শুক্রবার, ১৭ মে, ২০১৩

ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সুষ্ঠু সমন্বয় দরকার

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন যতটা তীব্র মাত্রায় আঘাত হানার কথা ছিল, সে রকম না হওয়ায় সমগ্র উপকূলে স্বস্তি ফিরেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে হুঙ্কার দিয়ে মহাসেন যেভাবে এগিয়ে আসছিল, তাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো বাংলাদেশে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছিল। মহান আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া, তিনি আমাদের বড় বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছেন। আঘাত হানার আগে বেশি পরিমাণ বৃষ্টি ঝরার কারণে এটি দুর্বল হয়ে যায় বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। পটুয়াখালীতে সর্বোচ্চ ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে বৃহস্পতিবার সকালে আঘাত হানে মহাসেন। স্থলভাগ অতিক্রমের সময় এটি আরো দুর্বল হয়ে যায়। অন্য দিকে কক্সবাজার, চট্টগ্রামের বিস্তৃত উপকূলজুড়ে ধারণার চেয়ে অনেক কম মাত্রায় আঘাত হানে। এর পরও এর আঘাতে উপকূলজুড়ে ১৮ ব্যক্তি প্রাণ হারান। অসংখ্য গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মহাসেন আঘাত হানার আগে সম্ভাব্য উপদ্রুত এলাকা এমনকি সারা দেশে ব্যাপক প্রচার চলে। উপকূলজুড়ে মানুষ আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়। এ জন্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারো দেখা গেছে আক্রান্ত এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে অনীহা প্রকাশ করেছে। সময়মতো নিরাপদ স্থানে সরে না যাওয়ায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। মহাসেন পূর্ণাঙ্গ শক্তি দিয়ে আঘাত হানলে এ সংখ্যা আরো বেশি হতো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ১৮ জনের প্রাণহানিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সবাই সময়মতো আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছালে হতাহতের ঘটনা একেবারে কমানো সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে এখন থেকে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ভবিষ্যতে যাতে তাদের সঠিক সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া যায়। অন্য দিকে সম্পদহানির বিষয়টি ছিল ব্যাপক। বিশেষ করে গবাদিপশু মারা পড়েছে গণহারে। গৃহস্থালিতে এসব পশু দরিদ্র কৃষকের প্রধান সম্বল। এখন থেকে পশু রক্ষায়ও মনোযোগী হতে হবে। মানুষের পাশাপাশি পশুর জন্যও স্থানীয় কোনো নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে। কৃষকের সারা বছরের ফসলাদি ধান-চালও এ ধরনের দুর্যোগে নষ্ট হয়ে যায়। উৎপাদিত শস্য যাতে এ ধরনের দুর্যোগে রক্ষা করা যায় সে দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
এখন দরকার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে সুষ্ঠু সমন্বয়। প্রয়োজনীয় পরিমাণ ত্রাণ এবং ঘরবাড়ি হারানো আশ্রয়হীন লোকদের দ্রুত মাথা গোঁজার ন্যূনতম ব্যবস্থা করে দিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। দেশটির রয়েছে ব্যাপক অভিজ্ঞতা। কিন্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসনকার্যক্রমে নানা দুর্নীতি অভিজ্ঞতাকে অকার্যকর করে দেয়। সঠিক মানুষ পায় না সহযোগিতা। অন্য দিকে যাদের ত্রাণের দরকার নেই, তাদের ঘরে পৌঁছে ত্রাণসামগ্রী। প্রশাসনকে বিষয়টি এবার গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে, যেখানে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাহায্য নিশ্চিত করা হবে। আল্লাহ আমাদের বড় একটি বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। অন্তত ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে আমরা শতভাগ নীতি ও আন্তরিকতার পরিচয় পাবো।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads