রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৩

রাজনৈতিক শিষ্টাচার প্রসঙ্গে


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় প্রত্যক্ষ রাজনীতি শুরু করেছেন বলে মনে হয়। তিনি এখন শুধু মায়ের সাথে নয় এককভাবেও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশ গ্রহণ করছেন, পথ সভা ও জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময় করছেন। তার এই রাজনৈতিক কর্মকা- তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে হয়। তিনি সর্বত্র আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য বর্ণনা করছেন, বিএনপি-জামায়াতসহ আঠার দলীয় জোটের তীব্র সমালোচনা করছেন এবং আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করছেন।
জয়কে নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা কথা প্রচলিত আছে এবং তার প্রেক্ষিতে অনেকেই জয়ের রাজনৈতিক অভিষেককে বাঁকা চোখে দেখে থাকেন। আমরা আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে জয়ের অংশগ্রহণকে অভিনন্দন জানাই। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র হওয়া ছাড়াও জয় এ দেশেরই সন্তান এবং রাজনীতি করার তার অধিকার রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং সেই দেশেরই নাগরিক একজন খৃস্টান মহিলাকে বিয়ে করার পর সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতার রাজনীতিতে আসা তার জন্য বিতর্কিত বিষয় হলেও এ পর্যন্ত কারুর তরফ থেকে কোনও আপত্তি উঠেনি। তিনি সংবিধান মেনে মার্কিন নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করে খাঁটি বাংলাদেশী হিসেবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করুন এটা সকলেরই কাম্য। আমরা আগেই বলেছি জয়ের রাজনীতিতে প্রবেশকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু তিনি তার মায়ের কল্যাণে ২০০৯ সালে গৃহীত জাতির পিতার পরিবার সদস্যদের নিরাপত্তা আইনের অধীনে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশ, মতবিনিময় অনুষ্ঠান, প্রেসব্রিফিং প্রভৃতিতে বিরোধী দলসমূহের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে গিয়ে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন তাকে কিছুতেই শোভনীয় বলা যায় না। বয়স এবং অভিজ্ঞতার দিক থেকে স্বাভাবিকভাবেই তিনি অপরিপক্ব, পরিপক্বতা লাভ করতে হলে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আরো অনেকদিন তাকে কাজ করতে হবে। কিন্তু তার আগে তিনি প্রাচীন রাজনৈতিক দল এবং বিরোধীদলের প্রবীণ রাজনীতিকদের ব্যাপারে যে সব মন্তব্য করছেন তার বেশির ভাগই শালীনতার সীমা অতিক্রম করছে বলে মনে হয়। নতুন প্রজন্মের একজন রাজনৈতিক কর্মী, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র হিসাবে জয়ের আচরণে ভদ্রতা এবং ন¤্রতা থাকা বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে যাত্রীবাহী বাসসমূহে এক সময় একটা স্লোগান লেখা থাকতো, “ব্যবহারে বংশ পরিচয়।” কথাটির তাৎপর্য অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হিসাবে আমরা মনে করি জয়ের মধ্যে ভদ্রতা, ন¤্রতা ও শিষ্টাচারের সকল বৈশিষ্ট্য মানুষ  দেখতে চায়। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতা-কর্র্মীরা কেউই তার শত্রু নন। তিনি তার আচরণ দিয়ে সবাইকে সহজেই আপন করে নিতে পারেন।
দুর্ভাগ্যবশত : বাস্তবে আমরা এর বিপরীত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। জনাব জয় মার্কিন ইহুদী সেনা কর্মকর্তা সিওভাস্কির সাথে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের মুসলমান, আলেম সমাজ ও মাদরাসা শিক্ষার সমালোচনা ও এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে উঠিয়ে দেবার পরিকল্পনা সম্বলিত একটি যৌথ প্রবন্ধ রচনা করে নিন্দিত হয়েছিলেন। দেশের মানুষ তা প্রায় ভুলেই গেছে। সাম্প্রতিককালে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা সমাবেশে এমন অনেক কথাই বলছেন যা শোভনীয় বলে মনে হচ্ছে না গত ১২ নবেম্বর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে রোগী দেখতে গিয়ে বলেছেন যে, “বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী দল। এরা কোন মানুষের জাত না।” তার এই মন্তব্যটিকে আমরা অত্যন্ত আপত্তিকর বলে মনে করি। আমরা জনাব জয়কে বাংলাদেশের ইতিহাস পড়ার অনুরোধ জানাবো। এই ইতিহাস পড়লে তিনি নিশ্চয়ই দেখতে পাবেন যে এই দেশে সন্ত্রাসের জন্মদাতাই হচেছ তার দল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় থাকুক বা ক্ষমতার বাইরে তারা সর্বদা সন্ত্রাসকেই লালন করেছে এবং করে। চাঁদাবাজি, টে-ারবাজি, অস্ত্রবাজি, খুন, গুম, নির্যাতন জবরদখল, অগ্নি সংযোগ এর সবগুলোই আওয়ামী লীগের কীর্তি। যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন দিয়ে কয়েক বছর আগে ১২ জন যাত্রী হত্যা, শেরাটন হোটেলের সামনে দোতলা বাসে গান  পাউডার ছিটিয়ে আগুন দিয়ে ১৩ যাত্রী হত্যা এবং কেয়ারটেকার আমলে শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আব্দুল জলিল ও তার দলের নেতা ওবায়দুল কাদেরের রিমান্ডের স্বীকারোক্তিতে উল্লেখিত আওয়ামী লীগ প্রধানসহ আওয়ামী নেতাদের সম্পৃক্তির কথা দেশবাসী অবহিত আছেন। জনাব জয় এসব ঘটনা এবং ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬, ১৯৯১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ কষ্ট করে ঐ সময়ের পত্র-পত্রিকা পড়লেই দেখতে পাবেন। তিনি এও দেখতে পাবেন যে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের যে রাষ্ট্রপতির ছেলে সন্ত্রাসীসহ ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের গুলীতে আহত হয়েছেন তিনিও আওয়ামী লীগেরই ছিলেন। এই অবস্থায় তাকে আমরা আরো সংযত, সহনশীল এবং শিষ্টাচারী হবার জন্য অনুরোধ করবো।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads