মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৩

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কেন?


দেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন কোন ধরনের সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে সেটি এখন মুখ্য আলোচনার বিষয়। বিরোধী জোট ও দলগুলো চাচ্ছে, নির্বাচনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। সরকার সেই দাবি মানতে নারাজ। তারা কথিত দানবের ভয় দেখিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে চান। অথচ তারা সংলাপ সংলাপখেলা করছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করে যদি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর হন তাহলে সংলাপের আহ্বান কেন? এর মানে সালিস মানি, কিন্তু তালগাছটা আমার।উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর সাথে মিলে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে দাবি আদায় করে ছেড়েছে। এই লক্ষ্যে স্থাপিত কথিত জনতার মঞ্চে যোগদান করে কিছু চাকরিজীবী দেশদ্রোহী কাজ করে প্রশাসনকে ধ্বংস করেন। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে লগি-বৈঠা দ্বারা আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে এবং অবরোধের মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দিয়ে জনদুর্ভোগ ঘটিয়েছে। এর ফলে ১/১১-এর অভ্যুদয় হয়, যে কারণে দুই বছর পর নির্বাচন করতে হয়েছে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় গিয়ে বর্তমান সরকার আদালতের রায়ের সুবাদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে এবং রায়ের সুবিধাজনক অংশটুকু নিয়ে অসুবিধাজনক অংশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে বাদ দিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাইÑ ক্ষমতায় থেকেই যেনতেনভাবে নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নাকি একটি রাজনৈতিক দর্শন ছিল : Once a man had been elected to office there was never any reason to leave (Freedom at Midnight Dominique Lappiere and Larry Collins, page 275). প্রধানমন্ত্রী মনে হয় সেই একই দর্শনে বিশ্বাসী। 
প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের দলীয় তথা ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলে ধরছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণও টেনে আনছেন। কিন্তু তিনি পাকিস্তানের উদাহরণ দিচ্ছেন না, যেখানে সম্প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। তিনি কি ভুলে যাচ্ছেন বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র নয়, এমনকি মালয়েশিয়াও নয়। তিনি বারবার সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন, যে সংবিধানকে সংসদে ব্রুট মেজরিটির জোরে ইচ্ছা মতের সংশোধন করেছেন। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এ যাবৎ একটি নির্বাচন হয়েছে (১৯৭৩ সালে), যাতে অনেককেই নমিনেশন দাখিল করতে দেয়া হয়নি এবং অনেককে জোর করে হারিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো সহিংসতা, সঙ্ঘাত, সংঘর্ষ ও ভোটকেন্দ্র দখল তথা নির্বাচনে কারচুপির সংস্কৃতি। শাসক জোট ছাড়া অন্য সব দল ও জোট, এমনকি সুশীলসমাজও চাচ্ছেন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। আসলে সরকারের ভয় হলো নির্বাচনে হেরে যাওয়ার এবং ক্ষমতা হারানোর। শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, ডেসটিনি, যুবক ও ইউনিপে টু দুর্নীতি, রেলগেট কেলেঙ্কারি এবং সর্বশেষ হলমার্ক কেলেঙ্কারিই হলো এই ভয়ের কারণ। সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী যদি তার জেদ বজায় রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চান এবং বিরোধী জোট যদি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে তাহলে সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়বে, যা দেশকে মহাসঙ্কটে দিকে ঠেলে দিতে পারে। 
এ অবস্থায় বিদেশী হস্তক্ষেপের সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। কোনো কোনো প্রতিবেশী দেশ সেই সুযোগের জন্য ওঁৎ পেতে আছে। সুতরাং সময় থাকতে সমঝোতার পক্ষে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ। একটি কথা আছেÑ Politicians think of the next election and statesmen think of the next generation.. অতএব সঙ্কীর্ণতা পরিহার করে এবং শুধু পরবর্তী নির্বাচনের কথা না ভেবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীনদের রাষ্ট্রনায়কসুলভ আচরণ করাই সময়ের দাবি। এুনি নির্দলীয় সরকার গঠন নিয়ে সংলাপে বসতে হবে। সরকারপ্রধানকেই এ জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads