বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪

ন্যান্সির আত্মহনন চেষ্টা এবং কতিপয় ননসেন্স টক্


আল্লাহর লাখ শোকর ন্যান্সি এখন শঙ্কামুক্ত। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। সম্প্রতি কিছু অপরিণামদর্শী ব্যক্তি এবং ব্যক্তিবর্গের বৈরি মনোভঙ্গি ন্যান্সিকে হতাশায় নিমজ্জিত করে ফেলছিল। যার প্রেক্ষিতে দেশবরেণ্য এই শিল্পী আত্মহননে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। এমন দুঃসংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। বেশ ক’দিন থেকে প্রচারিতও হচ্ছিল বিষয়টি। গত পরশু ন্যান্সি এক সাক্ষাৎকারে এটি স্বিকারও করেছেন, দাবিও করেছেন। এই অঘটনের সাথে কেউ কেউ আবার তার পারিবারিক কলহের গল্প উপস্থাপনের চেষ্টাও করেছেন। ন্যান্সি এসব গল্পকে ¯্রফে গুজব বলে উল্লেখ করেছেন সাক্ষাৎকারে। ন্যান্সি নিয়ে গুজব চলছিল গত আট-ন’ মাস থেকেই। তিনি সুকণ্ঠি, আচরণ-বিচরণেও শালীন-সুবোধ। যা তাকে একটি আলাদা উপত্যকায় স্থিত করেছিল। পরিবেশের এই ভিন্নতা তাকে অনেকের শ্যেনদৃষ্টিতে ফেলে। শত্রুতা এবং হিংসা তাকে দ্বগ্ধ করছিল হয়তো। তাছাড়া শত্রুতার আরো একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছিল ইদানীং। যে মাত্রাটি তার যাত্রাভঙ্গের কারণ হয়ে উঠে আসছিল প্রতি পদে। বিশেষ করে তার শিল্পীজীবনে। গত এক বছর থেকে তার সবরকম স্টেজ প্রোগ্রাম প্রচ-ভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল, বাতিল হচ্ছিল। এতে তার আয়রোজগারে যেমন ভাটা পড়ে তেমনি তার ভক্তদের কাছ থেকেও তাকে দূরে সরিয়ে রাখছিল। তাছাড়া তার গ্রামের বাড়িতে রাত-বিরাতে পুলিশি তল্লাশি সামাজিক জীবনকেও অতিষ্ঠ করে তুলছিল। রাজনৈতিক পরিচয়কে স্পষ্ট ভাষায়-উচ্চারণের ‘অপরাধে’ ন্যান্সিকে হয়রানিমূলক ঝামেলায় জড়াতে থাকে। ভিন্নমত তো থাকতেই  পারে। এতে অপরাধের  কি আছে। এরপরও সমাজের একশ্রেণীর মানুষ ভিন্নমতকে সহ্যের আওতায় আনতে নারাজ। আসলে এরা বিবেকবর্জিত নীচু এবং স্বৈরী মানসিকতায় আচ্ছন্ন। ন্যান্সি ফেইসবুকে তার রাজনৈতিক মত প্রকাশ করেছিলেন। বিএনপিকে সমর্থন করেছিলেন। আর অমনি কতিপয় উগ্র এবং নির্বোধ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়লো ন্যান্সির উপর। তার চলার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। দেশে কি ভিন্নমত থাকতে নেই? ন্যান্সি বিষয়ক কা--কারখানায় তো  এমনটাই প্রমাণ করতে চাচ্ছে তারা। এছাড়া সরকার এবং সরকারি প্রশাসন এদের সাথে যুক্ত হয়ে বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলেছে। যার জের ধরেই সঙ্গীতশিল্পী ন্যান্সির আত্মহননের মতো প্রচেষ্টা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকলো। এ ব্যাপারে সঙ্গীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির ভাষ্য হলো ‘আমি বিএনপির পক্ষে কথা বলেছিলাম বলে বর্তমান সরকার এবং প্রশাসন আমার প্রায় সকল স্টেজ শো বাতিল করে চলেছে দিনের পর দিন। আমার গ্রামের বাড়িতে রাত-বিরাতে চলছে পুলিশি তল্লাশি। আমি এখন এই বিচার কার কাছে দেবো?’
স্টেজ শো বন্ধ করে তারা শান্ত হয়নি। এবার আমাকে ফেসবুক থেকেও বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া চালু করেছে। কারণ আমি ফেসবুকে একাউন্ট খুললেই এক সপ্তাহের মাথায় সেটা ব্লক হয়ে যাচ্ছে অটোমেটিক। শুধু তাই নয় কোন এক অদৃশ্য শক্তি ন্যান্সি নামের প্রায় সবগুলো আইডি রাতারাতি ব্লক করে দিচ্ছে। তাইতো গত ছ’মাসে প্রায় আটবার নিজের নতুন একাউন্ট খুলেও সেটা নিয়মিত চালাতে ব্যর্থ হয়েছি।’ এমন নিচুতা এমন অভব্যতা এবং এমন দুঃষ্কর্ম কোন সভ্য সমাজ সমর্থন করতে পারে না। দেশের সব মানুষকে সরকারি দলের সমর্থক হতে হবে এমন তো দিব্যি নেই। সরকারি দলের সমর্থক হলে তার চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ হবে আর ভিন্নমত থাকলে কণ্টকাকীর্ণ হবে এমন বিব্রতকর অবস্থা কোন সুস্থ সমাজ এবং সুস্থ সরকারকে দৃশ্যমান করে না। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ন্যান্সির বিষয়টি তেমনি একটি অবস্থাকে তুলে আনে যেন। ঘটনার নেপথ্যে যদি তেমনি কোন কা- ঘটে থাকে বা ঘটনা হয়ে থাকে তবে তো এটি অবশ্যই নিন্দনীয়। বাংলাদেশের মানুষ চলনে বলনে বিভাজিত হয়ে আছে। আসলে বিভাজিত করে রাখা হয়েছে। ভিন্নমত প্রকাশকে অপরাধের তালিকায় টুকে রাখার রীতি চালু করা হয়েছে। এই রকম রীতির আওতায় পড়ে যাচ্ছে অনেকেই। যারা কোন না কোনভাবে ক্ষমতা-¯েœহ ধন্যের বাইরে। ক্ষমতাসীনদের সাহচর্যের বলয়ের মধ্যে নেই। এখানে আম-জনতা যেমন ভুক্তভোগী পাশাপাশি শিল্পী-সাহিত্যিকরাও যন্ত্রণার ভাগিদার। বিশেষ করে যেসব শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধি ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিক রামপন্থী এবং বামপন্থী মতকে ধারণ করে তারাই এই নিন্দনীয় ব্যাপারটি উসকে দেয়। সমাজ সংসারে বিস্তৃতি ঘটায়। তিক্ততা বৃদ্ধি করে। এই পরিবেশ কেবল নাটক-সিনেমা বা সঙ্গীতজগতেই নয়, সাহিত্য জগতেও সেই নিন্দনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। যেসব কবি-সাহিত্যিক তার দেশকে ভালবাসে, ঐতিহ্যকে ভালবাসে, ধর্ম-বিশ্বাসের প্রতি প্রবল আস্থাবান, শালীনতার প্রতি আনত এই শ্রেণীর লিখিয়েরাই তাদের শিকার। সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করা সৃজনীশক্তিকে ঘৃণা এবং বিদ্বেষ ছড়িয়ে তারস্বরে চিৎকার করাই এখন এদের কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কর্মটি তারা করছে দিবস-রজনী। অমুক পত্রিকায় লেখা যাবে না, তমুক পত্রিকার সাথে যোগাযোগ রাখা যাবে না, রাখলে কালো তালিকায় উঠে যাবে নাম। তার সৃষ্টিশীলতার দরজা সব রুদ্ধ হয়ে যাবে, করা হবে। তারা অতিশক্তিধর। কারণ অধিকাংশ প্রকাশনা-মিডিয়া এদের দখলে। এরা ক্ষমতার শীতল ছায়ায় শায়িত। রাম এবং বাম মতাদর্শিরা বহিরশক্তিগুলোর ¯েœহ নজরেও লালিত পালিত। কোন ভিন্নমত যেন এখানে জন্মাতে না পারে সে দিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখাই এদের কাজ। সে কাজটি তারা পালন করছেও নিষ্ঠার সাথে। ন্যান্সির স্বাভাবিক উত্থানে যারা বিদ্বেষের অনল জ্বালিয়েছে তারাও সেই দলভুক্ত, রামপন্থী-বামপন্থী। এরা যে পন্থীই হোক তারা যে কোন অবস্থায় দেশ এবং জাতির বন্ধু নয় তা হয়তো বলাই বাহুল্য। তাদের কর্ম তাদের উচ্চারণ বিষয়টিকে স্পষ্ট করে।
রাজনীতির সাথে শিল্প-সাহিত্যের কি সম্পর্ক? সম্পর্ক থাক বা না থাক এরপরও সম্পর্কিত করার চেষ্টা করা হয়। নেপথ্যে যারা কলকাঠি নাড়েন তারা আসলে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগী, ভিনদেশী দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার এবং প্রসারের বেতনভোগ কারিগর।  মত থাকবে মতান্তরও থাকবে কিন্তু বিষয়টিকে মনান্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া কোন অবস্থায়ই বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু এই অবাঞ্ছনীয় পরিবেশটিই কোন অদৃশ্য শক্তি নয়, দৃশ্যমান শক্তিই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে, দিচ্ছে। ন্যান্সির মতো আরো অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক-গায়ক বিএনপি বা বিরোধী পক্ষের মতামত ধারণ করেন। বিপরীতে অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক আছেন ক্ষমতাসীনদের মতের প্রচারক এবং ধারক। এদের কেউ কেউ তো আবার ক্ষমতায়ও অধিষ্ঠিত। তাদের চলার পথে তো কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। এমন নিচুতা যারা প্রকাশ করেন তারা নিজের দিনতাকেই চাষ করেন মনের গভীরে। সুস্থ পরিবেশকে অসুস্থ করে তোলেন প্রতিনিয়ত। একজন লেখকের দেশপ্রেম এবং স্বাজাত্যবোধ পাঠককে আপ্লুত করে, চলার পথকে করে বিস্তীর্ণ-প্রসারমান। রামপন্থী, বামপন্থী বুদ্ধি ব্যবসায়ীদের এখানেই আপত্তি। এই শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের কাছে আকাশের চন্দ্রও শত্রু তালিকায় উঠে আসছে ইদানীং। চন্দ্র এখন ব্যঙ্গ বিদ্রƒপের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত এদের কাছে। হাস্যরস এবং শত্রু চিহ্নিত করতে এরা এখন চন্দ্রকে ব্যবহার করছে। বিচার বুদ্ধিতে রোগজীবাণু ঢুকে পড়লে এমন জরাগ্রস্ত হওয়াই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য জগতে বর্তমানে যা পরিবেশ এর বাইরে আর কোন চিন্তা-ভাবনা অগ্রসর হতে চায় না। দেশপ্রেম এবং ঐতিহ্যবোধে উদ্বুদ্ধ কবি ফররুখ আহমদ, কবি আল মাহমুদ এবং কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ সেই রামপন্থী বামপন্থী কবি-সাহিত্যিকদের শত্রু তালিকায়। এদের সৃজনীশক্তির ঔজ্বল্যে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত। এজন্যে ফররুখ আহমদদের বিপরীতে ওদের অবস্থান। এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকেও ওরা বৈরী তালিকায়ই তুলে রেখেছে। মিডিয়াগুলোতো নজরুলের হামদ-নাতের ছিটাফোঁটা প্রচারিত হলেও মুসলিম জাগরণমূলক গান একেবারেই নিষিদ্ধের শিকায় ঝুলন্ত মূলা। এসব গান গাওয়া যেন অপরাধ। কি সরকারি মিডিয়া কি বেসরকারি মিডিয়া সব এক বরাবর। আল্লাহ শব্দের পরিবর্তে ঈশ্বর, সৃষ্টিকর্তা তো বহু আগ থেকেই স্থান করে নিয়েছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে কোন কোন লেখক পত্রিকা গোসল-পানিকে বাতিল করে দিয়ে ¯œান, জলে অবগাহনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কখন যে খালা-ফুফুর পরিবর্তে মাসী-পিসিতে ঢুকে পড়বে কে জানে। ন্যান্সির মতো আরো অনেক শিল্পী-সাহিত্যিকের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে রাম এবং বামপন্থী বুদ্ধি ব্যবসায়ীরা। সাথে যুক্ত হচ্ছে প্রশাসন-সরকার। ন্যান্সি এমন অনভিপ্রেত পীড়নকে সহ্য করতে পারেনি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আত্মহননে। জাতি এবং দেশের উপর যেভাবে রাম এবং বামপন্থী বুদ্ধি ব্যবসায়ীরা জেঁকে বসেছে, সহসা প্রতিবিধানের ব্যবস্থা না নিলে সমগ্র সচেতন সমাজকেই আত্মহননের পথে অগ্রসর হতে হবে হয়তো। কারণ ওদের পৃষ্ঠপোষক প্রশাসন এবং সরকার- এ সংবাদটি আরো পীড়াদায়ক।
সাজজাদ হোসাইন খান

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads