শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৪

বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভারতীয়দের উপদেশ


২০০৬ সালের মার্চে চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর এটাই ছিল তার একমাত্র ভারত সফর। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু নয়, দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি সার্কের চেয়ারপারসন হিসেবে। সাংবাদিক হিসেবে আমারও সুযোগ হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার। আমি তখন একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধান। সে হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে ভারতীয়দের কাছে গুরুত্ব যথেষ্টই পেয়েছিলাম। থেকেছি দিল্লির একমাত্র সেভেন স্টার বা সাততারকা হোটেল মৌর্য শেরাটনে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী অবস্থান করেছেন (উল্লেখ্য, এর মাত্র কিছুদিন আগে ভারত সফরে আগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ হোটেলের যে সুইটে ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়াকেও সে সুইটেই থাকতে দেয়া হয়েছিল)। ওই তিনদিনে বহুকিছু দেখেছিলাম খুব কাছে থেকে। সফরের তৃতীয়দিনে অন্য একটি পাঁচতারকা হোটেল অশোকায় বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধান অতিথি। ওই সম্মেলনে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যখন বাংলাদেশে আরো বেশি রফতানি ও বিনিয়োগ করার সুযোগ-সুবিধার দাবি ওঠাচ্ছিলেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা তখন বিশাল বাণিজ্য ঘাটতির তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রথমে বাংলাদেশের জন্য ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছিলেন। প্রসঙ্গটি নিয়ে সম্মেলনে গুঞ্জন তো উঠেছিলই, কিছুটা উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী কমলনাথ। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ছয়ফুর রহমানকে নিজের ‘বিশিষ্ট বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, তার এই ‘বন্ধু’ নাকি কখনো তাকে জ্ানাননি যে, বাংলাদেশ এত বিপুল ঘাটতির মধ্যে রয়েছে! মন্ত্রী কমলনাথের ভাবখানা এমন ছিল যেন ছয়ফুর রহমান জানালেই তিনি বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার ব্যবস্থা নিতেন! বলাবাহুল্য, কমলনাথের ওই হাস্যকর বক্তব্য মাঠে মারা গিয়েছিল। তার কথা এমনকি ভারতীয় সাংবাদিকরাও বিশ্বাস করেননি।
প্রায় সাড়ে আট বছর আগের ঘটনাটা স্মরণ করিয়ে দেয়ার বিশেষ কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারত সব সময়ই অন্য সব দেশের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। এমনকি বাংলাদেশের চাইতেও। কিন্তু পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, এই দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সকল বিষয়ে বাংলাদেশ কেবল পিছিয়েই পড়েছে। অতীতের মতো বিগত পাঁচ বছর আট মাসে ভারত শুধু নিয়েছেই। এখনো সে নেয়ার ও নিজের ইচ্ছাপূরণ করার ব্যাপারেই ব্যস্ত রয়েছে দেশটি। শেখ হাসিনার সরকারও বাণিজ্যসহ প্রতিটি বিষয়ে কেবল উজাড় করেই দিয়ে চলেছে। সরকার একই সঙ্গে বাংলাদেশকে ভারতের ইচ্ছাধীন রাষ্ট্রেও পরিণত করে ফেলেছে। এ প্রসঙ্গে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত ‘ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা কাঠামোগত চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়াই যথেষ্ট হতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ‘ঐতিহাসিক’ সে সফরের সময় স্বাক্ষরিত এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশকে সর্বাত্মকভাবেই ভারতের ইচ্ছাধীন করা হয়েছে। কোনো মেয়াদের উল্লেখ না থাকায় বাংলাদেশ কখনো এই চুক্তি বাতিল বা অকার্যকর করার সুযোগ পাবে না।  চুক্তিটির মাধ্যমে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক সকল দিক থেকেই বাংলাদেশকে গোলামির শেকলে বেঁধে ফেলেছে ভারত। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ভারতের অভ্যন্তরীণ সকল বিষয়েও বাংলাদেশকে ভারতের পক্ষে ভ’মিকা পালন করতে হবে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে চলমান স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধ্বংস করে দেয়ার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে এমনকি সামরিকভাবেও জড়িয়ে পড়তে হতে পাবে।
বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অতি সাম্প্রতিক সফর এবং সফরকালীন কিছু বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। যথেষ্ট আটঘাঁট বেঁধেই এসেছিলেন তারা। প্রতিনিধি দলে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল মোদী সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব) ভি কে সিং-এর অন্তর্ভুক্তি। কারণ মিস্টার ভি কে সিং মাত্র বছর দুই আগে ভারতের সেনাপ্রধান ছিলেন। অবসর নেয়ার পরপর বিজেপিতে যোগ দেয়ায় এবং তারপর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় এই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে যে, ভারতের সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে আসলেও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা তৎপর রয়েছে। এটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ, যা নিয়ে পরবর্তীকালে আলোচনা করা যাবে। এখানে জানানো দরকার, গত ২৪ আগস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে দু’ দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও আইবিসিসিআই আয়োজিত বাণিজ্য উন্নয়ন সম্মেলনেও ভারতীয়রা যথারীতি আশ্বাসের আড়ালে নিজেদের দিকটিকেই প্রাধান্যে এনেছেন। উদাহরণ দেয়ার জন্য জেনারেল (অব) ভি কে সিং-এর কিছু কথার উদ্ধৃতি দেয়া যায়। বাণিজ্যসহ দু’ দেশের অর্থনৈতিক সুসম্পর্কের ব্যাপারে উপদেশ খয়রাত করলেও তিনি কিন্তু বাংলাদেশের ঘাটতির বিষযটিকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে গেছেন। তিনি বরং নজর ফেলেছেন বাংলাদেশের গার্মেন্টের দিকে। বলেছেন, এই খাতটিতে ভারত ও বাংলাদেশের উচিত যৌথভাবে বিনিয়োগ করা। সাবেক এ সেনাপ্রধানের উদ্দেশ্যের মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো অস্পষ্টতা নেই। বাংলাদেশ যেহেতু আন্তর্জাতিক গার্মেন্ট বাজারে প্রায় শীর্ষ অবস্থানে চলে গেছে ভারতের সেহেতু ‘ভাগ’ বসানো দরকার! ডভ কে সিং অবশ্য বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন, তারা যেন মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগ করেন! হাইকমিশনার পংকজ শরণসহ অন্য ভারতীয়দের বক্তব্যেও লক্ষ্যণীয় ছিল ভারতের স্বার্থ। তারা মেঘালয় থেকে নগদ মূল্যেও বিনিময়ে বিদ্যুৎ আমদানি করার পরামর্শ দিয়েছেন কিন্তু বলেননি, মূল ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ কিভাবে ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারবে।
বলা দরকার, এবারই প্রথম নয়। এর আগেও সময়ে সময়ে আশ্বাস কম দেননি ভারতীয় নেতারা কিন্তু প্রতি বছর ঘাটতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বৃহৎ এ প্রতিবেশি দেশটি থেকে আমদানি লাফিয়ে বাড়লেও নানা ধরনের শুল্ক-অশুল্ক ও আধাশুল্ক বাধার কারণে বাংলাদেশের রফতানি বাড়তে পারছে না। প্রাসঙ্গিক উদাহরণ হিসেবে ভারতীয়দের বছর দুই আগের একটি সফরের কথা স্মরণ করা যায়। সেবার ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং রাজ্য সভার সদস্য মণি শংকর আয়ার। বাংলাদেশের  ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে একজন দার্শনিকের স্টাইলে মিস্টার আয়ার বলেছিলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘অর্থনৈতিক সীমারেখা’ রাখার কোনো প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না। তিনি দাবি করেছেন, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা নাকি ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে তেমন বড় কোনো বাধা বা বিষয় নয়! মিস্টার আয়ারের মতে, প্রধান বাধা নাকি ভারত সম্পর্কে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ‘মাইন্ডসেট’! এই ‘মাইন্ডসেট’ পরিবর্তন করার জন্য নসিহত করেছিলেন তিনি। মণি শংকর আয়ার তাই বলে মূল ভারতে বাণিজ্য বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো আশ্বাস দেননি, যেমনটি এবার দেননি জেনারেল (অব.) ভি কে সিং। মিস্টার আয়ারও ভি কে সিং-এর মতোই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিনিয়োগ করতে বলেছিলেন। সেখানে নাকি বাংলাদেশের জন্য ‘প্রচুর সম্ভাবনা’ রয়েছে! শুধু তা-ই নয়, দেশে ফেরার আগেও চমক লাগিয়ে গিয়েছিলেন মণি শংকর আয়ার। বলেছিলেন, নিজেদের স্বার্থেই চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন করতে চায় ভারত। কারণ, বাংলাদেশ নাকি বন্দরের যে ক্ষমতা তার ২৫ শতাংশও ব্যবহার করতে পারছে না। জেনারেল (অব.) ভি কে সিংও কিন্তু ‘স্থলপথ ও নৌপথসহ ‘সব ধরনের’ যোগাযোগ ব্যবস্থা ‘সহজ’ করার নসিহত করে গেছেন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মাথা বাংলাদেশের হলেও ব্যথায় মরে যাচ্ছেন মণি শংকর আয়ার থেকে ভি কে সিং পর্যন্ত ভারতীয়দের সকলেই!
অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা কিন্তু তাদের দাবি ও বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা বলেছেন, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা ছাড়াও কাস্টমস ও ব্যাংকিং সমস্যা এবং মান পরীক্ষার নামে সীমান্তে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে পণ্য আটকে রাখার ভোগান্তিসহ ভারতীয় আইনের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণেই ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়ছে না। দু’ দেশের বাণিজ্য ঘাটতিও দূর হচ্ছে না। মাঝখান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তারা তাই ভারতে রফতানির ব্যাপারে অগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এর ফলেও বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এদিকে দেশপ্রেমিকরা বলেছেন, বাংলাদেশ বন্দরের ক্ষমতার কত শতাংশ ব্যবহার করা হবে সেটা বাংলাদেশের নিজের ব্যাপার। তাছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বলেও একটা কথা আছে। ভারত একবার বন্দর ব্যবহার শুরু করলে এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের নিজের প্রয়োজন দেখা দিলে তখন কিছুই করার থাকবে না বাংলাদেশের। কারণ, ভারত তো অবশ্যই ছাড় দেবে না।
এভাবে যে কোনো পর্যালোচনায় দেখা যাবে, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ব্যাপারে  ভারতের নীতি, আশ্বাস ও কার্যক্রম আসলে প্রতারণাপূর্ণ। কারণ, প্রকাশ্যে আমদানি বাড়ানোর এবং ঘাটতি কমিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও ভারত সুকৌশলে এমন কিছু শুল্ক-অশুল্ক ও আধাশুল্ক বাধার সৃষ্টি করে চলেছে যার ফলে রফতানির সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়ার পরও বাংলাদেশ থেকে পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে ভারত থেকে নানা ধরনের অসংখ্য পণ্য আসছে বাংলাদেশে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো জানিয়েছে, ভারত থেকে যেখানে ২০৮৬ ধরনের পণ্য আসছে বাংলাদেশ সেখানে মাত্র ১৬৮ ধরনের বেশি পণ্য রফতানি করতে পারছে না। নিজেদের শিল্প সংরক্ষণের অজুহাত দেখিয়ে ভারত বাংলাদেশের ৭৫০ ধরনের পণ্য নিষিদ্ধ করেছে। ভারত সেই সাথে এমন ৪৫০টি পণ্যের জন্য ‘ছাড়’ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যেগুলোর ৯৮ শতাংশই বাংলাদেশ উৎপাদন করে না। বৈধ বাণিজ্যের পাশাপাশি চোরাচালানের পথেও বিপুল পরিমাণ পণ্য ঢুকে পড়ায় ঘাটতি শুধু বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ এক পরিসংখ্যানেও দেখা গেছে, ভারতের সঙ্গে শুধু বৈধ বাণিজ্যেই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। এভাবে বাংলাদেশকে বিপুল ঘাটতির মধ্যে থাকতে হচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকেই। প্রসঙ্গক্রমে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর ঢাকা সফরের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। ১৯৯৯ সালে ঢাকা-কোলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকায় এসে তিনি ২৫ ক্যাটাগরির বাংলাদেশী পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সে ঘোষণার বাস্তবায়ন আজও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সফরকালেও ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা শোনানো হয়েছিল। কিন্তু তারও বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের শত শত কোটি টাকার তৈরি পোশাকের বিল আটকে রেখেছে ভারতীয়রা।
এভাবেই দেশের সার্বভৌমত্বসহ বিভিন্ন প্রশ্নে দেশপ্রেমিক অবস্থান নেয়ার পরিবর্তে ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়িয়ে দেয়ার নামে দেশকে উল্টো ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ও পানি আগ্রাসন বন্ধ করার মতো বিভিন্ন প্রশ্নে দর কষাকষির যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকার কিন্তু এসব বিষয়ে উল্লেখ করারও কোনো চেষ্টা করেনি, এখনো করছে না। সরকার ব্যস্ত রয়েছে একটি মাত্র কাজে- সেটা ভারতের ইচ্ছা পূরণ। এটাও আবার এমনভাবেই করা হচ্ছে যেন সবই আগে থেকে সরকারের এজেন্ডায় ছিল! বলার অপেক্ষা রাখে না, লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসের আড়াল নিয়ে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল মইন উ’দের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় এসেছে বলেই আওয়ামী লীগ সরকার সর্বান্তকরণে ভারতের স্বার্থে পদক্ষেপ নিতে উঠে-পড়ে লেগে আছে। আপত্তি উঠতো না যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয়দের নীতি-কৌশল ও মনোভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবার কোনো সম্ভাবনা দেখা যেতো। কিন্তু তেমন কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। ভারতের মতো সম্প্রসারণবাদী দেশের দিক থেকে এমনটাই অবশ্য স্বাভাবিক। অন্যদিকে আফসোসের বিষয় হলো, ভারতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলই যেখানে বাংলাদেশকে শোষণ করার ও ইচ্ছাধীন রাখার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ থাকে, আওয়ামী লীগ সরকার সেখানে জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপস তো করছেই, লজ্জার মাথা খেয়ে নিজেদের মাথাও নত করে বসেছে। এজন্যই ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন অবস্থা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে কি না, নাকি বাংলাদেশের উচিত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে নালিশ করা এবং প্রতিবিধানের উদ্যোগ নেয়া সে কথা ভাবতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। নাহলে জাতীয় অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে এবং প্রতিটি পণ্যের জন্যই বাংলাদেশকে ভারতের অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে- যা কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য কাম্য হতে পারে না। 
আহমদ আশিকুল হামিদ 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads