বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৩

ইসলামকে ‘গৃহধর্মে’ পরিণত করার পাঁয়তারা

ভারতের সনাতন ধর্মে বহু দেবতার অবস্থান। ফলে একক দেবতার কোনো ধারণা কখনোই গড়ে ওঠেনি। কলকাতার দেবতার সাথে দিল্লির দেবতার কোনো মিল নেই। আবার দিল্লির দেবতার সাথে তামিলনাড়ু বা দাণিাত্যের নেই কোনো মিল। ভারত বিজয়ের সময় আর্যরা তাদের নিজেদের ধর্ম ও অনেক দেবতা নিয়ে এসেছিল। আর্যরাই মহেনজোদারো ও হরপ্পা নগরী ধ্বংস করে দেয়। আর্যদের রচিত মহাকাব্য রামায়ণ মহাভারত এখন এক ধরনের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পূজিত হয়। অথচ এ দুটি মহাকাব্য মানব রচিত।
আমরা বাল্যকাল থেকে হিন্দুদের গৃহ দেবতার কথা শুনে এসেছি। প্রত্যেক হিন্দু বাড়িতেই একটি দেবতা আছে। এক-এক শ্রেণীর এক এক দেবতা। এমনকি ভারতের অফিস-আদালতেও দেবতার ছড়াছড়ি। কলকাতায় যেমন দুর্গাদেবীর মর্যাদা বেশি তেমনি দিল্লিতে বা মুম্বাইতে গণেশ দেবতার গুরুত্ব বেশি। তিন শ বছর আগেও সনাতন বা হিন্দু ধর্মে সার্বজনীন কোনো পূজা ছিল না। সবাই ঘরে ঘরে পূজা করত। সম্ভবত মোঘল আমলেই সার্বজনীন পূজা উৎসবের ব্যবস্থা করা হয়। ইসলামের বিজয়ের আগে ইরানে জরথস্ত্রু ধর্ম চালু ছিল। আমরা এই ধর্মকে পারসি ধর্ম নামে চিনি। এই ধর্মের অনুসারীদের অগ্নি উপাসক বলা হয়। ধর্ম প্রবর্তক জরথস্ত্রু নাকি অগ্নিকে সম্মুখে রেখে তার বাণী জারি করেছিলেন। পারসিকদের উপাসনালয়কে অগ্নিমন্দির বা ফায়ার টেম্পল বলা হয়। এদের ধর্মগ্রন্থের নাম আবেস্তা। এতে বর্ণিত অনেক দেব-দেবীকে ভারতীয়রা গ্রহণ করেছে বাধ্য হয়ে। কারণ তারা ছিল পরাজিত। আর্যরা পুরো ভারত দখল করতে পারেনি বলে দেিণর ধর্মের সাথে উত্তরের তেমন মিল নেই। পারসিদের প্রধান কেন্দ্র এখন ভারত। আর্যদের প্রধান আইন গ্রন্থ হলো, মনুসংহিতা। সেসব ধর্মীয় আইন এখনো ভারতে চালু আছে। মনুই মানুষের ভেতর বর্ণবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনিই সৃষ্টি করেছে চতুর্বর্ণÑ ব্রাহ্মণ, ত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।
মূল বিষয় হলো, ভারত বাংলাদেশকে মুসলিম দেশ হিসেবে দেখতে চায় না কিংবা জাতীয় জীবনে ইসলামের প্রভাবকে কমিয়ে শূন্যপর্যায়ে নিয়ে আসতে চায়। এটাই হচ্ছে ভারতীয় গবেষকদের পরামর্শ বা সুপারিশ। তাই ভারত সরকারকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভাষা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের েেত্র বিনিয়োগ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। বিগত ৪২ বছরে ভারত এই খাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে আসছে। এই বিনিয়োগের সুফল ভারত পেতে শুরু করেছে। ভারতের কাছে গণজাগরণের নেতারা বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতা। তাই গণজাগরণকে সমর্থন দিয়েছে। ওই কারণেই বাংলাদেশ সরকার গণজাগরণকে ষোলোআনা সমর্থন দিয়েছে। আওয়ামীপন্থী সাংস্কৃতিক সব সংগঠনই গণজাগরণকে সব ধরনের লজিস্টিক দিয়ে সাহায্য করেছেন। এমনকি, নাস্তিক ব্লগাররাও গণজাগরণকে সমর্থন দিয়েছে। সরকার জেনে শুনেই সেসব নাস্তিক ব্লগারদের প্রটেকশন দিয়েছে। কারণ সরকার এ সমর্থন জানাতে বাধ্য ছিল। আওয়ামী লীগ যতটা না সেকুলার (ধর্মহীন), তার চেয়ে বেশি সেকুলার হচ্ছে তার সহযোগী সংগঠনগুলো। সরকারের ভেতর ঢুকে বসে আছে সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ। এরা কেউই মূলত আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাস করে না। এরা সবাই অদৃশ্য শক্তির নির্দেশে আওয়ামী লীগে ঢুকেছে। এদের ল্য কী? এদের ল্য হচ্ছে কালক্রমে বাংলাদেশকে ইসলাম থেকে মুক্ত করা। কারণ ইসলাম জারি থাকলে বা ৯০ ভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ থাকলে ভারতের প্রভাবকে স্থায়ী অবস্থানে পৌঁছানো যাবে না। কারণ, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ৯০ ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম। যদি তা না হতো তাহলে ৪৭ সালে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশ হতো না। হিন্দুপ্রধান পশ্চিম বাংলা ধর্মীয় কারণে ভারতের সাথে রয়ে গেছে। এমনকি তারা স্বাধীন অখণ্ড বাংলাদেশ গড়তেও রাজি হয়নি। হিন্দু নেতারা জানতেন, অখণ্ড বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশে মুসলমানেরাই মেজরিটি এবং তারাই দেশটির শাসক হবে। ১৯৩৫ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বেঙ্গল অ্যাসেম্বলিতে মেজরিটি ছিল মুসলমানেরা। তারাই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিম বাংলায় এখনো ৩০ ভাগ মানুষ মুসলমান। কিন্তু শাসন মতায় তাদের অবস্থান ১০ ভাগেরও কম। সরকারি চাকরিতে তাদের অবস্থান এক ভাগও নেই। আমাদের তরুণ প্রজন্ম মনে করে, আমার কথায় সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ আছে। তারা নিজেদের শুধু বাঙালি হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। এটা নাকি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ভারতের বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব বাবু যখন বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি এক ঘরোয়া আলোচনায় বলেছিলেন, ৭১ সালে তোমরা খাঁটি বাঙালি হতে চেয়েছিলে। তাই আমরা তোমাদের সমর্থন করেছিলাম। এখন তোমরা বলছ, মুসলমান থাকতে চাই। তাহলে তো তোমরা পাকিস্তানের সাথেই থাকতে পারতে। বাংলাদেশকে আমরা খাঁটি সেকুলার বাঙালির দেশ হিসেবে দেখতে চাই। সোজা কথা হলো, ভারত যেভাবে চাইবে বাংলাদেশ সেভাবেই চলবে।
বঙ্গবন্ধু থাকলে আওয়ামী লীগের এ অবস্থা হতো না। বঙ্গবন্ধুর শত্রুরা সবাই এখন আওয়ামী লীগের কাঁধে চড়ে বসেছে। এরা কেউই আওয়ামী লীগের নীতিতে বিশ্বাস করে না। তথাকথিত বামপন্থীরা ভারতের আগামী দিনের নীতি বাস্তবায়ন করতে চায়। ভারতকে ইতোমধ্যেই আমেরিকা আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে মেনে নিয়েছে। শর্ত শুধু একটা, তা হলো চীনের বিরুদ্ধে লেগে থাকতে হবে। আর ভারতের শর্ত হলো, দণি এশিয়ার দেশগুলো যেন ভারতের আনুগত্য মেনে চলে। আমেরিকা ভারতের এ শর্ত স্বীকার করে নিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশকে ভারতের প্রভাবে থাকতেই হবে। তার প্রভাবকে মেনে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা। মূলত সহযোগীরাই হচ্ছে এ ব্যাপারে প্রধান শক্তি। সম্মিলিত বাম ও একই ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের কোনো ভোট নেই। তাই তাদের কৌশল হচ্ছে, আওয়ামী কাঁধে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া। এ ব্যাপারে তারা আংশিক সাফল্য লাভ করেছে। বর্তমান মন্ত্রিসভায় তাদের উপস্থিতি প্রকাশ্য। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো বামদের দখলে। বিশেষ করে শিা, সংস্কৃতি ও বিদেশ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিসভা দেখে কালো বিড়াল প্রতীক সুরঞ্জিত বলেছিলেন, কচিকাঁচার মেলা। যদিও সুরঞ্জিত বাবু একই ঘরানার লোক। তিনি বলেছিলেন, বাঘে ধরলে ছেড়ে দেয়, হাসিনা ধরলে ছাড়ে না, তারপরে সুরঞ্জিত বাবুর ঘটনাগুলো দেশবাসী জানেন। তাকে সবাই কালো বিড়াল হিসেবে চেনেন। তার মন্ত্রণালয় চলে গেলেও মন্ত্রিত্ব যায় না। তিনি এখন দফতরবিহীন মন্ত্রী। উর্দুতে বলে উজিরে খামাখা। সুরঞ্জিত এখন খামাখা মন্ত্রী। হাসিনা কেন তাকে খামাখা মন্ত্রী রেখেছেন তা তিনি এবং সুরঞ্জিতই ভালো জানেন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী এখন দলের বুড়োদের কথার কোনো দাম দেন না। প্রধানমন্ত্রীর মূল পরামর্শক ঠিক করে দেয়, নতুনদের ভেতর কাকে নেয়া হবে আর কাকে বাদ দেয়া হবে। সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী দেশ চালাচ্ছেন। সাহারা খাতুন তুলনামূলক নরম ছিলেন,তাই তাকে সরিয়ে মখাকে আনা হয়েছে। মখা তাঁর যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। সরকারের চলমান কঠোর দমননীতির দর্শন ও পরামর্শ আসছে দিল্লি থেকে। আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকার দিল্লির জন্য শ্রেষ্ঠ বন্ধু। খালেদাও কম যান না। তিনিও দিল্লিকে খুশি রাখতে চান। কূটনৈতিক কারণেই এটা হয়তো খালেদার জন্য অপরিহার্য। খালেদার স্ট্যান্ডিং কমিটিতে যারা আছেন বা যারা তার ঘনিষ্ঠ পরামর্শক, তাদের কেউ কেউ তেমন রাজনৈতিক আদর্শের লোক নন। ধরুন, আপনি প্রশ্ন করলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ফারাক কী? চট জলদি এর কোনো উত্তর অনেকেই দিতে পারবেন না।
১৯৪৯ সালের জুন মাসে যে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছে, তারই উত্তরসূরি হচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ যারা ৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের পর মুসলিম শব্দটি ত্যাগ করেছিলেন বাম ও সেকুলারদের চাপে পড়ে। ওই নির্বাচনের জনসভায় মওলানা ভাসানী বলতেন,আমরা হলাম জনগণের মুসলিম লীগ আর নুরুল আমীনের দল হচ্ছে সরকারি মুসলিম লীগ। সেই নির্বাচনের পরেই পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে মুসলিম লীগ মুছে গেছে। দলের প্রথম সভাপতি ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। তিনি ছিলেন জালেম সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরোধী। তিনি ইসলামি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। ফলে তার সাথে সখ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর। তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদেরও নেতা ছিলেন। কিন্তু মওলানা সাহেব শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগে টিকতে পারেননি। ১৯৫৭ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন, যাতে সারা পাকিস্তানের বামপন্থী নেতারা যোগ দিয়েছিলেন। এখানেও কট্টর বামরা তাকে ব্যবহার করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পারেননি। তিনি বলতেন, আমি খোদাবিহীন সমাজ বা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি না। তিনি গণচীনের অবিসংবাদিত নেতা মাও জে দংকেও বলেছিলেন, তোমাদের সমাজতন্ত্রের সাথে আল্লাহকে যোগ করো, আমি তোমাদের দলে যোগ দেব। মাওলানা সাহেব ন্যাপ গঠন করার পর বামরা সবাই দল বেঁধে আবার তার ছায়াতলে স্থান নেন। কারণ শেখ মুজিব আর সোহরাওয়ার্দী সমাজতন্ত্রবিরোধী ছিলেন। বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দী ছিলেন চরম আমেরিকা ঘেঁষা একজন রাজনীতিক। তিনি অন্ধভাবে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে সমর্থন করতেন। তিনি বলেছিলেন, জিরো+জিরো = জিরো। মানে পাকিস্তান ছিল জিরো আর আমেরিকা ছিল এক বা দশ। সাথে শূন্য যোগ করলে ১০ বা ১০০ হবে। তিনিই পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে বলেছিলেন, ৯৮ ভাগ স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়ে গেছে। শেখ সাহেব ছিলেন সোহরাওয়ার্দী সাহেবের এই সাম্রাজ্যবাদী নীতির অন্ধ সমর্থক। ৭০ সাল নাগাদ আমরা আওয়ামী লীগকে সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখে এসেছি। ন্যাপ গঠনের পর ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া মওলানা সাহেবকে লুঙ্গি মওলানা বলে গালি দিতেন। বাম ঘরানার সাংবাদিকদের লাল মিয়া বলে সম্বোধন করতেন। ৭২ সালে এসে আওয়ামী লীগ দলের নীতিতে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেতা যোগ করে। ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় দিল্লি মুজিবনগর সরকারের মাথায় এ বিষয়টা ঢুকিয়ে দেয়। এরপরে সংবিধানে বিষয়টা প্রবেশ করানো হয়।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, পাকিস্তান যেহেতু আমেরিকাপন্থী ছিল, সেহেতু ভারতের সাথে রাশিয়ার সখ্য ছিল। এক সময় আইউবের আমলে চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেন জেনারেল আইউব। এ ব্যাপারে মওলানা ভাসানী আইউবকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সেই থেকেই পাকিস্তানের সাথে চীনের সুসম্পর্ক এবং এখনো সেটা অব্যাহত আছে। ৬২ সালে ভারতের সাথে চীনের একদফা যুদ্ধও হয়ে গেছে। চীন-ভারত সম্পর্ক এখনো শীতল রয়ে গেছে। এই তো এবার চীনের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেলে তিব্বতীরা চীনবিরোধী স্লোগান দেয়। তিব্বতকে ভারত বহু দিন সমর্থন দিয়ে আসছে। তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাইলামাকে ভারত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত বিরোধ এখন খুবই প্রকট। ভারত যেহেতু প্রতিবেশীদের ব্যাপারে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করে মোড়লিপনা করতে চায়, সেহেতু বাংলাদেশের উচিত ছিল নিকট প্রতিবেশী চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কার সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়া। আওয়ামী লীগের পে এ উদ্যোগ নেয়া সম্ভব নয়। কারণ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ভারতের অনুগত দল ও ব্যক্তি। এটা শেখ মুজিব বেঁচে থাকলে কখনোই সম্ভব ছিল না। বিগত ৪২ বছরে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জগতে শেকড় গেড়ে বসে আছে। ফলে আগামী দিনের প্রজন্ম এ দেশটা যে মুসলমানের দেশ, তা আর স্বীকার করতে চায় না। কিছু বাম, কিছু সেকুলার ও কিছু ভারতের তাঁবেদার তরুণদের মাথা খেয়েছে। সব মিলে লাখখানেক মানুষকে ভারত তাদের ক্রীতদাসে পরিণত করেছে। এদের কাছে ঢাকার সার্বভৌমত্বের পে নিবেদিত হওয়ার চেয়ে দিল্লির স্থায়ী তাঁবেদারি করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এরাই হচ্ছে সেকুলারদের আদর্শগত সৈনিক। এরা পর্দার অন্তরালে থাকে। কিন্তু এখন প্রকাশিত হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের কারণে। ভারতের রাষ্ট্রপতি বাঙালি বাবু প্রণব মুখার্জি তো (প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাকা বাবু) বলেই ফেলেছেন গণজাগরণ হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। গণজাগরণকে সরকার লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছে মাসের পর মাস। আর ভারতপন্থী ব্যবসায়ী, মিডিয়া ও আহমদিয়া জামাত অর্থবিত্ত দিয়ে সাহায্য করেছে। এমনকি হেফাজত ও জামায়াতবিরোধী একশ্রেণীর ভারতপন্থী ইসলামিক গ্রুপও সরকারের পে অবস্থান নিয়েছে। তরিকত ফেডারেশনের এক নেতার কথা জানি, যিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় করেন। ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের হাতে রাখার জন্য একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। ওই ম্যাগাজিনের সম্পাদক রেখেছেন একজন প্রভাবশালী মহিলাকে। এই মহিলার সাথে দিল্লির কোনো কোনো মহলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে, যা ষোলোআনা ভারতপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ভরণপোষণের জন্য নিবেদিত।
সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবীর ময়দানে বিএনপির অবস্থান একেবারে নেই বললেই চলে। খালেদা জিয়া যতবারই মতায় এসেছেন এ দিকে একেবারেই নজর দেননি বা এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেননি। মরহুম সাইফুর রহমান বলেছিলেন, আমি বিদেশ থেকে টাকা ধার করে নাচগানের জন্য খরচ করতে পারি না। এমনকি বিএনপি নিজেদের কাগজটাও চালাতে পারে না। যাদের টিভির অনুমতি দেয়া হয়েছিল, তারা তা বিক্রি করে দিয়েছেন আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কাছে। বিএনপি মনে করে, আওয়ামী বিরোধীরা আর কোথায় যাবে। অতএব, তারা বাধ্য হয়েই বিএনপির সাথে থাকবে। যা হোক, জেনারেল মইনের সরকারের আমল থেকেই বিএনপিকে দাফন করার কাজ চলছে। সে কাজ এখনো অব্যাহত আছে। জেনারেল মইনের উত্তরসূরি বর্তমান সরকার এখন রণমূর্তি ধারণ করেছে। শুরুতেই বলেছি, হেফাজতকে দমনের পরে বর্তমান সরকার বিএনপির দিকে নজর দিয়েছে। প্রাথমিক পদপে হলো, কঠোরভাবে দমন করা। পরামর্শকদের প্রেসক্রিপশন হলো, হাতপা ভেঙে দিয়ে দেখ, ফল কী হয়। তাতে যদি না হয় তাহলে কিছু হত্যা করো, কিছু জেলজুলুম করো। এতে নাকি বিশ্বব্যাপী ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। তারপর হলো, আমেরিকাকে বুঝাও যে, আমরা মৌলবাদী উত্থানকে দমন করছি। গোলাবারুদ কেনার জন্য আমাদের বেশি করে সাহায্য দিন। আমাদের আরো পাঁচ বছর সময় দিন। আমরা পুরো বাংলাদেশকে ধর্মহীন করে আপনাদের খেদমতে পেশ করব। আন্তর্জাতিক অপশক্তির যৌথ প্রেসক্রিপশন হলো, ইসলামকে গৃহধর্মে পরিণত করো। মুসলমানেরা রাত-দিন ঘরে বসে ইবাদত করুক। ইসলামকে জীবনবিধান নয়, সুফিধর্ম হিসেবে প্রচার করো। রাজি হুজুর? ইসলামের বাইরে বের হতে দেবো না। আমাদের ২০৫০ সাল পর্যন্ত মতায় থাকতে দিন। আমাদের দলে এখন অনেক নামী-দামি হুজুর এসে গেছেন।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads