সোমবার, ২০ মে, ২০১৩

‘দেশটা কি মগের মুল্লুক’



দেশটাতো শুধু আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির নয়। ১৬ কোটি মানুষ এ দেশের মালিক। দেশের জনগণকে উন্নত জীবনমান উপহার দেয়ার ওয়াদা করেই রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যায়। কিন্তু ট্রাজেডি হলো ক্ষমতায় গিয়ে যেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যায় রাজনীতিবিদরা। জনগণ চেয়ে চেয়ে দেখে এবং যথাসময়ে জবাবও দেয়। ক্ষমতায় গিয়ে রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বলেন, প্রতিশ্রুতি দেন, কূটচালও কম চালান না। তবে কথা-কাজে মিল না থাকায় আখেরে এসব তৎপরতা সরকার ও সরকারি দলের রাজনীতিবিদদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না। সরকারের মন্ত্রী বাহাদুররা যত চাতুর্যই করুন না কেন তাদেরকে পরিমাপ করার মাপকাঠি কিন্তু জনগণের কাছে আছে। জনগণ জানে দেশে যখন সুশাসন থাকে না, শিক্ষাঙ্গনে চলে সন্ত্রাস, মানবাধিকার হয় ভূলুণ্ঠিত এবং পুলিশ ও প্রশাসন অনুরাগ ও বিরাগের নীতিতে পরিচালিত হয় তখন জনগণের ভোগান্তির মাত্রাই শুধু বাড়তে থাকে। এমন অবস্থায় জনমনে ক্ষোভের মাত্রাই শুধু বাড়তে থাকে। কথিত জনগণের সরকার জনগণের মনের এমন অবস্থা কতটা উপলব্ধি করেন তা তারাই জানেন।
সরকার যখন ঠিক পথে চলে না তখন সবকিছু যেন তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, নিজেদের ছাত্র সংগঠনকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। আমরা জ্ঞানভিত্তিক যে সমাজের কথা বলছি তার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত জনশক্তি। কিন্তু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কারণে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তাতে আগামীতে সুশিক্ষিত ও নীতিবান জনশক্তি পাওয়া বেশ দুরূহ হয়ে উঠবে। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ যেন এখন সকল আইনের ঊর্ধ্বে। গত রোববার দুপুরে সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধসহ ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাব্যাপী তা-বে অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলীবর্ষণ হয়। এ সময় দু’জন সাংবাদিককে ব্যাপক মারধর করা হয়। কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয় বেসরকারি চ্যানেল সময়ের ক্যামেরা। এই ঘটনায় সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছে। জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের পঙ্কজ ও হিরণ গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অবাক ব্যাপার হলো, এত বড় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা গেলো না। শাহপরান থানার ওসির নেতৃত্বে প্রায় ২৫ জনের একটি পুলিশ দল ঘটনাস্থলে থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। তাই জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কী আইনের ঊর্ধ্বে! গোলাগুলীর ঘটনার পরেও পুলিশ ওদের কাউকেই গ্রেফতার করলো না। অথচ সামান্য কারণে বা যে কোনো ছুতায় সরকারের ইঙ্গিতে প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে চলেছে পুলিশ বাহিনী। ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলায় এখন বেশ পারঙ্গম হয়ে উঠেছে আমাদের পুলিশ ও প্রশাসন। দেশে এখন যেভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হচ্ছে, জুলুম-নির্যাতন চলছে তাতে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভাবতে কষ্ট হয়। এমন বাতাবরণে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করলেন আগামী এক মাস দেশে সভা-সমাবেশ বন্ধ থাকবে। বিকেলে বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে মন্তব্য করেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর। ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের দুর্গতদের পুনর্বাসনসহ ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোয় ত্রাণ তৎপরতা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়। কিন্তু সরকারের এমন বক্তব্য জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। আর রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, গণতান্ত্রিক অধিকারকে সংকুচিত করার জন্যই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকার এখন যেভাবে দেশ চালাচ্ছে তাতে জনগণের সাথে সাথে রাজনীতিবিদদের মধ্যেও ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে চলেছে। আগামী এক মাস সারাদেশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার দেশে জরুরী আইন জারির ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছে দেশের বাম দলগুলো। এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, এভাবে সমাবেশ নিষিদ্ধ করা মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। সাবেক প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা বলেন, এটি একদলীয় শাসনের ইঙ্গিত। এর মাধ্যমে সরকার দেশে জরুরী অবস্থা জারির ষড়যন্ত্র করছে। আর দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মন্তব্য করেছে, দেশটা যেন মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের যে পরিস্থিতি তাতে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, চাতুর্যের বদলে এখন সরকারের প্রয়োজন আত্মসমালোচনা। সরকার সঠিক পথে ফিরে না এলে তা শুধু দেশের জন্যই ক্ষতিকর হবে না, সরকার ও সরকারি দলের জন্যও অপেক্ষা করবে বিপর্যয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads