মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৩

সংলাপ ও আওয়ামী লীগের অবস্থান


গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কথা বলতেই হবে, এটি নাকি গণতন্ত্রের ভদ্রতা বা সংস্কৃতি। আমেরিকা কথা বলে আর যুদ্ধ করে। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখে আসছি আমেরিকা শক্তি প্রয়োগ করে কাজ হাসিল করতে চায়। ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও দেশকে অনুগত রাখা আমেরিকার একটা নীতি। আমেরিকার মতা আছে তাই বিশ্বজনমতকে তোয়াক্কা করে না। আমেরিকা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ফোনেও আড়ি পাতে। এর মানে আমেরিকা বন্ধুদেরও বিশ্বাস করে না বা সম্মান করে না। 
আমাদের প্রতিবেশী ভারতও ভয় দেখিয়ে প্রতিবেশীদের চিরদিনের জন্য দলে রাখতে চায়। আশপাশের দেশগুলোতে ভারতের গোয়েন্দাদের উপস্থিতি একেবারেই প্রকাশ্য। শান্তিপ্রিয় দেশ শ্রীলঙ্কায় কয়েক যুগ ধরে তামিলদের স্বাধীনতার উসকানি দিয়ে দেশটিকে অশান্ত করে রেখেছিল। সেই তামিলদের হাতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী প্রাণ হারিয়েছেন। পাকিস্তানের সাথে ভারতের বৈরিতা ১৯৪৭ সাল থেকে। এর আগে থেকে বৈরিতা মুসলমানদের সাথে। কংগ্রেস মানে হিন্দু নেতারা চেয়েছিলেন ভারতবাসীর জন্য শুধু একটি রাজনৈতিক দল থাকবে দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত। শুরুতে কংগ্রেস ছিল সার্বজনীন সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল। এর ছায়াতলে থেকে সবাই দখলদার ইংরেজদের সাথে দেনদরবার করে যাচ্ছিলেন; কিন্তু কার্যেেত্র দেখা গেল কংগ্রেস নেতারা ভারতীয়বলতে শুধু হিন্দুদেরই মনে করেন। তারা বলতেন, হিন্দু ও মুসলমানের সমস্যা একটিই। মুসলমানদের আলাদা কোনো সমস্যা নেই। ফলে একপর্যায়ে মুসলমানেরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য আলাদা রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করে, যা ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। 
১৮৭৩ সালেই স্যার সৈয়দ প্রশ্ন তুলেছিলেন, ইংরেজরা মতা দখল করেছে মুসলমানদের কাছ থেকেই। এখন যাওয়ার সময় কার কাছে মতা দিয়ে যাবে? এটি ছিল একটা মৌলিক প্রশ্ন। অখণ্ড ভারত রা করার জন্য মুসলমানেরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু হিন্দু নেতারা মেজরিটি বা সংখ্যাতত্ত্বের জোরে মুসলমানদের কোনো প্রস্তাবই গ্রহণ করতে রাজি হননি। ফলে সময়ের পরিক্রমায় ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে হিন্দু ও মুসলমানের রাস্তা আলাদা হয়ে যায়। এর পরই জিন্নাহ সাহেব দ্বিজাতিতত্ত্ব পেশ করেন। তিনি প্রমাণ করতে সফল হন, ভারতের মুসলমানেরা সব দিক থেকেই একটি স্বতন্ত্র জাতি। ফলে ১৯৪৭ সালে মুসলিম মেজরিটি ভৌগোলিক এলাকা নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। 
অখণ্ড বঙ্গদেশেও মুসলমানেরা মেজরিটি ছিল। অখণ্ড স্বাধীন বঙ্গদেশ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মুসলমানদের আগ্রহ ছিল সবার চেয়ে বেশি; কিন্তু কংগ্রেস নেতারা রাজি হননি। কারণ তারা প্রতিবেশী হিসেবে মুসলিম মেজরিটি বঙ্গদেশ দেখতে চাননি। তাই বঙ্গদেশকে বিভক্ত করে এবং পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দেয়। সেই মুসলিম মেজরিটি খণ্ড পূর্ব বাংলাই আজ স্বাধীন বাংলাদেশ। ২৩ বছর বাঙালি মুসলমানেরা পাকিস্তানের সাথে ছিল। এই সহ-অবস্থান নানা কারণে সুখের ছিল না। ফলে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। সত্তরের নির্বাচন ছিল এক ধরনের রেফারেন্ডাম। পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমানেরা বাঙালিদের রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে ভোট দেয়। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাঙালিদের একক রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ। নির্বাচনের ফলাফল খুবই বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। এমন পরিবেশে কোনো সমঝোতা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু হয়তো সমঝোতা চেয়েছিলেন; কিন্তু বাইরের পরিবেশ একেবারেই অনুকূলে ছিল না। সমঝোতা না হওয়ার জন্য বাইরে নানা অদৃশ্য শক্তি কাজ করে চলছিল। এর মধ্যে ভারত ছিল অন্যতম প্রধান শক্তিশালী খেলোয়াড়। ভুট্টো ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী হাত মিলিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়াকে বেকুব বানিয়েছে। ভারত চেয়েছিল, পাকিস্তান ভেঙে যাক। ভারতের শাসকেরা মনে করেছিলেন যদি পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়, তা হলে ইসলামি প্রভাবমুক্ত একটি রাষ্ট্র হবে, যা চিরদিনের জন্য ভারতের তাঁবেদার হয়ে থাকবে। পাকিস্তান ত্যাগ করে স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ ইসলাম ও মুসলমানিত্ব এমনভাবে আঁকড়ে ধরবে, তা ভারতের ধারণায় ছিল না। 
১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রোপট আর ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রোপট একই ছিল। এর মানে হচ্ছে, মুসলমানেরা নিজেদের স্বার্থ রার জন্য দুই পরে সাথে নেগোশিয়েট করতে হয়েছে। এই দুই প হচ্ছে শাসক ইংরেজ ও কংগ্রেস। উভয় প ছিল শক্তিশালী ও মেজরিটি। ফলে তারা সংখ্যাতত্ত্ব বা মেজরিটির জোরে সমস্যার সমাধান চেয়েছিল। সমঝোতা হয়নি, ভারত ভেঙে গেল। হিন্দু নেতাদের গোঁয়ার্তুমিতে ভারত ভেঙে দুটি দেশ হলোÑ পাকিস্তান ও ভারত; কিন্তু ভারত স্বপ্ন দেখে মহাভারতের, যে মহাভারত আফগানিস্তান থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৯৭১ সালেও সমঝোতা হয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবের সমঝোতা হয়নি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মনে করেছিল, শক্তি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান করবে। এ বিষয়ে অদৃশ্য স্টেকহোল্ডার ভারতের কথা চিন্তা করেনি। ভারত ও পাকিস্তান ভেঙেছে এর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা হিসেবে। আর আমরা পেয়েছি স্বপ্নের স্বাধীনতা। সেই ১৯৭১ সাল থেকে ভারত এখনো আমাদের পরম বন্ধু। আর এ বন্ধুত্বহচ্ছে পরম আনুগত্যের। ফলে আমাদের ভেতর ঝামেলা ও অশান্তি লাগিয়ে রেখে ভারত নিয়মিত দুধ মাখন খেয়ে যাচ্ছে। 
এই তো কদিন আগেই ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক ভারতীয় কাগজ টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ইকোনমিক টাইমসে এক মতামতভিত্তিক নিবন্ধে ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়ে লিখেছেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে হাসিনাকে আবার মতায় বসাতে হবে ভারতেরই স্বার্থে। ভৌমিক মশাই েেপ গিয়ে বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যবলে অভিহিত করেছেন। যদিও কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা বলেছে, নিরপে নির্বাচন হলে হাসিনা পরাজিত হবেন। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ দিল্লির স্বার্থ রাকারী একটি রাজনৈতিক দল। অনেক দিন ধরেই বিষয়টিতে কিছুটা রাখঢাক ছিল। এখন একেবারেই প্রকাশ্য হয়ে গেছে। দিল্লি চায় এ অঞ্চলে তার নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হোক। এ ব্যাপারে দিল্লি আমেরিকা ও তার বন্ধুদের সমর্থন চায়। সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশিত হয়ে গেছে যে, ১৯৭১ সালে ইসরাইল ভারতীয় সৈন্যদের সাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। ইসরাইল মনে করে হাসিনা ও আওয়ামী লীগ মতায় থাকলে ইসরাইলের স্বার্থ রা হয়। আমরা নতুন হিসাব পেয়েছি যে, মুসলমানদের দুই পবিত্র স্থানের খাদেম সৌদি বাদশাহ এখন মিসরের সরকারকে মুরসির বিরুদ্ধে সমর্থন দিচ্ছেন। ইসরাইলের স্বার্থ মুসলমানবিরোধী আর বাদশাহর স্বার্থ গণতন্ত্রবিরোধী। বাদশাহ এ ব্যাপারে মিসরের সেনাবাহিনীকে ১২ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছেন। ভারত ১৯৪৮ সাল থেকেই ইসরাইলের বন্ধু। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ভারত ও ইসরাইলের মুসলিমবিরোধী জোটকে সমর্থন করে। ভারতীয় কাগজে প্রকাশিত হয়েছে ১৯৭১ সালে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ভারতের সমর্থনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। ইন্দিরা গান্ধীর নাতি রাহুল বলেছেন, তার পরিবারই পাকিস্তান ভেঙেছে। পাকিস্তান সৃষ্টি ভারত কখনো মেনে নিতে পারেনি। ফলে ১৯৪৭ সাল থেকেই ভারত পাকিস্তান ভাঙার পরিকল্পনা করে এসেছে। কারণ ভারত প্রতিবেশী হিসেবে কোনো শক্তিশালী দেশ চায় না। 
প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত বাংলাদেশকে কেমন দেশ হিসেবে দেখতে চায়? বাংলাদেশের রাজনীতিতে ৪৩ বছর ধরে এটিই প্রধান দ্বন্দ্ব। ভারত বাংলাদেশকে শুধুই একটি তথাকথিত ধর্মনিরপে (ধর্মহীন) বা ইসলামবিহীন বাঙালি রাষ্ট্রহিসেবে দেখতে চায়। আওয়ামী লীগ ও হাসিনা ভারতের এ নীতিকে সমর্থন করে থাকে। এমনকি ভারত ও হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নিজেরা ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলকে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল মনে করে। এবার মতায় এসে হাসিনা সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহশব্দ বাদ দিয়ে দিয়েছেন। অন্য দিকে সাধারণ মানুষ বা ভোটারদের ধোঁকা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও এর নেতারা বক্তৃতা দেয়ার সময় আল্লাহু আকবর বা বিসমিল্লাহ বলেন না নিজেদের সেকুলার বা ধর্মহীন প্রমাণ করার জন্য; কারণ ভারত হাসিনা ও তার দলকে ধর্মহীনই দেখতে চায়। আমাদের সংবিধানে বহু সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অংশ ধোঁকাবাজ। তারা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য মুখে এক কথা বলে আর অন্তরে আরেক কথা পোষণ করে। কদিন আগে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সংবিধানের মূল নীতির সাথে সাংঘর্ষিক কি না তা নিয়ে আদালত মতপ্রকাশ করেছেন। ইস্যুটা ছিল সার্বভৌমত্ব কার? প্রশ্ন উঠেছে মানুষ সার্বভৌম না আল্লাহ সার্বভৌম? আমাদের সংবিধান বলছে, মানুষ সার্বভৌম। একটি রাজনৈতিক দল বলছে আল্লাহ সার্বভৌম। যুক্তিতর্ক হলোÑ যারা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না বা মানে না, তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মানে না। সংবিধান ভুল হোক বা শুদ্ধ হোক যতণ জারি থাকবে বা বহাল থাকবে, ততণ আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানতে পারি না আইনের দৃষ্টিতে। পুরো বিষয়ই হচ্ছে রাজনৈতিক। আধুনিক রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রাজনীতিকেরা। যদি কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি ধর্মহীন বা নাস্তিক হন, তা হলেও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি চালাতে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। এক সময়ে স্বেচ্ছাচারী রাজা-বাদশাহরা বলতেন, আমিই আইন। আল কুরআনে বর্ণিতÑ ফিরাউন তো নিজেকে খোদা বলেই দাবি করেছে। কিছুকাল আগেও গির্জা বড় না সিংহাসন বড়, এ নিয়ে মারামারি ও খুনোখুনি হয়েছে। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব ধর্মের অনুসারীদের ভেতর এমন মারামারি দিন দিন বেড়ে চলেছে। তবে মুসলমানের বিরুদ্ধে বাকি ধর্মাবলম্বীরা সবাই একাট্টা। বড় বড় রাষ্ট্রও এখন ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে ক্রুসেড শুরু করেছে। পশ্চিমা গবেষকেরা মনে করেন, আগামী শতাব্দীতে বিশ্বে ইসলাম আরো অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে যাবে। তাই এখনই ইসলামের এই অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করতে হবে। যদিও বেশ কিছু মুসলিম দেশ ও মুসলিম রাজনৈতিক দলও ইসলামবিরোধী এ জোটে ঢুকে পড়েছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও একই ঘরানার অন্যান্য দল ও গোষ্ঠী ইসলামবিরোধী বিশ্বজোটের তাঁবেদারে পরিণত হয়ে গেছে। এরা প্রকাশ্যে বলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ইসলামিক। রাষ্ট্রমতা নিজেদের দখলে রাখার জন্য এরা নানা ধরনের ফন্দিফিকির করে। এসব কথার মাধ্যমে বলছি না যে, আওয়ামী ঘরানার বিরোধী শক্তিগুলো ইসলামবিদ্বেষী জোট সম্পর্কে সজাগ আছে। বিএনপি যদিও বলে থাকে তারা জাতীয়তাবাদী ইসলামি শক্তির প;ে আর দেশের ইসলামি দলগুলোও বিএনপিকে মিত্র মনে করে; দেখেছি, বিএনপি যখন মতায় থাকে তখন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত থাকে ধর্ম ও সংস্কৃতি। এই মন্ত্রণালয়ের জন্য তেমন কোনো বরাদ্দ থাকে না। ডাকসাইটে অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান বলতেন, গান-বাজনার জন্য এর চেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া যাবে না। মইন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সময় একজন ধর্মমন্ত্রী ছিলেন যিনি নামে মুসলমান ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ধর্ম থেকে হাজার মাইল দূরেথাকতেন। 
বিষয়গুলো নিয়ে বারবার লিখছি শুধু পাঠকদের স্মৃতিকে একটু নাড়া দেয়ার জন্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে, তার মৌলিক কারণ ভারত। ভারত মনে করে, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার আরো কয়েকবার মতায় থাকা দরকার। তা হলে বাঙালি (ইসলামমুক্ত) সংস্কৃতির মূল আরো গভীরে যাবে এবং রাষ্ট্র ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে। তখন দিল্লির মহাভারত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আর কোনো বাধা থাকবে না। পাঠকদের বলব, আপনারা নেহরু ডকট্রিন বা গুজরাল ডকট্রিন পড়ুন। বাংলাদেশে প্রকাশিত ইন্ডিয়া ডকট্রিনপড়ুন। ভারত কী চায়, তা না জানলে বাংলাদেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মনীতি কিছুই বুঝতে পারবেন না। 
এবার অনুধাবন করুন, শেখ হাসিনা সংবিধানের মৌলিক নীতি, গণতন্ত্র ও আদালতের দোহাই দিয়ে সংসদে মেজরিটির জোরে কেন নির্বাচনকালীন সময়ের নিরপে ও নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিলেন। কদিন আগেই তো দিল্লি বলেছে, তারা নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায়। তবে সমঝোতা হলে ভালো; কিন্তু ভারতের মিডিয়া ও সরকার পরামর্শ দিচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের উপস্থিতিকে আরো দৃশ্যমান করা হোক। ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক মনে করেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দিল্লির চুপ করে থাকা চলবে না। ভৌমিক বাবু আবার বাংলাদেশের বিডিনিউজ২৪ডটকমের সম্পাদক মর্যাদার লোক। তিনি ভারতীয় কাগজে লেখার জন্য পরামর্শ গ্রহণ করেন ওই বিডিনিউজ থেকে। 
দিল্লির মতামত ছাড়া শেখ হাসিনার পে নির্দলীয় ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন করা অসম্ভব। কারণ এ দলই একমাত্র দল, যারা খুবই বিশ্বস্তভাবে ভারতের স্বার্থ রা করতে পারবে। বাংলাদেশে নিজের স্বার্থ রার ব্যাপারে ভারত আর দীর্ঘ দিন অপো করতে চায় না। ১৯৭১ সালে দিল্লির সাথে আওয়ামী লীগের যে সমঝোতা হয়েছে, তা আজো যোলোআনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তা হলে ভারত আর কতকাল অপো করবে? ভারতের স্বার্থ ুণœ হয়, এমন কোনো সরকারকে দিল্লি ঢাকার মতায় দেখতে চায় না। এ কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলমান সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নির্দলীয় সরকারব্যবস্থায় ফিরে যেতে হাসিনাকে দিল্লিই ইশারা দিতে পারে। কোনো ধরনের ইশারা বা সঙ্কেতের সম্ভাবনা নেই মনে করেই আওয়ামী নেতারা লম্ফঝম্ফ দিচ্ছেন। ভারতের আনন্দবাজার তো বলে দিয়েছে, সঠিক নির্বাচন হলে হাসিনার মতায় ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। 


0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads