শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৩

চীন কেন স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায়?


চীন এখন বাংলাদেশের পরম বন্ধু। আমি ব্যক্তিগতভাবে চীনের বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেই। এবং সেটা আমার প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বার্থেই। ১৯৭১ সালে চীন ও আমেরিকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দেয়নি। তখন ভারত আর রাশিয়া ছিল একজোট। বাংলাদেশের ব্যাপারে সামরিক পদপে নেয়ার আগে ভারত রাশিয়ার সাথে ২৫ বছরের মৈত্রী চুক্তি করে, যার মূল বিষয় ছিল ভারত আক্রান্ত হলে রাশিয়া সে আক্রমণকে রাশিয়ার ওপর আক্রমণ বলে বিবেচনা করবে। ভারত তখন সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে চীনের মোকাবেলা করার জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে ভারত চীনের সাথে সীমান্ত বিরোধ সমাধার জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তারপরই চীন-ভারত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সে সম্পর্ক এখনো পুরোদমে উষ্ণ হয়নি। সীমান্ত সমস্যাও রয়ে গেছে। ওই সময়েই পাকিস্তানের সাথে চীনের সম্পর্কোন্নয়নের জন্য জেনারেল আইয়ুব উদ্যোগ নেন এবং মওলানা ভাসানী এ ব্যাপারে আইয়ুবকে সমর্থন করেন। ইতিহাসের এ পরিপ্রেেিত জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ ভারত ও রাশিয়া নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ৭২-৭৫ সালে দেখেছি রাশিয়াপন্থী রাজনীতির কী দৌর্দণ্ড প্রতাপ। দেশে রাশিয়াপন্থী লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার; কিন্তু তাদের প্রতাপ ছিল সীমাহীন। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে ধরা দিয়েছিলেন স্বেচ্ছায়। কারণ তিনি কখনো পালিয়ে থাকা পছন্দ করতেন না। এ কারণেই তিনি ভারত যাননি। বঙ্গবন্ধু মনোজগতে কখনোই অন্ধভাবে ভারতভক্ত ছিলেন না। ভারতের রাজনীতি কী তা-ও তিনি জানতেন। তিনি কলকাতায় লেখাপড়া করেছেন এবং জীবনের শুরুর প্রাথমিক রাজনীতি সেখানেই করেছেন। বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে সেসব রাজনীতির কথা উল্লেখ করেছেন। হিন্দুরা মুসলমানদের ওপরে কী অত্যাচার করত তার বিবরণ ওই আত্মজীবনীতে আছে। তিনি ছিলেন মুসলিম লীগের একজন কট্টর কর্মী। মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় যে ভারতীয় সৈন্যরা অবস্থান নেয় এবং দীর্ঘকাল অবস্থানের পরিকল্পনা করে। কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি চীনের কারণে। ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশে থাকতেই বঙ্গবন্ধু জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদের জন্য দরখাস্ত করেন ভারত ও রাশিয়ার উসকানিতে। তখন চীন অনুরোধ করে দরখাস্ত না করার জন্য। চীনকে বাংলাদেশের শত্রু প্রমাণ করার জন্য ভারত ও রাশিয়া সদস্যপদের জন্য বাংলাদেশকে দিয়ে দরখাস্ত করিয়েছিল। চীন নিজস্ব কূটনীতির জন্য সে দরখাস্তের বিরোধিতা করতে হয়েছিল। চীন তখন বলেছিল বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ নয়, কারণ সেখানে বিদেশী সৈন্য অবস্থান করছে। এরপরই ভারত বিদেশী চাপের কারণে সৈন্য সরিয়ে নেয়। আর আমরা জানি বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে সৈন্যরা চলে গিয়েছিল। এমনকি অনেকেই বিশ্বাস করেন বঙ্গবন্ধু না হলে ভারতীয় সৈন্যরা কখনোই বাংলাদেশ ছেড়ে যেত না। বাংলাদেশের রাজনীতির দর্শন পরিবর্তন হয় বঙ্গবন্ধুর সরকারের পতনের পর। খন্দকার মোশতাকই চীন ও সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেন। তখন মোশতাক আহমদ চীনপন্থী সাংবাদিক ফয়েজ আহমদকে চীনে পাঠান। এরপরই চীন ও সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধুর আমলে ভারত ও রাশিয়ার চাপে বাংলাদেশে ইসলামি ও ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল। উল্লেখ্য, পাকিস্তান আমলের একটা সময় পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। খন্দকার মোশতাক তিন মাসের মতো মতায় ছিলেন। এরপর মতায় আসেন জেনারেল জিয়া। জিয়ার আমলেই বাংলাদেশের রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন শুরু করে। জিয়ার আমলেই মুসলিম দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের সত্যিকারের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতি হয়। এ সময়েই চীন বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে প্রথম কাতারে চলে আসে। এর আগে ভারত ও রাশিয়া এ ব্যবসায় করত। চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন উষ্ণ। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে উৎখাত করে সেনাপ্রধান এরশাদ সামরিক আইন জারি করে মতা দখল করেন। মতা দখলের পর এরশাদ নিজেই বলেছেন, তিনি দিল্লির সাথে আলোচনা করেই পদপে নিয়েছেন। ওই সময় দেশের রাজনৈতিক অবস্থা শান্তই ছিল। তবুও এরশাদ মতা দখল করেন। এরশাদও চীনের সাথে মোটামুটি দৃশ্যমান সম্পর্ক ভালো রেখে চলেন। এরশাদকে পুরোপুরি সময় কৌশলে শেখ হাসিনা সমর্থন দিয়েছেন। এরশাদের শাসনকে দীর্ঘায়িত করেছেন। ওই সময়ে জামায়াত আওয়ামী লীগের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার কঠোর আন্দোলনের ফলে সবাই এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে বাধ্য হয়। ফলে ৯০ সালে এরশাদের পতন হয়। এরপরই তথাকথিত বুর্জোয়া গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। ৯১ সালের নির্বাচন হয়েছিল বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অধীনে। তাতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয়লাভ করে। শেখ হাসিনার আশা ও বিশ্বাস ছিল তার দল আওয়ামী লীগ মতায় আসবে। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও দিল্লি যৌথভাবে একটি ল্য স্থির করে বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তোলার গোপন কর্মসূচি হাতে নেয়। ৯০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ২৩ বছর তাদের রাজনীতি দিল্লিতুষ্ট নীতিতে পরিণত হয়। দিল্লির শাসকগোষ্ঠী, তল্পীবাহক বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকেরা এখানে ও সেখানে তৎপর হয়ে ওঠেন বাংলাদেশকে দিল্লির কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। যেকোনো বাহানায় বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাখাই তাদের প্রধান ল্য। ৯৬ সাল ও ২০০৬ সালে নারকীয় ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে দিল্লির উসকানিতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছিল শেখ হাসিনা ও জামায়াতের। খালেদাকে বাধ্য করে এ ব্যবস্থা মেনে নিতে। ২০০৮ সালের ভয়ভীতিকর নির্বাচনে জেনারেল মইনদের ইচ্ছায় মহাজোট সরকারকে মতায় বসায় দিল্লির সার্বিক সহযোগিতায়। খালেদা জিয়ার দুই ছেলেকে দেশছাড়া করে দুর্নীতির অভিযোগে। ওই অবস্থায় ভয়ভীতি দেখিয়ে খালেদাকে বাধ্য করে নির্বাচনে অংশ নিতে। অবৈধ জেনারেল মইন সরকারের সব কাজকে শেখ হাসিনা স্বীকৃতি দিয়েছেন। কারণ এর আগে তিনি বলেছিলেন, তারই আন্দোলনের ফসল হচ্ছে জেনারেল মইনের সরকার। সে সময় মইন দিল্লি সফরে গেলে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও দামি ছয়টি ঘোড়া উপহার দেয়া হয়। মহাজোট সরকার মতায় এসে খালেদা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে জেনারেল মইনের দায়ের করা সব মামলা অব্যাহত রাখেন আর বেহায়ার মতো নিজেদের সব মামলা প্রত্যাহার করে নেন। সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে এক মন্ত্রী বলেন, আমরা মতায় এসেছি কি খালেদার মামলা প্রত্যাহার করার জন্য? বরং খালেদা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দেয়া হয়। এখন দেশে যে গোলযোগ চলছে তার স্রষ্টাও তারা। জনমত উপো করে সংসদের শক্তির জোরে ও আদালতের দোহাই দিয়ে মীমাংসিত তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করে দেন। শুরু হলো নতুন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও সঙ্ঘাত। প্রত্যেকবারই আমরা দেখেছি দিল্লির প্রতিনিধি বীণা সিক্রি, পিনাক রঞ্জন ও শরণ খুবই ব্যস্ত এবং প্রকাশ্যে বাংলাদেশকে যেকোনো ব্ল্যাকমেইল করে দিল্লির অনুগত রাখার চেষ্টা করেছেন। জেনারেল মইনের শাসনকালে পিনাক বাংলাদেশে দিল্লির অদৃশ্য ক্ষমতার মালিক ছিলেন। তিনি তখন সচিবদের বদলি ও পোস্টিং নিয়েও ভাবতেন বলে একজন সাবেক সচিব জানিয়েছেন। এবারের গোলযোগে দিল্লি প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করছে এবং দেশবাসী ভারতীয় কূটনীতিকের পদচারণা দেখতে পাচ্ছেন। এবার যেন দিল্লি মারণ কামড় দিয়েছে। এবারে বাংলাদেশের বিষয়টি স্থায়ীভাবে সমাধা করতে চায়। আর সমাধান হলো ঢাকায় অনুগত সরকারকে স্থায়ীভাবে মতায় রাখা। আর এ জন্য আওয়ামী লীগ ও একই ঘরানার রাজনীতিকদের মতায় রাখা জরুরি। স্থায়ীভাবে মতায় থাকার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোকে ভারত আগেই প্রভাব বলয়ে নিয়েছে অর্থাৎ নিজেদের অনুগত করে ফেলেছে। তাই ৯০ ভাগ মিডিয়া দৃশ্য বা অদৃশ্যভাবে তাদের হয়ে কাজ করে। যদি আপনি প্রশ্ন করেন ভারত আসলে কী চায়Ñ উত্তর হলো, ভারত বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ীভাবে একটা অনুগত সরকার চায়, যাকে মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন দেবে। ল্য হলো, বাংলাদেশ ভারতের সব নীতি অনুসরণ করবে। বিনিময়ে বাংলাদেশের নিজস্ব পতাকা থাকবে, জাতীয় সঙ্গীত থাকবে ও জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ থাকবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও থাকবে। তবে একটা অনুগত প্যারা মিলিটারিও থাকতে পারে। সে জন্যই বিজিবিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যের ৯০ ভাগ ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, চীন ও আমেরিকা এখানে নিজেদের উপস্থিতি জোরালোভাবে রাখতে চায়। চীনের ব্যাপারে আমেরিকা ও ভারতের ল্য ও দৃষ্টিভঙ্গি এক। আমেরিকা চীনকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে প্রতিহত করতে চায়। এ ব্যাপারে ভারত আমেরিকার প্রক্সি হয়ে কাজ করবে। বাংলাদেশকে কিছুতেই চীনের প্রভাবে যেতে দেয়া যাবে না। এ কারণেই আমরা ভারত ও আমেরিকার দৌড়ঝাঁপ প্রকাশ্যে দেখতে পাচ্ছি। দুই পই সাংবাদিকদের বলছে, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের হাত থেকে রা করা তাদের ল্য। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, জঙ্গিবাদ কোথায়? ভারত মনে করে, বিএনপি ও জামায়াত মতায় থাকলে জঙ্গিবাদের উত্থান হবে; কিন্তু আমেরিকা মনে করে জামায়াত একটি মডারেট বা উদার ইসলামিক দল। আমেরিকা বিএনপিকে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক মনে করে না। আর আমি মনে করি, দুই দেশের অদৃশ্য এজেন্ডা হচ্ছে ইসলাম। যেকোনো মূল্যেই হোক বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানকে সর্বশক্তি দিয়ে মূলোৎপাটন করতে হবে। ভারত ও আমেরিকা বাংলাদেশে ইসলামমুক্ত রাজনীতি চায়। এ ব্যাপারে ভারত একাই বাংলাদেশের রাজনীতি দেখভাল করতে চায়, আমেরিকা যেন সরাসরি জড়িত না হয়। এবারই গণচীন সরাসরি বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি বিবৃতি দিয়েছে এবং সরকারের সাথে কথা বলেছে। চীন মনে করে, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভারত-আমেরিকা জোট চীনের জন্য কল্যাণকর নয়। বরং একটা অদৃশ্য হুমকি। বাংলাদেশে যদি ইসলামি রাজনীতির বিকাশ ঘটে তাতে চীন শঙ্কিত নয়। কিন্তু বাংলাদেশ ভারতের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হোক তা চীন চায় না। এ জন্যই এবারের সর্বশেষ বিবৃতিতে চীন বলেছে, তারা একটি উন্নত স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায়। স্থিতিশীল শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চায়। এটা একটা কূটনৈতিক ভাষাও। স্বাধীন বাংলাদেশশব্দ দুটির সাথে একটা গভীর তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। চীন যেহেতু কয়েক যুগ ধরে ভারত বাংলাদেশ ও দিল্লি-শেখ হাসিনা সম্পর্ককে গভীরভাবে পাঠ করছে, সেহেতু আমরা নিশ্চয়ই ওই শব্দ দুটির ব্যাপারে শঙ্কিত। এর মানে কী তা আওয়ামী লীগ ও দিল্লি ভালো করেই জানে। মীরজাফর যখন লর্ড কাইভকে নিয়ে গোপন চক্রান্ত করে মতার জন্য, তখন তিনি নাকি বুঝতে পারেননি সুবে বাংলার স্বাধীনতা চলে যাবে। বাংলাদেশের ভাগ্যে কী আছে হয়তো তারা জানেন না। তারা হয়তো শুধুই তাদের মতায় টিকে থাকা নিয়ে ভেবেছেন। সিকিমের লেনদুপ দর্জিও হয়তো শুরুতে শুধু নিজের মতা নিয়ে ভেবেছিলেন। নেপালেও তথাকথিত মাওবাদী নেতা প্রচন্দকে ভারত সমর্থন দিয়ে রাজার পতন ঘটিয়েছে। ভুটানের রাজা আছে কিন্তু রাজ্য নেই। মালদ্বীপেও ভারতপন্থী নাশিদকে মতায় ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। শ্রীলঙ্কায় কয়েক যুগ ধরে তামিল বিদ্রোহীদের উসকে দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। শ্রীলঙ্কা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভারত তা দেয়নি। শেষ পর্যন্ত সামরিক অভিযান চালিয়ে তামিলদের দমন করতে হয়েছে। এটা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের ভারতবিরোধী শক্ত অবস্থান। এখন সবাই তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগ আনার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ভারত কয়েক যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়ে এসেছে। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে দিয়ে একটা বিতর্কিত চুক্তি করিয়েছে। শেখ হাসিনা একবারের জন্যও চিন্তা করেননি ওই চুক্তি একদিন বাংলাদেশের অঙ্গহানি ঘটাবে। এই তো কয়েক দিন আগে সোনিয়াপুত্র কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, তার পরিবারই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে ভারতেরই স্বার্থে। যারা ভারতের রাজনীতি ও কূটনীতি নিয়ে ভাবেন বা চিন্তা করেন তারা জানেন, নেহরুজি অখণ্ড মহাভারতের স্বপ্ন দেখেছেন। ভারতের হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষকেরা মনে করেন, অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠা সম্ভব। চলমান সময়ে ভারত ও তার গোয়েন্দাবাহিনী সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ নিয়ে কাজ করছে। যার ফলে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম বা তরুণেরা ধর্মমুক্ত বাংলাদেশের জন্য কাজ করছে। এ জন্য অর্থের কোনো অভাব নেই। বাংলাদেশে বহু মিডিয়া ও সংস্থা এ জন্য কাজ করছে। ভারত এমন একটা পরিস্থিতি ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, যখন সবাই বলবে স্থায়ী শান্তির জন্য ভারতের সাথে চিরস্থায়ী অধীনতামূলক মিত্রতা দরকার। এত দিন ভারত বাংলাদেশের ঘাড়ে হাত দিয়ে রাখত। এবার গলায় দাঁত বসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। সিংহ বা বাঘ যেমন প্রথমেই টুঁটি চেপে রক্ত চুষে নেয়। চীন বিষয়টি বুঝতে পেরেছে। তাই আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চান তাদের আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয়তাবাদী ইসলামি শক্তির আজ প্রধান কাজ হচ্ছে ভারতপন্থী রাজনীতি ও সংস্কৃতির হাত থেকে বাংলাদেশকে রা করা। আওয়ামী লীগ বলছে, এবার নাকি তাদের জন্য এটা মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশকে ইসলামমুক্ত করে ভারতের তাঁবেদারে পরিণত করা। আর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমপন্থী জাতীয়তাবাদী ইসলামি শক্তিকে জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে রা করতে হবে। এ সময়ে আমাদের প্রধান মিত্র হবে চীন, মিয়ানমার এবং মুসলিম বিশ্বের সরকার ও জনগণ। সবাইকে মনে রাখতে হবে জেনে হোক অথবা না জেনে হোক শেখ হাসিনা নিজেকে ভারত-নির্ভরশীল ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত করতে যাচ্ছেন। ভারতের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেলে তারা কাউকেও বাঁচতে দেয় না। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads