সোমবার, ২৭ মে, ২০১৩

পুলিশের এ কেমন আচরণ!


মানুষ তো নিষ্ঠ্রু আচরণের শিকার হওয়ার জন্য সমাজবদ্ধ হয়নি। বরং মানবিকতা ও সহমর্মিতার আচরণে বিকশিত হওয়ার লক্ষ্যেই মানুষ হয়েছিল সমাজবদ্ধ। সমাজে কখনও যে নিষ্ঠুর আচরণ হবে না কিংবা অমানবিক আচরণের উদাহরণ লক্ষ্য করা যাবে না তেমন ভাবনাও মানুষ ধারণ করেনি। তবে মানুষের সমাজে নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ হবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা অথবা ব্যতিক্রমী বিষয়- এমনটাই ছিল মানুষের আশাবাদ। কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষের আশাবাদ ক্রমেই বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনের হিংসা-হানাহানি ও ব্লেম-গেম মানুষের মনোজগতে অশান্তির বড় উপাদান হিসেবে বিরাজ করছে। সাম্প্রতিককালে এর সাথে আবার যুক্ত হয়েছে সরকারি প্রশাসন ও পুলিশের অনাকাক্সিক্ষত আচরণ। ফলে গণতান্ত্রিক সমাজ অর্জনের ক্ষেত্রে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট প্রশ্ন। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, সরকার তার সঙ্গত জবাব প্রদানে এখন সক্ষম নয়।
আমরা জানি, গণতান্ত্রিক দেশসমূহে পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। আমাদের দেশেও দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে পুলিশের ভূমিকাকে সম্মানের চোখে দেখা হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেই সম্মানের আসনে পুলিশ যেন আর অবস্থান করতে পারছে না। তবে এমন পরিস্থিতির জন্য শুধু পুলিশকে দায়ী করা যায় না। পুলিশ তো রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু বিগত দিনগুলোতে আমাদের সরকারগুলো ক্রমেই পুলিশকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে এনে নিজেদের রাজনৈতিক ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের বিনাশী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এমন ভূমিকা পালন করতে গিয়ে পুলিশের কাউকে কাউকে আবার অতিউৎসাহী হতে দেখা গেছে। ফলে কোনো কোনো ঘটনায় পুলিশকে রাষ্ট্রের বাহিনীর বদলে সরকারি দলের ঠ্যাঙারে বাহিনী হিসেবে মনে হয়েছে জনগণের কাছে। এমন ঘটনায় জনগণ শুধু দুঃখই পায়নি, হয়েছে ক্ষুব্ধও। সম্প্রতি পুলিশকে দুঃখজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে চট্টগ্রামে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কোচিং সেন্টার প্রবাহের এসএসসি জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে পুলিশ বিনা কারণে প্রায় ৮০ জন মেধাবী ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এসময় পুলিশ তাদের সাথে অসদাচরণ করে। বেশ কয়েজন অভিভাবককে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে থানায় দীর্ঘক্ষণ আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেয়। পুলিশ অবশ্য আটককৃতদের ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে জড়িত থাকার কথা বলছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো,  সংবর্ধনাপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের সন্তান ও আত্মীয়রাও ছিলেন। থানা থেকে তাদের ছাড়িয়ে নিতে এসে পুলিশের আচরণে চট্টগ্রাম মহানগরীর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ সময় পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ দাসের সাথে তাদের কথা কাটাকাটিও হয়। আরও বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কাজী মোঃ নূরুল হককেও আটক করে পুলিশ। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ জানায়, কমিউনিটি সেন্টারে সংবর্ধনা দেয়ার নামে ছাত্রশিবির সেখানে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। পুলিশের এমন বক্তব্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ছাত্র, অভিভাবক, শিক্ষক ও অতিথিদের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে ! পুলিশের আচরণ ও বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরাও। ছাত্রলীগ নেতা দিদারুল আলম থানায় গিয়ে আটক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত তার এক আত্মীয়কে ছাড়াতে গিয়ে পুলিশের অসদাচরণের শিকার হন। তিনি বলেন, পুলিশ আমার গায়ে হাত দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের আমলেও আমরা কোনদিন পুলিশের কাছ থেকে এমন আচরণ পাইনি।
পুলিশের আচরণে এখন শুধু বিরোধীদলের নেতা-কর্মীরাই নন, সরকারি দলের লোকজনও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আসলে জুলুম-নির্যাতনের আঁচড় গায়ে লাগলে সবারই টের পাওয়ার কথা। সরকারি দলের লোকজনও তো মানুষ। তাই তাদেরও টের না পাওয়ার কথা নয়। তাই জনমনে আজ প্রশ্ন, দিন বদলের কথা বলে বর্তমান সরকার প্রশাসন ও পুলিশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? একদিকে চট্টগ্রামে মেধাবী ছাত্রদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও অতিথিদের পুলিশ গ্রেতার করে নিয়ে যাচ্ছে, অপরদিকে সিলেট এমসি কলেজের সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। অস্ত্রবাজদের গ্রেফতারের ক্ষমতা তখন যেন পুলিশ হারিয়ে ফেলে। রাষ্ট্রের পুলিশ যখন এভাবে দলীয় পুলিশে পরিণত হয়ে যায়, তখন এমন বাহিনীর ওপর দেশের জনগণ আস্থা রাখবে কেমন করে? গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সরকার যেমন কোনো বিশেষ দলের সরকারে পরিণত হতে পারে না, পুলিশও তেমনি কোনো বিশেষ দলের পুলিশে পরিণত হতে পারে না। গণতান্ত্রিক সমাজে সরকার যেমন সব মানুষের, তেমনি পুলিশও সব মানুষের। সবার প্রতি ইনসাফপূর্ণ আচরণ করাই সরকার ও পুলিশের কর্তব্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের সরকার ও পুলিশ এমন কথায় আস্থা রাখেন কী?

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads