শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৩

আর কয় ফ্রন্টে যুদ্ধ করবে সরকার- মিনা ফারাহ


১৯৭১ শেষে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সহপাঠী ও বন্ধু সালমান রুশদীর মন্তব্যÑ বাংলাদেশীরা জংলি, এরা ধান চাষ করবে আর ধানের েেত একে অপরের পেটে চাকু মারবে। সুনীল গাঙ্গুলির বিখ্যাত উপন্যাস পূর্ব-পশ্চিম থেকে জানতে পেরেছি, জীবদ্দশায় শেরেবাংলা আর শহীদ সোহরাওয়ার্দী দুজন দুজনের বিরুদ্ধে এত বেশি কথা বলতেন আর ঝগড়াঝাটি করতেন তার পরও মৃত্যুর পর দুজনকে এক জায়গায় কবর দিতে হলো। আমাদের দুই নেত্রী তাদেরও উতরে গেছেন। তাদের ঝগড়াঝাটি এমন পর্যায়ে যে, কথায় কথায় একজন অপরজনকে পাকিস্তান বা ভারতে পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীতে কিছুই অনিবার্য নয়। ডাকসাইটে দুই নেতাকেও ভুলে গেছি। ভুলে গেছি পাকিস্তান কায়েম করা ঐতিহাসিক সবাইকে। পরবর্তীকালেও যারা এসেছেন নিশ্চয়ই ভুলে যাবো। কিন্তু চাকু মারামারির কারণে যে জীবন অকালেই ঝরে গেল তারা কি ফিরবে! সুতরাং ৪২ বছর পর রুশদীর মন্তব্য কি ঠিক?
স্যার নিউটনের কথা, ক্রিয়া সমান প্রতিক্রিয়া। মনস্তত্ত্ববিদেরা বলেন, একজনের আচরণ অন্যজনের আচরণকে প্রভাবিত করে। ধর্মগ্রন্থের কথা, প্রতিবেশীদের সাথে ভালো আচরণ করো। তবে ২০০ বছর আগে নারীবাদী দার্শনিক ওলস্টনক্রাফট লিখেছেন সবচেয়ে খাঁটি কথা, মানুষ পরিবেশ ও পরিস্থিতির শিকার। আমরাও বলতে পারি বিষাক্ত মনের আশপাশে সব কিছুই বিষাক্ত হয়ে যায়। বিষাক্ত হচ্ছি আমরাও। এদের ছড়ানো ঘৃণায় বিষাক্ত হতে হতে ধসে যাচ্ছে সব জাতির বুদ্ধিবৃত্তি। দার্শনিক অ্যানরেন্ড বলেছিলেন, যারা অন্যের মাথার পরগাছা হয়ে বড় হয়, তাদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। প্রকৃত অর্থে আমরাই প্রমাণ করলাম, নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তি ধ্বংস করে ১৬ কোটি মানুষ দুই নেত্রীর মাথার পরগাছা। তবে ঠাকুর রামকৃষ্ণের বিশ্ববিখ্যাত পরমতসহিষ্ণুতার বাণী, যত মত, তত পথের বিরুদ্ধে আমরা যে চ্যাম্পিয়ন, তা কি বলার অপো রাখে? বাংলাদেশের মানুষ ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদে অভ্যস্ত নয় বলেই রাজনীতিতে সুনামির জোয়ার। সেই ল্েয সমূহ য়তি হিসাবের সময় এখন।
গেল চার বছর ধরেই নিষ্ক্রিয় বিরোধী দল সংসদে নেই, মাঠে-ময়দানে নেই, দল গোছাতে নেই; মতবিনিময় দূরের কথা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদিনের বাক্যবাণে জর্জরিত খালেদা জিয়া হাড্ডি গুঁড়া হতে হতে বিলুপ্তপ্রায়। এ যেন মুক্তিযুদ্ধের মুখে জুতার কালি। আর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা কিছু মিডিয়া ও কলাম লেখকের বিরুদ্ধে রণমূর্তি সরকার একটার পর একটা মিডিয়া বন্ধ করছে ১৯৭৫-এর মতোই। পুলিশি রাষ্ট্র মানুষ পছন্দ করে না। একই সাথে উত্তর কোরিয়ার ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে বর্তমান সরকারের পার্থক্য কমছে। খালেদা জিয়াকে কুরআন পোড়ানোর জন্য সরাসরি দায়ী করলেও এম কে আনোয়ারের রেফারেন্স দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দাবি করা দূরে থাক, শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ যে বিশ্বচোরের খেতাব অর্জন করল, তা-ও জাতির কাছে ভালোভাবে উপস্থাপন করল না বিরোধী দল। কানাডার সিবিসি টেলিভিশনের সাথে পদ্মা সেতু নিয়ে পরিবারের ঘুষ গ্রহণ বিষয়ে সাংবাদিকের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জাতির মানমর্যাদা কোথায় নিলেন প্রধানমন্ত্রী, সে বিষয়ে বিরোধী দল ভেরেণ্ডা ভাজায় ব্যস্ত। ভারতের জেলে সুখরঞ্জনের খোঁজ পেয়েও মানবতাবিরোধী বিচারের বিরুদ্ধে উচিত প্রশ্ন তুলতে ব্যর্থ বিরোধী দলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন। প্রতিদিনের ঢালাও কদর্য অশালীন বক্তব্যের পরও এত দিনে পাগল পর্যন্ত প্রতিবাদ করত, কিন্তু এত ইস্যু সত্ত্বেও পাল্টা আক্রমণ করছে না বিরোধী দল। সুতরাং খালেদার নিষ্ক্রিয়তাই এই শতাব্দীর অন্যতম একনায়ক সৃষ্টির জন্য দায়ী। যে দু-চারটা হরতাল করল তাতে বরং হাড়গোড় আরো বেশি চুরমার করল সরকার। কে বলবে জাতীয়তাবাদী দলের অফিস? বরং পুলিশ বাহিনী দিয়ে ঘিরে ফেলা অফিস দেখলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক এটি পূর্ব গোলার্ধের ২ নম্বর গুয়ানতানামো বে কারাগার! বিরোধী দল মানেই আলকায়েদা অর্থাৎ ১৯৭৫-এর পর সরকার আবারো চাইছে, বিরোধী দল বরদাশত করবে না। সুতরাং একনায়কত্ব কায়েমে সরকারের তিন ফর্মুলা : ০১. সত্য সংবাদ প্রচার করা সব মিডিয়া বন্ধ করা; ০২. ছাত্রদের হাতে অস্ত্র ও শিকদের জন্য রাজনীতি বাধ্যতামূলক; ০৩. বিরোধী দলকে আলকায়েদার মর্যাদায় বসিয়ে দেয়া। বিএনপির মিটিং, মিছিল, স্লোগানের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান উত্তর কোরিয়ার কিম জং ইলের মতো ফ্যাসিস্ট। বরং আলকায়েদা বন্দীদেরও যেটুকু মানবাধিকার আছে, ছায়া সরকারের নেই। পুলিশের ওপর হুকুম, বিরোধী দল দেখলেই পিটিয়ে কারাগারে নিপে করো। ফলে ছায়া সরকারপ্রধানকে শুধু অফিসছাড়াই করেনি, বাড়িঘর ছাড়তেও বাধ্য করল তারা। এক দিকে বিরোধী দলের কর্মীরা উধাও, অন্য দিকে আওয়ামী কর্মীদের হাতে অস্ত্র ও সংখ্যার জোর বেড়ে যাওয়ায় তরুণসমাজের হাতে অস্ত্র আর মুখে স্লোগান দিয়ে মেধা ধ্বংসের সরকারি পরিকল্পনা ১০০ ভাগ সফল। সাথে দরিদ্র ও অতি দরিদ্র শ্রেণীর একটি বৃহৎ সমাজ, যারা প্রত্য ও পরোভাবে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে গেছে। সব মিলে এ দেশের ল্যাংড়া-লুলা আর্থসামাজিক অবস্থা প্রতিটি মানুষকে রাজনীতিবিদ করে তোলায় এটিও সামাজিক অস্থিরতার অন্যতম কারণ।
সব আমলেই ঘটলেও ছাত্রলীগের হাতে কুপিয়ে বিশ্বজিৎ হত্যায় আবারো প্রমাণ হলো চার বছরে তরুণ মেধার যে তি হয়েছে, বিগত ৩৮ বছরেও হয়নি। এ জন্য দায়ী রাজনীতিবিদ বারবার যারা বিষাক্ত বক্তব্য দিয়ে ধ্বংস করছে তরুণ মেধা। চার বছর ধরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দলের উসকানিমূলক বক্তব্য যোগ করলে যা দাঁড়ায়, রীতিমতো নিউকিয়ার বোমা। এরপর খুনখারাবি না করে যাবে কোথায়?
পদ্মা সেতু ডোবার পর থেকে হামেশা দলীয় মতবিনিময় সভায় তাকেই প্রধান রেখে নির্বাচন করতে খালেদা ধোলাই তার একমাত্র সীমিত কর্মত্রে। ফলে গণভবনের একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল কে প্রায়ই বুনো হাঁসের মতো ঝাঁকধরে ছুটে আসা আঞ্চলিক নেতাকর্মীরা আসলেই যে আঞ্চলিক, তা নেত্রী আসার তালে তালে বেপরোয়া ধ্বনি আর গংয়ের মতো হাততালি দেখে বুঝি, প্যাগান যুগে পৌঁছেছি। রাষ্ট্রীয় খরচে বুনোহাঁসের দলে নিয়মিত আরো আসে কিছু সংরতি আসনের মহিলা সংসদ সদস্য খেয়েদেয়ে যাদের কাজ আছে বলে সন্দেহ। প্রতিটি বক্তৃতার পরই দেশ আরো এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বিষাক্ত বাক্যবাণে দলীয় নেতাদের অস্থির আর উত্তপ্ত করা। প্রতি ঘণ্টার খবরে মতবিনিময়ের খবর বাসি মনে হওয়ায় যুক্তিবাদীরা তো বলবেই সরকার অযোগ্য, অম। বিরোধী দল নির্মূল অভিযানে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার ল্েয ঔদ্ধত্য উসকানি গণতন্ত্রের পরিপন্থী সত্ত্বেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা থেকে বিরত সুশীলসমাজ। যারা বিরোধী দল না থাকাকে সমর্থন করছে, প্রকৃত অর্থে পাকিস্তানকেই সমর্থন করছে। সমস্যা দেশ নয়, বরং ১৭০ মিলিয়ন মানুষ। সবচেয়ে জনবহুল দেশ বাংলাদেশ এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক রাজধানীর নাম ঢাকা। ৪২ বছর পরও বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৯০০ ডলারের নিচে থাকায় রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ব্যর্থতার সূচকও যদি চোখ না খোলে, কোনটা খুলবে? আর এ দেশেরই কয়েকজন ব্যবসায়ীর মাথাপিছু আয় বছরে যখন ১০০ মিলিয়ন উতরে যায়, এই দুর্নীতিও যদি চোখ না খোলে, কিসে খুলবে?
সুতরাং স্বীকার করতেই হবে রাজনীতিতে নতুন মুখের কোনোই বিকল্প নেই। আর তাই হঠাৎ হঠাৎ যখন নত্র দেখা দেয়, মনে হয় ড. ইউনূসের মতো লোক যে দেশের মাটিতে জন্মায়, তাদের কেন দুর্দশা? বাস্তবে তার পণ্ডিত বক্তব্য তরুণ প্রজন্মের মেধা বিকাশে অনিবার্য এবং প্রতি ঘণ্টার খবরে তার বক্তৃতাই প্রচার হওয়া উচিত সত্ত্বেও এ বিষয়ে কারোই পদপে নেই। আমাদের উচিত ৬৪ জেলায় অবিলম্বে এ ধরনের বক্তব্যের আয়োজন করা। কারণ, যেকোনো সুচিন্তিত বক্তব্যে মনের পালে সুস্থ হাওয়া লাগতেও পারে। এভাবেই মানুষ নিজেকে চিনতে শেখে। এ দেশে ভালো কাজের উদ্যোক্তার বড় অভাব। বিদেশে টিকিট কিনে যার বক্তৃতা শোনে আমরা তাকে চোর বানিয়ে চার দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ চালাই। সুতরাং ব্যক্তিপূজার তত্ত্ববাদীদের স্বপ্ন ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত ধানেেত চাকু মারামারি চলবেই। বিষাক্ত বক্তৃতা প্রচার হওয়ার ফলাফলের জন্য তরুণ প্রজন্মের কাছে দায়ী থাকবে মিডিয়া আর সুশীলসমাজ। তারা বারবারই যখন হরতালের সমালোচনা করেন, আমি ২৭৩ দিনের কথা ভেবে শিউরে উঠি। ভাবি, যিনি ঝাঁজর হয়েও আত্মসমালোচনা করেন না, তাদের হাতে ১৭০ মিলিয়ন মানুষ নিরাপদ নয়। চোখে অশ্র নেই, মুখে রানা প্লাজা নেই, এমনকি ভয়াল মহাসেনের দিনেও অত্যন্ত ঔদ্ধত্যের পরিচয় দিয়ে খালেদাকে বাক্যবাণে জর্জরিত করা এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি মেনে নির্বাচনী বক্তব্য যেন শিষ্টাচারের কফিনে শেষ পেরেক। একনায়কত্বের বিরুদ্ধে চার দিকে সুমসাম নীরবতা। এত মৃত্যু, এত কলঙ্কের পরও জাগল না কারো বিবেক। মানুষ মরে না, লাশগুলো যেন পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা।

শাপলা ম্যাসাকার
যুদ্ধের জন্য আর কটা ফ্রন্ট খুলবে সরকার? বিডিআর দিয়ে শুরু, সর্বশেষ শাপলা ম্যাসাকার। ধর্ম বিষয়টি সর্বকালেই স্পর্শকাতর। এ দেশটাও ভাগ হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে। দেশের ৯২ শতাংশ মানুষই মুসলমান। ৬ তারিখের ম্যাসাকারে ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা লুকোতে মরিয়া সরকার কিন্তু সরাসরি হত্যাকাণ্ড সম্প্রচার করা টিভি বন্ধ করলেও যেসব ভিডিও ফুটেজ মিডিয়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তা অবর্ণনীয়। যত্রতত্র রক্তাক্ত মুসল্লি, জীবন নিভে যাওয়ার অকল্পনীয় দৃশ্য। আলজাজিরা যখন নিহত মুসল্লিদের গোপন কবর ফাঁস করে প্রতিটি মানুষ তা বিশ্বাস করে। ডিজিটাল স্যাটেলাইটের যুগে মানুষের বুদ্ধিমত্তা আইনস্টাইনের ফর্মুলার মতো দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে। তাই জ্ঞানপাপীরা যা-ই বলুক, শাপলা ম্যাসাকার এখন দারুণ খবর। ফলে আরব আমিরাত বাংলাদেশীদের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। বরং বিদেশীদের দাবিদাওয়া পূরণে উল্টো সরকারই এখন বেহায়া। আর একটু চাপ দিলে বের হয়ে আসবে আমাদের ইলিয়াস আলী আর আমিনুল ইসলাম। তার চেয়ে আরেকটু জোরে চাপ দিলেই শেয়ারবাজার থেকে রানা প্লাজা পর্যন্ত সব কটা গডফাদার রিমান্ড শেষে জেলে পচে মরতে বাধ্য হবে। যেমন এতকাল বুড়ো আঙুল দেখালেও প্রায় দুই হাজার মানুষ খুনের পর ইউনিয়ন করার সুযোগ দিতে আওয়ামী লীগ এখন হাজী মুহসীন। জিএসপি ভিার কাজে দীপু মনির মুখ শুকনা চিঁড়া। ড. ইউনূস-কাব্য থেকে শুরু করে পাগলা ইকোনমিস্ট কিছুতেই সরকারের পা ছাড়ছে না। নিউ ইয়র্কের মানবাধিকার সংগঠনের বরাত দিয়ে লিখেছে, নিহতের সংখ্যা শত শত। অনেকের ধারণা হাজার হাজার। অধিকার বলছে কয়েক শ। এক্স-ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ান জর্জ গ্যালওয়ে বললেন, গণহত্যার জন্য এ সরকারকে ছাড় দেয়া হবে না। ঘুমন্ত মানুষের ওপর গুলি গণহত্যার শামিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ময়লা ফেলার ট্রাকের ছবিসহ মুসল্লিদের গাদাগাদি দৃশ্য এড়াতেই কি মধ্যরাত নয়? তবে অন্ধকারে ১০ হাজার শৃঙ্খলাবাহিনীর অভিযান দেখে মনে হওয়াই স্বাভাবিক অনেক মুসল্লি মারা গেছেন, অন্যথায় মধ্যরাতে বিদ্যুৎ নিভিয়ে, মিডিয়া হটিয়ে নিশ্চয়ই মধুচন্দ্রিমায় যায়নি গোলন্দাজ বাহিনী! আর তাই বিশ্বমিডিয়া যখন সমালোচনায় মুখর, ঠিক তখনই তাজরীনের সাথে সাথে আগুন হাতে সুমিকে নিয়ে নাটকের মতো আরেক রেশমাকে নিয়ে সরকারি আয়োজনে জনমনে আতঙ্ক। প্রেস কনফারেন্সে রেশমার নতুন কাপড় খুঁজে পাওয়ার অদ্ভুত ব্যাখ্যায় গোমর ফাঁস। রেশমা উদ্ধার সরকারকে সাময়িক রা দিলেও দীর্ঘস্থায়ী নয়। নাস্তিক ব্লগারদের জামিনে মুক্তি দিয়ে মুসল্লিদের কানে ধরে হাতজোড় করে বের করার দৃশ্য দেখে মনে হওয়াই স্বাভাবিক, সংবিধান সংশোধনে কাজ না হলে কুরআন পুড়িয়ে মতা জব্দ করতে হবে অর্থাৎ বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে কুরআন পোড়ালেও প্রতিবাদ হয় না। সুতরাং মুসল্লিদের আমার প্রশ্ন, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে রায়টে হাজার হাজার খুন আর নাস্তিক দেশছাড়া করার মাধ্যমে কী অর্জন করলেন আপনারা? আসলে মস্তিষ্ক বিকলাঙ্গ হলে শরীর কাজ করে না। বিশেষ টনিক খেতে খেতে বুদ্ধিকোষগুলো সবার ভোঁতা হয়ে গেছে বললে ভুল হবে না। আশা করি সালমান রুশদীর কথা মিথ্যা প্রমাণ করে আগামী হাজার বছরে বাঙালি আর কখনো এ রকম দুঃশাসন দেখবে না।

প্রসঙ্গ সংখ্যা
সংখ্যার জালে আটকে আছে বাংলাদেশ। লাখ না হাজার এর হালনাগাদ ৪২ বছরেও না হতেই ফের লাশের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রাট? তোপের মুখে সরকার দাবি করল, সংখ্যা দিন। হেফাজতও সংখ্যা গুনছে কিন্তু তারা তা পারবে না। কারণ, এসব গরিব আর হতভাগারা যখন কোনো উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন অনেকেই আর ফেরত যান না। মাঝে মধ্যে টাকা পাঠান অথবা কিছুই দেন না। যেমন এ মুহূর্তে আমার শহরে একাধিক মহিলা স্বামী খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বছরের পর বছর এরা এভাবেই নিখোঁজ থাকেন। সুতরাং নিহতের সঠিক সংখ্যা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। কারণ, ভিডিও ফুটেজে প্রমাণ আছে।

প্রসঙ্গ সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি
সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি বিষয়টি ক্যামেরার সামনে স্পষ্ট করার জন্য ব্যারিস্টার তুরিনকে ধন্যবাদ। এ প্রেেিত কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় হয়েছে। হয়তো গোলাম আযমেরও হবে। অর্থাৎ ব্যক্তির অবস্থান ও পদমর্যাদার কারণে তার হুকুমে যারাই কাজ করবে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রত্যেকের জন্য দায়ী কামারুজ্জামান। তবে তুরিনের কথা ঠিক হলে এ দেশে ফাঁসির হাট না বসালে এত কামারুজ্জামানের ফাঁসি সম্ভব নয়। সেই আলোকেই বলছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ না পাওয়ায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সেনা অভিযান চালানো যায়নি বিধায় অনেক নামীদামি অফিসার খুন হয়েছেন। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রীর হুকুম ছাড়া ১০ হাজার শৃঙ্খলা বাহিনী শাপলা ম্যাসাকারে যেতে পারবে না। হত্যার বহু ফুটেজ মিডিয়ায়। সুতরাং, এ দায়ের শাস্তি পাবে কে? এ প্রসঙ্গে আরেকটি বার্তা জরুরি। মে মাসে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগ একটি গোপন অভিযান চালালে ওয়াশিংটনে তোলপাড়। ওবামার সব অ্যাজেন্ডা প্রায় বিপন্ন হওয়ার পথে। ধরা খেয়ে আয়কর সেক্রেটারিকে বরখাস্তও যথেষ্ট নয়। রিপাবলিকানদের দাবি, ওবামাকেও পদত্যাগ করতে হবে। সুতরাং ব্যারিস্টার তুরিন যদি মনে করেন, বিডিআরের পরও সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি প্রধানমন্ত্রীর বেলায় প্রযোজ্য নয়, তাহলে এ দেশে আইন-আদালতের আর কোনোই প্রয়োজন নেই বলে ধরে নেবো।

প্রসঙ্গ স্যার নিনিয়ান
১৯৯১ সাল থেকে দুই প্রান্তিক ধারার রাজনীতির যুদ্ধংদেহি হওয়ার অন্তরালের বিষয়টা জানা দরকার। কেন দুই ধারার অবস্থা ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মতো! জেরুসালেমে অবস্থিত মসজিদ আল আকসা আর টেম্পল মাউন্ট কেন্দ্র করে দুই পরে যুদ্ধের অন্তরালে ধর্ম। টেম্পল মাউন্ট তৈরি করেছিলেন রাজা সলোমন (হজরত সুলায়মান আ:) খ্রিষ্টপূর্ব ৯২৭ অব্দে। পরবর্তীকালে এটি বারবার আক্রান্ত হলে শেষ পর্যন্ত ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদ আল আকসা প্রতিষ্ঠিত হলে সেখান থেকেই মহানবীর মিরাজ গমন। ইসরাইলিরা দাবি করে এখানেই তৃতীয়বারের মতো টেম্পল মাউন্ট প্রতিষ্ঠা হবে, কারণ এর পবিত্র মাটি দিয়েই নবী আদমের সৃষ্টি। সুতরাং আমার মতে, ওয়াশিংটন যতই বলুক, হয় মসজিদ নয় সিনাগগ যারা ভাবে, তারা উন্মাদ। তাই যদি হতো তাহলে ব্যাবিলনীয়রা যখন জিউইশ ধর্মাঙ্গনগুলো পুড়িয়ে দিলো, তখনই ধর্মনিরপে পারস্য সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট ওবামা জন্মেরও আড়াই হাজার বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা সমাধান করে ফেলতেন। সুতরাং মার্কিন দূতিয়ালিতে ইয়াসির আরাফাত, ইসহাক রবিন, শিমন পেরেজ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার নোবেল পেলেও আজ পর্যন্ত শান্তির দেখা নেই। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা যেন প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য ফ্যাশন, নির্বাচনেরও স্লোগান। বরং ১৯৪৭ সাল থেকে একই ভুল করছে তারাও যে ভুলটি আমাদেরও।
৪৬-এর প্রত্য সংগ্রামের পর যে কথাটি মাউন্ট ব্যাটেন অতি সহজেই বুঝে দেশ বিভাগ করলেন, আমরা পারিনি ৪২ বছরেও অর্থাৎ এপারে মুসলমানেরাই বরং অধিক পরিমাণে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদে বাঁচতে চায়। বেশির ভাগ মানুষই মনে করে দেশ চলছে দিল্লির কথামতো আর এ ল্েযই সরকারকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মতায় রাখার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসলামি দলগুলো নড়েচড়ে বসেছে। আদর্শের আনুকূল্যে বড় নদী বিএনপির সাথে যোগ দিচ্ছে ছোট ছোট দল। তবে জাতীয়তাবাদের যুদ্ধের অন্তরালে সবচেয়ে বড় বাধা সংবিধান। এখানে এসেই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে জগদ্দল পাথরের মতো আটকে আছে দুটি দল, যা বান কি মুনদের ুদ্র বুদ্ধিতে জানার কথা নয়। ফলে ২২ বছর ধরেই রুগ্ণবুদ্ধির স্যার নিনিয়ানেরা বাংলাদেশের মতো স্বৈরাচারীর দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গলদঘর্ম, হয়তো বিমানের এমডির মতো বিদেশী এনে বলবেন, চালাও বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা যদি সভ্য আচরণ করতাম তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা তারানকোর প্রয়োজন হতো না। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ যখন ইস্যু, কারো দূতিয়ালিতেই কাজ হবে না বরং প্রতি পাঁচ বছর পরপর আমাদের জীবন ছারখার করবেন রাজনীতিবিদেরা। অর্থাৎ সমস্যার সমাধান করবে একমাত্র তরুণসমাজ। তবে বাকশালবিরোধী ভূমিকায় মিডিয়ার দায়িত্বশীল আচরণে একনায়কত্ব ঠেকানোর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছিল মিডিয়া কখনো কখনো সরকারের চেয়ে শক্তিশালী, যার অন্যতম ১৯৭৫-এ মিডিয়ার বিরুদ্ধে গোয়েবলসের মতো গর্জে ওঠা সরকারের পতন। কিন্তু সম্প্রতি এদেরই বিটিভি আচরণে সাব্যস্ত হয়, মিডিয়ার বুদ্ধিকোষগুলো পুরোপুরি ধ্বংসের পথে।
গণতান্ত্রিক সংলাপ নয়, চায় গণতান্ত্রিক সরকার। কিন্তু সংলাপের নামে এ যেন কিসিঞ্জারের বটমলেস বাস্কেটের দ্বিতীয় সংস্করণ। বরং সংলাপ নাটকে এবার ভস্ম হবে বিরোধী দল। বাংলাদেশের নাম ভুলিয়ে দেয়া হবে। অথচ সম্পূর্ণ মিথ্যা কারণ দেখিয়ে ২০০১ সালে জাতিসঙ্ঘ থেকেই পাস হয়েছিল ইরাক আক্রমণের দলিল, যার পরিণতি আমরা জানি। সুতরাং আমাদের বেলায় ষড়যন্ত্রের মানসপুত্র বান কি মুনের সংলাপ নাটক সন্দেহজনক হওয়ার কারণ এরাই ঘটিয়েছিল ১/১১, আবারো ঘটাচ্ছে না ভাবার কারণ নেই। এত দুর্নীতি ও হত্যাকাণ্ড সত্ত্বেও সংলাপের নাটক! বরং জাতিসঙ্ঘের উচিত ছিল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি সাধারণ পরিষদের সভায় জানিয়ে দেয়া, কারণ সিরিয়ার মতো জাহান্নামের সেই প্লাটফর্মে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। সুতরাং সিকি বুদ্ধির বান কি মুনকে বিশ্বাস করা যাবে না। অন্যথায় ইয়াসির আরাফাতের অবস্থাই চলতে থাকবে অর্থাৎ শান্তিতে নোবেল পেয়ে তিনি কবরে ঘুমাচ্ছেন আর এখনো পুড়ছে ফিলিস্তিন। সঙ্গত কারণেই সংবিধানের মূল ইস্যুগুলো পরিবর্তন না হলে রাজনীতিবিদেরা যদি হাজার বছরও টেবিলে বসে কাটিয়ে দেন কিছুই হবে না যেমন হয়নি ফিলিস্তিনে। ২০০৬ সালের খালেদার ভূমিকায় এবার হাসিনা। অতীত থেকে শিা নেয়া দূরে থাক, বরং একাই তিনি এক ডজন খালেদা জিয়া। বিরোধী দলের প্রতি মারাত্মক আক্রমণে এ দেশে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন হচ্ছে জেনেও হাইতির কুখ্যাত পাপাডক শাসন ঠেকাতে নীরব সুশীলসমাজ। সুতরাং খালেদার লঘু পাপে গুরুদণ্ড হলেও এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই দীর্ঘ একনায়কত্বের আনুকূল্যে।

বাস্তবতা
লাশের খবর যেন কিছুতেই বাসি হয় না। এত লাশ এ মাটি রাখবে কোথায়! খণ্ড কিয়ামতের মতো পথে-প্রান্তরে যখন ফেরেশতা আজরাইলের পদধ্বনি তখনো অনির্বাচিত সরকারের হাতে মতা না দেয়ার কামান দাগানো মতাবিলাস যেন বোমার মতোই মাথায় আঘাত করে বিষাক্ত করে মগজের কোষ। শাপলা ম্যাসাকার বাদই দিলাম, রানা প্লাজার ঘটনার পর কি উচিত ছিল না অন্তত কিছু দিন মানবিক আচরণ করা! বরং বাতাসে লাশের গন্ধ রেখেই মতাবিলাসীদের দমনপীড়ন যুদ্ধে দম আটকে মরার দশা। এরা কখনোই না হবে বড়, না হবে সভ্য। যদি ৭৫-পূর্ব সাড়ে তিন বছরের কথা ভুলে না যাই, মুজিবকন্যা পিতার মতোই ভাবেনÑ সবাই ভুল, তিনি একাই ঠিক। জরিপ-পরিসংখ্যান, মন্তব্য করলেই অপমান। জনমত যাচাই করা পত্রিকাটি অসভ্য, নোবেল লরিয়েট রক্তচোষা, পণ্ডিতের নাম মুই কার খালুরে; অর্থাৎ মতামতপন্থীরা সবাই অবৈধ সন্তান। প্রাকৃতিক কারণেই খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন খুব বেশি দিনের নয়। অন্য দিকে আপাত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী শেখ হাসিনা নিজেকে দেখছেন ২০২১ সাল পেরিয়ে। এ অবস্থা চলতে দিলে বিরোধী দল লণ্ডভণ্ড হবে। ভারতে পরিবারতন্ত্র সত্ত্বেও মনমোহন সিং পরিবারের নন। ডায়নেস্টি চলতে দিলে বাংলাদেশের অবস্থা হবে মিসর বা লিবিয়ার মতো; যদিও আমাদের প্রোপট মিসরের মতো নয়। ২২ বছরেও দূত, প্রতিনিধি, তত্ত্বাবধায়ক সব ব্যর্থ, ভবিষ্যতেও হবে। তবে নির্বাচন হবে যেকোনো উপায়েই আওয়ামী লীগকে বিজয়ী বানাতে। পচে-গলে রাজনীতিতে দুর্গন্ধ বেরিয়েছে। যারা মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের জন্ম হয়েছে বাকশাল আর সেনা অভ্যুত্থানের গর্ভে, সেসব কুম্ভকর্ণদের ঘুম না ভাঙা পর্যন্ত দেশে চাকু মারামারি চলবেই। ২২ বছরেও যদি পেট না ভরে, ২২০ বছরেও ভরবে না। তাহলে নতুন সম্ভাবনার কী হবে? তাই যদি হবে, তাহলে পাকিস্তানিদের বিদায় করা কেন! ইশারা-ইঙ্গিতে, ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার দিন শেষ। কথা হবে সরাসরি, পশ্চিমাদের ভাষায়, পদত্যাগ করুন মি. প্রেসিডেন্ট!
মতার বিলাসিতা ধারণের মতো অর্থনীতি আমাদের নেই। সুতরাং ২২ বছরের শিাসফর শেষ; অন্যথায় ১৬ কোটি মানুষ আজ ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাইলে, দুই টার্ম আর চার বছরের জন্য মতার কোনোই বিকল্প নেই, থাকতে পারে না। এ ল্েয সবাইকে আন্দোলনে যেতে হবে। কাফেলার শিখণ্ডি হবে তরুণসমাজ।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads