে।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দাবিদার ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের সরকারের আমলে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর জেলজুলুমের বাস্তব অবস্থা দেখে বঙ্গবন্ধুর বইয়ের এই উদ্ধৃতাংশ মনে পড়ল। বিশেষ করে তা মনে পড়ল গত শুক্রবারের দৈনিক যুগান্তরের শীর্ষ সংবাদটি পড়তে গিয়ে। এই শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম ছিল : ঘরছাড়া হয়েও স্বস্তিতে নেই বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে বলা হয়Ñ মামলা, হামলা, নির্যাতন, পুলিশি অভিযান, গ্রেফতার আতঙ্ক, চার দিকে ধরপাকড়ের কারণে ঘরছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাসহ সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা এখনো গ্রেফতার এড়িয়ে সতর্কভাবে চলাফেরা করছেন। মধ্যম সারির নেতারা বেশ কয়েক মাস ধরে নিজ বাসায় থাকা ছেড়ে দিয়েছেন। সূত্র মতে, ঘর ছেড়েও স্বস্তিতে নেই এরা। আত্মগোপন করে এরা আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে। বিশেষ করে শাপলা চত্বরের ঘটনায় একাধিক মামলায় আসামি করায় দলের মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে। এই ভয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, এমনকি গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়েও নেতাকর্মীদের আনাগোনা অনেক কমে গেছে। গ্রেফতারের ভয়ে মিলাদ মাহফিলেও অংশ নিতে সাহস পাচ্ছেন না অনেকে। নিজের ফোন বন্ধ করে বিকল্প সিমকার্ড ব্যবহার করছেন। পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন ছাড়া কারো সাথে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না।
একই রিপোর্টে আরো বলা হয়Ñ পরিস্থিতি সমালোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেছেন, সরকারের আচরণে তাদের গণতান্ত্রিক সরকার বলা যায় না। এ সরকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চেয়েও বেশি দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। এরশাদের সময়েও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া হতে হয়নি। সে সময়েও মানুষ কথা বলতে পারত। কিন্তু বর্তমান সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘরেও থাকতে দিচ্ছে না। আর জামায়াতকে তো নিষ্ক্রিয়ই করে ফেলেছে। সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে বিএনপিকে ছাড়াই এরা একটি নির্বাচন করে ফেলবে। সরকারের এ আচরণ ভালো ফল বয়ে আনবে না।
এ রিপোর্ট মতে, বিগত সরকারের সময় সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ২০ হাজারের ওপরে মামলা হয়েছে। এ মামলায় আড়াই লাখের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। সিনিয়র নেতাসহ ১০ হাজারের মতো নেতাকর্মী বর্তমানে জেলখানায় আছেন।
এ লেখার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর বই থেকে উদ্ধৃতি সূত্রে আমরা জেনেছি, রাজনৈতিক কারণে জেলে থেকে আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু নিদারুণ মর্মবেদনা ভোগ করেন। জানি না, আজকে বিরোধী দলের হাজার হাজার কর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাগারে বন্দী অবস্থায় থেকে সে ধরনের মর্মবেদনায় ভোগেন কি না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর উপলব্ধি যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবে নিশ্চিত ধরে নেয়া যায় আজকের বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা কারাগারে বন্দিদশা কাটানোর সময় একই ধরনের মর্মবেদনা ভোগ করেন। আর বঙ্গবন্ধুর রায় অনুযায়ী, এ জন্য যারা দায়ী তারা নিশ্চিত অর্থেই এই জঘন্য কাজটি করছেন। আরেকটি কথা এখানে বলা দরকারÑ আজকের রাজবন্দীরা যেভাবে দিনের পর দিন রিমান্ডে কাটান এবং রিমান্ডে নানামাত্রিক নির্যাতনের শিকার হন, বঙ্গবন্ধুর আমলে তা হয়তো কল্পনা করাও যেত না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে স্থায়ীভাবে রাখার একটা প্রবণতা বর্তমান সরকারের মধ্যে প্রবলভাবে কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানো, ককটেল-বোমা ফাটানো, আগুন লাগানো, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার সাজানো নানা ঠুনকো অজুহাতে তাদের আসামি করা হচ্ছে। এ ধরনের প্রায় সব মামলায় হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে। এরপর এই অজ্ঞাতনামাদের শূন্যস্থান যাকে ইচ্ছে তাকে দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে যখন-তখন। ফলে বিরোধী দলের কোনো নেতাকর্মীই এ ধরনের আসামি হওয়ার শঙ্কা থেকে মুক্ত থাকতে পারছেন না। আর জামায়াত-শিবিরের লোক হলে তো কথাই নেই। তাদের রাস্তাঘাটে, ঘরে-বাইরে যেখানে পাওয়া যাচ্ছে জামায়াত-শিবির সন্দেহে আটক করে রিমান্ডে পাঠানো হচ্ছে, কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে। এদের জামায়াত-শিবির কর্মী সন্দেহ করেই আটক এবং কারাগারে ও রিমান্ডে পাঠানো সরকার জায়েজ করে নিয়েছে। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও কার্যত তাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে দেয়া হচ্ছে না। যেমনটি বলছিলেন হাফিজউদ্দিন খান : জামায়াতকে তো নিষ্ক্রিয়ই করে ফেলা হয়েছে। বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতাকর্মীদেরকে জামিনে মুক্তি দিয়ে আবারো বারবার জেলগেট থেকে আটকের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়। সরকার বিরোধী মতাবলম্বী দমনে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে, সম্প্রতি প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে। অ্যামনেস্টির অভিযোগ এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে শেখ হাসিনার অঙ্গীকার সত্ত্বেও বাংলাদেশে এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে। অ্যামনেস্টির রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবাহিনীগুলো গত বছর ৩০ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ১০ জনকে গুমসহ বহু নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে। অ্যামনেস্টির রিপোর্টে আলোচিত যে ১০ গুমের কথা উল্লেখ করা হয়, এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনাটি। এক বছরের বেশি সময় পার হলেও আজো ইলিয়াস আলীর কোনো সন্ধান মেলেনি। ইলিয়াস আলীর সাথে তার গাড়িচালক আনসার আলীও নিখোঁজ হন। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ঘটনায় বিএনপি সারা দেশে হরতাল পালনের সময় সিলেটের বিশ্বনাথে পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র মোকাদ্দেস ও ওয়ালি উল্লাহকে সাভারের নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে কুষ্টিয়া অভিমুখী একটি বাস থেকে র‌্যাব পরিচয়ে একদল লোক নিয়ে যায়। ওই দুই ছাত্রকে এরা টেনে-হিঁচড়ে বাস থেকে নামিয়ে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে উঠায়। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত এরা নিখোঁজ। উল্লেখ্য, এরা দুজনই শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। এ ছাড়া অ্যামনেস্টির রিপোর্টে আরো কয়েকটি গুমের ঘটনা উল্লিখিত হয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে ওই রিপোর্টে বলা হয়, ২০১২ সালে ৩০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। রিপোর্টে এ জন্য নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের অভিযুক্ত করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে বন্দীদের ওপর নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার ব্যাপকভাবে প্রচলিত। পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আটক ব্যক্তিদের ওপর নির্যাতন চালায় এবং তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। বন্দীদের ওপর নির্যাতনের জন্য দৃশ্যত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়মুক্তি ভোগ করছে। নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে প্রহার, লাথি, খাবার ও ঘুমোতে না দেয়া এবং ইলেকট্রিক শক দেয়া। অপরাধের স্বীকারোক্তি না দেয়া পর্যন্ত আটক বেশির ভাগ লোককে নির্যাতন করা হয়। পুলিশ ও র‌্যাব নির্যাতনের প্রমাণ গোপন রাখতে গ্রেফতারের তারিখসহ সব রেকর্ড বিকৃত করে।
এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা কথাই বর্ণিত হয়েছে সদ্য প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক রিপোর্টে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতিবিদদের কারাগারে আটক রেখে স্বজনদের কাছ থেকে দূরে রাখার অপরাধকে জঘন্য অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে এ ধরনের জঘন্য কাজ করে। শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে নেয়া উদ্ধৃতাংশটি এরই প্রমাণবহ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑ বঙ্গবন্ধু যদি আজ বেঁচে থাকতেন এবং তারই কন্যার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক দল-মত দমন-পীড়নের এই বর্ণনা যদি তিনি অ্যামনেস্টির মানবাধিকার রিপোর্টে আজ পড়তেন, তবে তিনি এই মানবাধিকার লঙ্ঘনকে কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করতেন, কোন অভিধায় অভিহিত করতেন; তা আমাদের জানা নেই। তবে এটি নিশ্চিত, এ ধরনের কাজকে শুধু জঘন্য বললে যথেষ্ট বলা হতো না।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, উল্লিখিত রিপোর্টে ২০১৩ সালের কোনো ঘটনাকে বিবেচনায় আনা হয়নি। শুধু ২০১২ সালের ঘটনাবলি বিবেচনা করেই প্রণীত হয়েছে আলোচ্য   রিপোর্ট। যদি ২০১৩ সালের ঘটনাবলি এ রিপোর্টে বিবেচনায় আনা হতো, তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো বড় ধরনের অবনতির দিকে যেত। কারণ, চলতি ২০১৩ সালেই আমরা ঘটতে দেখেছি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়-উত্তর পুলিশের নির্বিচার গুলিতে শতাধিক মানুষকে নিহত হতে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘটতে দেখেছি হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের সমাবেশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিতর্কিত ক্র্যাকডাউন। এ ক্র্যাকডাউনে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে আছে নানা বিতর্ক। একই সাথে ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, আটক করে রিমান্ডে ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি শত গুণে জোরদার করে তোলা হয়েছে। সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে, বিরোধী দলকে কিভাবে দমন করতে হয় তা সরকারের জানা আছে। রাজপথে বিক্ষোভকারী কিংবা জামায়াত-শিবির দেখামাত্র গুলির ঘোষণা এসেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। রাজপথে সমাবেশ নিষিদ্ধের ঘোষণাও এসেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে। চলতি বছরে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও উচ্চারিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ ধরনের অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে।
সরকার শুধু বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর মামলার পর মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছে, যাকে-তাকে যেখানে-সেখানে জামায়াত-শিবিরের লোক বলে আটক করে বিরোধী দল-মত দমনের কাজ করছে তা নয়, সরকার একই সাথে দেশ থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খাঁচায় বন্দী করতে চাইছে। সে জন্যই একের পর এক আঘাত হানছে গণমাধ্যম আর সাংবাদিকদের ওপর। একের পর এক সাংবাদিক খুন হচ্ছেন, কিন্তু এর বিচার হচ্ছে না। বন্ধ করা হচ্ছে একের পর এক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান। অতি সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দৈনিক আমার দেশ। এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর মামলার পর মামলা দিয়ে তাকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে, এমন অভিযোগ করেছেন তিনি নিজে। তার মা ও দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভিন্ন মতের টিভি চ্যানেল দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি।
এখন  প্রশ্ন উঠেছে, সরকার কী চায়? সরকার কি বিরোধী দল-মত নিঃশেষ করে দিয়ে আবারো একদলীয় বাকশাল আমলে দেশকে ফিরিয়ে নিতে চায়? তাহলে  কি বিরোধী দলের এমন অভিযোগই সত্য হতে যাচ্ছে? সে লক্ষ্যেই কি একতরফাভাবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তাড়াহুড়া করে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিদায় করা হলো? সে জন্যই কি ৯০ শতাংশ মানুষের চাওয়া (দৈনিক প্রথম আলোর জরিপ মতে) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চায় না সরকার? বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার পথ পরিহার করে গায়ের জোরে সব কিছুই সম্পন্ন করতে চাইছে সরকার? চলমান সঙ্কটকে আরো জটিলতর করে তুলে সরকার কি এ থেকে কোনো স্বার্থসিদ্ধির উপায় খুঁজছে? কে দেবে এসবের জবাব?


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads