রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৪

সংকট সমাধানের পথ দ্রুত নির্বাচন


 বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল চেতনা ও মূলমন্ত্র ছিল চারটি। গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার। এগুলোরই ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব নগর সরকারের ঘোষিত সরকারের ঘোষিত  ১০ এপ্রিল ’৭১ এর মূলমন্ত্র ও চেতনা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বাম ঘরানার লোকেরা তাদের প্রভুদের খুশি করতে গিয়ে সে চেতনাগুলো আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে এবং কতগুলো নতুন চেতনা আবিষ্কার করা হল। আর এগুলো কে ঢাকঢোল পিটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে গ্রহণযোগ্য করতে সচেষ্ট হলেন। যুদ্ধকালীন সময় কখনো এসব ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের কথা কখন উচ্চারিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ৯ নন্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল তার লেখা অরক্ষিত স্বাধীনতা পরাধীনতা বইয়ের মধ্যে বলেছেন, যুদ্ধের ময়দানে অনেক মুসলমানকে নামায পড়তে দেখেছি, অনেককে দরুদ শরীফ পড়তে দেখেছি। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর দেখলাম ভিন্ন চিত্র, অনেক মুক্তিযোদ্ধারা ইসলামের কথা শুনলে গা জ্বলে উঠে। বর্তমানেও সমাজতন্ত্র পৃথিবীর বুক থেকে বিলীন হওয়ার পথে। আজ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যারা ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আর যারা এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি তারা স্বাধীনতার শত্রু। তাদের কথা যদি সত্য হয় তাহলে বলতে হয়, দেশের ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। দেশের প্রায় ৯০% লোক নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। এগুলো সব কি স্বাধীনতা বিরোধী। এর বিতর্কহীন জবাব, না। অথচ আমাদের সরকারি দলের নেতারা তেমনটি উপলব্ধি না রেখে একলা চলো নীতিতে দেশ পরিচালনায় মরিয়া হয়ে উঠেছে।তাদের ভাবধারা দেখলে মনে হয়, বাংলাদেশ পরিচালনায় আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কারো অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। দেশে এখন বিভাজন প্রক্রিয়া চলমান নানাভাবে বিদ্যমান। আজ  যেখানে যাবেন সেখানেই চরম বিভাজন। আজ প্রশাসনে বিভাজন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীতে বিভাজন, শিক্ষক সমাজে বিভাজন, আদালত পাড়ায় বিভাজন, শিক্ষক সমাজে বিভাজন, ছাত্র সমাজে বিভাজন। এসব বিভাজন মতের শুধু  বিভাজন হলে দোষের কিছু নয়। কিন্তু এ বিভাজন বিরোধী পক্ষকে সহ্য না করতে পারার বিভাজন। পদ পদবি ও  পদোন্নতি পাওয়ার অধিকার সরকার  সমর্থকদের। সরকার বিরোধীদের অধিকার শুধু ওএসডি হওয়ার, নয়তো বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়ার। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগের রাত থেকে দেশ জুড়ে ৩১৫টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৩ হাজার ব্যক্তিকে নামে বেনামে আসামী করা হয়েছে। এই অভিযানে জানুয়ারীর ১০দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে ২২ হাজারের বেশী লোককে। নির্বাচনের পর কথিত বন্দুক যুদ্ধে ১৩ জন নিহত হয়েছে। সংবাদপত্রে কথিত তথ্য অনুযায়ী, ১৩ জনের মধ্যে ৯জন যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় বন্দুক যুদ্ধে মারা গেছে। আর ৫ জনের লাশ গুলীবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে ১৮৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অপর দিকে প্রথম আলো ১১ফেব্রুয়ারী এর শীর্ষ সংবাদে জানা যায়, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ হচ্ছে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম নিখোঁজের ঘটনা বাড়ছে। নতুন বছরের শুরুতে ৪১ দিনে ৪৪জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও গুম হত্যার শিকার হয়েছেন এই হিসাব মানবাধিকার সংগঠন আইন সালিশ কেন্দ্রের। ২০০৮ সালে দলীয় ইশতিহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে আওয়ামী লীগের এ ব্যাপারে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। ২০১৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৫০৭ জন নিহত ও সাড়ে ২২ হাজার আহত হয়। এখন প্রতিদিন একটি করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- চলছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো আশঙ্কা করছে, সরকার হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আগামী মাসগুলো অবস্থার আরো অবনতি ঘটবে। এ দেশের মানুষের স্মৃতিতে সমুজ্জল ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচন আর ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের এক বীভৎস চিত্র এ দেশের মানুষের কাছে উদ্ভাসিত হতে দেখা গেছে। কিভাবে ১৯৭৩ সালে জাসদের ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে ব্যালট বাক্সগুলো  হেলিকপ্টারে দাউদকান্দি থেকে ঢাকায় এনে হারিয়ে দেয়া হল। কিভাবে ডাঃ আজহার উদ্দিনকে নমিনেশন পর্যন্ত সাবমিট করতে দেয়া হল না। কিভাবে আতাউর রহমান খান ভাগ্য জোরে নির্বাচিত হতে পারলেন। আওয়ামী লীগ কিভাবে ৩১৫টি আসনের মধ্যে ৩০৮টি আসন  দখল করল তা দেশের মানুষের অজানা নয়। ঠিক তেমনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে  গেছে। কিভাবে ১৪৭ আসনে  ভোট হল তা বিস্ময়ে এ দেশের মানুষ লক্ষ্য করল। ভোট কেন্দ্রে কুকুর ছাগলের বিচরণ, ভোটারবিহীন নির্বাচন দেশবাসী মিডিয়ার বদৌলতে দেখতে পেয়েছে। হতবাক কা-। এরা নাকি দেশের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এক সময় আওয়ামী লীগের দাবি ছিল ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হল। দু’টি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল। আওয়ামী লীগ নেত্রী বুঝে গেলেন তার সৃষ্ট গডফাদাররা ২০০১ সালে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে পারেনি। মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিন যারা ক্ষমতাসীন হলেন তারা শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল। তারা এক বিশেষ এক যাদুমন্ত্রে তিনচার ভাগ সংসদ সদস্য দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলেন। তাদের এবারও ওই রকম যাদুমন্ত্রের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরকে কেন্দ্র করে এরকম একটা প্রচারণা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর পিছনে বাস্তব কিছু কারণ রয়েছে। বলা হচ্ছে গ্রামীন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস কেন্দ্রীক ঘটনা প্রবাহে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যে টানা পোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনও চলছেই। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারী ্িক্লনটন বহু বার কঠোর কথা শুনিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে মার্কিন সরকারের পদ্ধতিগত আপত্তি ও নতুন খবর নয়। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রাষ্ট্রদুত স্টিফেন এর কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে হিলারী ক্লিনটন  প্রধানমন্ত্রীকে তিক্ত অনেক কিছু বলেছিলেন। ওই টেলিফোনে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, কিভাবে ভারতের উদ্যোগে পূর্ব নির্ধারিত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনা হয়েছে এবং ভারতের অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে ওই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সমর্থন জানিয়েছিল। এভাবে ওবামা সরকারের সাথে আওয়ামী সরকারের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ জন্য মনে করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক হাত দেখিয়ে দেয়ার জন্য রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কৌশল অবলম্বন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে মস্কোপন্থীরা ঘিরে ফেলেছে। মস্কোপন্থীদের মধ্যে মতিয়া চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, আব্দুল মান্নান খানের নাম উল্লেখ করা যায়। এরা এক সময় মস্কোপন্থী রাজনীতি করেছেন। নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং আব্দুল মান্নান খান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কষে তাদের ইচ্ছাধীন বানিয়ে ফেলেছে। আপত্তি ও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ কিছু কারণে। রাশিয়া থেকে একশ’ কোটি মার্কিন ডলারের সমরাস্ত্র এ রকম একটি প্রধান কারণ। এখন বাংলাদেশের বন্ধু বলে কেউ নেই। ভারত রাশিয়াকে বন্ধু বলে ভাবা হলে মারাত্মক ভুল হবে। ভারতের পণ্যে বাংলাদেশের বাজার। রাশিয়া বাংলাদেশে ১০০ কোটি ডলার অস্ত্র বিক্রি করার জন্য বাংলাদেশের বন্ধু হয়েছে। এদুটি রাষ্ট্রের কোনটার সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির জীবন মানের সম্পর্ক নেই। ভারত বাংলাদেশে শুধু রপ্তানি করে। আমদানি করে সামান্য। রাশিয়ার অবস্থাও তাই। তবুও সরকারের ভরসা এই দুই রাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন,কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন, এরা আমাদের অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি। গত ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে বাকশালের মতো স্বৈরতান্ত্রিক একদলীয় শাসন কায়েমের পর সারাবিশ্ব স্তম্ভিত। এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য স্ব”্ছবোধ বলে মনে করেনি সারাবিশ্বের আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। মার্কিন সিনেটে দুই দফায় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের প্রস্তাব একই, বাংলাদেশের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন জনপ্রতিনিধিত্বমুলক নয়। ফলে তা অগ্রহণযোগ্য, এখন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। প্রাথমিক সতর্ক সঙ্কেত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে দিয়েছে। শুধু মধ্য প্রাচ্য নয়, জনশক্তি রপ্তানির বাজার হয়ে উঠতে পারত মুসলিম প্রধান মালয়েশিয়া। কিন্তু সরকারের একচোখা পররাষ্ট্রনীতির কারণে সে বাজার ভন্ডুল হওয়ার পথে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী। তারাও বলছে ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য। এখানে জনগণ কার্যত ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। নির্বাচনের আগে  আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এটি কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়। অবশ্যই দ্রুত গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন দেশবাসীর দাবি। একইভাবে  ইউরোপীয় ইউনিয়নও বাংলাদেশে দ্রুত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দাবি করেছে। আর সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে। কিন্তু পৃথিবীর কেউই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে গঠিত আদালতের কার্যক্রম নিয়ে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। তবু ওই একই ডামাডোল চলছে।
এই যখন অবস্থা তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ ফেব্রুয়ারি সংসদে বলেন, ‘অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান দশম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন।’ আমরা সংসদ ও সরকারের পার্থক্য রাখি না, বুঝতেও চাই না। কিন্তু গণতান্ত্রিক বিশ্ব তো পার্থক্য বজায় রাখে। এটাই ওদের গৌরব। দীর্ঘকাল ধরে দেশে দেশে চোখে পড়ে অগণতান্ত্রিক বা জবরদখলকারী সরকারের তোয়াজকারী আমলারা ‘অভিনন্দন’ জোগাড় করতে উতলা হন।
১৬ জানুয়ারি মিসেস মেইন অকপটে বলেন, আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি যে ২০০৬ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ের বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কোনো উন্নতি ঘটেনি। কিন্তু তিনি বা তাদের কেউ সেদিনের বিতর্কে ভেঙে বলেননি, ‘৯০-এ সামরিক স্বৈরাচারের পতনের পরে কোনো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ার চেষ্টা করা হয়নি। প্রায় সব কটি প্রতিষ্ঠান সুনামি কি সিডরের শিকার।
এই পরিবর্তনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধোত্তর সরকারের নীতি-আদর্শগুলোকে ফিরিয়ে আনা হবে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা আরো এক ধাপ এগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বাংলাদেশের বন্ধু ছিলেন তাদের মৈত্রীবলয় আবার সৃষ্টির ইঙ্গিতও দেন। এ বিষয়টি এমন সময় করা হয়, যখন বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন জানাতে অস্বীকৃতি জানায়। এটাকে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের বিচ্যুতি হিসেবে তারা চিহ্নিত করে। এ সময়টাতে সরকারের সমর্থনে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসে ভারত। একতরফা নির্বাচনের পর ভারতের পাশাপাশি রাশিয়াও নতুন সরকারের পেছনে দাঁড়ায়। নির্বাচনের পর বাকি দেশগুলোর অভিনন্দন জানানো ও অন্যান্য ক্ষেত্রে রুটিন বক্তব্যের বাইরে কিছু পাওয়া যায়নি। বেইজিং একতরফা নির্বাচনের পর সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে এমনটিও মনে হয়নি।এ ধরনের এক অবস্থায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিল তাদের নিয়ে পথ চলার ইঙ্গিত দেন। এর পথ ধরে ভিন্ন মত দলন, একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান, বিচারবহির্ভূত হত্যা, একনায়কতান্ত্রিক দমনমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা ও ব্যাপকভিত্তিক দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়ার কৌশল নেয় সরকার। এ সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ খবর।
অন্যদিকে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের টানাপড়নের বিষয়টি স্পষ্ট হয় দু’টি খবরে। এর একটিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একতরফা নির্বাচনের ব্যাপারে যে অবস্থান আগে নিয়েছিল তাতে কোনো পরিবর্তন নেই। বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় আমেরিকা। কংগ্রেসের নতুন দফা শুনানিতে একই ধরনের বক্তব্য আসে। এতে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে বক্তব্য রাখেন তার বিপরীত বক্তব্য আসে। বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা দ্রুত পাচ্ছে না এমন ইঙ্গিতের পাশাপাশি এ বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম ইউনিয়নের সাথে একসাথে কাজ করার বিষয়টিও এসেছে। এর অর্থ হলো, ইউরোপে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়ার বিষয়টি এই ইস্যুর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। শুনানিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং বিরোধী মত দলনের মতো সরকারের জন্য স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতেও বক্তব্য এসেছে।
এইচ এম আব্দুর রহীম 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads