শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০১৪

পিনাক-৬ দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে


কাওড়াকান্দি-মাওয়া রুটে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার অদূরে এমভি পিনাক-৬ নামক একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ প্রমত্তা পদ্মায় প্রায় ৩০০ যাত্রী নিয়ে গত সোমবার ডুবে গেছে। এতে প্রায় ৪০ জন যাত্রী সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও অবশিষ্ট ২৬০ জন যাত্রীর নিখোঁজ হবার খবর গোটা জাতিকে শোকাহত করে তুলেছে। বলাবাহুল্য, গত বৃহস্পতিবার ৭ আগস্ট পর্যন্ত পদ্মা ও মেঘনার বিভিন্ন ভাটি এলাকা থেকে ১৬ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে জানা গেছে। অবশিষ্ট ব্যক্তিদের সলিল সমাধি ঘটেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে মাওয়া ও তার আশপাশ এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে এবং শোকাহত পরিবারসমূহকে সান্ত¦না দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
উল্লেখ্য যে, সরকারের উদ্ধারকারী দল লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার করা তো দূরের কথা, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটির অবস্থানও এখন পর্যন্ত নির্ণয় করতে পারেননি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহ ও দেশবাসীর মধ্যে হতাশার পাশাপাশি চরম ক্ষোভেরও সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের রূহের মাগফিরাত কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে তাদের শোক সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা দোয়া করছি এবং সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আমরা জানি যে, এই দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তাদের অবর্তমানে তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে বলে আমরা মনে করি। এটা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও। গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সাথে পাল্লা দিয়ে নৌ-দুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুর্ঘটনারোধে সরকারি উদ্যোগ ও ব্যবস্থা সময়ে সময়ে মন্ত্রী-এমপিদের বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে যে, একজন মন্ত্রী তার মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়ন নেতার দায়িত্ব পালনের বিষয়টি। তিনি আবার মালিকদেরও প্রতিনিধি। ফলে সরকার এবং তার মন্ত্রণালয় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কারুর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
পিনাক-৬ দুর্ঘটনার পর সরকারের তরফ থেকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার কাজ এবং উদ্ধারকারী জাহাজ প্রেরণের যে সব ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল তার কোনটাই সময়মত না করার অভিযোগ উঠেছে। বলা হয়েছিল যে, নৌবাহিনী সর্বাধুনিক উদ্ধারসামগ্রী নিয়ে লঞ্চটি উদ্ধারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যদি তাই হয়, এখনো পর্যন্ত লঞ্চটির অবস্থান নির্ণয় করা যায়নি কেন? এক্ষেত্রে ‘সর্বাধুনিক উদ্ধার সামগ্রীর’ কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। পিনাকের দুর্ঘটনায় পড়ার যে কয়েকটি কারণ এ পর্যন্ত জানা গেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ধারণক্ষমতার তিনগুণেরও বেশি যাত্রী বহন। এটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সরকার এটা বন্ধ করতে পারছেন না কেন? জানা গেছে যে, পিনাকের ঋরঃহবংং ঈবৎঃরভরপধঃব ইতঃপূর্বে বাতিল করা হয়েছে এবং লঞ্চটি বিনা ঋরঃহবংং-এ চলাচল করছিল। এটা যদি সত্যি হয় তাহলে এই দুর্ঘটনা ও শত শত লোকের মৃত্যুর জন্য সরকারই দায়ী বলে আমরা মনে করি। প্রতিবছর ঈদ আসলেই দেখা যায় যে, ভাঙ্গাচুরা চলার অনুপযোগী লঞ্চসমূহকে ডকে তুলে রং লাগিয়ে নতুন চেহারা দেয়া হয়। কার্যত তাদের ইঞ্জিন ও বডির কোন পরিবর্তন করা হয় না। এই অবস্থায় নতুন চেহারা নিয়ে সেগুলো নদীতে চলাচল করে এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। এ ক্ষেত্রেও সরকারের ভূমিকা নিন্দনীয়। এই অবস্থায়  ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দান এবং অবিলম্বে আমরা নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads