বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

মাওলানা ফারুকীর হত্যাকাণ্ড


আরো একটি হত্যাকাণ্ড দেশবাসীকে প্রচণ্ডভাবে ভীত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে। নারায়ণগঞ্জের পর এবারের ঘটনাস্থল রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার। আর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন টেলিভিশনের বিশিষ্ট উপস্থাপক মাওলানা শেখ নূরুল ইসলাম ফারুকী। পুলিশ এবং স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত বুধবার রাত আটটার দিকে প্রথমে দু’জন অচেনা যুবক এসে মাওলানা ফারুকীর সঙ্গে হজে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। পরে মোবাইলে তারা সঙ্গীদের খবর দেয়। এই খবর পেয়ে সাত-আটজন লোক ঢুকে পড়ে। এসেই তারা মাওলানা ফারুকীর কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। মাওলানা ফারুকী রাজি না হলে দুর্বৃত্তরা তার স্ত্রী-সন্তান ও শাশুড়িসহ সকলকে বেঁধে ফেলে ও তাদের মুখে টেপ লাগিয়ে দেয়। ফলে কেউই কোনো সাড়া-শব্দ করতে পারেনি। এরপর দুর্বৃত্তরা মাওলানা ফারুকীকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে হাত-পা বেঁধে তার গলা কেটে ফেলে। মুহূর্তেই মৃত্যু ঘটে মাওলানা ফারুকীর। এরপর নগদ কিছু অর্থ লুট করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং হজ্ব ও ওমরাসহ ব্যবসার পাশাপাশি আহলে সুন্নাত আল জামায়াত ধরনের কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে মাওলানা ফারুকীর বাসায় সব সময় অনেক লোকজনের যাতায়াত ছিল। সেজন্যই আশপাশের কারো মনে কোনো সন্দেহ দেখা দেয়নি। দুর্বৃত্তরাও তাই কোনো বাধার সম্মুখীন হয়নি। হত্যাকা-ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং র‌্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খুনীদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দিয়েছেন। ওদিকে আহলে সুন্নাত আল জামায়াতসহ বিভিন্ন সংগঠন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তারা মিছিল সমাবেশ করেছেন। রোববার হরতালও ডেকেছে এই সংগঠনগুলো।
আমরা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং খুনীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। আমরা মনে করি, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আসলেও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যখন এমনকি বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি কোনো মানুষের জীবনই আর নিরাপদ নয়। উল্লেখ্য, মাওলানা ফারুকী চ্যানেল আই এবং মাইটিভির ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন। বিশেষ করে পবিত্র রমযান মাসে তার উপস্থাপিত কাফেলা নামের অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এ অনুষ্ঠানে তিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান দেখানোসহ ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরতেন। সে কারণে দর্শকরা যেমন বহুকিছু জানতে ও দেখতে পারতেন, ব্যক্তিগতভাবে মাওলানা ফারুকীও তেমনি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ফলে তার মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমরা মনে করি, কেবলই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে শোরগোল করার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশকে লেলিয়ে দেয়ার পরিবর্তে সরকারের উচিত মাওলানা ফারুকীর খুনীদের খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো এবং তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া। সরকারকে একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সত্যিকারের উন্নতি ঘটানোর জন্যও সচেষ্ট হতে হবে, যাতে আর কাউকে মাওলানা ফারুকীর মতো নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার না হতে হয়। আমরা মাওলানা ফারুকীর স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads