মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৩

তামাশা নয়, জাতির প্রত্যাশা পূরণ জরুরি


নতুন করে আট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, এটি সর্বদলীয় সরকার। আরো বলা হচ্ছে, এ সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। রাজনৈতিক সঙ্কট যখন ঘনীভূত অবস্থায় রয়েছে, বিরোধী দল ও জোট নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রশ্নে অনড়, দেশের নিরঙ্কুশ জনগণ একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও অভিযোগমুক্ত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষমাণ, তখন সরকার আট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর শপথের মাধ্যমে জাতিকে ভুল বার্তা দিয়েছে। জনগণ কোনোভাবেই এ ধরনের প্রহসন দেখতে চায় না। প্রথমত, তিন দলের প্রতিনিধিত্ব¡কে সর্বদলীয় বলা এক ধরনের মিথ্যাচার। এটাকে মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার পুনর্গঠন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। দ্বিতীয়ত, এরা মহাজোটের শরিক দল এবং এ কটি দল বিগত পাঁচ বছর ক্ষমতাচর্চা করেছে। সর্বোপরি এ ধরনের সরকারের ধারণা সংবিধানের সাথে একেবারেই সাংঘর্ষিক। অথচ সরকার সংবিধান থেকে এক চলুও না নড়ার ব্যাপারে বারবার বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। অধিকন্তু বিরোধী দল ও জোটের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ধারণা সংবিধানসম্মত নয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তা ছাড়া এ ধরনের সরকারের কর্মপরিধি কী, তা অজ্ঞাত রাখা হয়েছে। তারা কী দায়িত্ব পালন করবেন তা-ও স্পষ্ট করা হয়নি। মন্ত্রীর সাথে একজন উপদেষ্টারও নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এই উপদেষ্টা কী উপদেশ দেবেন সেটাও স্পষ্ট নয়। বিরোধী দল সরকারের এ ধরনের উদ্যোগকে একধরনের তামাশা ও প্রহসন বলে মন্তব্য করেছে। দেশের সুশীলসমাজ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, আইনবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ কেউ সরকারের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না। সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথেও এই অভিনব ধারণার সরকার কার্যত কোনো ভূমিকা পালন করবে না। বিরোধী দলের নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বের ধারণার প্রতি সরকারের এই অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের পর সঙ্কট নিরসনে সরকারের সদিচ্ছাকেই শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, সরকার যে সমঝোতা চায় না সে ধারণাই জনগণ পেয়েছে। জনগণ বুঝতে পারছে নাÑ সংবিধান মানার দোহাই দিয়ে আবার সংবিধানবহির্ভূত সর্বদলীয় ধারণা আমদানি কেন। অনেকের প্রশ্ন, এর মাধ্যমে কি মহাজোট দলভুক্ত দল কটির মন্ত্রী হওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকা নেতাদেরকে ক্ষমতা উপভোগ করার সুযোগ দেয়া হলো, নাকি সরকারি দলের বঞ্চিত ও অভিমানী নেতাদের বাগে আনার একটা উদ্যোগ নেয়া হলো? অনেক বিশ্লেষক এইটাও মনে করেন, জাতীয় পার্টিকে পোষ মানানোর এটি একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ফাঁদ। আবার বিরোধী দলের একটি অংশ মনে করে, ১৮ দলীয় জোটকে নির্বাচনের বাইরে রেখে এ টিম, বি টিম বানিয়ে একটি প্রহসনের নির্বাচনী খেলা জমিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার এটিও একটি বিকল্প ভাবনা। সরকার সম্ভবত ভুল পথে পা বাড়িয়েছে। তারা সঙ্কটের গভীরতা ও জনরোষের উত্তাপ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা আশা করি, বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে যে নামেই হোক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণায় ফিরে যেতে হবে। প্রয়োজনে বিরোধীদলীয় নেতার দেয়া ফর্মুলা অনুসরণ করে সংবিধান সংশোধনের পথে এগোতে হবে। সঙ্কট আরো ঘনীভূত ও দীর্ঘমেয়াদি করতে না চাইলে এখনই সমঝোতায় যেতে হবে। বিরোধী দল আগবাড়িয়ে প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ চেয়ে দূরদর্শিতা ও সঙ্কট উত্তরণে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে। এখন দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবেÑ জাতির কাছে এটিই এই সময়ের প্রত্যাশা।


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads