সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৩

খুন সহিংসতা দুর্নীতি ও দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত


দৈনিক প্রথম আলো একটি চিত্তাকর্ষক খবর দিয়েছিলো। খবরটি মর্মান্তিক তবে চিত্তাকর্ষক বলছি এজন্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিককালে তার প্রত্যেকটি মিটিং-এ একটি অভিযোগ করে থাকেন এবং বলে থাকেন যে, বিএনপি একটি খুনিদের দল, এই দলটি ক্ষমতায় গেলে ব্যাপকহারে মানুষ খুন হয়। তার ভাষায় বিএনপির একটি গুণÑদুর্নীতি আর মানুষ খুন। এই কথাটির জবাব বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে। কিন্তু দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা যেভাবে তথ্য উপাত্ত দিয়ে পরোক্ষভাবে এর জবাব দিয়েছে আর কোথাও এভাবে এর জবাব দেয়া হয়নি। পত্রিকাটির ৫ নবেম্বরের লিড আইটেমই ছিল ‘রাজনৈতিক সহিংসতা ২২ বছরে প্রাণহানি ২৫১৯: হত্যার রাজনীতি, লাশের মিছিল।’ এতে তারা ২২ বছরে ক্ষমতাসীন দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যান দিয়েছেন। তারা বলেছেন ১৯৯১ সালের জুন থেকে ১৯৯৬ সালের মে পর্যন্ত ক্ষমতাসীন বিএনপির আমলে ১৭৪ ব্যক্তি; ১৯৯৬ সালের জুন থেকে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শাসনামলে ৮৯৮ জন; ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি আমলে ৮৭২ জন এবং বর্তমান সরকারের আমলে (২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত) ৫৬৪ জন লোক নিহত হয়েছেন। অবশ্য ২০০৬ সালের অক্টোবর-নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা আন্দোলন ও হরতাল অবরোধের সময় তাদের দ্বারা নির্মমভাবে নিহত ৮৭ ব্যক্তির হিসাব এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আবার তাদের চলতি আমলের সংখ্যাও বিতর্কিত। তথাপিও এদের বাদ দিলে বিএনপি আমলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ১০৪৬জন এবং আওয়ামী লীগ আমলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪৫২ জন। অর্থাৎ রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণহানির সংখ্যা আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি আমলের চেয়ে ৪০৬ জন বেশি। এই বছরের নবেম্বর থেকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতাসীন থাকে তাহলে আরো কতজনের প্রাণহানি ঘটে তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই বলতে পারেন। প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ কোন প্রতিবাদলিপি পাঠায়নি এবং এর প্রেক্ষিতে ধরে নেয়া যায় যে রাজনৈতিক সহিংসতায় তাদের চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জনের ব্যাপারে দলটির কোন বক্তব্য নেই। এই অবস্থার পরও আমাদের প্রধানমন্ত্রী যদি বিএনপি অথবা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে খুনি এবং নিজেদের ধোয়া তুলশী পাতা বলে মনে করেন তাহলে দেশবাসী তার বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে পারবেন না। আবার দুর্নীতির ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ায় নয় বরং সরকারি আদেশে ২০০৯ সালের পরে ঘুষ-দুর্নীতির যে ১১টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে তার সাথে সম্পৃক্ত অর্থের পরিমাণ ১৪৮৬২ কোটি টাকা। এ মামলাগুলোর বিস্তারিত বিবরণ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আবার সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকার হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ সালের পর থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত শেয়ারমার্কেট, হলমার্ক, পদ্মা সেতু ইউনিপে টু ইউ, আইটিসিএল, ডেসটিনি, রেলওয়ে, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকমিউনিকেশন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনসহ সরকারি বিভিন্ন খাতে যে দুর্নীতি ও অর্থ লোপাট হয়েছে তার পরিমাণ অন্যূন চার লাখ কোটি টাকা। এখন পাঠকরাই বিচার করুন কে বেশি দুর্নীতিবাজ?
বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে এসেছে। গত ২৪ অক্টোবর থেকে নির্বাচনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। অথচ নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে সরকার এখনো নির্লিপ্ত। দেশের খ্যাতনামা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের তরফ থেকে অবিলম্বে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফ থেকেও সংলাপ ও পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অবিলম্বে এই প্রশ্নে একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে। ১৮ দলীয় জোটের তরফ থেকে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে একটি ফর্মুলা পেশ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এই ব্যাপারে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখে সর্বদলীয় সরকারের নীতিতে অটল, যদিও এই সরকারের বিধান সংবিধানে নেই। ফলে দেশের রাজনৈতিক ময়দান উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, সরকার প্রধান বিরোধী জোটকে বাইরে রেখেই একটি আঁতাতের নির্বাচন করতে চান। বিরোধী দলও তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে পারছেন না। কেননা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচনে যাওয়া তাদের জন্য আত্মহত্যার শামিল। আবার শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সংবিধান থেকে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন যাতে বারবার ক্ষমতায় আসতে পারেন। তিনি আদালতের দোহাই দিয়ে কাজটি করেছেন। আদালতের এই রায়ে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি। রায়টি কিভাবে এসেছে সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক মহল সে সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। আদালত তার রায়ে জনচাহিদাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেননি বরং আরো দুই মেয়াদ সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি চালু থাকার অনুকূলে মত প্রকাশ করেছেন। এই ব্যাপারে একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞদের মতামত নিয়েছেন। তাদের সকলেই এবং এমনকি সরকারের একাধিক মন্ত্রীও এই বিধান বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। কমিটির প্রধান শ্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও বলেছেন যে, কেয়ারটেকার পদ্ধতি বহাল থাকবে। কিন্তু সংসদীয় কমিটি যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করলেন তখনই সব উল্টে গেল। সকল মতামত উপেক্ষা করে তার মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করা হলো এবং দেশকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয়া হলো। সংসদীয় কমিটির রিপোর্টটি প্রকাশ করা হলে এই ব্যাপারে প্রকৃত অবস্থা সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে, বর্তমান সংঘাত সংঘর্ষের জন্যে দায়ী সরকার প্রধানের ব্যক্তি ইচ্ছা না বিরোধী দলের গোয়ার্তুমি। বহু রক্তের বিনিময়ে এই দেশে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা হিসেবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। এটি ছিল একটি মীমাংসিত ইস্যু। এটিকে ধ্বংস করে সরকার আরো মারাত্মক ও জটিল ইস্যুর জন্ম দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী সংলাপের জন্য বিরোধীদলীয় নেত্রীকে বঙ্গভবনে মধ্যাহ্ন ভোজের দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু তার কোন এজেন্ডা বা সময় নেই। তিনি তার প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকারে বিএনপিকে মন্ত্রিত্বের জন্য প্রতিনিধির নাম প্রেরণের কথা বলেছিলেন এবং তারা কোন কোন দফতর চান তাও জানাতে বলেছেন। বিরোধী দল তার এই প্রস্তাবে সাড়া দেয় কেমন করে? তারাতো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে বিশ্বাস করে না। আর সংলাপ, হাজার হাজার লোককে জেলে এবং লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা রেখে এবং জোটের অন্যতম প্রধান শরীক জামায়াতকে নিবন্ধনবিহীন অবস্থায় ফেলে সংলাপ কিভাবে হয়? যারা শত শত গরু খেয়েছেন তাদের মাথায় কি একটি ছোট্ট গরুর বুদ্ধিও নেই? এখানে  আরো প্রশ্ন আছে। ‘তোমরা রহিবে তেতালার পরে, আমরা রহিব নিচে। অথচ তোমাদের দেবতা ডাকিব এই ভাবনা আর মিছে।’ প্রধানমন্ত্রী তার পুত্র, ভগ্নি ভাগিনা ও আত্মীয়স্বজন সবাইকে নিয়ে দেশে-বিদেশে স্পেশাল সিকিউরিটির ডাবল প্রটেকশনে নির্বাচন নিয়ে প্রচারণা করবেন, আর বিরোধীদলীয় নেত্রীর ছেলেদের দেশে আসতে দিবেন না, রাজনৈতিক প্রচারণায় বাদ সাধবেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকাদ্দমা দিবেনÑ এটা হয় কেমন করে? যদি সংলাপ করতে হয় তাহলে অবশ্যই জামায়াত, বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের সকল নেতা-কর্মীকে মুক্তি দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। উভয়পক্ষের জন্যে ময়দান সমান করেই সংলাপ এবং নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
আমি আগেই বলেছি জামায়াত-বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট নির্বাচনে আসুক সরকার এটা চান না এবং চান না বলেই বিএনপির শীর্ষ নেতা এবং সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এমকে আনোয়ারসহ পাঁচজন সিনিয়র রাজনীতিবিদকে এ্যারেস্ট করেছেন। সংসদ চলা অবস্থায় স্পিকারের অনুমতি ছাড়া সংসদ সদস্যদের গ্রেফতার সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে বিরল। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। শুধু তাদের গ্রেফতার করেই সরকার ক্ষান্ত হয়নি, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও সরকার ভয়ভীতি ও ত্রাসের মুখে নিক্ষেপ করেছেন। তার বাড়ি ও অফিস এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতের সিনিয়র ও মধ্যমানের এমনকি জেলা-উপজেলার নেতাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের বাসাবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পুলিশী হানা চলছে। এইসব করে সম্ভবত সরকার সারা দুনিয়াকে এই বার্তা দিতে চাচ্ছেন যে, তারা এককভাবে একটি নির্বাচন করবেন এবং পুনরায় ক্ষমতায় আসবেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে অভিহিত শামীম ওসমান ইতোমধ্যে রণ হুঙ্কার দিয়েছেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন যে, শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী না হলে তিনি শাড়ি, চুড়ি ও দুল পরবেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান কাজকর্ম বিশেষ করে বিরোধী দলকে পঙ্গু ও নেতৃত্বহীন করার কর্মসূচি শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ বলেই মনে হয়। একটি হাস্যস্পদ বিষয় লক্ষ্য করলাম। নির্বাচন কমিশন এখনো নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেননি। আওয়ামী লীগ মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করে দিয়েছে এবং এই মনোনয়নপত্র নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে মারামারি এবং চেয়ার ছোড়াছুড়ির দৃশ্যও টেলিভিশনে দেখলাম। এইসব কিসের আলামত? এখানে কতগুলো ঘটনা একটি আরেকটির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত বলে মনে হয়। প্রথম আলো পত্রিকা ২রা নবেম্বর রিপোর্ট করেছে যে, সরকার ১৮ দলীয় জোট ভাঙতে তৎপর। একই দিন যুগান্তর ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে, বিরোধী দলের কর্মসূচি স্থগিত না করলে সংলাপ হবে না। একই পত্রিকা একই দিন ব্যারিস্টার মওদুদের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্ট করেছে যে, নির্দলীয় সরকার না মানলে কর্মসূচি স্থগিত হবে না।
৮ নবেম্বর যে দিন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হলো সেদিনই নির্বাচন কমিশন বিএনএফ নামক একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন। এই দলটি সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না, কোথাও এই দলের অস্তিত্ব নেই। অনেকে বলছেন যে, বিএনপিকে ভেঙে তার কিছু নেতাকে এই দলে এনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোই সরকারের লক্ষ্য। এখানে নির্বাচন কমিশন সরকারের হাতের একটি পুতুল মাত্র।
সরকারের মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ নেতারা গত কয়েক বছর ধরেই উপহাস করে আসছিলেন যে, আন্দোলন করার মুরোদ বিএনপির নেই। এখন বিএনপি নেতারা যখন আন্দোলন শুরু করেছেন তখন তাদেরকে বলা হচ্ছে, সন্ত্রাসী খুনী। তাদের গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। আমি যখন এই নিবন্ধটি লিখছি তখন সারাদেশে ৮৪ ঘন্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হচ্ছে। বিরোধী দলের অধিকাংশ নেতা এখন পলাতক। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের কঠোর প্রতিরোধের মুখেও ঢাকায় হরতাল চলছে।
মফস্বল শহর ও পল্লী এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে হয়। পরিস্থিতিকে সংঘাতময় করে তোলার জন্য সরকারি দল বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। সাঁথিয়া, সাতক্ষীরা ও দিনাজপুরের সাম্প্রতিক ঘটনা এর প্রমাণ। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী এর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশের সংঘাতময় এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও বার্ষিক পরীক্ষা বিঘিœত হচ্ছে। নিরীহ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এর দায় সরকার অস্বীকার করতে পারেন না। আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের উপর জেল-জুলুম নির্যাতন চালালে তাদের আন্ডারগ্রাউন্ডে ঠেলে দিলে যে কি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে তা সরকারের ভেবে দেখা দরকার।
দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় এবং এই পরিবর্তন অহিংস হওয়া প্রয়োজন। প্রথম আলো, ডেইলী স্টার ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের জরিপ এবং সাধারণ মানুষের অভিমত প্রভৃতি বিবেচনা করলে পরিষ্কার দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে একটি মাইনরিটি দলে পরিণত হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা কিভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তা এখন তাদের ভুলে যাওয়াই উচিত। জনগণ তাদের চায় না। তবে পার্শ্ববর্তী দেশের প্রতি তাদের ভরসা তাদেরকে বেপরোয়া করে তুলছে বলে মনে হয়। আসামের ‘দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ’ ২০ অক্টোবর এই মর্মে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে, হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরানোর জন্য দিল্লী এক হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। ১ নবেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকা এক রিপোর্টে বলেছে যে, আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল পরাস্ত হবে। একই পত্রিকা ৮ নবেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বক্তব্য ছেপেছে। তিনি বলেছেন ‘শেখ হাসিনা ভারতের আপনজন, যেন এই বাংলারই মেয়ে।
পাঁচ বছরে হাসিনার আমলে ঢাকা ভারতকে যেভাবে সহযোগিতা করেছে তার প্রতিদান দিতে নয়াদিল্লী বদ্ধপরিকর।’ এর আগে ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাযজ্ঞের সময় ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী হাসিনা সরকারকে উদ্ধার করার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দিয়েছিলেন। তাদের এসব কথা-বার্তায় পরিষ্কার মনে হয় যে, বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধি হয়ে তাদের কল্যাণে কাজ করার পরিবর্তে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের স্বার্থেই বাংলাদেশের মসনদে বসেছেন এবং আবারও বসতে চান। তারা বাংলাদেশকে ভুটান বা কাশ্মীর বানাবেন নাতো? দেশের মানুষকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার বলে আমি মনে করি। ২০০৮-এর মতো বস্তা বস্তা টাকা ছাড়াও খোলা সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আর ভয়ানক সন্ত্রাসী আসার আশঙ্কা এখন উড়িয়ে দেয়া যায় না। আল্লাহর উপর আস্থা বিশ্বাস তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগ এখন ভোটারদের বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে প্রতিবেশী দেশের উপর ভরসা করতে চায়। এই ভরসা তাদের কতটুকু রক্ষা করতে পারবে ভবিষ্যতই তা বলতে পারবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads