বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০১৪

২০ দলীয় জোটের দাবি ও আহ্বান


বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলের সমন্বয়ে গঠিত দেশের বৃহত্তম জোটের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি অবিলম্বে পদত্যাগ করার এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমানসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা বলেছেন, মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে ফেনা তুললেও আওয়ামী লীগ সরকার দেশে বাকশালের মতো একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে একের পর এক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। সে উদ্দেশ্যের অংশ হিসেবেই সরকার জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার আড়ালে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ও স্বাধীনতা হরণ করার এবং জাতীয় সংসদকে বিচারপতিদের অভিশংসন বা ইম্পিচ করার বিধানের মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগকে নিজেদের ইচ্ছাধীন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। পদক্ষেপ দুটি নেয়া হলে গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগই শুধু স্বাধীনতা হারাবে না, দেশ থেকে গণতন্ত্রও উৎখাত হয়ে যাবে। একযোগে নতুন কোনো নামে কায়েম করা হবে বাকশাল ধরনের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা।
২০ দলীয় জোট নেতারা ক্ষমতাসীনদের এই গণতন্ত্রবিরোধী ভয়ংকর পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবান জানিয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা। মির্জা আলমগীর বলেছেন, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করেই ঘি ওঠানো হবে। কথাটার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, দাবি না মানলে গণআন্দোলনের প্রচ- জোয়ারে সরকারের পতন ঘটানো হবে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরও একই সুরে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই এ সরকারকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়নি বরং প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশের জনগণও তাই অবৈধ কোনো সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। সরকারকে সতর্ক করতে গিয়ে জামায়াতের নেতা আরো বলেছেন, অতীতে কোনো নির্বাচিত সরকারও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ও স্বাধীনতা হরণ করতে পারেনি। সেখানে অবৈধ একটি সরকার যতো নীতিমালা বা আইনই করুক না কেন তা সফল হতে পারবে না। সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের ইম্পিচ করার চেষ্টার সমালোচনা করে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, বিচারপতিদের ব্যাপারে পরিকল্পিত আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালতসহ দেশের গোটা বিচার বিভাগকেই আওয়ামী লীগের অধীনস্থ করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। আইনটি কার্যকর হলে কোনো বিচারকই ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে রায় দেয়ার সাহস পাবেন না। কারণ, তেমন কোনো রায় দিলেই অভিশংসনের নামে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে। এভাবে সব মিলিয়েই সরকার দেশ থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর ফন্দি আঁটছে। জামায়াতের নায়েবে আমীর তাই সরকারের এ চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, সরকারকে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। ২০ দলীয় জোটের অন্য নেতারাও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ও বিচারপতিদের জাতীয় সংসদের ইচ্ছাধীন করার সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবিতে এবং সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে দুর্বার গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।
২০ দলীয় জোটের মতো আমরাও সরকারের গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিরোধী আইন ও প্রচেষ্টাকে ভয়ংকর এবং গণতন্ত্রের জন্য ধ্বংসাত্মক মনে করি। কারণ, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে কিছুই থাকবে না এবং বেসরকারি সব টেলিভিশনকে বিটিভির মতো সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে হবে। জাতীয় দৈনিকসহ কোনো গণমাধ্যমই সরকার, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতি ও অন্যায়-অবিচার সম্পর্কে কোনো খবর প্রকাশ বা প্রচার করতে এবং এসবের জন্য দায়ীদের সমালোচনা করতে পারবে না। করলে সেটা হবে দ-নীয় অপরাধ! এভাবে যে কোনো ব্যাখ্যায় দেখা যাবে, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার এবং প্রতিটি টিভি ও সংবাদপত্রকে সরকারের হুকুমের দাস বানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০ দলীয় জোটের নেতারা যথার্থই বলেছেন, সম্প্রচার নীতিমালার আড়াল নিয়ে সরকার আসলে একদলীয় শাসন কায়েম করার লক্ষ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে। বিচারপতিদের অভিশংসন করার জন্য পরিকল্পিত আইনের উদ্দেশ্যের মধ্যেও কোনো রাখ-ঢাক রাখা হয়নি। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার ঢেকুর তুললেও ক্ষমতাসীনরা কিন্তু বলছেন না, জনগণ আদৌ তাদের কাছে সেরকম কোনো দাবি বা আবদার জানিয়েছে কি না। অবশ্যই জানায়নি, জানানোর প্রশ্নও ওঠে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন এক সরকার হিসেবে ক্ষমতাসীনরা পদক্ষেপ দুটি নিতে চলেছেন, যে সরকার নিজেই অবৈধ। একই কারণে গণতন্ত্রের চেতনাবিরোধী কোনো নীতিমালা ও আইন তৈরি ও প্রয়োগ করার অধিকারও ক্ষমতাসীনদের থাকতে পারে না। এ কথাগুলোই বলা হয়েছে মঙ্গলবারের সমাবেশে।
আমরা ২০ দলীয় জোটের নেতাদের দাবি গণতন্ত্রসম্মত মনে করি।একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে,  সেটা সফল হলে দেশের গণমাধ্যম ও স্বাধীন বিচার বিভাগই শুধু সরকারের ইচ্ছাধীন হয়ে পড়বে না, অকার্যকর হয়ে যাবে বহু কষ্টে অর্জিত গণতন্ত্রও। এজন্যই সম্প্রচার নীতিমালা এবং বিচারপতিদের অভিশংসনের জন্য পরিকল্পিত আইন বাতিলের দাবি যৌক্তিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। । সরকারের উচিত ২০ দলীয় জোটের দাবি মেনে নেয়া এবং সমঝোতার পথে পা বাড়ানো।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads