শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৩

রাষ্ট্রপতি কি ব্যর্থ হলেন


বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে জাতিকে রক্ষা করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের শেষ সুযোগটিও সরকারি অসহযোগিতার কারণে নষ্ট হতে বসেছে বলে মনে হয়। উল্লেখ্য যে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক সংলাপের মাধ্যমে চলমান সমস্যার মীমাংসা এবং সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সম্প্রতি ১৮ দলীয় জোটের ২০ জনের একটি প্রতিনিধিদল তাদের সর্বশেষ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করে তাদের দাবি-দাওয়া ও সুপারিশমালা সম্বলিত একটি লিখিত প্রস্তাব তার কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ধৈর্য্যরে সঙ্গে তাদের কথা শুনেছেন এবং পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলসমূহের রিপোর্ট অনুযায়ী তার সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের প্রস্তাব ও সুপারিশমালা প্রেরণের আশ্বাস দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রায় চারদিন অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রপতির দফতর অথবা সরকারের তরফ থেকে সঙ্কট নিরসনের কোনও উদ্যোগ নেয়ার কথা জানা যায়নি। পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বলেছেন যে, রাষ্ট্রপতি তাকে নির্বাচন পর্যন্ত সরকার চালিয়ে নেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে পড়েছে যে, জাতীয় অভিভাবক হিসেবে বিরোধীদলীয় জোট মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সঙ্কট নিরসনের অন্যতম উপায় হিসাবে নির্বাচনকালীন সরকারের পদ থেকে শেখ হাসিনার অপসারণ বা পদত্যাগের যে দাবি উত্থাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি তার উপর কোনও গুরুত্ব আরোপ করেননি। অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে দলীয় পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে ছক এঁকেছেন তা থেকে তারা বিচ্যুৎ হবেন না। তবে প্রধানমন্ত্রীর সংসদের সমাপনী বক্তব্যকে আমরা বিভ্রান্তিকর বলে মনে করি। যে কোনো সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচনের সময় এলে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি বা রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন এবং রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপ্রধান এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে তাকে নির্বাচন পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাবার পরামর্শ দেন। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। তথাপিও তিনি নিশ্চয়ই অসত্য বলেননি। আমাদের ধারণা, রাষ্ট্রপতি তাকে সরকার পরিচালনা অব্যাহত রাখতে বলে সম্ভবত সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করে ফেলেছেন। কেননা, সমগ্র দেশবাসীর আপত্তি এখানেই। তারা শেখ হাসিনা অথবা আওয়ামী লীগের দলীয় কোনও নেতার অধীনে নয়, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চান। তাদের প্রত্যাশা, এ থেকে বেশি বা কম কিছুই নয়। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী তা চান না। তারই নেতৃত্বে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে পরিচালিত আন্দোলনে শত শত প্রাণ, হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংসের বিনিময়ে অর্জিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ক্ষমতায় গিয়ে তিনি বাতিল করে তার নিজের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেশকে সংঘাতের পথে ঠেলে দিয়েছেন। জামায়াত-বিএনপিসহ বিরোধীদলকে নির্মূল করে তিনি একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। বিরোধী দল এক্ষেত্রে প্রচুর সংযম প্রদর্শন করেছে এবং দু’বার ৬০ ঘণ্টা করে ও একবার ৮৪ ঘণ্টার হরতাল পালন করেছে। হরতালে জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তারা সঙ্কট সমাধানে রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে যে, এক্ষেত্রে তাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হচ্ছে এবং তাই যদি হয় তাহলে সংঘাত-সংঘর্ষের প্রকৃতির ব্যাপকতা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। আমরা তা চাইনা এবং এ প্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সরকার উভয়ের প্রতি জনগণের দাবি মেনে নেয়ার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমরা আবেদন জানাচ্ছি।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads