মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৩

দেশবাসীকে শায়েস্তা করতে ক্ষেপে উঠেছে সরকার


পয়লা নভেম্বর প্রকাশিত একটি পাঁচ টাকার দৈনিক হরকরায় সংবাদভাষ্যকার আনোয়ার চৌধুরীর প্রতিবেদন : দুই দলেই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। ধেয়ে আসছে সঙ্ঘাত-সহিংসতা। নভেম্বরেই তা ছড়িয়ে পড়তে পারে দেশব্যাপী। নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিপরীতমুখী অনমনীয়তার পরিণতিতে চূড়ান্তভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে রাজপথ। দুই দলই এখন হার না মানারসংকল্পে অটল। এ জন্য দল দুটি ইতোমধ্যেই সেরে রেখেছে রণপ্রস্তুতি, যা মঞ্চায়িত হতে পারে নভেম্বরের প্রথমার্ধেই। বিরোধী দলের সাথে কথা না বলেই ইসি নির্বাচনী আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করায় এ আশঙ্কা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য মুখোমুখি সংলাপের অপমৃত্যু ঘটলে কিংবা সংলাপ হলেও তা যদি সমঝোতাশূন্য থেকে যায়, তা হলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে নৈরাজ্য, যার অশুভ পরিণতিতে আবারো হোঁচট খেতে পারে শিশু গণতন্ত্র। প্রধান দুই দলের সঙ্ঘাতের কারণে তৃতীয় কোনো অরাজনৈতিক শক্তিও উড়ে এসে জুড়ে বসতে পারে। তার আগের দিন নিয়মিত দৈনিক নয়া দিগন্তে (মূল্য দশ টাকা) প্রতিবেদক মঈন উদ্দিন খান লিখেছিলেন, আন্দোলনেই সমাধান দেখছে বিরোধী দল : আলোচনা ও সমঝোতা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি, সরকারের মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী তির্যক উক্তি ও একরোখা মনোভাবে ফলপ্রসূসংলাপের সম্ভাবনা ক্রমেই ীণ হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে প্রধান দুই প আলোচনায় বসলেও রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনেই সমাধান দেখছে প্রধান বিরোধী দল। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে ১৮ দলকে সাথে নিয়ে কঠোর অসহযোগ আন্দোলন শুরু করবে দলটি। গত দুদিনে দলের নীতিনির্ধারকেরা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আন্দোলনের েেত্র গত পাঁচ বছরে বিএনপি নমনীয় কৌশল নিয়েছিল। তাদের এ নমনীয়তাকে সরকারি দল অমতা হিসেবে অবমূল্যায়ন করেছে। সরকারি দলের অসম্মানজনক আচরণ সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রায় বিরোধী দল সংযত ছিল। বিএনপির আশা ছিল শেষতক একটি সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচনের মাধ্যমে মতার পালাবদল ঘটবে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে এ আশা উবে গেছে। এখন আন্দোলন ছাড়া কোনো উপায় নেই। অন্য দিকে সরকার মনে করছে, বিএনপি এখন অনেকটাই তছনছ। বিরোধী দলের শক্তিও য়ে গেছে। এ অবস্থায় একতরফা নির্বাচন হলেও বিএনপি তা প্রতিহত করতে পারবে না। ২৫ অক্টোবর বিরোধী ১৮ দলীয় জোটনেত্রী খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের নির্বাচনপূর্ব তিন মাসের মেয়াদে মতা আঁকড়ে থাকাকে অবৈধসাব্যস্ত করে যে কঠোর কর্মসূচিঘোষণা করেছিলেন, সেই কর্মসূচি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত কঠোর নিষেধাজ্ঞাও নিবর্তনমূলক ধরপাকড় মামলা হামলার আধা-সামরিক জরুরি অবস্থাজারি করেও ঠেকাতে পারেনি সরকার বাহাদুর। হরতাল কর্মসূচির প্রস্তুতির দিন থেকে ৬০ ঘণ্টা একটানা হরতারের চার দিনে চব্বিশ জনের মৃত্যুসহ দেশব্যাপী অভ্যুত্থানেপুলিশের গুলি সরকারি দলের ষণ্ডাদের সশস্ত্র আক্রমণ নির্যাতন পঙ্গু করেছে শত শত প্রতিবাদী মানুষকে। মামলার জালে আটক বা পলাতক হয়েছেন ৬৫ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী। গণগ্রেফতারের জেরে গিজগিজ করছে দেশের ৬৮টি কারাগার। তিল ধারণের জায়গা খালি থাকেনি। তবু আন্দোলন থামেনি। পুলিশের গ্রেফতারবাণিজ্য প্রতিরোধে লাঠিসোটা বঁটি খুন্তি তীর ধনুক নিয়ে সড়ক অবরোধে নেমে এসেছে শহর উপশহরের প্রান্তিক মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর তরফে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আওতায় চলতি সংসদ থেকে সর্বদলীয়একটি সরকার গঠনের ল্েয প্রথমে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি প্রধান এরশাদের সাথে গণভবনে নৈশভোজ ও সংলাপ’-এর ধারাবাহিকতায় সংসদীয় বিরোধী দলনেতা ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে দ্বিতীয় নৈশভোজে ও সংলাপ’-এর আমন্ত্রণ জানাতে যে ফোনালাপপ্রহসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তার তিক্ততা ও দোষারোপের বাগ্যুদ্ধ সরকারের তরফেই গণমাধ্যমে ফাঁস করে দিয়ে সংলাপ প্রক্রিয়ার অপমৃত্যুনিশ্চিত করা হয়েছিল। ৬০ ঘণ্টার হরতালের অবসানে বিরোধী দলের কঠোরকর্মসূচির বিরতিকালে ৩০ অক্টোবর সরকারি দলের কঠোরঘোষণা এলো : নির্বাচনকালীন সর্বদলীয়সরকার গঠন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সংলাপের ফিরতি উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করার পর তা প্রত্যাখ্যান করায় এখন বিএনপি যদি আলোচনার দ্বার প্রশস্ত না করে তা হলে বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনের পথে হাঁটবে মতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সমঝোতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সমঝোতার আহ্বান এখনো বহাল আছে। বিএনপিকেই এখন সাড়া দিতে হবে। সারা দেশে পুলিশি অভিযান গ্রেফতার হয়রানি স্থানীয় হরতাল প্রতিরোধ সংঘর্ষ সহিংসতা মোটেও থামেনি। এক রকম জরুরি অবস্থার থমথমে পরিবেশ কর্মজীবনে অচলাবস্থা বিরাজ করেছে দেশের সর্বত্র। সপ্তাহান্তে ৩১ অক্টোবর সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও পরদিন শুক্রবার গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। তবে মিডিয়ায় আর কেতাবি সুশীলসমাজে একটা সংলাপ সংলাপখেলারও চালবোল সরব রাখা হয়েছে। কার্যত পাল্টাপাল্টি প্রচার কৌশলের ফাঁদে আটকা পড়েছে সংলাপ। ২ নভেম্বর নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর সারা দেশে আবারো টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। একই দিনে নির্বাচন নিয়ে চলমান সঙ্কট নিরসনে দুই বড় দলের মহাসচিব পর্যায়ে নিঃশর্ত সংলাপে বসার জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আলোচনার জন্য হরতাল-অবরোধ বাধা নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বলেছেন : হরতাল দিলো কি দিলো না এ নিয়ে আমি চিন্তিত নই, বরং অবাধ নিরপে এবং সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন আমাদের কাছে মূল ইস্যু।আবার ৩ নভেম্বরই আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে তিনি বলেছেন, অবিলম্বে হরতাল প্রত্যাহার না করলে বিএনপির সাথে আলোচনা হবে না। ইতোমধ্যে পঞ্চদশ সংশোধনীর আওতায় প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে গণভবনে আরেক দফা সংলাপ ও নৈশভোজের আপ্যায়নে মিলিত হয়েছেন সিপিবি ও বাসদ জোটের প্রতিনিধি দলের সাথে। ওই দল বিরোধী দলনেতা খালেদা জিয়ার সাথেও সাাৎ করেছে, বিএনপি নেতাকে ১৮ দলীয় জোট ভেঙে দিয়ে জামায়াত ও হেফাজতের সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছে। আরো প্রকাশ : সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সদস্যদের সম্পৃক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। সংসদের অনুমোদনের জন্য ৪ নভেম্বর শুরু হওয়া মুলতবি অধিবেশনেই এ প্রস্তাবটি এমপিদের আলোচনার জন্য উত্থাপিত হবে। এ দিকে সংসদে অনুমোদনের পরপরই বিরোধী দলকে বাদ দিয়েই নির্বাচনকালীন এই সরকার গঠনে হাত দেবে সরকার। এ জন্য অচিরে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হবে। অন্য দিকে অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ যখন সরকার প্রথমে শুধু রাজধানীতে একরকম আধাসামরিক জরুরি অবস্থার মতো ঘরোয়া বা প্রকাশ্য সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নিবর্তনমূলক ধরপাকড় শুরু করল, তখন থেকে একটা ভূরাজনৈতিক চাঞ্চল্যও দেখা দিলো বাংলাদেশকে ঘিরে। বিশেষ করে ভারতীয় মিডিয়া সরব হয়ে উঠল বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে। ৩০ অক্টোবর দিল্লির দরবার-ঘনিষ্ঠ ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে বাংলাদেশসংক্রান্ত প্রতিবেদন : (সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর আওতায় একটা নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ নিয়ে) বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নৈশভোজ ও আলোচনায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নিরপে সরকারের দাবিতে অটল। বিএনপির নীতি ও আদর্শের ব্যাপারে ভারত এখন আরো বেশি উদ্বিগ্ন। আর এখানেই ভারত ও মার্কিন অবস্থান ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যত বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতি অনেক অনুকূল। আর ভারত মনে করে, এই জোট সফল হলে বাংলাদেশ জাতি হিসেবে অন্যরকম হয়ে যাবে। গত কয়েক বছরে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতি আরো বেশি চরম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা ও আল কায়েদার প্রভাব চিহ্নিত করেছে। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো থেকে এসব গ্রপকে দেয়া হয়েছে প্রচুর অর্থ। কিছুটা দেয়া হয়েছে পাকিস্তান থেকেও। শেখ হাসিনার সরকার নিয়ে তুলনামূলক কম স্বস্তিতে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসের সাথে প্রধানমন্ত্রীর দ্বন্দ্ব, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে দুর্নীতি এবং যুদ্ধাপরাধ আদালত নিয়ে এই অস্বস্তি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারিপর্যায়ে হয়তো ভাবা হতে পারে বিএনপি-জামায়াতের অধীনে বাংলাদেশ হবে অধিক মুক্তবাজার। তারা মতায় গেলে কট্টর ইসলামপন্থী থেকে বেরিয়ে আসবে। ২০০১ সালে মুখোমুখি সঙ্ঘাতে বিডিআর সদস্যরা ১৫ বিএসএফ সদস্যকে হত্যা করে পীরদিয়াহ এলাকায়। ওই সময় জামায়াত সরকারে স্থান করে নেয়। গুরুত্বপূর্ণ এই পদ পেয়ে তারা তাদের ইসলামি এজেন্ডা ছড়িয়ে দেয়া শুরু করে। ওই সময়ে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ ও হুজির মতো সন্ত্রাসী গ্রপগুলো বিকশিত হয়। ভারত সেসব দিনে ফিরে যাওয়ার বিরোধিতা করছে। এর ওপর রয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। বাংলাদেশেও রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা ও মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রেেিত নয়া দিল্লি মনে করে পরিস্থিতি বিপর্যয়ের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশে কট্টরপন্থী রাজনীতি বৃদ্ধি পেলে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে মিয়ানমারের স্থিতিশীলতায়। রোহিঙ্গাদের মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বা ও আল কায়েদার অনুপ্রবেশের বিষয়টি বারবারই বলা হচ্ছে। কট্টরপন্থী রাজনীতির ফলে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে তা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ছড়িয়ে পড়তে পারে চীনের ইউনান প্রদেশেও।এক কথায়, মিয়ানমার-চীনকে জড়িয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের উৎসসাব্যস্ত করে একটা সাই-ওয়ার বা প্রচারযুদ্ধের বিউগল বাজাল ভারতীয় নিরাপত্তা রাষ্ট্রের ওই গণমাধ্যম। তার অর্কেস্ট্রার দামামা আরো কর্কশ ধ্বনিতে অনুকীর্তিত হলো ১ নভেম্বর ভারতের দি ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত বিবিসির উত্তর-পূর্ব ভারতীয় সংবাদদাতা সুবীর ভৌমিক রচিত একটি প্রতিবেদনে : শেখ হাসিনা অবশেষে নীরবতা ভেঙে আসন্ন সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ল্েয মতাসীন ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর পরপরই তিনি খালেদা জিয়ার সাথে টেলিফোনে কথা বলেন এবং তাকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। খালেদা জিয়া (হরতাল চলাকালে দাওয়াত গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে) ওই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন, ৬০ ঘণ্টার হরতাল পালনে দৃঢ় থাকেন, যা অত্যন্ত সহিংস ঘটনায় পরিণত হয়। ৩৭ মিনিটের টেলিফোন সংলাপটি অতীত সময়ের তুচ্ছ বিষয়ে ঝগড়া েেত্র পরিণত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি প্রধান নিরপে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবির প্রতি অনড় থাকেন। আর শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে সেটা আর সম্ভব নয়। তিনি এর বদলে সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব দেন। বিএনপি প্রধান তার দাবিতে অনড় থাকায় রাজনৈতিক সমঝোতার আশা বিলীন হয়ে যায়।’ (সমঝোতা প্রক্রিয়ায়) যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূতেরা জড়িয়ে পড়েছেন। আবার স্থানীয় মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য নয়া দিল্লি রওনা হওয়ার আগে ভারতীয় হাইকমিশনারের সাথে এক প্রাতরাশে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছে। মজিনার ঢাকায় ফেরার পর মার্কিন দূতাবাস সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় যে, ‘বাংলাদেশে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একইভাবে চিন্তা করছে।এসব খবরে ভারতীয় হাইকমিশন এবং ভারতের পররাষ্ট্র দফতর ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পরিচয় প্রকাশ না করা ভারতীয় কূটনীতিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একইভাবে চিন্তা করছে না।ভারতীয় কূটনীতিকেরা ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মজিনা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মতো আচরণ করছেন।তারা বলছেন, তিনি বিএনপিকে মতায় আনার জন্য সবকিছু করছেনএবং খালেদা জিয়া রাজপথে সহিংস প্রতিবাদের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে আরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছেন। ভারতীয় কূটনীতিকেরা মনে করছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একই চিন্তা করছে বলে মিডিয়ায় প্রচার, ভারত ও ঢাকায় তার শ্রেষ্ঠ বন্ধুর মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটানোর আমেরিকান পদপে। ঢাকায় আওয়ামী লীগ সরকার ভারতকে নিরাপত্তা ও কানেকটিভিটির যে সুবিধা দিয়েছে, তা ঢাকার কোনো সরকার আগে কখনো দেয়নি। হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখার পে ভারতের যৌক্তিক কারণ রয়েছে, যদিও তিনি যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েছেন সে সম্পর্কে কূটনীতিকরা সচেতন। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার তার কৌশলগত স্বার্থ দেখবে এবং বাংলাদেশে চীনা আগ্রাসন বন্ধে সহায়তা করবে। ২০০১-০৬ সালে বিএনপি শাসনকালের বৈরিতার জন্য ভারত দলটির প্রতি বিরূপ। দিল্লির কাছে প্রকৃত উদ্বেগের কারণ হলো জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলাম। ঢাকা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত দ্বন্দ্বের মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ভারতীয় কূটনীতিক বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটে চীনের ভূমিকাকে গঠনমূলকহিসেবে বর্ণনা করেছেন। চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন তার পূর্বসূরিদের চেয়ে অনেক বেশি সরব। বাংলাদেশের বিদ্যমান সঙ্কট নিয়ে তিনি তিনবার বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি সহিংসতা পরিহার করে বিচণতার পরিচয় দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এমনকি উভয় দলের মধ্যে আমাদের বন্ধুদের মাধ্যমেসঙ্কট নিরসনে চীনের মধ্যস্থতার প্রস্তাবও দিয়েছেন। চীন চট্টগ্রাম উপকূলের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে আগ্রহী। এই প্রথমবারের মতো ভারতীয় কূটনীতিবিদেরা মালার আরেকটি মুক্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন নন। তারা মনে করছেন, সোনাদিয়া দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরো ভালোভাবে প্রবেশ করা যাবে এবং এটা আরো বাণিজ্য, বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ করে তুলবে। ভারতের বাংলাদেশ নীতির প্রতি মার্কিন বিমুখতার যে বহিঃপ্রকাশ ভারতীয় নিরাপত্তা রাষ্ট্রের তরফেই এভাবে প্রকাশ পেয়েছে, তার দৈন্য মোচনে চীনকে দলে টানার একটা নিষ্ফল প্রচেষ্টা আমরা দেখছি ওই প্রতিবেদনের উপসংহারে। কারণ চীনের রাষ্ট্রদূত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির স্বার্থে সংলাপের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কট মীমাংসার যে বাঞ্ছনীয়তার কথা বলেছেন, সেটা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ব্যক্ত অভিমতেরই সমতুল্য। আর বিসিআইএম সংযোগ এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার যে বহুমুখী উদ্যোগ বেশ কয়েক বছর ধরেই চীন অনুসরণ করে আসছে, তার প্রতি এত দিনে ভারত প্রসন্ন হয়েছে এটা বাংলাদেশের জন্য সুখবর। তবে তার জন্য শেখ হাসিনাকে মতায় ধরে রাখতে হবে এমন কোনো আবদারের চীনা সহমত একেবারেই অবিশ্বাস্য। এরকম একটা স্পিন বা রটনার লাটিম দিয়ে ভারতবাসীকে ভোলানো যেতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের ওয়াকেবহাল পাঠককে যে বিভ্রান্ত করা যাবে না, সে কথা ভারতীয় কর্তৃপ ভালোভাবেই জানেন। তাই ভারতীয় সরকারি মন্তব্যে ও কূটনৈতিক সদালাপে দেখা যায় অনেক নরম সুর। ঢাকা, দিল্লি ও ওয়াশিংটনের ভারতীয় কূটনীতিবিদেরা সাংবাদিকদের কাছে সাধারণভাবে বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান চাইলেও তাদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য আছে। তাই এক দেশ অন্য দেশকে বুঝতে ও বোঝাতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে ওয়াশিংটনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায়ও এই দুই দেশের কূটনীতিকেরা বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন। মজিনার দিল্লি সফর এ প্রক্রিয়ারই অংশ। দিল্লি যাওয়ার আগে গত ২২ অক্টোবর সকালে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরনের সাথে তার বাসায় দেখা করেন মজিনা। ফিরতি ২৮ অক্টোবর মজিনার সাথে তার বাসায় দেখা করতে যান পঙ্কজ শরন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে বৈঠকগুলোতে ভারতের প থেকে বলা হয়েছে, ভারত কখনো চাইবে না, বাংলাদেশের মাটি ভারতবিরোধী কাজকর্মের জন্য ব্যবহৃত হোক। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিক, এটি ভারত চায় না। গত সাড়ে চার বছরে বাংলাদেশ সরকার ভারতের উদ্বেগের দিকটায় যথেষ্ট নজর দিয়েছে। সন্ত্রাস বন্ধ করেছে। মৌলবাদীদের মোকাবেলায় সফল হয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হোক, এটা ভারত অবশ্যই চায় না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দীন ৩১ অক্টোবর দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত তার সফরের সময় উপমহাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন। ভারত উপমহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। বিভিন্ন বিষয়ে তার নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে। এটা জানা-বোঝার চেষ্টা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত ঘটনাপরম্পরা প্রতিবেশী দেশের নিজস্ব ও ভেতরকার বিষয়। এ নিয়ে তার মন্তব্যের কিছু নেই। তবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ক্রমেই স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। তাই এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশের মানুষকেও। কারণ ভারতের পরো সমর্থন পেয়ে এদেশবাসীকে কঠোরতর দমননীতি দিয়েই শায়েস্তা করতে েেপ উঠেছে মতাসীন সরকার


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads