সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৩

ক্ষমতা ধরে রাখার রাজনীতি


জনগণতো দেশের প্রগতি চায়। দেশ অচল হয়ে পড়বে কিংবা সংঘাতে বিপর্যস্ত হবে এমন পরিস্থিতি জনগণের কাম্য নয়। কিন্তু জনগণ না চাইলেও অনাকাংখিত তেমন পরিস্থিতিই বিরাজ করছে দেশে। এ নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি, প্রাজ্ঞজনদের উদ্বেগ ও উপদেশও আমরা কম শুনিনি। কিন্তু যারা শুনলে দেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান হতে পারে, তারা যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না। বেপরোয়াভাবেই তারা নির্বাচনে আবার বিজয়লাভের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে দেশের পরিস্থিতি উন্নতির বদলে অবনতির মাত্রাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশের পরিমন্ডলে বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্বেগ ও আলোচনার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানাজন প্রকাশ করছেন নানা আশংকার কথাও। এমন অবস্থায় দেশের জনগণের জীবনযাপন অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে।
গত ২০ নবেম্বর মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। ‘পলিটিক্যাল ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোন উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। এর অংশ হিসেবে নিজের নেতৃত্বে একটি ‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠন করে নিয়েছেন। অন্যদিকে নাগরিক অধিকার লংঘনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে, এমন কি অবরোধের মধ্যেও পড়তে পারে। সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়, ২০১১ সালে শেখ হাসিনার সরকার একতরফাভাবে নির্বাচনপূর্ব নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সাংবিধানিক পদ্ধতিকে বাতিল করে দেয়। এই পদ্ধতির বদলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকার গঠন করে নিয়েছেন। কিন্তু তার এ পদ্ধতিকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি। দুই দলের এই অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে বিস্ফোরণোন্মুখ অচল অবস্থা বিরাজ করছে। বছর শুরুর আগ থেকেই একের পর এক হরতাল ও রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘর্ষে স্থবির হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বিরোধী দলীয় শীর্ষ নেতাদের ও মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সঠিক প্রক্রিয়ার অনুসরণ না করে আদালত থেকে ত্রুটিপূর্ণ রায় দেয়া হচ্ছে। এমন কি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া মৃত্যুদ-ের রায়ও দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পর্কে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বিচারের জন্য ২০০৯ সালে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এ আদালতে বিরোধী পক্ষের নেতাদের টার্গেট করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে মনে হয়েছে, এটি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন করার আরেকটি মাধ্যম। এতে বলা হয়, বিএনপির প্রধান শরীক জামায়াতে ইসলামীকে আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থক বাংলাদেশীরা মনে করেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দেশের ভিত্তি রচনায় ইসলামপন্থী দলগুলো ছিল হুমকি স্বরূপ। কিন্তু জামায়াতকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরিয়ে নেতা-কর্মীদের রাজপথে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়ে যাবে উল্লেখ করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, যদি নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশের ব্যাপারে হয়তো অবরোধের সিদ্ধান্তেও যেতে পারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন কার্যক্রম বন্ধ করা এবং পরবর্তী নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে একটি পথ খুঁজে বের করা।
নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত কর্ম সম্পর্কে কিছু পরামর্শ রাখা হয়েছে। আমরা  জানি না, তিনি এসব পরামর্শকে কতটা গুরুত্ব দেবেন। দেশের পত্র-পত্রিকা ও প্রাজ্ঞজনদের পরামর্শকে তিনি গুরুত্ব দেননি। ফলে আজ দেশে সংঘাত-সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, দেশের উন্নতি ও প্রগতির পথে দেখা দিয়েছে অচল অবস্থা। এমন অবস্থায় দেশের পত্র-পত্রিকায় বিদেশী পত্র-পত্রিকার মন্তব্য বেশ গুরুত্বের সাথে মুদ্রিত হচ্ছে। দেশের রাজনীতিবিদ ও নাগরিকরাও তার চর্চা করছেন বেশ গুরুত্ব দিয়ে। বর্তমান সরকারের একগুঁয়েমি ও ক্ষমতার লোভ দেশের মর্যাদার জন্য হানিকর হয়ে উঠেছে। জানি না দেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি কতটা উপলব্ধি করছেন। আমরা জানি, নিজের দেশ সম্পর্কে ভীনদেশীদের মন্তব্য ও উপদেশ খয়রাত আমাদের জন্য মর্যাদাকর নয়। কিন্তু এমন অবস্থায় আমাদেরকে কে নিয়ে গেল? এক্ষেত্রে সরকারের দায়ভারটাই প্রধান। কারণ তারা শপথের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেই শপথ কি তারা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছেন? আমরা জানি, দেশের বর্তমান সংকট এবং তার সমাধানের পথ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বেশ ভালভাবেই অবহিত আছেন। কিন্তু অবগতির সেই পথে তিনি চলেন কিনা এবং জনগণের আকাংখার অনুকূলে সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads