মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০১৩

প্রতিহিংসার রাজনীতি


মানুষ সুন্দরের পূজারি। সুন্দর সুশোভিত যে ফুটন্ত ফুল বাগানের শোভা বৃদ্ধি করে, তা কোন পাষণ্ড পারে পায়ের নিচে নিয়ে দলিত-মথিত করতে? কোনো সুন্দর ফুলের পবিত্রতা দেখে কারো মনে হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা জন্ম নিতে পারে না। জঙ্গলের কোনো জন্তু-জানোয়ার ফুল বাগানের সৌন্দর্যের মর্ম বোঝে না। জীব-জানোয়ারদের মধ্যে এই বোধ না থাকলেও তারা ুধা না লাগলে কোনো শিকারের ওপর আক্রমণ করে না। এসব কথা বলার কারণ হলো, মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো সুশীলসমাজ ও শহুরে ভদ্রসমাজ যখন প্রগতি আর মানবাধিকারের কথা বলে, তখন তাদের সেই সুন্দর চেহারা বড্ড বীভৎস লাগে। কারণ তাদের কাছে শুধু তাদের মত, পথ ও চিন্তাধারার লোকই মানুষ। আর বিপরীত মত ও পন্থার মানুষগুলো যেন জীবজন্তুর চেয়েও অধম।
অবাক লাগে, ঘৃণা হয় যখন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মতাসীন দলের এজেন্ট হয়ে কথা বলেন আর যার মাধ্যমে তার প্রকৃত চেহারার মুখোশ খুলে যায়। প্রতিনিয়ত বিবেক দংশন করে এটা ভেবে যে, আমরা এ কোন পাষণ্ডদের গোলামি করছি? যারা দেশের জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মতায় আসীন হয়েছেন, যে প্রশাসন চলছে আমাদেরই রক্ত পানি করা কষ্টার্জিত অর্থের প্রদেয় কর থেকে, সেই প্রশাসনই এখন জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে চালাচ্ছে গ্রেফতার বাণিজ্য।
নিরপরাধ মানুষগুলো গ্রেফতার ও হয়রানির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আর অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে মুক্ত বাতাসে দম্ভের সাথে। সে দিন অফিস থেকে ফেরার পথে দেখলাম, এক ভদ্রলোক এক ছিনতাইকারীর শার্টের কলার ধরে রাস্তায় কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর একজন সদস্যের হাতে সোপর্দ করার বৃথা চেষ্টা করলেন। ওই পুলিশ তাকে না ধরে নির্বাক দাঁড়িয়ে রইল। অথচ নিরীহ মানুষগুলোর ওপর গুলি চালাতে তারা আদেশপ্রাপ্ত।
মতাসীনদের লালিতপালিত এই পুলিশ প্রশাসন এখন অত্যাচারীর ভূমিকা পালন করছে। তারা বাগানের ওই সুশোভিত সুন্দর গোলাপটি নির্দ্বিধায় পায়ের তলায় পিষ্ট করছে। আর পুষ্পশোভিত মঞ্চে উঠে বক্তৃতা করেÑ ছাত্ররা নাকি আগামী প্রজন্মের ধ্বজাধারী। তারা নাকি ফুলের মতো পূতপবিত্র। এ কোন ছাত্রসমাজকে তারা ইঙ্গিত করে? এরা কি ওই দল যারা হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, চাপাতি, রড নিয়ে শিাঙ্গনে মহড়া দেখায়? চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে সর্বত্র আতঙ্ক বিস্তারকারী ছাত্রলীগ নামধারী ক্যাডারদের তো কখনোই অভিযুক্ত করা হয় না।
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগের মঞ্চ থেকে যে সহিংস দাবি করা হয় তার প্রচারণার কারণে তো কোনো মিডিয়াকে অভিযুক্ত করা হয় না। তথাকথিত নীতিজ্ঞান বিবর্জিত ছাত্ররাই কি এ প্রজন্মের, এ সভ্যতার সভ্যছাত্র? আর মাদরাসার কোমলমতি দরিদ্র ছাত্ররা কি তাহলে বর্বর?
বিশ্বজিৎ হত্যার মতো লোমহর্ষক হত্যার ঘাতকেরা যখন ছাত্রলীগের বলে প্রমাণিত হয়, তখন তাদেরকে বহিষ্কৃত বলে দাবি করা হয়। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা যখন সবার চোখে যুবলীগের হিসেবে পরিগণিত হয়, তখন গর্ব করে দেশবাসীকে জানানো হয় যে দলের কেউ নন। এই ঘাতকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতারা কি তাহলে অন্ধ-বধির? কোনো আলোচনা, সমালোচনা বা ধিক্কারের তারা পরোয়া করে না। আর যারা তাদের ভুল ধরিয়ে দেয় তাদের কঠোরহস্তে দমনের হুঁশিয়ারি দেন তাদের কাপুরুষোচিত বীরত্ব দিয়ে। কারণ মতা এখন তাদের। কে ধরবে তাদের? তারা মনে করে তারাই সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়। বিচারপতির বিচার করার কেউ তো ইহজগতে নেই। যে এই কালো বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাতে আসবে সেই পড়বে তাদের রোষানলে।
একটা মানুষ সে যত বড় অপরাধীই হোক, সে তো মানুষ। ছাত্রনেতা দেলাওয়ার হোসেনকে অমানবিক ও পাশবিক অত্যাচার ও নির্যাতন করা হচ্ছে, তা দেখে কোনো মহানুভব মানবাধিকারকর্মী মুখ খোলেন না। আর যেভাবে সরকার ও সরকারের মন্ত্রীরা দায় এড়ান, তাতে আমাদেরও লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়।
এমন নির্মম অত্যাচারের উদ্দেশ্য কী? তার অনুভূতি, চিন্তাশক্তি সব নষ্ট করাই কি এর উদ্দেশ্য? দেলাওয়ার হোসেন আমার কোনো আত্মীয় নন। আমি একজন বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষ। নিউজে যখন পুলিশ কর্তৃক তাকে আদালতে হাজির করার দৃশ্য দেখলাম আমার সমস্ত শরীর শিউরে উঠল। একটা পশুও তো স্বজাতের কোনো পশুকে এভাবে আহত করে না! কোথায় সেই মানবাধিকারের ধারক ও বাহকেরা? কোথায় তাদের বিবেক? কোথায় তাদের মনুষ্যত্ব? যাকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয় তার এই অবস্থা দেখে কি কারো শরীরে রক্ত থাকে? চুপ থাকা সম্ভব? এই কি মানুষের নিরাপত্তা, এই কি মানবতা?


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads