রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৪

ওরা প্রেরণার উৎস হতে পারতো


দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যেসব ঘটনা ঘটছে, তাতে স্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করা যায় যে শিক্ষার কাক্সিক্ষত পরিবেশ থেকে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা বঞ্চিত। এ জন্য প্রায়শই ছাত্র রাজনীতিকে দায়ী করা হয়, রাজনীতিবিদদের অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশের জন্য প্রশাসন ও শিক্ষক-রাজনীতির দায়ও কম নয়। প্রসঙ্গত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করা যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ওইসব বহিষ্কারাদেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়নি। কখনও আবার বহিষ্কারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। ফলে শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং অন্য শিক্ষার্থীরা বহাল তবিয়তে ছাত্রাবাসে থাকছেন এবং ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। এমন চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ফলে অপরাধপ্রবণ ছাত্রদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে এবং বিপর্যস্ত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মত উচ্চ বিদ্যাপীঠে এমন পরিস্থিতি মেনে নেয়া যায় না।
বহিষ্কার করে পরে তা কার্যকর না করা বা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর ফলে ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং-এর নামে হয়রানি, মারামারি, সংঘর্ষ, হামলা ও চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, কোনো এক অজানা কারণে প্রশাসন ক্যাম্পাসে র‌্যাগিং, মারমারি ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘোষিত শাস্তি যথাযথভাবে কার্যকর করে না। এর ফলে ওই ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়, নষ্ট হয় সুনামও। উল্লেখ্য যে, গত বুধবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগের একপক্ষের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে অপরপক্ষ। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় ছাত্রলীগের ১৬ নেতা-কর্মীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হামলা ও মারামারির ঘটনায় ১৬ নেতা-কর্মীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের ঘটনা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। তবে দেখার বিষয় হলো, সাময়িক বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়িত হয়। আমরা জানি সমাজকে, প্রতিষ্ঠানকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত করতে হলে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে অবহেলা কিংবা গাফিলতি সমাজকে, প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেয় না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, অজানা কারণে ঘোষিত শাস্তি প্রশাসন যথাযথভাবে কার্যকর করে না। কারণগুলো কি আসলেই আমাদের অজানা, না আমরা বলতে চাচ্ছি না? আসলে আমাদের জাতীয় রাজনীতি লক্ষ্যচ্যুত হওয়ায় তার প্রভাব পড়ছে সবখানেই। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিভাবে ভিসি নিয়োগ করা হয়, ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি কাদের অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত হচ্ছে তা মোটামুটি সবারই জানা। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে হানাহানির ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশের উচ্চ পর্যায়ে আদর্শচ্যুতি ঘটলে, নৈতিক মানদ- রক্ষিত না হলে তার প্রভাব তো শিক্ষাঙ্গনে পড়বেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্ররা অবক্ষয় ও ভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারলে তা জাতির জন্য প্রেরণার উৎস হতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তেমন কোনো উদাহরণ আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads