মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৩

সরকার এত অমানবিক হতে পারে না


বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। চরম পুলিশি নির্যাতনে অনেকে জীবনাবসানের মুখে পড়ছেন। রিমান্ডে নিয়ে যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে, তা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে কল্পনাও করা যায় না। দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার আপত্তি জানানোর পরও সরকার নির্বিকার। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের যে স্টিমরোলার নেমে এসেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও দেশের নাগরিক। সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক মৌলিক মানবাধিকারের যে বিধানগুলো রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। আমরা হতবাক হয়ে দেখছি, রাষ্ট্রের আইনি আওতার আশ্রয় নিয়ে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে অকথ্য নির্যাতন। রিমান্ড রাজনৈতিক নেতাদের নির্দয়ভাবে শারীরিক আঘাতের হাতিয়ার হিসেবে যেন এখন প্রয়োগ করা হচ্ছে।
নয়া দিগন্ত এ ধরনের নির্যাতনের একটি চিত্র তুলে ধরেছে এভাবে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত তিনি। চোখে-মুখে আর সারা শরীরে ভয়ঙ্কর নির্যাতনের চিহ্ন। চলৎশক্তিহীন। হাত-পা ফোলা। ছোপ ছোপ রক্ত জমা সারা দেহে। শরীরে এতটুকু শক্তিও নেই। উঠে দাঁড়ানো দূরের কথা, বসার মতো শক্তিও নেই তার। হাত-পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা। দুই চোখ মুদিত। বছর ত্রিশের টগবগে যুবক। মুখভর্তি চাপদাড়ি। হাতে পায়ে কোমরে ডাণ্ডাবেড়ি। সেই ডাণ্ডাবেড়ি আবার ধরে রেখেছেন দুইজন পুলিশ। চ্যাংদোলা করে কয়েকজন পুলিশ তাকে ওঠালেন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। বসতে পারছেন না। মুখে কোনো কথাও নেই। তাকে আদালতেই পেছনে ঠেক দিয়ে ধরে রেখেছেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের কাছে ১৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে পাঠানো আবেদন। শুনানিতে আইনজীবীরা বললেন, আসামি একজন মানুষ। তাকে আগে বাঁচতে দিন। সরকারি দলের কয়েকজন আইনজীবীও আসামিকে দেখে যেন খানিকটা বিচলিত বোধ করলেন। অস্ফুট উচ্চারণে বললেন, হায় হায় একি! সবার স্তম্ভিত অবস্থা দেখে কাল আর নতুন করে রিমান্ডে না দিয়ে সদাশয় আদালত আপাতত চিকিৎসা দিতে বললেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই যুবক ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেন। একটি ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতার পরিচয় বাদ দিলেও তিনি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। অন্য সব নাগরিকের মতো তিনিও সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের কাছে শতভাগ মৌলিক অধিকার পাওয়ার অধিকার রাখেন। রেকর্ডসংখ্যক ৫৩ দিনের রিমান্ড শেষে আবারো ১৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। রিমান্ড এখন কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, ধারণাও করা যাচ্ছে না। আদালতে দেলাওয়ারকে পাঁজাকোলা করে হাজির করা হয়। বসার মতো শারীরিক সক্ষমতাও তার ছিল না। তিনি ছিলেন অনেকটা অচেতন। রিমান্ড প্রসঙ্গে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। দেলাওয়ার হোসেনকে একটানা প্রায় দুই মাস রিমান্ডে রাখার পরিণামে শারীরিকভাবে স¤পূর্ণ অক্ষম হয়ে গেছেন। আসামি পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় পালনীয়, উচ্চ আদালতের এমন সব নির্দেশনা মেনে থাকলে একজন টগবগে যুবক কিভাবে অক্ষম বৃদ্ধের মতো শারীরিক অবস্থায় পতিত হন এই প্রশ্ন অত্যন্ত স্বাভাবিক। মাসের পর মাস রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আমলে নেয়া হচ্ছে কি না সে প্রশ্নও এখন দেখা দিয়েছে।
¤পূর্ণ চলৎশক্তিহীন এ যুবককে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করা হলো। এর চেয়ে নিষ্ঠুরতা আর কী হতে পারে। রাজনৈতিক নেতাদের যেনতেনভাবে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাজির করার সংস্কৃতি গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি। কেন এ অমানবিক আচরণ, তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা সরকার দেয়নি। সাধারণত জঘন্য খুনিদের জন্য এ ডাণ্ডাবেড়ি। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ নির্মমতার কী অর্থ হতে পারে? স্বাধীন দেশের সরকার কেন এ ধরনের হিংসাত্মক পীড়নের পথ অবলম্বন করবে? আমরা মনে করি, সরকার দেশের নাগরিকদের প্রতি নিপীড়নের পথ পরিহার করা জরুরি। সব নাগরিকের প্রতি সংবিধান নির্দেশিত সুবিচারের পরিচয় দিতে হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads