শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

মিডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ

মিডিয়ার বিরুদ্ধে সরকার যে এক অঘোষিত যুদ্ধ ঘোষণা করবে, সেটি ২০০৯ সালের শুরুতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত, সেনবাহিনী ও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি অশুভ আঁতাতএর মাধ্যমে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটও অংশ নিয়েছিল। ফলে নির্বাচন যেনতেন যাই হোক, তার ন্যূনতম একটি গ্রহণযোগ্যতা ছিল। ওই নির্বাচন নিয়ে এখনো অনেককে বড়াই করতে শুনি। সে বড়াইয়ের মূল কথা, ওই নির্বাচনকালে কোনো খুন-খারাবি হয়নি। হয়নি বটে, তবে সেখানেও ছিল কেড়ে নেয়ার ধুম। কোনো কোনো কেন্দ্রে ১০০ থেকে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। সে ছিল এক আজব কারবার। নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোর আশপাশে পাওয়া যাচ্ছিল ব্যালট পেপারের মুড়ি। অর্থাৎ কে বা কারা হাজারে হাজারে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে, সিল মেরে ভোটের বাক্সে ঢুকিয়েছিল। এ নিয়ে যখন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল, তখন সাধু নির্বাচন কমিশনএক ফরমান জারি করে বসল যে, এই মুড়ি যাদের কাছে পাওয়া যাবে, তাদেরই গ্রেফতার করা হবে। সাধারণত খেলতে গিয়ে ছোট শিশুরা নির্বাচন কেন্দ্র স্কুলের আশপাশ থেকে এসব মুড়ি কুড়িয়ে পাচ্ছিল। অভিভাবকেরা ভয়ে সেগুলো লুকিয়ে ফেলছিলেন। এ হলো ২০০৮ সালের ভালো নির্বাচনের জলজ্যান্ত উদাহরণ।
তার পরও সে সংসদে সীমিত আকারে হলেও বিরোধী দলের উপস্থিতি ছিল। ওই আঁতাতকারীরা বিরোধী দলকে যে কটি আসন দিতে চেয়েছিলেন, সে কটি আসনই তারা পেয়েছিলেন। তার বাইরে নয়। এর মধ্যে সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করায়। প্রধানমন্ত্রীর অনুদান-খেকো তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মুন সিনেমা হল মামলা নিষ্পত্তি করতে গিয়ে অত্যন্ত অযাচিতভাবে এই সংশোধনী বাতিল করে দেন। সংশোধনী বাতিলের আগে সরকার নিয়োজিত এক কমিটিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। তাতে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা অংশ নিয়েছিলেন। এরা সবাই বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় হাত দেয়া কিছুতেই সঠিক হবে না। এখন এরাই আবার বেশ লাফালাফি শুরু করেছেন। এরা যদি সে ধরনের অভিমত দিয়ে থাকেন, তাহলে কেন তা সংশোধিত হলো? কার ইঙ্গিতে সংশোধিত হলো? সেটি কেউ স্পষ্ট করে না বললেও সাধারণ মানুষের বোঝার বাকি থাকে না।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের সূত্রপাত সেখান থেকেই। বাংলাদেশে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন অনেকেই এ ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিল। কনসেপ্ট হিসেবে বিষয়টি নতুন ছিল। আর এ দাবি প্রথম উত্থাপন করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। পরে এ দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন জোরদার করে তোলে। সে পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচন করে সেই সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে বিএনপি সংসদ ভেঙে দেয়। তারপর সাংবিধানিকভাবে গঠিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৯৬ সালে আবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করে।
পরে ২০০১ সালে সাংবিধানিকভাবে গঠিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের লোকজন দেশব্যাপী যে তাণ্ডবের সৃষ্টি করে তাতে খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, ভবিষ্যতে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, আওয়ামী লীগের পক্ষে জয়লাভ করা সম্ভব হবে না। আর সে কারণে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অথচ বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার সাফল্য দেখে পাকিস্তান ও নেপালও এই ব্যবস্থা চালু করে। উপরন্তু এর আগে থেকেও অনেক দেশে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থা চালু ছিল এবং এখনো আছে।
ওই ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু সে দাবির প্রতি সরকার মোটেও কর্ণপাত করেনি এবং এ বছর ৫ জানুয়ারি একটি নির্বাচন আয়োজন করে। আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সে রকম নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। এরা জনগণের প্রতি নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয় এবং আশ্চর্য হলেও সত্য যে, সেই ডাকে বিপুলসংখ্যক মানুষ সাড়া দেয়। নির্বাচনে পাঁচ শতাংশের মতো লোক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে, বিভিন্ন মহল এমনটিই মনে করে। এ ধরনের একটি নির্বাচনের প্রতি সরকার সমর্থক নেতাকর্মীদেরও যে কোনোরূপ সমর্থন ছিল না, এই পরিসংখ্যান থেকে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সংসদের অর্ধেকেরও বেশি আসনে কোনো প্রার্থী ছিল না। তা ছাড়া ৪৯টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। সেখানে সরকার সমর্থক দলগুলোর এজেন্ট, কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা নিজেরাও ভোট দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। ফলে নির্বাচন হয়ে পড়েছিল অত্যন্ত খেলো ও ফালতু।
দেশের গণমাধ্যমগুলো এই নির্বাচনী প্রহসনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ কোথাও কোথাও সরাসরি সম্প্রচার করেছে। কোথাও ধারণকৃত ফুটেজ সম্প্রচার করেছে। পত্রিকার ছবিতে দেখা গেছে বুথের ভেতরে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। অলস বসেছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারা। কিন্তু এ নিয়েও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন শেখ হাসিনা। শুধু ভারতের কংগ্রেস সরকার ছাড়া সারা পৃথিবী এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানকে প্রহসন বলে অভিহিত করেছিল। এই নির্বাচন যে প্রহসনে পরিণত হবে, সেটি তারা আগেই উপলব্দি করেছিলেন। সে কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তারা কোনো প্রতিনিধিও পাঠাননি। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসঙ্ঘসহ সব মহল বলেছে এ নির্বাচন তাদের কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং অবিলম্বে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হোক। এ কথা তারা ৫ জানুয়ারির আগেও যেমন বলেছে, তেমনি এখনো বলে যাচ্ছে। তাদের মতের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকারের ভাবখানা এই যে, ‘আমার বেগুন আমি রানব, যত খুশি লবণ দেবো তাতে কার কী।কিন্তু এ রকম একটি বিচ্ছিন্ন চিন্তাধারা দিয়ে যে আধুনিক বিশ্বে একটি সরকার চলতে পারে না, সে বোধোদয় তাদের হয়নি। এখন একে একে নিভিছে দেউটি। শ্রমবাজার গেছে, পোশাকের বাজার যায় যায়, সবজি বাজার হুমকির মুখে, মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশ নিষেধ এমনি সব গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে সরকার।
এর কোনো খবরই চাপা থাকেনি। প্রতিদিন সব সেক্টর থেকে দুঃসংবাদ আসছে। সরকারের জনসমর্থন একেবারে তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে। যেকোনো ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্ষেত্রে যা হয়, এ সরকারের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এসব সরকার উটপাখির মতো বালিতে মুখগুঁজে ঝড়ের কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে সরকার এরই মধ্যে চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, দৈনিক আমার দেশ বন্ধ করে দিয়েছে। এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রায় দুই বছর কারাবন্দী। বিনাবিচারে আটক আছেন। তাতেও এরা সন্তুষ্ট হয়নি। মিডিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের লোকের বিষোদ্গার অব্যাহতই শুধু থাকেনি, বেড়েছে। প্রতিদিন তা মাত্রা ছাড়িয়েছে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকার সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করেছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অপরাধ, দুর্নীতিবিষয়ক কোনো কিছুই সম্প্রচার করা যাবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতে যত খামখেয়ালি হোক, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। আবার আদলত যাতে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে না পারে, স্বাধীনভাবে রায় দিতে না পারে সে জন্য বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা এমন এক সংসদের হাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যে সংসদ সম্পূর্ণরূপে বিতর্কিত। যার ১৫৪ জন সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
আর মিডিয়ার বিরুদ্ধে এই দমননীতি কী পর্যায়ে পৌঁছতে পারে একে একে তার উদাহরণ করে চলেছে এ সরকার। যে যেখানে পারছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলে পড়ছে। সম্প্রতি এ রকম উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। তিনি বলেছেন, ‘সাংবাদিকদের ঠিক করতে নীতিমালা হয়েছে, ওইদিন ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আমি থাকলে সাংবাদিকদের ... (অকথ্য শব্দ) বাঁশ ঢুকাতাম। সাংবাদিকদের এখন এমনভাবে ঠিক করা হবে, যাতে নিজের স্ত্রীকে পাশে নিয়েও শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না। সাংবাদিকেরা বদমাশ, চরিত্রহীন, লম্পট। ... যারা পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে লেখালেখি করে, তারা দুএক কলম লেখাপড়া করেছে। আমি বলি একটা, তারা লেখে আর একটা। দুই টাকা খেয়ে তারা আমার ... (অকথ্য শব্দ) দিয়ে বাঁশ ঢুকাতে চায়। আমার শ্বশুরবাড়ি সিলেট। সাংবাদিকদের পেছনে সিলেটের মানুষ লেলিয়ে দিতে আমার সময় লাগবে না। সাংবাদিকেরা আমার ... (অকথ্য শব্দ) ছাড়তে পারবে না।তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে কথা বলেছি, সেটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও আমাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। লন্ডন থাকি আইয়্যা নেত্রী কইছন, ঠিক কইছন, মহসিন ভাই। আপনি আওয়ামী লীগের নেতা, আর ইনু সাহেব ১৪ দলের নেতা। এভাবে তো বলবেনই।তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাংবাদিকদের ঠিক জায়গায় ধরছে। এর লাগি সম্প্রচার নীতি হইছে, আমি যদি ওই ক্যাবিনেটে থাকতাম, তাহলে সাংবাদিকদের আর শ্বাসিক গলা ধরলাম নে, ফুয়াইনতর (ছেলেদের) রস বার খল্লামনে (বের করতাম)
এর পরেও একই রকম অশালীন ভাষায় এই ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অখন থাকি সতর্ক হইয়্যা যাও। যেকথা মনে হয় লিখিও না। যেতা মনে হয় দেখাইওনা। এই সিলেট আমার শ্বশুরবাড়ি। তোমাদের দেখাইতে সময় লাগবে না। শেষে বিয়া শাদি কইরা বউ নিয়ে আরামে ঘামাইতায় নায়। খবিস হক।মহসিন তার ভাষায় বলেন, ‘কোমর কিলা ভাঙতে হয় আমি জানি, চরিত্রহীন হকল। ট্যাকা নিয়া মাইনষর বিরুদ্ধে যেথা মনে হয় ওতা লিখিলাও। খাও ট্যাখা, একজনের বাঁশ ফুকাও অরেক জনের। মহসিন আলীরে (অকথ্য শব্দ) বাঁশ দিলাও। সাংবাদিকরা আমার (অশ্রাব্য শব্দ) ছিঁড়তে পারবে না।মন্ত্রিত্বের পরোয়া করেন না এমন দম্ভোক্তি করে মহসিন আলী বলেন, ‘খুব সতর্ক থাকবায়। ধরলে কিন্তু ছাড়া পাইতায় না।সাংবাদিকদের খবিস গালি দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোমর কীভাবে ভাঙতে হয় আমি জানি। চরিত্রহীন, তোমরা টাকা খাও অন্যের, আর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে লিখো। এটা আর হবে না, খুব সতর্ক থাকবে। ধরলে কিন্তু ছাড়া হবে না।
এরপর আরো সব মারাত্মক ঘটনা ঘটল। সাংবাদিক এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। গণশত্রু কে, সে বিষয়টা বোঝাতে এই শিক্ষাবঞ্চিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের উদ্দেশে অনেক কথা বলতে হবে। সেটা আমি বলতে চাই না। বা তা বলার কোনো অর্থও নেই। গণশত্রু বলে ইবসেন যে নাটক লিখেছিলেন, তা এই সরকারের কয়জন পড়েছেন, সে বিষয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ আছে। আসলে এমন দাবি যদি কেউ করে যে, এটা মূর্খদের শাসন তাহলে তাকে হেসে উড়িয়ে দেয়া যাবে না।
সম্প্রচার আইন, বিচারকদের অভিশংসন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে এখন সমাজে তুমুল বিতর্ক চলছে এবং আশ্চর্য ঘটনা এই যে, এক পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর ছেপে দৈনিক ইনকিলাবের বার্তা সম্পাদক রিমান্ডে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আইন, বিচার, ওয়ারেন্ট কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা ইনকিলাব অফিসে হানা দিয়ে বার্তা সম্পাদক রবিউল্লাহ রবিকে রিমান্ডে নিয়ে গেছেন। কোথায় আইন? কোথায় বিচার বিভাগ? বিচার বিভাগ যদি তার নামে ওয়ারেন্ট জারি করেন, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন, তারপর গ্রেফতার করেন, তার একটা অর্থ আছে। কিন্তু কিছুই হলো না একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রলয় কুমার নিজেই বিচারক ও আদালত সেজে ইনকিলাবের বার্তা সম্পাদককে মধ্যরাতে অফিস থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে চলে গেলেন। বাহাদুর বটে তিনি! সরকার এমন বাহাদুরদের রাজত্বই কায়েম করতে চাইছে।
এই কদিনে শুধু ইনকিলাবের বার্তা সম্পাদক যে গ্রেফতার হয়েছেন তা নয়, মানবজমিন পত্রিকার সিলেটের বিশেষ প্রতিনিধি চৌধুরী মোমতাজকে এক ইতর মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। দৈনিক সমকালের ব্যুরো চিফ পুলক চ্যাটার্জিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বিডি নিউজ২৪.কম, মাছরাঙা টেলিভিশনসহ গণমাধ্যম কর্মীদের গ্রেফতার, তাদের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা করা হয়েছে। যেন গণমাধ্যম কর্মীদের জানান দেয়া হলো, হুঁশিয়ার, সাবধান। আর এক পা এগিয়েছ কী মহাবিপদ।
এই মহাবিপদ কার? আমরা গণমাধ্যম কর্মীরা অবিরাম সত্য প্রকাশের ব্রত নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারের কাছে সত্য বড়ই অসহ্য। এই অসহ্য অবস্থা সরকারকে একেবারেই অন্ধ করে দেবে। চার পাশে তারা কিছুই দেখতে পাবে না। তখন আঁধারের মধ্যে ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে এরা নিজেরাই নিজেদের কল্লা কেটে ফেলবে। ইতিহাসের বিচার ও দিব্যদৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেদিন আর খুব বেশি দূরে নয়। 
 ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads