মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০১৪

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা : জাতির কি লাভ?


বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ জারি করেছেন। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আখতারুজ্জামান তালুকদার এই সংক্রান্ত এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এই নীতিমালা জারি নিয়ে সারা দেশের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ সকলের তরফ থেকে এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। সাংবাদিক সমাজের বেশিরভাগ অংশ তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ এনেছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তরফ থেকে এই নীতিমালাকে বাক ও মতামত এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করার অপপ্রয়াস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বলা বাহুল্য ইতঃপূর্বে গত ৪ আগস্ট সোমবার মন্ত্রিসভা নীতিমালার খসড়া এবং ৫ আগস্ট সরকার চূড়ান্ত নীতিমালা অনুমোদন করেছেন।
গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হচ্ছে ঃ
ক) জনস্বার্থ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আদর্শ ও চেতনা, সামাজিক মূল্যবোধ এবং রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্য  রেখে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, এগুলোর পরিপন্থী কোনো সম্প্রচার করা যাবে না।
খ) মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় আদর্শ ও নীতিমালা সমুন্নত রাখতে হবে এবং তার পরিপন্থী কোনো প্রচার প্রচারণা চালানো যাবে না।
গ) সকল অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাসসহ সর্বজনস্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা গৌরবান্বিত করতে হবে।
ঘ) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বাধ্যতামূলকভাবে প্রচার করতে হবে।
ঙ) সশস্ত্র বাহিনী অথবা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত দায়িত্বশীল অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রƒপ, অবমাননা, অপরাধ নিবারণ বা নির্ণয়ে অথবা অপরাধীধের শাস্তি বিধানে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের হাস্যাষ্পদ করে তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করে এমন দৃশ্য বা তথ্য প্রচার করা যাবে না।
নীতিমালার প্রথম অনুচ্ছেদে এর একটি পটভূমি দিয়ে তার প্রেক্ষিতে অংশীজনদের (Stakeholders) সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন, বহুমুখী, দায়বদ্ধ এবং দায়িত্বশীল সম্প্রচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও বাংলাদেশের সম্প্রচার মাধ্যমসমূহকে একটি সমন্বিত কাঠামোর আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয় যে, এ নীতিমালার আলোকে ‘সম্প্রচার’ বলতে এমন সব প্রক্রিয়াকে বুঝাবে যার মাধ্যমে কোনো অডিও ভিডিও এবং অডিও ভিজ্যুয়াল তথ্য উপকরণ (Content) যথা অনুষ্ঠান, সংবাদ বিজ্ঞাপন ইত্যাদি টেরিস্টোরিল প্রেরক যন্ত্র, তার (ক্যাবল), ভূ-উপগ্রহ অথবা অন্য কোনো উপায়ে তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বসাধারণের কাছে একই সাথে ছড়িয়ে দেয়া হয় যা রেডিও টেলিভিশন অথবা একই ধরনের অন্য  কোনো ইলেক্ট্রনিক গ্রাহক যন্ত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করা যায়। টেলিস্টোরিয়েল, ভূ-উপগ্রহ, কেবল নেটওয়ার্ক, অনলাইন ইত্যাদি যে মাধ্যমেই সম্প্রচারিত হোক না কেন, টেলিভিশন ও বেতারের অনুষ্ঠান, সংবাদ ও বিজ্ঞাপনের কনটেন্টের ক্ষেত্রে সম্প্রচার নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
এখানে লক্ষ্যণীয় যে, নীতিমালায় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্রের এমন কোনো বিষয় বাদ দেয়া হয়নি যা নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত থাকবে এবং মানুষ অবাধ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ পাবে। এই অনুচ্ছেদের ২ উপ-অনুচ্ছেদে ১৩টি ধারায় লক্ষ্য উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। ৩ উপ-অনুচ্ছেদের ৪টি ধারায় এর কৌশল বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২নং অনুচ্ছেদে সম্প্রচার লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা, তৃতীয় অনুচ্ছেদে সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচার, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতি, উন্নয়নমূলক কর্মকা-, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, চতুর্থ অধ্যায়ে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণের কথা বলতে গিয়ে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এতে পণ্য, পণ্যের মান ও ভোক্তা অধিকার নিয়ে ৯টি উপ-অনুচ্ছেদ রয়েছে এবং এর সবগুলোই নিয়ন্ত্রণমূলক। পঞ্চম অধ্যায়ে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবেচ্য বিষয় বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে :
১) জাতীয় আদর্শ বা উদ্দেশ্যের প্রতি কোনো প্রকার ব্যাঙ্গ বা বিদ্রƒপ, বাংলাদেশের জনগণের অবমাননা অথবা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অখ-তা বা সংহতি ক্ষুণœ হতে পারে এমন দৃশ্য বা বক্তব্য পরিহার করতে হবে।
২) বিচ্ছিন্নতা বা অসন্তোষ সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতি বা শ্রেণী বিদ্বেষ প্রচার, কোনো ধর্মের প্রতি বিদ্রƒপ, অবমাননা বা আক্রমণ, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়, বর্ণ বা মতাবলম্বীদের মধ্যে বিদ্বেষ বা বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে এমন দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩) কোনো ব্যক্তিগত বা গোপনীয় বা মর্যাদাহানিকর তথ্য প্রচার করা যাবে না।
৪) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে এমন ধরনের সামরিক, বেসামরিক বা সরকারি তথ্য প্রচার করা যাবে না।
৫) কোনো অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপনে সশস্ত্র বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো সংস্থা বা অপরাধ  রোধ, অনুসন্ধান ও তদন্ত এবং অপরাধীকে দ- প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রতি কটাক্ষ বা বিদ্রƒপ কিংবা তাদের পেশাগত ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে পারে এমন কোনো দৃশ্য প্রদর্শন কিংবা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।
কয়েকদিন আগে লৌহজং-এর অদূরে পদ্মা নদীতে পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় কত লোক মারা গেছেন আমরা তা বলতে পারবো না। পদ্মার পাড়ে স্বজনদের আহাজারী এখনো থামেনি। অত্যাধুনিক উদ্ধার যন্ত্র ব্যবহার করেও লঞ্চটির সন্ধান মিলেনি। প্রতিবছর এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু দুর্ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। অপরাধীরা শাস্তিও পাচ্ছে না। এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিবছর শত শত লোকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। দেশে নৌযান নির্মাণ, মেরামত সংরক্ষণ, পরিচালনা, ফিটনেস, নৌপথের নাব্যতা রক্ষা প্রভৃতির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কোনও নীতিমালা নেই।
বিষাক্ত প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করে ফলমূল, মাছ-গোশত ও খাবার সামগ্রী সংরক্ষণের ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত বিষ খেতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন রোগ-শোক, জ্বরা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে আমাদের আয়ু কমে যাচ্ছে এবং আমাদের ভবিষ্যতে বংশধররা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকলাংগ হয়ে পড়ছে। এই সরকারের আমলে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লোভ-লালসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের গণদাবি সত্ত্বেও সরকার এ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। একইভাবে বাজারে ভেজাল ওষুধ দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। ভেজাল ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে। দূষিত পানি বোতলজাত করে বিক্রি করা হচ্ছে। এখানেও নীতিমালা অনুপস্থিত। ভেজাল প্যারাসিটমল খেয়ে ২০০০ শিশু মারা যাবার পর বিষয়টি তদন্ত করতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১৫ বছর সময় নিয়েছে এবং তার ভিত্তিতে আদালত অপরাধীদের কয়েকজনকে শাস্তি দিলেও অভিযোগকারী ড্রাগ প্রশাসনের বেচারা সহকারী পরিচালককে প্রমাণ পেশ করতে ব্যর্থ হওয়ায় জেলে যেতে হয়েছে। আমরা বিস্মিত হচ্ছি দু’হাজার শিশুর মৃত্যু কি এর প্রমাণ নয়? নদী দূষণ জলজ প্রাণীর জন্য যেমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে, তেমনি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েও দেখা দিয়েছে। এই নদী দূষণ বন্ধের জন্য সরকারের কোন নীতিমালা নেই ।
সড়ক ও রেল দুর্ঘটনা দেশে মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে। এমন দিন নেই যে দিন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে না। এমন সপ্তাহ নেই যে সপ্তাহে রেল ব্যবস্থা কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে না। এতে শত শত লোক মারা যাচ্ছে এবং হাজার হাজার লোক আহত হচ্ছে। নিরাপদ সড়ক ও রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের সরকার কোনও নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। জনগণের প্রতি সরকারের যে দায় আছে তা লক্ষ্য করা যায় না।
প্রশ্ন উঠছে উল্লেখিত বিষয়গুলো কি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়? আর যদি হয়ে থাকে তাহলে এসব ব্যাপারে নির্লিপ্ত থেকে সরকার জনস্বার্থ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের নামে গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরার লক্ষ্যে সম্প্রচার নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকে এত অগ্রাধিকার দিলেন কেন? এগুলো দেখার জন্য তো প্রেসকাউন্সিল আছে, সাংবাদিকতার নীতিমালাও আছে! আর যদি জনস্বার্থ, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ মূল্যবোধ ও রাষ্ট্রীয় নীতির কথা বলা হয় তা হলে তো অনেক কিছুই বলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ কি? অবশ্যই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, মানুষের জীবন, সম্মান-সম্পত্তি ও জীবিকার নিরাপত্তা। এর কোনটা সরকার দিতে পারছেন? ঠা-া মাথায় আমাদের গণতন্ত্র গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং নাগরিক অধিকার সমূহকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে যেমন ধ্বংস করা হয়েছে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে। নির্বাচনকে প্রহসনের বস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার পদদলিত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাবার জন্য প্রয়োজনীয় ১৫৪টি সংসদীয় আসন বিনা ভোটে ভাগাভাগি করে মানুষের ভোটাধিকার হরণ নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার অন্তর্ভুক্ত নয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, নীতিমালায় বার বার গণমাধ্যমের জবাবদিহিতার বিষয় এসেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেচেন, কে কার জবাবদিহিতা চাচ্ছে? কথাটা অনেকটা নৈরাজ্যের মত শুনালেও একথা সত্য যে এসরকার তার আচার আচরণ দিয়ে ইতোমধ্যে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে জনগণের প্রতি তাদের নিজেদের দায় বা জবাবদিহিতা নেই, তারা যখন সংবাদ মাধ্যমকে জবাবদিহিতার কথা বলেন তখন বিষয়টি হাস্যাস্পদ হয়ে পড়ে। আসল কথা হচ্ছে এই অবৈধ সরকার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তথ্য মন্ত্রীর ন্যায় বামপন্থীরা এতই গণবিচ্ছিন্ন যে অতীতের নির্বাচনগুলোতে কখনো জামানত রক্ষাও করতে পারেননি। গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে বিনা ভোটে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসে জনমত স্তব্ধ করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কারভাবে দেখা যায় যে সরকার ও সরকারি বাহিনীর স্বার্থ ছাড়া বাংলাদেশে আর কিছু নেই। বলা বাহুল্য সরকার ও সরকারি দল তাদের নিজেদের স্বার্থে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছেন। তারা ইচ্ছামত বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর যেমন নির্যাতন চালাচ্ছেন তেমনি পয়সার বিনিময়ে হত্যা, গুম ও খুনের কাজে অংশ নিচ্ছেন। ঠা-া মাথায় গুলী করে মানুষ হত্যা করছেন। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনে কিছু সংখ্যক র‌্যাব সদস্যের অংশগ্রহণে মানুষের সামনে তাদের চেহারা উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। এ ধরনের মানবতাবিরোধী কাজগুলো যদি গোপন রাখা যায় তাহলে সরকারেরই লাভ।
আরেকটা কথা, সম্প্রচার নীতির অভাবে এতদিন পর্যন্ত দেশের কি ক্ষতি হচ্ছিল? বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের স্বার্থে আঘাত করায় সাগর রুনীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এখন গণমাধ্যমকে প্রাণ দিতে হচ্ছে বলে মনে হয়।
নীমিতালায় সরকার অনেক কথা, বলেছেন এবং বাকস্বাধীনতা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ও কলমের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে অনেক প্রয়োজন ও যুক্তির কথা বলেছেন। একজন সাধারণ মানুষও এর কারণ উপলব্ধি করতে পারেন। সাংবাদিক সমাজ ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো এই নীতিমালার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। আমি দু’জন বিখ্যাত ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনাটি শেষ করতে  চাই। একজন হচ্ছেন ড. রিজাল, ফিলিপাইনের জাতীয় বীর। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী ফিলিপাইনের স্বৈরাচারী সরকারের অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন, “ÒWhy Liberty if the slaves” of today become the tyrants of tomorrow? আরেকজন হচ্ছেন বৃটেনের হাউজ অব কমন্স-এর সদস্য  William Pitt. তিনি ১৭৮৩ সালের তৎকালীন বৃটিশ সরকারের বাক-স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতায় কমন্স সভায় এক বক্তৃতায় বলেছিলেন,  Necessity is the Plea for every infringement of human freedom. It is the argument of tyrants, it is the creed of slaves এখন পাঠকরাই ভাবুন এ দু’টি মন্তব্যের সাথে আমাদের সরকারের আচরণের কতটুকু মিল আছে।
মো. নূরুল আমিন 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads